http://www.dailykalerkantho.com/?view=details&type=gold&data=Food&pub_no=670&cat_id=1&menu_id=14&news_type_id=1&news_id=195786
বর্বর শিরশ্ছেদ প্রথার বিলুপ্তি চাইসৈয়দ আবুল মকসুদ
গোটা পৃথিবীতে বিচারের একটি মানদণ্ড তৈরি হয়েছে শত শত বছরে। আজ কোনো দেশ সেই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বাইরে নিজস্ব বিচারব্যবস্থা তৈরি করতে পারে না। সৌদি আরবের বিচার বিভাগীয় হত্যাকাণ্ড মানবতার চরম বিরোধী। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে সুন্দর সমাজ নির্মাণের দিকে। সেখানে কেউ বর্বরতার দিকে যেতে চাইলে আমরা তার বিরোধিতা করব এবং আমরা চাই, এর প্রতিবাদে বিশ্ববিবেক জাগ্রত হোক।
সৌদি আরবে আমাদের আটজনের শিরশ্ছেদের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা সীমাহীন। তারা কায়রোতে নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আপস করতে পারত। রিয়াদে সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে পারত। অথচ শিরশ্ছেদ হবে জেনেও তারা দেশবাসীকে এবং আমাদের সংবাদমাধ্যমগুলোকে কিছুই জানতে দেয়নি। নীরবে শিরশ্ছেদ হওয়ার পরেই দেশবাসী তা জানতে পারে। এটি তাদের দায়িত্বে অবহেলার একটি চরম দৃষ্টান্ত। কেন তারা দেশবাসীকে জানতে দেয়নি?
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার আবেদন স্রেফ একটি আনুষ্ঠানিকতা। চিঠির ফর্মা তৈরি থাকে, তাতে শুধু স্বাক্ষর করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এটি কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যে পড়ে না। কাজেই আরো যে পাঁচজন মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পেয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে, তাঁদের ব্যাপারে জনগণ জোর কূটনৈতিক তৎপরতা দেখতে চায়। ব্লাডমানি (রক্তমূল্য) হোক বা যেভাবেই হোক, তাঁদের জীবন রক্ষার্থে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সব ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে।
আমাদের আন্দোলন শিরশ্ছেদের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিবেক জাগ্রত করার জন্য আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। সৌদি আরব তথা মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের লাখ লাখ কর্মী রয়েছেন। তাঁদের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের জন্য আমাদের আন্দোলন। আমাদের কর্মীরা ওই দেশগুলোর অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখছেন। রেমিট্যান্সের মাধ্যমে তাঁরা আমাদের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখছেন। সুতরাং তাঁদের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের জন্য আমরা বাংলাদেশের সরকার ও ওই দেশগুলোর সরকারের কাছে আবেদন জানাব।
আমাদের কর্মীরা বিদেশে ভিক্ষার জন্য যান না, শ্রমের বিনিময়ে জীবিকা অর্জনের জন্য যান। পূর্ণ মর্যাদার সঙ্গে তাঁরা যাতে ওই দেশগুলোতে থাকতে পারেন, সে জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। শিরশ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা কোনোভাবে কাম্য নয়। আমাদের দেশেও মৃত্যুদণ্ড আছে। জীবনের শেষ মুহূর্তটা মানুষ যেন একটু ভালোভাবে কাটাতে পারে, সে চেষ্টা করা হয়। তাদের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করা হয়। লক্ষ্য থাকে যাতে মৃত্যু যথাসম্ভব কম কষ্টের হয়। কিন্তু প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদের মতো বর্বরতা এবং স্বজনদের লাশ দেখতে না দেওয়ার মতো নিষ্ঠুরতা কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না।
শিরশ্ছেদের শিকার হওয়া বাঙালিরা সাধারণ, হতদরিদ্র। আজ যদি তাঁরা কোনো মন্ত্রী বা শিল্পপতির ছেলে হতেন, তাহলে কি সরকার এত নীরব থাকতে পারত? বাংলাদেশে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেছেন, একজনকে হত্যার জন্য গ্রামের সবারও শিরশ্ছেদের শাস্তি হতে পারে। যেকোনো মানদণ্ডে এ বক্তব্য চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ। ইসলাম ন্যায়বিচারের কথা বলে। একজন মানুষকে হত্যার জন্য একটি গ্রামের সবার শিরশ্ছেদ করার বিধান ইসলামের কোনো শাস্ত্রে আছে বলে আমি শুনিনি। সৌদি রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য ভয়াবহ রকমের অনৈতিক। যে আইনের দোহাই দিয়েই এ শাস্তির কথা বলা হোক না কেন, যেকোনো মানদণ্ডে তা মানবতার চরম পরিপন্থী।
যে আটজন শিরশ্ছেদের শিকার হয়েছেন, তাঁদের পরিবারগুলোর ভরণপোষণের দায়িত্ব এখন সরকারকেই নিতে হবে। অন্যদিকে যাঁদের শিরশ্ছেদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাঁদের রক্ষায় সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। বর্বর শিরশ্ছেদ প্রথার বিরুদ্ধে বিশ্ববিবেককে জাগ্রত করার জন্য আমরা আগামী দিনগুলোতে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাব।
[সৌদি আরবে আট বাংলাদেশির শিরশ্ছেদের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকার গুলশানে সৌদি দূতাবাসের কাছে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। 'বর্বর শিরশ্ছেদ প্রথার বিলুপ্তি চাই _সৈয়দ আবুল মকসুদ' লেখা প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে ওই মানববন্ধনে ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। কর্মসূচির ফাঁকে তাঁর প্রতিক্রিয়া নিয়েছেন কালের কণ্ঠের কূটনৈতিক প্রতিবেদক মেহেদী হাসান]
__._,_.___