Banner Advertise

Saturday, March 5, 2011

[chottala.com] Prof Yunus under attack : Microloan under Microscope



 
Prof Yunus under attack : Microloan under Microscope
 
উচ্চহারের ঋণের জালে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব?
 
 
A comment in Prothom Alo by:
saifur
২০১১.০৩.০৪ ১৮:১৪
why americans are so interested about Yunus?
answer is: he is serving for their cause. very simple, isn't it.
 

উচ্চহারের ঋণের জালে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব?
মানিক মুনতাসির

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার দানারহাট সৈয়দপুর গ্রামের পিয়ার আলী ১৯৯৯ সালে ক্যান্সারে মারা যান। ছয় সন্তান নিয়ে নিরুপায় স্ত্রী আয়েশা বেগম গ্রামীণ ব্যাংকের দ্বারস্থ হন। পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বড় ছেলেকে দিয়ে ব্যবসা করানোর চিন্তা করেন। কিন্তু এত কম পুঁজিতে কি ব্যবসা করা যাবে? আর এত বড় সংসারই বা চলবে কী করে? আবার সপ্তাহ যেতে না যেতেই কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হবে_ এমন চিন্তায় আয়েশা বেগমের ঘুম হারাম। মাসদুয়েক পর কিস্তির টাকা না পাওয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মী আশরাফুল আলম আয়েশা বেগমের একমাত্র অবলম্বন দুধের গাভীটি আটকে রাখেন নিকটস্থ কার্যালয়ে।

অবশেষে ব্যবসা তো করা হয়ইনি, উপরন্তু চড়া ঋণের টাকা পরিশোধ ও গাভীটিকে মুক্ত করতে একই গ্রামের মহাজন ইসমাইলের কাছ থেকে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদে টাকা নিতে হয় আয়েশাকে। সেই সুদের টাকা পরিশোধ করতে সেদিন তাকে আরও সাড়ে সাত হাজার টাকা গুনতে হয়। এ জন্য স্বামীর রেখে যাওয়া শেষ সম্বল গাভীটিও তুলে নিয়ে যান মহাজন ইসমাইল। তাহলে গ্রামের মহাজন আর গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলে কিন্তু গণমাধ্যমে আসেনি। এটি একটি মাত্র ঘটনা। সারাদেশে এমন হাজারও ঘটনা ঘটে যা কখনোই গণমাধ্যমে আসে না, মানুষের অগোচরেই রয়ে যায়।

১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয় ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্য নিয়ে, কিন্তু তিন দশকে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেনি বরং বেড়েছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল ৩০ শতাংশ আর এখন সেটা প্রায় ৪৯ শতাংশে উঠেছে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের মতো ক্ষুদ্রঋণ দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো যে হারে সুদ নেয় তা গ্রামের মহাজনদেরও হার মানায়। সরকার অবশ্য এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য সুদের সর্বোচ্চ সীমা ২৭ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু এটা এখনো কার্যকর হয়নি। কারণ ২৭ শতাংশ সুদের হারেও এসব প্রতিষ্ঠানের সম্মতি পাওয়া যায়নি। গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণের জালে আটকে সর্বস্ব হারিয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়।

ক্ষুদ্রঋণ দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক এমআরএ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে একাধিকবার নালিশ করেছে, এসব প্রতিষ্ঠান কখনোই তাদের ঋণ কার্যক্রমের প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করে না। গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ পর্যন্তও সুদ নেওয়া হয় বলে এমআরএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই বলেছেন, গ্রামীণ বাংকের ৮৩ লাখ ঋণগ্রহীতা রয়েছেন। দেশের এক-তৃতীয়াংশ পরিবার এর সঙ্গে যুক্ত। অর্থাৎ গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণের জালে আটকে পড়েছে দেশের এক-তৃতীয়াংশ পরিবার। আজ সাধারণ মানুষও প্রশ্ন করেন, ড. ইউনূস একটি গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে আরও এক ডজন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়েছেন কিন্তু নিঃস্ব হয়েছে হাজারও পরিবার। জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের মতো দাতা ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখলে দেশে দারিদ্র্যের হার বাড়ত না। এসব প্রতিষ্ঠান এখন শতভাগ বাণিজ্যিক। এদের চোরাবালিতে দরিদ্র মানুষ আরও দরিদ্র হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকসহ এমন প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ কম থাকায় এদের মাঝে জবাবদিহিতার কোনো বালাই নেই। ফলে দারিদ্র্য বিমোচনের নামে তারা বিদেশ থেকে তহবিল এনে নিজেদের আখের গোছায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ দাতা প্রতিষ্ঠানের বিশ্বের পথপ্রদর্শক গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা হলেও মানুষ কখনোই এর সুফল পায়নি।

ক্ষুদ্রঋণের কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা হলেও ড. ইউনূস গণমাধ্যমে সহসাই এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হন না। গত বছরের আগস্টে হোটেল সোনারগাঁওয়ে ক্ষুদ্রঋণ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে চা-পানের বিরতিতে তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়। তখন তিনি বলেন, সরকার চাইলে এর সুদের হার বেধে দিতে পারে। কিন্তু এ ঋণ কার্যক্রমে যে পরিমাণ ঝুঁকি থাকে তাতে ৩০ শতাংশের নিচে সুদের হার ঠিক করলে সামঞ্জস্য হবে না।

গ্রামীণ ব্যাংক থিমের সফলতায় তিনি ও তার লক্ষ্য সফল হয়েছে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্মানজনক পুরস্কার নোবেলও পেয়েছেন কিন্তু বিতর্ক তার পিছু ছাড়েনি। জনকল্যাণের নামে ক্ষুদ্রঋণের জাল বিস্তৃত করেছেন। এ জাল ছিন্ন করে কোনো একজনের ভাগ্য খুলেছে এমন দৃষ্টান্তও উপস্থাপন করতে পারেননি মুহাম্মদ ইউনূস।

2011/3/5 Dilawar Hossain <Oline2@cox.net>
 

২০০৯ সালের ৯ ডিসেম্বর ড. ইউনূসের বক্তৃতা শোনার জন্য ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভার একটি যুক্ত সভা হয়েছিল। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ড. ইউনূসকে সম্মানিত বন্ধু হিসেবে সম্বোধন করে তাঁর সান্নিধ্য পাওয়া একটি সত্যিকারের প্রিভিলেজ (বিশেষ সুযোগ) হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। আবেগপূর্ণ বক্তৃতার একটি অংশে তিনি বলেছিলেন: '২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর কাছ থেকে আমাদের বহু কিছু শেখার আছে এবং আমি আবারও তাঁর কাজ এবং আমাদের মধ্যে তাঁর উপস্থিতিকে স্যালুট (অভিবাদন) জানাচ্ছি।'
ড. ইউনূসকে নিয়ে ঠিক এক বছর পর বাংলাদেশের কয়েকটি দৈনিকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি সংবাদ প্রচারিত হয়। এতে বলা হয় যে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন ড. ইউনূস এবং তাঁর ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের তীব্র সমালোচনা করেছেন। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন সঙ্গে সঙ্গে এই ভিত্তিহীন সংবাদের প্রতিবাদ করে। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, এই প্রতিবাদপত্রটি উল্লিখিত দৈনিকগুলোর কোনো কোনোটি ছাপানোরই দায়িত্ব অনুভব করেনি।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আরও ভয়ংকর অপপ্রচার চলে সে সময়। নরওয়ের টেলিভিশনের একটি প্রামাণ্যচিত্রে অভিযোগ করা হয়েছিল যে গ্রামীণ ব্যাংক দাতা প্রতিষ্ঠানের অনুমতি ছাড়া ব্যাংকের তহবিল থেকে অন্য একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের তহবিলে টাকা স্থানান্তর করে অনুদানের শর্ত লঙ্ঘন করেছে। প্রামাণ্যচিত্রে কোথাও ড. ইউনূস কর্তৃক টাকা আত্মসাৎ বা দুর্নীতির অভিযোগ ছিল না। অথচ এই প্রামাণ্যচিত্রের বরাত দিয়ে কিছু কিছু পত্রিকার সংবাদে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, তহবিল তছরুপ কিংবা টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তোলা হয়। পরে নরওয়ে সরকার নতুনভাবে তদন্ত করে জানিয়ে দেয় যে বিষয়টি বহু আগে সুন্দরভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে এবং তাতে দুর্নীতি বা টাকা আত্মসাতের কোনো বিষয় ছিল না।
বাংলাদেশে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিষয়টি সুন্দরভাবে নিষ্পত্তি হয়নি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিজে ড. ইউনূসকে গরিবের রক্তচোষা হিসেবে ইঙ্গিত করেন এবং ক্ষুদ্রঋণের বিষয়টি ব্যাপক তদন্ত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। এরপর সরকারের বিভিন্ন নীতিনির্ধারকেরা ড. ইউনূসের সমালোচনা করেন এবং সরকারপন্থী হিসেবে পরিচিত কিছু সংবাদমাধ্যমে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে নানান কুৎসামূলক সংবাদ ও সংবাদভাষ্য প্রচারিত হতে থাকে। বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে যেভাবে হয়, অনেকটা তেমনভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ফেব্রুয়ারিতে ভিনদেশি নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনকে যখন সরকার নানাভাবে সম্মান জানাচ্ছে, সে সময় আমাদের দেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ীকে জামিনের জন্য ছুটতে দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন আদালতে।
২ মার্চ তাঁর ওপর আসে চূড়ান্ত আঘাত। সারা পৃথিবীতে সম্মানিত গ্রামীণ ব্যাংকের জন্মদাতা এবং নির্মাতাকে এদিন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে 'অব্যাহতি' দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক একটি চিঠি দিয়ে। রাতে টেলিভিশন খুলে দেখি, আইন পেশার ধারে-কাছে নেই এমন কেউ কেউ এটি আইনগতভাবে করা হয়েছে বলে মন্তব্য করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের একজন শিক্ষক প্রশ্ন তুলেছেন, দারিদ্র্য বিমোচনে গ্রামীণ ব্যাংকের আদৌ কোনো সফলতা আছে নাকি তা নিয়ে। এর আগে সম্মানজনক প্রতিষ্ঠানে অধিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন শিক্ষক ড. ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা কর্মসূচির মাধ্যমে গরিবকে প্রতারণা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে গত বছর প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনার পর ইউনূসবিরোধী যে প্রচারণার কোরাস চলছে থেমে থেমে, তাতে দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিরাও যোগ দিয়েছেন কোনো তথ্য-প্রমাণ এমনকি যুক্তি ছাড়াই।
মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকারের তদন্ত চলছে। আদালতে বিচার হচ্ছে। একই সঙ্গে একশ্রেণীর গণমাধ্যমের বিচার চলছে তাঁর বিরুদ্ধে। তিনি নতুন প্রতিষ্ঠান, চিন্তা ও কর্মপদ্ধতির উদ্ভাবন করে বাংলাদেশকে সারা বিশ্ব থেকে বিভিন্ন বিরল ও অনন্য সম্মান এনে দিয়েছেন। এমন একজন মানুষের সম্পর্কে সমালোচনার ক্ষেত্রে আমাদের দেশপ্রেম, দায়িত্ববোধ ও সংযম থাকা উচিত ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে জনগণ ও বাংলাদেশের স্বার্থ এবং দেশের ভাবমূর্তি নিয়ে যথেষ্ট দায়িত্ববোধের পরিচয় দেওয়া উচিত ছিল।

২.
মুহাম্মদ ইউনূস কি তাই বলে সমালোচনার ঊর্ধ্বে? অবশ্যই না। তিনি সমালোচনার ঊর্ধ্বে নন, আইনের তো নয়ই। বহু বছর ধরে ড. ইউনূসের সমালোচনা করে আসছেন বদরুদ্দীন উমর। কোন সরকার ক্ষমতায় আছে, কখন প্রধানমন্ত্রী তাঁর ওপর রুষ্ট, এই হিসাব-নিকাশ তাঁর সমালোচনায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। অন্য বহু ব্যক্তি ও গণমাধ্যম তাঁর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ড. ইউনূসের সমালোচনা করার পর। তাদের সমালোচনায় যুক্তি নেই, পাণ্ডিত্য নেই, এমনকি সৌজন্যবোধও নেই। সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের সবচেয়ে ইতিবাচক ব্র্যান্ডিং হচ্ছেন ড. ইউনূস। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেখানে ইউনূস সেন্টার এবং মাইক্রোক্রেডিট ডিপার্টমেন্ট খুলে তাঁর চিন্তাকে অধ্যয়ন করছে, সেখানে বাংলাদেশে কিছু মানুষ কোনো প্রমাণ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা রচনায় নেমেছে। আমাদের আপত্তি সেখানেই।
ব্যক্তির সমালোচনার চেয়ে মারাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের আক্রমণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে তাঁকে অপসারণের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। পত্রিকায় দেখেছি, তাঁকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে দুটো কারণ দেখিয়ে। প্রথমত, তাঁর নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নেওয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত, তিনি চাকরির বয়সসীমা ৬০ পার করেছেন অনেক বছর আগে। আমার মতে, এই দুটো যুক্তির কোনোটিই ড. ইউনূসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। 'গ্রামীণ ব্যাংক অর্ডিন্যান্স, ১৯৮৩' নামে আলাদা একটি আইন অনুসারে গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালিত। এই আইনের ৩৬ ধারায় গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে ব্যাংকের দক্ষ পরিচালনার স্বার্থে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ১৯৯০ সালের গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধন) আইনের ১৪ ধারা অনুসারে বিধিগুলো সরকার কর্তৃক পূর্বানুমোদন করানোর প্রয়োজন নেই। সে মোতাবেক ২০০১ সালের ১৯ নভেম্বর গ্রামীণ ব্যাংক একটি বিধি প্রণয়ন করে, যাতে বলা হয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে চাকরির ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকবে না এবং গ্রামীণ ব্যাংকের চাকরিবিধি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। এই বিধি যদি অবৈধ না হয়ে থাকে, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক বয়স বা পূর্বানুমোদনের কথা বলে তাঁকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে পারে না। এই বিধি অনুসারে গ্রামীণ ব্যাংক ১০ বছর যাবৎ পরিচালিত হচ্ছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এই বিধিকে অবৈধ ঘোষণা না করে বা এ সম্পর্কিত কোনো আইনি উদ্যোগ না গ্রহণ করেই গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়েছে। ড. ইউনূসকে আইনসংগতভাবে অপসারিত করতে চাইলে এই বিধি আদালত কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করানোর বা এটি পরিচালনা পর্ষদের সভায় বাতিল করার চেষ্টা করা আবশ্যক ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংক ড. ইউনূসকে অপসারিত করতে পারে কি না, তা নিয়েও আইনগত প্রশ্ন তোলা যায়। জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট অনুসারে চাকরিদাতাই কেবল চাকরি থেকে কাউকে অপসারিত করতে পারে। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ প্রদান করে ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরস বা পরিচালনা পর্ষদ। বাংলাদেশ ব্যাংক কেবল এটি অনুমোদন করতে পারে বা অনুমোদন না করতে পারে। আমাদের প্রশ্ন, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক তাঁকে নিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব শর্ত দেয় তা ২০০১ সালের বিধির মাধ্যমে লঙ্ঘিত হয়ে থাকলে ১০ বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক তাঁকে মেনে নিল কেন? প্রিন্সিপল অব এসটোপেল অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ বছর পর এখন ভিন্ন ভূমিকা নিতে পারে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ছিল গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কাছে তার অভিমত জানানো এবং সে অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া। পরিচালনা পর্ষদ ড. ইউনূসকে সে অনুসারে অব্যাহতি না দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক আদালতে যেতে পারত। কিন্তু তাই বলে সরাসরি চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই। গ্রামীণ ব্যাংক যে আইন দ্বারা পরিচালিত তাতে ঠিক এ ধরনের কোনো ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রদান করা হয়নি। ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসনের একটি মৌলিক নীতি হচ্ছে, কাউকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আগে তাঁকে নোটিশ দেওয়া ও তাঁর বক্তব্য শোনা। ড. ইউনূসের ক্ষেত্রে এমনকি এই নীতিও মানা হয়নি।

৩.
৭০ বছর হয়েছে তাই ড. ইউনূসের চলে যাওয়া উচিত কিংবা চিরদিন এক পদ ধরে না রেখে তাঁর চলে যাওয়া উচিত—এ ধরনের কথাও বলছেন সরকারের কেউ কেউ। তাঁদের কেউ কেউ ড. ইউনূসের চেয়েও বয়স্ক বা তাঁর সমবয়সী। সরকার অবসর থেকে ডেকে এনে যাঁদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিচ্ছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আমরা মনে করি, বয়স নয়, জনস্বার্থ ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দক্ষতা ও নেতৃত্বের যোগ্যতা। ড. ইউনূস কি তাঁর দক্ষতা হারিয়েছেন, তাঁর বয়সের কারণে গ্রামীণ ব্যাংকের বিকাশ কি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে? দেশে এবং সারা বিশ্বে ব্যাংকের বিকাশ এবং ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব তো দিন দিন বরং বৃদ্ধিই পাচ্ছে।
ড. ইউনূসের একটি ব্যর্থতা হচ্ছে, তিনি তাঁর উত্তরসূরি তৈরি করতে পারেননি। বাংলাদেশের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তোলা যায়। ড. ইউনূস এর কোনো উজ্জ্বল ব্যতিক্রম হতে পারেননি। ভালো হতো, তিনি যদি তা পারতেন। ভালো হয়, সরকার ও গ্রামীণ ব্যাংক যদি অন্য কোনোভাবে ব্যাংক এবং এর সব সহযোগী প্রতিষ্ঠানে তাঁর ব্যক্তিত্ব, পাণ্ডিত্য ও অভিজ্ঞতাকে স্থায়ী ও কার্যকরভাবে ব্যবহারের লক্ষ্যে কোনো আইনি সংস্কার করতে পারে। সম্মানজনকভাবে আলোচনার মাধ্যমে এখনো তা করা সম্ভব।
আমাদের বুঝতে হবে, এখন যেভাবে তাঁকে অপসারিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, এটি জনস্বার্থমূলক নয় এবং এতে সুশাসনের কোনো লক্ষণ নেই। প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে অধিকাংশ পাঠক এতে দেশের ভাবমূর্তি এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন গণ্যমান্য প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও ব্যক্তিরা এর নিন্দা করছেন। উন্নয়ন-সহযোগীরা বহু আগে থেকে ড. ইউনূসকে যেভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে তাতে তাদের আপত্তির কথা জানিয়ে আসছে।
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শুধু সরকার, ড. ইউনূস বা গ্রামীণ ব্যাংক নয়। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও স্বার্থ। হুমকির মুখে পড়েছে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির সুবিধাভোগী লাখ লাখ সাধারণ মানুষ।
আমাদের উৎকণ্ঠা সেখানেই।
আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।




__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___