ফোনালাপ : ফলাফল কোলাহল
আবদুল হাই শিকদার |
দেশ ও জাতির এই চরম সঙ্কটকালে সামনে চলে এসেছে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার ফোনালাপ প্রসঙ্গটি। বিশেষ করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল ইনু যখন ঘোষণা করেছিলেন যে, দুই প্রধান নেত্রী ফোনে কথা বলবেন।
উদ্বেগ আর উত্তেজনায় অস্থির দেশবাসী উত্কণ্ঠিত হয়ে রইলেন। শেষ পর্যন্ত নানা উতোর চাপানের পর দু'জনের কথাও হলো।
কী কথা হলো? সর্বদলীয় না নিরপেক্ষ সরকার? টানা হরতাল নাকি সমঝোতা? এসব নিয়ে গুজবের গরু যখন গাছে উঠে গেছে, সেই সময় গরুর মাথায় পানি ঢেলে সেই তথ্যমন্ত্রী গর্বিত ভঙ্গি নিয়ে আবার ঘোষণা করলেন—দুই নেত্রীর ফোনালাপের পুরোটাই গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। যথারীতি প্রকাশ ও প্রচার করা হলোও।
এই কথাগুলোর মানে কী? আবার গুঞ্জন আবার অপার কৌতূহল। তার মানে, দুই নেত্রীর ফোনালাপ বিষয়টি পুরোটাই রেকর্ড করেছিল সরকার? আইনের দিক থেকেও কাজটি অন্যায়, বিশেষ করে সরকারের নিজের প্রণীত তথ্যপ্রযুক্তি আইনের তো সরাসরি লঙ্ঘন এই কর্মটি। তাহলে সরকার কি নিজের কান নিজেই কাটতে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বিষয়টি
নীতি-নৈতিকতার বিচারেও গর্হিত অপরাধ। একজনকে আলাপের কথা বলে তার অজান্তে তার বক্তব্য রেকর্ড করে রাখা তো অত্যন্ত নিম্নশ্রেণীর প্রতারণা। সেখানেই শেষ নয়, চুরি করে রেকর্ড করে, সেই রেকর্ড করা ফোনালাপ গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা তো ভয়ানক অপকর্ম।
তাহলে তো বিএনপির চেয়ারপারসন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ঠিকই বলেছিলেন— বিষাক্ত সাপকে তবু বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু আওয়ামী লীগকে কখনও বিশ্বাস করা যায় না। এরা তো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রতারণা করে, দেশের মুক্তিপাগল জনগণকে না জানিয়ে ভারতের সঙ্গে অতি গোপনে ৭টি চুক্তি করে বাংলাদেশকে ভারতের হাতে বন্ধক দিয়ে এসেছিল। এরাই তো স্বাধীনতার লাভের পর গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতাকে জ্যান্ত কবর দিয়ে, সেই কবরের ওপর গড়ে তুলেছিল 'বাকশালী সৌধ'। এরাই তো ১৯৯৬-এর নির্বাচনে মাথায় হেজাব পরে হাতে তসবি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ফাঁকি দিয়ে দখল করেছিল রাষ্ট্রক্ষমতা। এরাই তো এবার ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের কথা বলে ফখরুদ্দীন-মইন উর পথ ধরে বাংলাদেশকে পরিণত করেছে দুর্নীতি আর দুঃশাসনের ভাগাড়ে। বাংলাদেশের মানুষের ভোটে জিতে সেই মানুষকেই মৌলবাদী, জঙ্গিবাদী সাম্প্রদায়িক বলে তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে জেল-জুলুম আর খুন। মামলার পর মামলা। যে কারণে গোটা দেশ আজ পরিণত হয়েছে বধ্যভূমিতে।
আইন ও নীতি-নৈতিকতা যাই বলুক, সে কথা আমাদের সরকারের গায়ে-গতরে লাগে না? লাগলে তো দুর্নীতিবাজকে 'দেশপ্রেমিক' উপাধি দেয়া যেত না। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের 'রাজাকার' বলে গালি দেয়া যেত না।
আমাদের পাঠক কুমিল্লার এক কলেজশিক্ষক মাহবুব ফোনে জানতে চেয়েছেন যে, এই ফোনালাপটি গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করে তথ্যমন্ত্রী ইনু তো শেখ হাসিনাকে ডুবিয়েছেন। তিনি তো এর আগে বারবার বলেছেন, খালেদা জিয়াকে 'মাইনাস' করে দেবেন। এখন দেখা যাচ্ছে তার এই 'মাইনাস' দোষ মজ্জাগত। তারা এর আগে শেখ মুজিবকে মাইনাস করার জন্য বন্দুক নিয়ে গোপনে গোপনে ঘুরে বেড়াতেন। তারপর রক্ষীবাহিনী যখন তাদের হাড়হাড্ডি ভেঙে দিয়েছিল, তারপর মাথা খোলে। তারপর সেই খোলা মাথা নিয়ে এই রাজনৈতিক এতিমটি আশ্রয় নেয় আওয়ামী লীগের নৌকায়। পদলেহনের পুরস্কার হিসেবে জুটে যায় মন্ত্রিত্ব। কিন্তু মজ্জাগত 'মাইনাস' রোগের কারণে এখন শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার মতলব করছেন।
বললাম, ভাইরে, ইনু যদি শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চান, তাহলে আপনার সমস্যা কী? এটা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ব্যাপার?
মাহবুব বললেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কি এটা বুঝবে?
বললাম, না বুঝলেও সমস্যা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতার ফোনালাপ জনসমক্ষে আনার সিদ্ধান্ত তো নিশ্চয়ই একা ইনু সাহেব নেননি— এর সঙ্গে নিশ্চয়ই খন্দকার মোশতাকের প্রিয় আমলা এইচ টি ইমাম, হলমার্কের সঙ্গে নাম উঠে আসা কীর্তিমান ড. মসিউর, বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধুর সৈনিক বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বিশিষ্ট আওয়ামী লীগার বেগম মতিয়া চৌধুরী, মাদরাসাকে প্রজনন কেন্দ্র বলার মহাপুরুষ ব্যারিস্টার শফিকের মতো লোকদের অনুমোদন নিয়েই হয়তো এই ফোনালাপ প্রচার ও প্রকাশ করা হয়েছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের জনাব জাফরউল্লাহ জানিয়েছেন, দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েই ওটা প্রচার ও প্রকাশ হয়েছে। মাহবুব বললেন, কিন্তু তারা কেউ তো আওয়ামী লীগের মেইন স্ট্রিমের লোক নন।
বললাম, না হলে না হবে, কিন্তু বাস্তবতা হলো তারাই এখন সত্যিকারের মুজিববাদী।
মাহবুব শুধু একলা নন, এ রকম হাজার হাজার পাঠকের নানা জিজ্ঞাসা এখন দেশের আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, আওয়ামী লীগের একজন তো জানালেন, আমরা জিতে গেছি। প্রায় একই ভাষায় বিএনপিরও এক নেতা আমাদের জানিয়েছেন, ভাই যে যাই বলুক, দেশনেত্রী প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি কথার জবাবে যেভাবে ছক্কা হাঁকিয়েছেন, তা বহুদিন আমার মনে থাকবে।
একজন বক্তব্য শেষ করলেন, জয় হাসিনা বলে। আরেকজন বললেন, খালেদা জিয়া জিন্দাবাদ।
প্রথমেই 'দা'
ফোনালাপ যেভাবে চ্যানেলগুলোতে এসেছে, তাতে আমার মতো অনেকেই 'ভুল শুনছি কি না'— ভেবে বিশেষভাবে পর্দায় তাকাতে বাধ্য হয়েছেন।
সংলাপের শুরুতেই ছিল 'দা'। ফলে লগি-বৈঠার যুগ পেরিয়ে দায়ের খোঁজে এবার কলকাতায় পৌঁছলাম কি না ভেবে, নতুনভাবে রিমোট হাতে নিয়েছেন অনেকেই। পরে দেখা গেল চ্যানেলটি কলকাতার নয়, সরকারেরই কোনো গৃহপালিত ব্যক্তির চ্যানেল। ফলে চোখ ও কানের বিবাদ মিটে গেলে বোঝা গেল আমরা কলকাতাতে নেই। বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার ঢাকাতেই আছি— তবে তার 'দা' হাতে নিয়ে নয়। এ 'দা' হলো 'দাদা'। যা ভাইয়ের বদলে এই সরকারের বদৌলতে এখন বাংলাদেশে আসন গেড়ে বসেছে।
প্রধানমন্ত্রীর এডিসি ইমরান সম্বোধন করছেন, বিরোধীদলীয় নেতার ব্যক্তিগত সচিব শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে। বলছেন, শিমুল দা, শিমুল দা...। আমরা অবাক হলেও শাসকদের কিছু যায়-আসে না। তারা তাদের কলকাতার 'দা' ঠোঁটে নিয়ে ঢাকার ভাইদের গুষ্টি নিপাত করে ছাড়ছেন এখন অহরহ। আমার যেটা জানতে ইচ্ছা করে তা হলো, 'দা' কি এখন রাষ্ট্রীয় সম্বোধন হিসাবে ব্যবহারের জন্য আইন করে দেয়া হয়েছে? যদি তা হয়ে থাকে, ভালো। তা না হলে প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে এসব 'দা' ছুড়ে দেয়ার সাহস সরকারি কর্মচারীরা পায় কোত্থেকে?
হায় লাল টেলিফোন
বাংলাদেশের মন্ত্রী-আমলাদের ঘরে লাল টেলিফোন আছে। কিন্তু সেসব আর আলোচ্য কোনো বিষয় নয়। এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বেগম খালেদা জিয়ার লাল টেলিফোন। এই লাল টেলিফোন নিয়েই বিরোধী নেতার ওপর আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বারবার বলেছেন, আপনার লাল টেলিফোন ঠিক আছে। বিরোধী নেতা জবাবে বলেছেন, ওটা ঠিক নয়। ওটা ডেড কয়েক বছর ধরে। আপনি আপনার লোক পাঠিয়ে দেখে নিন।
এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য গেছে ১০ মিনিটের। তারপরও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ওটা ঠিক আছে।
যা হোক, এই লেখাটি যখন লিখছি তখনও বিরোধীদলীয় নেতার লাল টেলিফোনটি ঠিক হয়নি। ওটা যথারীতি ডেড হয়ে পড়ে আছে।
অতীতমুখিনতা, ১৫ আগস্ট
ফোনালাপে প্রধানমন্ত্রী বারবার বিরোধীদলীয় নেতাকে অতীতে টেনে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটির যে কালচার আওয়ামী লীগ এদেশে চালু করেছে, সেই জায়গা থেকে প্রধানমন্ত্রী একচুলও সরেননি। অন্যপাশে প্রধানমন্ত্রীকে বিরোধীদলীয় নেতা বারবার আহ্বান করেছেন সামনে তাকাতে। বলেছেন, অতীত নিয়ে পড়ে থাকলে আমরা সামনে এগোতে পারব না।
তিনি বলেছেন, আপনাদের এই অতীতমুখী রাজনীতি আমরা সমর্থন করি না। আপনারা এই রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসুন। আসুন, এই কালচার বাদ দিয়ে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করি আমরা।
এর পরই প্রধানমন্ত্রী স্বভাবসুলভ স্টাইলে নিয়ে এসেছেন তার পারিবারিক প্রসঙ্গ। অতি অবশ্যই ১৫ আগস্ট।
১৫ আগস্ট কেন বিরোধীদলীয় নেতা জন্মদিন পালন করেন—এইখানে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ। তার ভাষায় খুনিদের উত্সাহিত করতেই কেক কাটা হয়। বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন, তাহলে কি ১৫ আগস্টে এদেশে কেউ জন্মগ্রহণ করতে পারবে না? তারা কি তাদের জন্মদিন পালন করবে না?
প্রধানমন্ত্রীর কথা— জন্ম নিতে পারে, কিন্তু কেক কাটতে পারবে না।
এই ধরনের কথার কী জবাব হতে পারে? সঙ্গত কারণেই বেগম জিয়া বলেছেন, এগুলো বাদ দেন। এইসব বলবেন না।
রাষ্ট্রের ভয়ঙ্কর সঙ্কটকালেও প্রধানমন্ত্রী তার পারিবারিক ব্যথা-বেদনার ঊর্ধ্বে উঠতে পারলেন না। অথচ এই ১৫ আগস্টে জন্মগ্রহণ করার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা তিনি জারি করেননি এখনও। তাছাড়া ভারত ওই দিন তাদের স্বাধীনতা দিবস সাড়ম্বরে উদযাপন করে। সেই দেশটি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর খুবই প্রিয়। তার পরও তাদের হাইকমিশনারকে ডেকে আজতক কোনো ধমক-টমকও দেননি।
ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া
প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার প্রচারিত ও প্রকাশিত ফোনালাপ নিয়ে দেশজুড়ে দেখা দিয়েছে তুমুল প্রতিক্রিয়া।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, এটা পরিষ্কারভাবে রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত বিষয়। একজনকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসে তার অনুমতি ছাড়া ঘটা করে তারই বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশ রীতিমত অপরাধ। এটা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও সংবিধান প্রদত্ত নাগরিক অধিকারের সরাসরি লঙ্ঘন।
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা আলমগীর বলেছেন, এটা অন্যায়। এটার মধ্য দিয়ে এই কথাই আবারও প্রমাণিত হলো, এই সরকার সংলাপের বিষয়ে মোটেই আন্তরিক নয়।
বেগম জিয়ার অজান্তে তার বক্তব্য রেকর্ড করে, প্রধানমন্ত্রীর চারপাশে টিভি ক্যামেরা দিয়ে পুরো বিষয়টি ধারণ করে, তার প্রচার ও প্রকাশ করা নিয়ে দেশের সুশীল সমাজেরও আক্কেল গুড়ুম। তারা এই অপকর্মে বিস্ময় ও বিরক্তি চেপে রাখতে পারছেন না।
ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, এটা নাগরিক অধিকার ও সংবিধান প্রদত্ত নাগরিক মর্যাদার পরিপন্থী। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এটা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপর হস্তক্ষেপ।
ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, এই কাজের পেছনে যে উদ্দেশ্য কাজ করেছে, তা হলো, বেগম জিয়াকে বেকায়দায় ফেলা, (অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ঘটনাটি উল্টো ঘটেছে) তাকে রাজনৈতিকভাবে কাবু করা। এটা সম্পূর্ণ অসত্ উদ্দেশ্যে প্রণোদিত।
কিন্তু আমাদের মাননীয় তথ্যমন্ত্রী অতি উচ্চ কণ্ঠে বলেছেন, দুই নেত্রীর আলাপ ব্যক্তিগত বিষয় নয়। এটা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি। এটা জানার অধিকার জনগণের আছে।
তবে ভারতের সঙ্গে গত পাঁচ বছরে যেসব চুক্তি হয়েছে, সেসব জানার অধিকার হয়তো জনগণ রাখেন না!
সাফ কথা/খাস কথা
তথ্যমন্ত্রীর কথাবার্তা ঠাস ঠাস। আওয়ামী লীগের মতো বিশাল দলের দায়িত্ব তার ঘাড়ে। তাকে নিমক-হালাল হতে হবে। মাহবুব আলম হানিফের মতো 'বিশাল' নেতাকে তিনি নক আউট করে রিংয়ের বাইরে ফেলে দিয়েছেন। —কৃতজ্ঞতা বলেও তো একটা কথা আছে। সেই কৃতজ্ঞতাই তার কাণ্ডজ্ঞানের মাথা পুরোটাই চিবিয়ে খেয়ে ফেলেছে। নইলে তার বক্তব্য ও বাস্তবতার মধ্যে যে ফাঁক, তা তিনি অনুধাবন করতে পারতেন। তবে তিনি যে মাপের ইঞ্জিনিয়ার, তাতে এত বড় ইঞ্জিন চালাতে কাণ্ডজ্ঞান হারানো খুব বড় দোষের নয়।
কে জিতলেন কে হারলেন
কে জিতলেন, কে হারলেন— সেই বিচার দেশের জনগণ করবে? কিন্তু মোটাদাগে, আমরা যা বুঝলাম তা হলো, প্রধানমন্ত্রী তার গদি রক্ষায় 'সর্বদলীয়' পথেই এগুবেন। অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেতাও 'নিরপেক্ষ-নির্দলীয়' সরকারের দাবি ছেড়ে সর্বদলীয় গিলোটিনের নিচে মাথা পাততে যাবেন না।
অতএব সংঘাত-সংঘর্ষ চলবেই, আর বাড়বে কোলাহল। কুিসত কদর্যতা।
এ ছাড়া আওয়ামী শাসকদের এই মোনাফেকি আচরণের কারণে বড় দুই দলে অবিশ্বাস ও সন্দেহ আরও বাড়বে। আল্লাহ চাহে তো এর ফলে প্রতিহিংসার নোংরা পথ ফেলে দেশের রাজনীতির সেরাতুল মুসতাকিমের পথে যাওয়ার আপাতত কোনো সম্ভাবনা নেই।
মাঝখান থেকে চিড়ে-চ্যাপ্টা হবে দেশের শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। আর জনগণকে সরকারের কৃপা ভিখারি বুদ্ধিজীবীদের আস্ফাালন আরও অধিক ভিক্ষুক চ্যানেলগুলোতে দেখতে হবে আরও কিছু দিন।
এই বুদ্ধিজীবীদের বিরাট অংশকে ছাত্র-শিক্ষকরা পিটিয়ে তাড়িয়ে দিতে চাইলেও এরা নির্লজ্জ বেহায়ার মতো আঁকড়ে ধরে থাকে ভাইস চ্যান্সেলরের পদ। হায়রে পদ! কবে যে জাতি ওইসব আবর্জনাগুলোকে ভাগাড়ে ফেলে দিতে জেগে উঠবে, কে জানে।
উদ্বেগ আর উত্তেজনায় অস্থির দেশবাসী উত্কণ্ঠিত হয়ে রইলেন। শেষ পর্যন্ত নানা উতোর চাপানের পর দু'জনের কথাও হলো।
কী কথা হলো? সর্বদলীয় না নিরপেক্ষ সরকার? টানা হরতাল নাকি সমঝোতা? এসব নিয়ে গুজবের গরু যখন গাছে উঠে গেছে, সেই সময় গরুর মাথায় পানি ঢেলে সেই তথ্যমন্ত্রী গর্বিত ভঙ্গি নিয়ে আবার ঘোষণা করলেন—দুই নেত্রীর ফোনালাপের পুরোটাই গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। যথারীতি প্রকাশ ও প্রচার করা হলোও।
এই কথাগুলোর মানে কী? আবার গুঞ্জন আবার অপার কৌতূহল। তার মানে, দুই নেত্রীর ফোনালাপ বিষয়টি পুরোটাই রেকর্ড করেছিল সরকার? আইনের দিক থেকেও কাজটি অন্যায়, বিশেষ করে সরকারের নিজের প্রণীত তথ্যপ্রযুক্তি আইনের তো সরাসরি লঙ্ঘন এই কর্মটি। তাহলে সরকার কি নিজের কান নিজেই কাটতে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বিষয়টি
নীতি-নৈতিকতার বিচারেও গর্হিত অপরাধ। একজনকে আলাপের কথা বলে তার অজান্তে তার বক্তব্য রেকর্ড করে রাখা তো অত্যন্ত নিম্নশ্রেণীর প্রতারণা। সেখানেই শেষ নয়, চুরি করে রেকর্ড করে, সেই রেকর্ড করা ফোনালাপ গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা তো ভয়ানক অপকর্ম।
তাহলে তো বিএনপির চেয়ারপারসন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ঠিকই বলেছিলেন— বিষাক্ত সাপকে তবু বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু আওয়ামী লীগকে কখনও বিশ্বাস করা যায় না। এরা তো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রতারণা করে, দেশের মুক্তিপাগল জনগণকে না জানিয়ে ভারতের সঙ্গে অতি গোপনে ৭টি চুক্তি করে বাংলাদেশকে ভারতের হাতে বন্ধক দিয়ে এসেছিল। এরাই তো স্বাধীনতার লাভের পর গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতাকে জ্যান্ত কবর দিয়ে, সেই কবরের ওপর গড়ে তুলেছিল 'বাকশালী সৌধ'। এরাই তো ১৯৯৬-এর নির্বাচনে মাথায় হেজাব পরে হাতে তসবি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ফাঁকি দিয়ে দখল করেছিল রাষ্ট্রক্ষমতা। এরাই তো এবার ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের কথা বলে ফখরুদ্দীন-মইন উর পথ ধরে বাংলাদেশকে পরিণত করেছে দুর্নীতি আর দুঃশাসনের ভাগাড়ে। বাংলাদেশের মানুষের ভোটে জিতে সেই মানুষকেই মৌলবাদী, জঙ্গিবাদী সাম্প্রদায়িক বলে তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে জেল-জুলুম আর খুন। মামলার পর মামলা। যে কারণে গোটা দেশ আজ পরিণত হয়েছে বধ্যভূমিতে।
আইন ও নীতি-নৈতিকতা যাই বলুক, সে কথা আমাদের সরকারের গায়ে-গতরে লাগে না? লাগলে তো দুর্নীতিবাজকে 'দেশপ্রেমিক' উপাধি দেয়া যেত না। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের 'রাজাকার' বলে গালি দেয়া যেত না।
আমাদের পাঠক কুমিল্লার এক কলেজশিক্ষক মাহবুব ফোনে জানতে চেয়েছেন যে, এই ফোনালাপটি গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করে তথ্যমন্ত্রী ইনু তো শেখ হাসিনাকে ডুবিয়েছেন। তিনি তো এর আগে বারবার বলেছেন, খালেদা জিয়াকে 'মাইনাস' করে দেবেন। এখন দেখা যাচ্ছে তার এই 'মাইনাস' দোষ মজ্জাগত। তারা এর আগে শেখ মুজিবকে মাইনাস করার জন্য বন্দুক নিয়ে গোপনে গোপনে ঘুরে বেড়াতেন। তারপর রক্ষীবাহিনী যখন তাদের হাড়হাড্ডি ভেঙে দিয়েছিল, তারপর মাথা খোলে। তারপর সেই খোলা মাথা নিয়ে এই রাজনৈতিক এতিমটি আশ্রয় নেয় আওয়ামী লীগের নৌকায়। পদলেহনের পুরস্কার হিসেবে জুটে যায় মন্ত্রিত্ব। কিন্তু মজ্জাগত 'মাইনাস' রোগের কারণে এখন শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার মতলব করছেন।
বললাম, ভাইরে, ইনু যদি শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চান, তাহলে আপনার সমস্যা কী? এটা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ব্যাপার?
মাহবুব বললেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কি এটা বুঝবে?
বললাম, না বুঝলেও সমস্যা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতার ফোনালাপ জনসমক্ষে আনার সিদ্ধান্ত তো নিশ্চয়ই একা ইনু সাহেব নেননি— এর সঙ্গে নিশ্চয়ই খন্দকার মোশতাকের প্রিয় আমলা এইচ টি ইমাম, হলমার্কের সঙ্গে নাম উঠে আসা কীর্তিমান ড. মসিউর, বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধুর সৈনিক বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বিশিষ্ট আওয়ামী লীগার বেগম মতিয়া চৌধুরী, মাদরাসাকে প্রজনন কেন্দ্র বলার মহাপুরুষ ব্যারিস্টার শফিকের মতো লোকদের অনুমোদন নিয়েই হয়তো এই ফোনালাপ প্রচার ও প্রকাশ করা হয়েছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের জনাব জাফরউল্লাহ জানিয়েছেন, দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েই ওটা প্রচার ও প্রকাশ হয়েছে। মাহবুব বললেন, কিন্তু তারা কেউ তো আওয়ামী লীগের মেইন স্ট্রিমের লোক নন।
বললাম, না হলে না হবে, কিন্তু বাস্তবতা হলো তারাই এখন সত্যিকারের মুজিববাদী।
মাহবুব শুধু একলা নন, এ রকম হাজার হাজার পাঠকের নানা জিজ্ঞাসা এখন দেশের আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, আওয়ামী লীগের একজন তো জানালেন, আমরা জিতে গেছি। প্রায় একই ভাষায় বিএনপিরও এক নেতা আমাদের জানিয়েছেন, ভাই যে যাই বলুক, দেশনেত্রী প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি কথার জবাবে যেভাবে ছক্কা হাঁকিয়েছেন, তা বহুদিন আমার মনে থাকবে।
একজন বক্তব্য শেষ করলেন, জয় হাসিনা বলে। আরেকজন বললেন, খালেদা জিয়া জিন্দাবাদ।
প্রথমেই 'দা'
ফোনালাপ যেভাবে চ্যানেলগুলোতে এসেছে, তাতে আমার মতো অনেকেই 'ভুল শুনছি কি না'— ভেবে বিশেষভাবে পর্দায় তাকাতে বাধ্য হয়েছেন।
সংলাপের শুরুতেই ছিল 'দা'। ফলে লগি-বৈঠার যুগ পেরিয়ে দায়ের খোঁজে এবার কলকাতায় পৌঁছলাম কি না ভেবে, নতুনভাবে রিমোট হাতে নিয়েছেন অনেকেই। পরে দেখা গেল চ্যানেলটি কলকাতার নয়, সরকারেরই কোনো গৃহপালিত ব্যক্তির চ্যানেল। ফলে চোখ ও কানের বিবাদ মিটে গেলে বোঝা গেল আমরা কলকাতাতে নেই। বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার ঢাকাতেই আছি— তবে তার 'দা' হাতে নিয়ে নয়। এ 'দা' হলো 'দাদা'। যা ভাইয়ের বদলে এই সরকারের বদৌলতে এখন বাংলাদেশে আসন গেড়ে বসেছে।
প্রধানমন্ত্রীর এডিসি ইমরান সম্বোধন করছেন, বিরোধীদলীয় নেতার ব্যক্তিগত সচিব শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে। বলছেন, শিমুল দা, শিমুল দা...। আমরা অবাক হলেও শাসকদের কিছু যায়-আসে না। তারা তাদের কলকাতার 'দা' ঠোঁটে নিয়ে ঢাকার ভাইদের গুষ্টি নিপাত করে ছাড়ছেন এখন অহরহ। আমার যেটা জানতে ইচ্ছা করে তা হলো, 'দা' কি এখন রাষ্ট্রীয় সম্বোধন হিসাবে ব্যবহারের জন্য আইন করে দেয়া হয়েছে? যদি তা হয়ে থাকে, ভালো। তা না হলে প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে এসব 'দা' ছুড়ে দেয়ার সাহস সরকারি কর্মচারীরা পায় কোত্থেকে?
হায় লাল টেলিফোন
বাংলাদেশের মন্ত্রী-আমলাদের ঘরে লাল টেলিফোন আছে। কিন্তু সেসব আর আলোচ্য কোনো বিষয় নয়। এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বেগম খালেদা জিয়ার লাল টেলিফোন। এই লাল টেলিফোন নিয়েই বিরোধী নেতার ওপর আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বারবার বলেছেন, আপনার লাল টেলিফোন ঠিক আছে। বিরোধী নেতা জবাবে বলেছেন, ওটা ঠিক নয়। ওটা ডেড কয়েক বছর ধরে। আপনি আপনার লোক পাঠিয়ে দেখে নিন।
এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য গেছে ১০ মিনিটের। তারপরও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ওটা ঠিক আছে।
যা হোক, এই লেখাটি যখন লিখছি তখনও বিরোধীদলীয় নেতার লাল টেলিফোনটি ঠিক হয়নি। ওটা যথারীতি ডেড হয়ে পড়ে আছে।
অতীতমুখিনতা, ১৫ আগস্ট
ফোনালাপে প্রধানমন্ত্রী বারবার বিরোধীদলীয় নেতাকে অতীতে টেনে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটির যে কালচার আওয়ামী লীগ এদেশে চালু করেছে, সেই জায়গা থেকে প্রধানমন্ত্রী একচুলও সরেননি। অন্যপাশে প্রধানমন্ত্রীকে বিরোধীদলীয় নেতা বারবার আহ্বান করেছেন সামনে তাকাতে। বলেছেন, অতীত নিয়ে পড়ে থাকলে আমরা সামনে এগোতে পারব না।
তিনি বলেছেন, আপনাদের এই অতীতমুখী রাজনীতি আমরা সমর্থন করি না। আপনারা এই রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসুন। আসুন, এই কালচার বাদ দিয়ে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করি আমরা।
এর পরই প্রধানমন্ত্রী স্বভাবসুলভ স্টাইলে নিয়ে এসেছেন তার পারিবারিক প্রসঙ্গ। অতি অবশ্যই ১৫ আগস্ট।
১৫ আগস্ট কেন বিরোধীদলীয় নেতা জন্মদিন পালন করেন—এইখানে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ। তার ভাষায় খুনিদের উত্সাহিত করতেই কেক কাটা হয়। বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন, তাহলে কি ১৫ আগস্টে এদেশে কেউ জন্মগ্রহণ করতে পারবে না? তারা কি তাদের জন্মদিন পালন করবে না?
প্রধানমন্ত্রীর কথা— জন্ম নিতে পারে, কিন্তু কেক কাটতে পারবে না।
এই ধরনের কথার কী জবাব হতে পারে? সঙ্গত কারণেই বেগম জিয়া বলেছেন, এগুলো বাদ দেন। এইসব বলবেন না।
রাষ্ট্রের ভয়ঙ্কর সঙ্কটকালেও প্রধানমন্ত্রী তার পারিবারিক ব্যথা-বেদনার ঊর্ধ্বে উঠতে পারলেন না। অথচ এই ১৫ আগস্টে জন্মগ্রহণ করার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা তিনি জারি করেননি এখনও। তাছাড়া ভারত ওই দিন তাদের স্বাধীনতা দিবস সাড়ম্বরে উদযাপন করে। সেই দেশটি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর খুবই প্রিয়। তার পরও তাদের হাইকমিশনারকে ডেকে আজতক কোনো ধমক-টমকও দেননি।
ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া
প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার প্রচারিত ও প্রকাশিত ফোনালাপ নিয়ে দেশজুড়ে দেখা দিয়েছে তুমুল প্রতিক্রিয়া।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, এটা পরিষ্কারভাবে রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত বিষয়। একজনকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসে তার অনুমতি ছাড়া ঘটা করে তারই বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশ রীতিমত অপরাধ। এটা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও সংবিধান প্রদত্ত নাগরিক অধিকারের সরাসরি লঙ্ঘন।
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা আলমগীর বলেছেন, এটা অন্যায়। এটার মধ্য দিয়ে এই কথাই আবারও প্রমাণিত হলো, এই সরকার সংলাপের বিষয়ে মোটেই আন্তরিক নয়।
বেগম জিয়ার অজান্তে তার বক্তব্য রেকর্ড করে, প্রধানমন্ত্রীর চারপাশে টিভি ক্যামেরা দিয়ে পুরো বিষয়টি ধারণ করে, তার প্রচার ও প্রকাশ করা নিয়ে দেশের সুশীল সমাজেরও আক্কেল গুড়ুম। তারা এই অপকর্মে বিস্ময় ও বিরক্তি চেপে রাখতে পারছেন না।
ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, এটা নাগরিক অধিকার ও সংবিধান প্রদত্ত নাগরিক মর্যাদার পরিপন্থী। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এটা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপর হস্তক্ষেপ।
ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, এই কাজের পেছনে যে উদ্দেশ্য কাজ করেছে, তা হলো, বেগম জিয়াকে বেকায়দায় ফেলা, (অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ঘটনাটি উল্টো ঘটেছে) তাকে রাজনৈতিকভাবে কাবু করা। এটা সম্পূর্ণ অসত্ উদ্দেশ্যে প্রণোদিত।
কিন্তু আমাদের মাননীয় তথ্যমন্ত্রী অতি উচ্চ কণ্ঠে বলেছেন, দুই নেত্রীর আলাপ ব্যক্তিগত বিষয় নয়। এটা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি। এটা জানার অধিকার জনগণের আছে।
তবে ভারতের সঙ্গে গত পাঁচ বছরে যেসব চুক্তি হয়েছে, সেসব জানার অধিকার হয়তো জনগণ রাখেন না!
সাফ কথা/খাস কথা
তথ্যমন্ত্রীর কথাবার্তা ঠাস ঠাস। আওয়ামী লীগের মতো বিশাল দলের দায়িত্ব তার ঘাড়ে। তাকে নিমক-হালাল হতে হবে। মাহবুব আলম হানিফের মতো 'বিশাল' নেতাকে তিনি নক আউট করে রিংয়ের বাইরে ফেলে দিয়েছেন। —কৃতজ্ঞতা বলেও তো একটা কথা আছে। সেই কৃতজ্ঞতাই তার কাণ্ডজ্ঞানের মাথা পুরোটাই চিবিয়ে খেয়ে ফেলেছে। নইলে তার বক্তব্য ও বাস্তবতার মধ্যে যে ফাঁক, তা তিনি অনুধাবন করতে পারতেন। তবে তিনি যে মাপের ইঞ্জিনিয়ার, তাতে এত বড় ইঞ্জিন চালাতে কাণ্ডজ্ঞান হারানো খুব বড় দোষের নয়।
কে জিতলেন কে হারলেন
কে জিতলেন, কে হারলেন— সেই বিচার দেশের জনগণ করবে? কিন্তু মোটাদাগে, আমরা যা বুঝলাম তা হলো, প্রধানমন্ত্রী তার গদি রক্ষায় 'সর্বদলীয়' পথেই এগুবেন। অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেতাও 'নিরপেক্ষ-নির্দলীয়' সরকারের দাবি ছেড়ে সর্বদলীয় গিলোটিনের নিচে মাথা পাততে যাবেন না।
অতএব সংঘাত-সংঘর্ষ চলবেই, আর বাড়বে কোলাহল। কুিসত কদর্যতা।
এ ছাড়া আওয়ামী শাসকদের এই মোনাফেকি আচরণের কারণে বড় দুই দলে অবিশ্বাস ও সন্দেহ আরও বাড়বে। আল্লাহ চাহে তো এর ফলে প্রতিহিংসার নোংরা পথ ফেলে দেশের রাজনীতির সেরাতুল মুসতাকিমের পথে যাওয়ার আপাতত কোনো সম্ভাবনা নেই।
মাঝখান থেকে চিড়ে-চ্যাপ্টা হবে দেশের শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। আর জনগণকে সরকারের কৃপা ভিখারি বুদ্ধিজীবীদের আস্ফাালন আরও অধিক ভিক্ষুক চ্যানেলগুলোতে দেখতে হবে আরও কিছু দিন।
এই বুদ্ধিজীবীদের বিরাট অংশকে ছাত্র-শিক্ষকরা পিটিয়ে তাড়িয়ে দিতে চাইলেও এরা নির্লজ্জ বেহায়ার মতো আঁকড়ে ধরে থাকে ভাইস চ্যান্সেলরের পদ। হায়রে পদ! কবে যে জাতি ওইসব আবর্জনাগুলোকে ভাগাড়ে ফেলে দিতে জেগে উঠবে, কে জানে।
__._,_.___