Banner Advertise

Sunday, April 19, 2015

[chottala.com] 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' কি নিশ্চিত



'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' কি নিশ্চিত
কাজী সিরাজ
শেয়ার - মন্তব্য (0) - প্রিন্ট
অ-অ+

ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছুদিন ধরে সারা দেশেই একটা স্বস্তিদায়ক পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে এই স্বস্তি কতটা স্থায়ী হবে, তা নির্ভর করছে নির্বাচন কেমন হবে তার ওপর। নির্বাচন কমিশন ও সরকারের আচরণ-উচ্চারণই নির্ধারণ করবে নির্বাচনের প্রকৃত চরিত্র। তাদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বলা হচ্ছে নির্বাচন সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ হবে; সব পক্ষের জন্য নির্বাচনী প্রচারণা এবং সংশ্লিষ্ট সব কাজে 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' থাকবে। কিন্তু ইতিমধ্যেই সরকারি ও সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সমর্থিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মেয়র পদপ্রার্থীরা বলছেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ওয়াদা সম্পূর্ণই ধাপ্পা। সিটি নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও প্রধানমন্ত্রী থেকে মন্ত্রী-মিনিস্টার কেউই এই নির্বাচনের আচরণবিধি মানছেন না বলে জোরালো অভিযোগ উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বলেছেন, সংসদ চাইলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনও দলীয় ভিত্তিতে হতে পারে; তবে যতক্ষণ তা বলবৎ হচ্ছে না ততক্ষণ চলমান আইন মানতে হবে। 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' কি নিশ্চিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাই শুধু নন, সচেতন নাগরিক সমাজ থেকেও প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী করে দুই সিটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করলেন? কিভাবে তিনি গণভবনে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরীর ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে দল সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিলেন? কেমন করে ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমাদানকারী প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীকে বললেন, 'আমার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন!' এর সবই স্থানীয় সরকার নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থী বলে প্রতিভাত। কী করল নির্বাচন কমিশন? এটা না একটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান? এখনো কাগজে-কলমে যে দায়িত্ব ও ক্ষমতা আছে তাতে কমিশনের হাত অনেক লম্বা। যত বড় ক্ষমতাশালীই হোন না কেন, যে কারো বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অপরাধে কমিশন কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু শাসকদলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগেই ঘোষিত প্রার্থীদের পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণার অপরাধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ তো দূরের কথা, একটা টুঁ শব্দও উচ্চারণ করল না কাজী রকিবউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনারদের পদ সাংবিধানিক পদ। মৃত্যু ও পদত্যাগের মাধ্যমেই একমাত্র তাঁদের পদ শূন্য হতে পারে, অন্য কোনোভাবে নয়। মেয়াদকালে তাঁদের চাকরিচ্যুত করার কোনো সুযোগও নেই। তার পরও তাঁদের ভূমিকায় শুধু বিরোধী দল কেন, সাধারণ মানুষও হতাশ। চট্টগ্রামে মন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে সরাসরি আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান। একটি হোটেলে ১০ লাখ টাকা খরচ করে আয়োজিত এক সভায় তিনি দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, চট্টগ্রামে যেকোনো মূল্যে জিততেই হবে। দিন পনেরো আগে টিভি চ্যানেল একাত্তরের জনপ্রিয় টক শো একাত্তর জার্নালে আমার সঙ্গে সহ-আলোচক ছিলেন জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। সিটি নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গ নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে অনুষ্ঠান চলাকালেই জানিপপের চট্টগ্রামের সংগঠক ও মন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়টি নিশ্চিত করলেন। কাজেই বিএনপি নেতা আগে অভিযোগ করেছিলেন বলে একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রতিপক্ষকে হেয় করার 'অপপ্রয়াস' বলার কোনো সুযোগ নেই। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ইসি কর্তৃক নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার আগেই শাসকদলের প্রার্থীরা বিলবোর্ড, নিয়ন সাইন, বহুরঙা পোস্টার, ব্যানার, বেলুন পোস্টার ইত্যাদির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছেন আগাম নির্বাচনী প্রচারে। অথচ তা স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালার পরিপূর্ণ লঙ্ঘন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্বয়ং বলেছিলেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগে অর্থাৎ ৮ এপ্রিলের আগে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচারণা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু সরকারদলীয় প্রভাবশালী প্রার্থীরা তা কানেই তোলেননি। এমনকি বিলবোর্ডসহ বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম (পোস্টারসহ) দুই দিনের মধ্যে সরিয়ে ফেলার যে নির্দেশ দিয়েছিলেন সিইসি, সেসবের অনেকই এখনো রাস্তায় দেখা যায়। কী করেছে নির্বাচন কমিশন? কারো বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি।

আরেকটি চিত্র উদ্বেগজনক। বিএনপি সমর্থিত অনেক কাউন্সিলর প্রার্থী পুলিশ ও শাসকদলীয় ক্যাডারদের দাবড়ানোর চোটে বাসাবাড়িতে তো নয়ই, এলাকায়ও থাকতে পারছেন না। কোথাও নির্বাচনী প্রচারে নামার খবর পেলে সেখানেও দাবড়াচ্ছে পুলিশ। এ রকম কিছু ঘটনা মিডিয়ায়ও এসেছে। গত ১০ এপ্রিল শুক্রবার বিকেল ৩টায় কামরাঙ্গীরচরের ঝাউচর এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় বেরিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী শহিদুল হক। এলাকার কিছু বাসিন্দাও তাঁর সঙ্গে প্রচারে শামিল হয়। খবর পেয়ে ধেয়ে আসে ২০-২৫ জনের একদল পুলিশ। ধাওয়া দেয় শহিদুল হক এবং তাঁর সঙ্গীদের। নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন তিনি। একই দিন সন্ধ্যায় (৭টায়) কামরাঙ্গীরচরের করিমাবাদ এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় নামেন বিএনপি সমর্থিত ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট রাশেদ আলম খোকন। তাঁকেও ধাওয়া দেয় পুলিশ। পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য খোকনসহ তাঁর সমর্থকরা নৌকায় বুড়িগঙ্গা পার হয়ে কেরানীগঞ্জে পালিয়ে যান। চট্টগ্রামে ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর দিদারুর রহমান লাবু পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পুলিশের ভয়ে। 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' কি নিশ্চিতনামতেই পারছেন না প্রচারে। ৩৭ নম্বর হালিশহর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান কাউন্সিলর হাসান মুরাদ। বন্দর ও ইপিজেড থানায় তিনটি রাজনৈতিক মামলার জের ধরে তাঁকেও প্রচারে নামতে দিচ্ছে না পুলিশ। চট্টগ্রামে বিএনপি সমর্থিত আরো আট প্রার্থীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা দেওয়া হয়েছে ৪২টি। পুলিশের ভয়ে সবাই তটস্থ। মোটামুটি অবস্থাটা হচ্ছে- তিন সিটিতেই বিএনপি সমর্থিত বেশির ভাগ প্রার্থী সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীদের মতো নির্বাচনী প্রচারে সমান সুযোগ পাচ্ছেন না। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা যাতে ভোটারদের কাছে পৌঁছতে না পারেন সে জন্যও নানা অপতৎপরতা চলছে বলে অভিযোগ খুব জোরালো। শুধু প্রার্থীরা নন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রার্থীর স্ত্রী-সন্তানদেরও হয়রানি করছে নানা বাহিনী। হুমকি-ধমকিও চলছে বলে অভিযোগ আসছে অবিরাম। চট্টগ্রামের আরেকটি ঘটনার কথা উল্লেখ না করলেই নয়। বিএনপি সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী মঞ্জুর আলমের একটি প্রচার মিছিলে বায়েজিদ এলাকার জালালাবাদে হামলা চালায় সরকার সমর্থকরা। তাতে আহত হন সাবেক হুইপ ও বিএনপি নেতা ওয়াহিদুল আলম এবং স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর স্ত্রীসহ বেশ কিছু মহিলা সমর্থক। এটা জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। নির্বাচন কমিশনের স্থানীয় কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে, কিন্তু কোনো প্রতিকার নেই। যা বলা হয়েছে কেউ কেউ রসিকতা করে সে সম্পর্কে বলছেন, কমিশন যেন বলছে, ''ছিঃ, এসব 'কলে না' বাবারা, লোকে 'খালাপ' বলবে যে!''

আবার শুরুর প্রসঙ্গেই ফিরে যাই। তিন সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বস্তির ভাব বিরাজ করার কথা বলেছি। এখনো তা নষ্ট হয়ে যায়নি। কিন্তু নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এবং সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আচরণ সম্পর্কে শুরুতে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা, দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রচার-প্রচারণার বিষয়সহ ঢাকা-চট্টগ্রামের যে চারটি কেস স্টাডি উল্লেখ করেছি তা থেকে এই আশাজাগানিয়া নির্বাচন নিয়ে একেবারে নিরুদ্বিগ্ন থাকা যাচ্ছে না। দিন যত যাচ্ছে, উদ্বেগ তত বাড়ছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে আওয়ামী লীগের নির্বাচন সমন্বয় কমিটির দুই হেভিওয়েট নেতা কাজী জাফর উল্যাহ এবং কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেছেন, তাঁরা দুই মেয়র ও ৫০ কাউন্সিলর জেতানোর জন্য কাজ করছেন। যেকোনো দল তা চাইতেই পারে। কিন্তু শাসকদলের এই চাওয়ার সঙ্গে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা যদি প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীদের জন্য প্রতিকূল ও ভয়ংকর হয়ে ওঠে তখন নির্বাচনটি কেমন হবে তা নিয়ে মানুষের মনে নানা সন্দেহ-সংশয় দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক নয়। এই লেখা যখন লিখছি, (১৭.০৪.২০১৫ রাত ৯টা) তখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মির্জা আব্বাস সশরীরে নির্বাচনী প্রচারে শামিল হতে পারবেন কি না। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা দুটি রাজনৈতিক মামলায় (গাড়ি পোড়ানো, নাশকতার) উচ্চ আদালতে দ্বিধাবিভক্ত রায়ের কারণে বিষয়টি ঝুলে আছে। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক তাঁকে তিন সপ্তাহের জামিন দিলেও কনিষ্ঠ বিচারক জামিন দিতে রাজি হননি। প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্তের পর বোঝা যাবে মির্জা আব্বাস নিজে তাঁর নির্বাচনী প্রচারে নামতে পারবেন কি না। এখন পর্যন্ত তিনি যে আভাস দিয়ে রেখেছেন তাতে বলা চলে, জামিন না হলে আত্মগোপনে থেকেই, এমনকি গ্রেপ্তার হলেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন। শাসকদলের দুই মেয়র পদে এবং ৫০ কাউন্সিলর পদে জয়ের অভীপ্সা বিএনপিও জানে। তাদের বেশির ভাগ কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ভালোভাবে সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের মতো সমান সুযোগ পেয়ে, সমানতালে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না, তাও জানেন দলের হাইকমান্ড। কিন্তু তার পরও তাঁরা ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছেন এবং এখনো ভোটযুদ্ধে আছেন এটা একটা ভালো খবর। কিন্তু বৈরী হাওয়া যদি সহনীয় সীমা অতিক্রম করে, সরকারপক্ষে দুই মেয়র ও ৫০ কাউন্সিলর জয়ের বাসনা যদি 'দখলের' বেপরোয়া তাণ্ডবের দিকে ধাবিত হয়, তাহলে পরিস্থিতি কি এখন যেমন আছে তেমন থাকবে? আমাদের সবার মনে থাকার কথা যে অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে নবম সংসদ নির্বাচনটি ২০০৮ সালের ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, নানা দ্বিধাদ্বন্দ্বের পরও তাতে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। কিন্তু বেশ প্রচার ছিল যে বিএনপির 'হাওয়া ভবন' কেন্দ্র চায়নি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসুক। তারা জেতার ব্যাপারে সন্দিহান ছিল এবং চেয়েছিল ফাঁকা মাঠে গোল দিতে। ৩০০ আসনে মহাজোট প্রার্থীরা তাঁদের মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছিলেন। কিন্তু উচ্চ আদালতের চেম্বার জজ মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির হু. মু. এরশাদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ অবৈধ ঘোষণার পর মহাজোট সেই নির্বাচন বর্জন করে। হাওয়া ভবনের 'কলের পুতুল' বলে পরিচয় লাভকারী অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ আর সেই নির্বাচন করাতে পারেননি। বিএনপি মির্জা আব্বাসের ব্যাপারে উচ্চ আদালতের বিভক্ত রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এখনো নির্বাচনে আছে, আশা করা যায় এই ইস্যুতে তারা নির্বাচন বর্জনের পথে হাঁটবে না। কিন্তু তাঁর পক্ষে যারা প্রচার অভিযানে নেমেছে, তাদের যদি হয়রানি করা হয়, পেট্রলবোমা হামলা বা নাশকতার মামলায় পাঁচ-সাতজন আসামির সঙ্গে অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ-সাত শ আসামির তালিকায় ফেলে যদি দলের তৃণমূলের পরীক্ষিত ও পরিশ্রমী নেতা-কর্মীদের পুলিশ ও সরকারি অন্যান্য ক্যাডার বাহিনী দাবড়ে বেড়াতে থাকে, তাহলে সন্দেহ জাগবে এসবের পেছনে ক্ষমতাসীনদের হয়তো কোনো কারসাজি আছে। কোনো কোনো মন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো কোনো কর্মকর্তা ফৌজদারি মামলা এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কথা বলে নির্বাচন প্রার্থী ও তাঁদের কর্মীদের পুলিশি হয়রানিকে 'হালাল' সার্টিফিকেট দিচ্ছেন। অর্থাৎ তাঁদের নির্বাচন করা এবং প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করাটা 'হারাম'। তা হলে নির্বাচন কমিশন তাঁদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করল কিভাবে? তাঁদের নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করে দিলেই তো ল্যাঠা চুকে যেত। নির্বাচনের জন্য প্রার্থিতা দাখিলের ফরমে প্রার্থীরা নিশ্চয়ই কোনো তথ্য গোপন করেননি। তাহলে এই প্রশ্ন কি সংগত নয় যে নির্বাচন কমিশন যাঁকে বা যাঁদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য যোগ্য ঘোষণা করবে, তিনি বা তাঁরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সমান সুযোগ পাবেন না কেন? নির্বাচন কমিশন তো মামলা-মোকদ্দমার খবর জানে। তা ছাড়া অভিযুক্ত মানে তো অপরাধী নয়। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগে কাউকে শাস্তি দেওয়া তো অন্যায়। ফৌজদারি মামলার যেসব আসামি এখনো জামিন পাননি বা জামিন নেননি, তাঁদের মধ্যে নির্বাচন কমিশন যাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার যোগ্য বলে রায় দিয়েছে, তিনি বা তাঁরা যাতে নির্বিঘ্নে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ চালাতে পারেন, সেদিকে খেয়াল রাখা নির্বাচন কমিশনের অবশ্যকর্তব্য। তাঁরা যাতে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত জামিনে থাকতে পারেন সে ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কথা বলা খুবই জরুরি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তা করছে না। এতে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা।

তিন সিটি নির্বাচন নিয়ে আশার একটা বড় দিক ছিল জাতীয় রাজনীতির বিবদমান লক্ষ্যগুলোর মধ্যে, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান কার্যকর বিরোধী দলের মধ্যে মুখোমুখি সাংঘর্ষিক অবস্থার অবসানের স্বপ্ন। দ্বেষ-হিংসা আর হানাহানির রাজনীতির পঙ্কিলতা থেকে বেরিয়ে আসার একটা সুন্দর পথ খুলে দেবে এই নির্বাচন- এই প্রত্যাশা দেশবাসীর। ছোট্ট একটি নির্বাচন। এই নির্বাচনে সরকার অদলবদল হবে না। তবুও এই সিটি নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে বাইরের দুনিয়াও। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জাতিসংঘ মহাসচিব স্বয়ং এই নির্বাচন স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক ও যথাযথ ভূমিকা পালন করতে বলেছেন। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার একটি সমন্বিত প্যাকেজ উদ্যোগের অংশ এই তিন সিটি নির্বাচন। এই নির্বাচনের পর হয়তো একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য মধ্যবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হবে। কিন্তু এই নির্বাচনে সরকারি বৈরী আচরণ যদি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যায় এবং তা নিয়ন্ত্রণে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশন যদি অপারগ হয় কিংবা অক্ষম হয় অথবা সরকারকে সন্তুষ্ট করার জন্য কাজ করছে বলে বোঝা যায়, তা হলে এই নির্বাচনী আয়োজন ভবিষ্যতের জন্য বড় কোনো দুর্যোগ ডেকে আনতে পারে। এখনো সময় আছে নির্বাচন কমিশন তার সাংবিধানিক অস্তিত্ব প্রমাণ করার, নির্বাচনটাকে শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণমূলক ও অর্থপূর্ণ করার। বিএনপি নির্বাচনে না থাকলে এই নির্বাচন তার লক্ষ্য অর্জন করবে না, মানুষের আশা ও স্বপ্ন পূরণ হবে না। আশা করি, সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী বিএনপির নির্বাচন বর্জন করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে দেবেন না।

লেখক : সাংবাদিক



__._,_.___

Posted by: Shahadat Hussaini <shahadathussaini@hotmail.com>


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]





__,_._,___