Banner Advertise

Wednesday, April 8, 2015

[chottala.com] বিএনপি হারে নিজের কাছে, আ’লীগ হারে জনগণের কাছে



বিএনপি হারে নিজের কাছে, আ'লীগ হারে জনগণের কাছে

মাসুদ মজুমদার

০৮ এপ্রিল ২০১৫,বুধবার, ১৭:২২



মাসুদ মজুমদার

মাসুদ মজুমদার

301
 
0
 
0
Google
0
 
307
 
রাজনীতি নিয়ে যারা ভাবেন- তারা এখনো স্বস্তিবোধ করছেন না। খালেদা জিয়ার জামিন, বিএনপি অফিসের সামনে থেকে পুলিশ সরে যাওয়া, কর্মীদের তালা কেটে অফিসে ঢোকা, গোয়েন্দা নজরদারি পুনঃবাড়ানো, খালেদা জিয়ার অফিস ছেড়ে বাসভবনে যাওয়া- রাজনীতির কোনো গুণগত পরিবর্তন নয়। তবে একটি সম্ভাব্য পরিবর্তনের জন্য যেসব আলামত স্পষ্ট হওয়া জরুরি, সেই পূর্বশর্তগুলো ইতিবাচক সূচকের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখনো ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিকদের অফিস খুলে দেয়া হয়নি। দেশজুড়ে রাজনীতি পুলিশি নজরদারিতে রয়েছে। গণতন্ত্রকে অবারিত করে না দিলে স্থিতি ও সমঝোতার পরিবেশ সৃষ্টি হবে না। আইন করে কোনো দল নিষিদ্ধের যুৎসই সময়ও এটা নয়, আগে গণতন্ত্রের ভাষায় ও বাতাবরণে ফিরে আসা জরুরি।
বাতাসে সমঝোতা-সংলাপের একটা গুঞ্জন আছে। ২০ দলীয় জোটের সংহতি নষ্টের একটা অশুভ আলামতও স্পষ্ট। তার জের ধরে মধ্যবর্তী নির্বাচনের মৃদুমন্দ বাতাসের কথা বলা হচ্ছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যাপারে ওপরে যতটা নীরব- ভেতরে ততটাই সরব। মানুষের পরিবর্তনের মানসিকতার কোনো ছেদ পড়েনি। রাজনৈতিক মেরুকরণ এখন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অধিকতর পোক্ত অবস্থায় রয়েছে। সরকার বিরোধী দলকে ছাড় দিচ্ছে কি না- এটা কোনো জিজ্ঞাসা নয়। কারণ, দেশের ষাট শতাংশ মানুষকে প্রতিপক্ষে রেখে কোনো সরকার সুস্থিরভাবে বেশি দিন দেশ চালাতে পারে না। এ সরকার পারবে- তা মনে করার কোনো কারণ নেই। পুলিশপ্রধান বর্তমান সরকারপ্রধানকে বিশ্বনেতৃত্বের আসনে বসালেই হবে না, জনগণ তাকে দেশের প্রধান নির্বাহী হিসেবেও দেখতে চাচ্ছে কি না, সেটা মুখ্য বিষয়। চাটুকার, চাটার দল, মৌ সাহেবরা সব যুগে আগে চলে; এটা তাদের ভাগ্য ফেরানোর ফিকির মাত্র। তাই সরকার-বিরোধী দলের ভেতর কোনো 'আন হোলি' সমঝোতা আত্মঘাতী হয়ে দেখা দিতে পারে।
সিটি নির্বাচনে কেউ ওয়াকওভার পাবে না। এর সাথে রাজনীতির মিশ্রণ আছে- সেটা ষাট শতাংশের বেশি নয়। চল্লিশ শতাংশ ভোটার রাজনীতির বাইরে ভোটের জন্য ভোট দেবে। তবে সিটি নির্বাচন রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য একটা আগাম বার্তা দেবে। রাজনৈতিক মেরুকরণের একটা ধারণা মিলবে।
বিএনপি হয়তো জেনে-বুঝেই সিটি নির্বাচনের ফাঁদে পা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ জোট যেমন একটা অঘোষিত পরিকল্পনা নিয়ে পথ চলছে, তেমনি বিএনপি জোটও কিছু অদৃশ্য কৌশল মাথায় রেখে এগোচ্ছে। তবে এটা ঠিক, বিএনপি সিটি নির্বাচনে যেতে না চাইলেও যেতে বাধ্য হয়েছে। এখানে বিএনপির কৌশলগত হার স্পষ্ট। তবে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে হারাতে না পেরে আওয়ামী লীগ বাড়তি ঝুঁকি নিয়েছে। সেই তুলনায় বিএনপির তেমন কোনো ঝুঁকি নেই। যারা ভাবছেন কিংবা বলছেন, খালেদা জিয়া হেরে গেছেন, তারা বোকার স্বর্গে রয়েছেন। এমন এক অসম খেলায় আওয়ামী লীগ নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছে, যেখানে প্রতিপক্ষ হারলেও জিতে যাবে; আর সরকারি দল জিতে গেলেও
হেরে যাবে। বিএনপি জোটে একটা শক্ত লবি রয়েছে, যারা ভাবেন অপরিপক্ব আন্দোলনে আওয়ামী জোটের পতন হওয়া উচিত নয়, তারা আরো পচুক, তাদের রাজনীতিতে ধস নামুক, তাদের অরাজনৈতিক ও অগণতান্ত্রিক আচরণ আরো প্রকাশ পাক, মেদভুঁড়ি এতটা বড় করুক, যেন নিজেদের ভারে নিজেরা পড়ে যায়। তার আগে কৌশলী ধারায় ও থেমে থেমে আন্দোলন করে তাদের পচনকে ষোলোকলায় পূর্ণ করাই সমীচীন হবে।

বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী আদালতের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ তুলেছেন। দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে তিনি আদালত বর্জন করেননি। নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে তিনি আদালতে যাবেন- এটা ছিল তার পূর্বাপর বক্তব্য। সেই বক্তব্য ভুল ছিল না। সরকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে, তিনি যথারীতি বিনাবাধায় আদালতে গেছেন, জামিন নিয়ে ঘরে ফিরেছেন। এসব মামলা রাজনৈতিক ও হয়রানিমূলক। এখানে হার-জিতের কোনো প্রশ্ন নেই। হার-জিতের কথা ভাবলে সরকারি জোট অনেক আগেই হেরে বসে আছে। গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরে একটি প্রশ্নবিদ্ধ সরকার পরিচালনা কোনোভাবেই জিতে যাবার সূচক বা মানদণ্ড নয়। তার ওপর প্রশ্ন হচ্ছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে সরকার যে তামাশা করেছে, সেটা জনগণ উদোম অবস্থায় দেখল-জানাল। সরকারি দলের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় দিনের পর দিন পরোয়ানা থানায় যায় না। এমন কেন হয়, কারা করে তা জনগণ জানে না, কিন্তু এই জানার আগ্রহের ক্ষুধা ও অতৃপ্তির ক্ষত কোনো দিন আওয়ামী লীগ দূর করতে পারবে না। মামলাবাজির খেলায় সরকারি দলের এই হার অমোচনীয়।খালেদা জিয়া যদি হেরে যান, সেটা হারবেন নিজের কাছে; দলের কাছে। বিএনপি নিজের কাছে হেরে যাওয়ার আরো নজির আছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পার্থক্য এখানেই- আওয়ামী লীগ নিজের কাছে হারে না, হেরে যায় জনগণের কাছে। সবার স্মরণে রাখা ভালো- এত জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, হামলা-মামলার কারণে কোনো বিএনপি সমর্থক আওয়ামী সমর্থক হয়ে যায়নি। আওয়ামী লীগের কোনো ক্যাডারও দল পাল্টায়নি।
সুবিধাভোগীরা কাছিম স্বভাবেরই হয়, প্রতিকূল পরিবেশে খোলসের নিচে মাথা লুকায়। অনুকূল পরিবেশে মাথা বের করে এবং কদম কদম আগায়। অবশিষ্ট থাকে আমজনতা, যারা রাজনীতির অনুকূল পরিবেশে অর্থাৎ গণতান্ত্রিক পরিবেশ পেলে নিজেদের মতামত অকপটে প্রকাশ করে। ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে ক্ষোভ-অভিমান পুরোটাই ঝেড়ে দেয়। সরকার 'খুনি' বললেও জনগণ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অনুযোগ করেনি। অভিযোগ তুলেছে সরকারের বিরুদ্ধে। তারা গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। খালেদা জিয়া এই সরকারের অসহিষ্ণু ও জিঘাংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে কেন সবাইকে নিয়ে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না- সে জন্য জনগণের দুঃখবোধ আছে।

আওয়ামী লীগ শক্তির কাছে মাথা নোয়ায়, এখনো নুইয়ে আছে। গণতন্ত্রের পথে ক্ষমতায় যায়, এক মেয়াদের ব্যতিক্রম ছাড়া প্রথমেই গণতন্ত্র বধ করে। তারপর সরে যাওয়ার মইটা সরিয়ে নেয়। তারা জনগণকে মূল্যায়ন করেনি, করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এটাই শেষ কথা নয়; আওয়ামী লীগ এবার বেশুমার শত্রু বাড়িয়েছে। বিএনপি শত্রু কমিয়েছে। বিএনপির সুহৃদ, বন্ধু ও সমর্থকেরা দলীয় ব্যর্থতার জন্য অভিমানে ক্ষুব্ধ। সমর্থকেরা নীরবে সহমর্মিতা বাড়িয়েছে। এটা অক্ষমের করুণা নয়, বাড়তি সহমর্মিতা। তারা কেউ সমর্থন প্রত্যাহার করেনি। গণতান্ত্রিক পরিবেশে এই রাগ অনুরাগের স্তরে পৌঁছবে। অপর দিকে আওয়ামী লীগকে পথ ছেড়ে দিতেই হবে, কবে কখন সেটা সময় মেপে বলার মতো বিষয় নয়। এর আগের চারটি লেখায় রাজনৈতিক বিশ্লেষণ দিয়েছি- তা শতভাগ সত্যকে স্পর্শ
করবে ইনশাআল্লাহ। চূড়্ন্তাভাবে গণতন্ত্র হেরে যাবে না, হেরে যাবে সরকারি দল। বিএনপি হারলেও জিতবে কিভাবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা মাত্র। কাউন্ট ডাউনের যে বার্তা শুনিয়েছি, সেটা দুয়ে দুয়ে চারের মতো মিলে যেতে হবে। আপসহীন ধারার যে পথ রচিত হয়েছে, গন্তব্যে পৌঁছার জন্য সেই গুণগত পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নেই।

আওয়ামী জোট বিএনপি-জামায়াতের শখ্য ভাঙতে মরিয়া। কৌশলগত রাজনীতির স্বার্থে বিএনপি-জামায়াত পরস্পর থেকে দূরে সরেও যেতে পারে। এতে আওয়ামী জোটের নিয়তি পাল্টাবে না। কারণ, বাঙালি মুসলমানের জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনীতিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন হতে পারে; মন পরিবর্তন হওয়ার কোনো জায়গা নেই। তাই আজকের মেরুকরণকে যে ম্যাচিউরিটি বা পরিপক্বতা দিয়েছে, তার জন্য আওয়ামী জোট এক সময় পস্তাবে; অথচ কিছুই করার থাকবে না। বাঙালি মুসলমান মানচিত্রকে মা-বাবার জায়নামাজ মনে করে। নিজেদের স্বকীয় চৈতন্য লালনকে উপাসনা ভাবে। ঐতিহ্যকে নেয় প্রেরণা হিসেবে, প্রগতিকে ভাবে আরাধনা। আওয়ামী ধারার বাম প্রভাবিত জোট এবার এ জাতির
মন-মননে সজোরে যে আঘাতটি করেছে- সেটাই এখন গুণগত রাজনীতির নিয়ামক। জিয়া পরিবার আছে কি নেই, জামায়াত থাকল কি রূপান্তর হলো- তাতে মেরুকরণের এ ধারাটি কোনোভাবেই হোঁচট খাবে না। ঐতিহাসিক কারণেই স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে টিকে থাকবে। ফাঁসি, গুলি, খুন, অপহরণ, মামলা দিয়ে সেটা ঠেকানো যাবে না।



__._,_.___

Posted by: Shahadat Hussaini <shahadathussaini@hotmail.com>


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]





__,_._,___