আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি
05 Apr, 2015
সব দলই যদি এক হয় তাহলে বহু দল কেন? এক দল নিয়ে যদি রাজনীতি চলত, তাহলে বহু দলের ধারণার জন্ম হতো না। বহুদলীয় ব্যবস্থাকে রাজনীতিকেরা গণতন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন। একসময়ে সবার ভোটাধিকার ছিল না। এখন সবার ভোটাধিকার রয়েছে। এখনো গণতন্ত্রের চেয়ে ভালো কোনো পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। এখন কোনো দলীয় রাজনীতি করি না। একসময় অবিভক্ত ছাত্র ইউনিয়ন ও পরে ন্যাপ করেছি। আমি আমার চিন্তার জগতে
কোনো দলীয় বন্ধনে আবদ্ধ নই। দলীয় বন্ধনে চিন্তার স্বাধীনতা থাকে না। দলীয় কর্মী বা নেতা-উপনেতা থাকতে পারেন। দলীয় চিন্তাবিদ থাকতে পারেন কি না জানি না। দলীয় দর্শন থাকতে পারে বা এটা থাকাও জরুরি। দর্শন যদি না থাকে সে দল টিকতে পারে না। বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু আছে, বহু দলের মত প্রকাশের জন্য। কিন্তু অনেক দলের সৃষ্টির কারণ তেমন সুস্পষ্ট নয়। বহু দলের নামে বহু নেতার জন্ম হয়েছে। প্রফেসর বি চৌধুরী একটি দল করেছেন নিজের রাজনৈতিক অবস্থানকে রা করার জন্য। এ রকম বহু নেতাই নিজ অস্তিত্ব বা ব্যক্তিত্ব রার জন্য দল গড়েছেন। যেমন- মেনন ও ইনু সাহেবের দু'টি দলের তেমন কোনো ভোটব্যাংক নেই। তারা দু'জনই 'নৌকায় চড়ে বেঁচে আছেন'।
কয়েক ভাগে বিভক্ত জাসদ আছে, কিন্তু কেন, সে বিষয়ে হয়তো আপনাদের কোনো ধারণা নেই। রাজনীতির ছাত্রদের যদি প্রশ্ন করা হয়, তারাও উত্তর দিতে পারবেন না। বাংলাদেশে কত দল আছে তা জানার জন্য নির্বাচন কমিশনে যেতে হবে। কমিশন অনেক সময়
রাজনৈতিক কারণে দল গঠনে সহযোগিতা করে। যেমন-বিএনএফ। রাজধানীর গুলশানের সংসদ সদস্য বিএনএফের নেতা ও প্রতিষ্ঠাতা। অথচ তাকে কেউ চেনে না। জেনারেল মইনের সরকারের আমলে বিএনপিকে ভেঙে নতুন দল তৈরির চেষ্টা করেছিল নির্বাচন কমিশন। আইয়ুব খানের আমলে জেলা প্রশাসকেরা নির্বাচনে ভূমিকা পালন করতেন।
বহুবার লিখেছি, আওয়ামী মুসলিম লীগ বা আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতাদের ব্যর্থতার ফলে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আবেগ বা ন্যায়সঙ্গত অধিকারকে অস্বীকার করার ফলে কালক্রমে পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়। কার্যত পাকিস্তানি সামরিক শাসকেরা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল। ফলে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের একচ্ছত্র নেতায় পরিণত হন। বলা যায়, তিনিই বাঙালি মুসলমানের আশা-আকাক্সার প্রতীকে পরিণত হন। তিনি চেয়েছিলেন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে
সমস্যার সমাধান করতে। তিনি বা পূর্ব বাংলার কোনো নেতাই যুদ্ধ চাননি। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা জোর করে আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সারাজীবন মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। তবে মতায় এসে তিনি গণতন্ত্র ও বহুমতকে সহ্য করতে পারছিলেন না। তিনি একসময় একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করেন এবং প্রায় সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেন। পর্তুগাল, তথা সালাজারের দেশে এক সময় সব মত ও পথ বন্ধ ছিল। মুজিব মনে করতেন তিনি দেশের কল্যাণ চান, তাহলে এত দল ও মতের কী প্রয়োজন? একসময় তার মর্মান্তিক পতন ঘটেছে। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা সে সময় টুঁ-শব্দও করেননি, বরং কেউ কেউ তাকে
গালি দিয়েছেন। তার পতনের পর মতা চলে গেল দক্ষিণপন্থী আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোশতাকের কাছে। তার ক্যাবিনেটের সব মন্ত্রী ছিলেন আওয়ামী লীগের। পরে ক্ষমতা গ্রহণ
করেন সেনাপতি জিয়াউর রহমান। তিনি ছিলেন একজন সৎ, ধর্মপ্রাণ মানুষ। তিনিই '৭৫ সালে নিষিদ্ধ দলগুলোকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিলেন। তিনি সব ধরনের মত প্রকাশের পে ছিলেন। একসময় তিনি বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন অনেক দল ও মতের সমন্বয়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দল ছিল ন্যাপ। তখন ন্যাপের সভাপতি ছিলেন মশিউর রহমান যাদু মিয়া।
বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে দিল্লি থেকে ফিরে এসে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরলেন। তার আগমনের ক'দিন পর জিয়া নৃশংসভাবে নিহত হন। অনেকেই মনে করেন, ভারতের
গোয়েন্দা সংস্থা এ জন্য দায়ী। শেখ হাসিনা '৭৫ থেকে '৮০ সাল নাগাদ দিল্লিতে ভারত সরকারের মেহমান ছিলেন। অনেকেরই বিশ্বাস, তিনি ভারতীয় চাণক্য দর্শনে দীক্ষা লাভ করেন, যা তিনি এখন সফলভাবে প্রয়োগ করছেন। তার দর্শনই দলের দর্শন আর সরকারের দর্শন। রাষ্ট্রও এখন তা অনুসরণ করছে। এ ধরনের নীতির মূল দর্শন হলো আমার নিরঙ্কুশ নেতৃত্বে সরকার ও দল চলবে এমন কর্তৃত্ববাদী শাসকের সাথে বেশ কিছু পারিষদ ও
তোষক থাকে। তারা দিনরাত নেতা বা লিডারকে খুশি রাখার জন্য কথা বলে যায়। না বললে চাকরি থাকে না। ৫ জানুয়ারি দেশে নির্বাচনের নাটক হয়েছে। ভোটারের সাথে এ ধরনের নির্বাচনের সম্পর্ক থাকার প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, ভোট যা
পাওয়ার পেয়েছি, যথেষ্ট পেয়েছি। এটা তার দোষ নয়, তিনি তো সংবিধান মোতাবেক চলছেন। মানে তিনি আইন মেনে চলছেন। আমাদের সংবিধান বা নির্বাচনী বিধানে আছে, ভোট না পেলেও নির্বাচিত হওয়া যায়। যেমন- ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন। সারা জাতি জানতে পেরেছে, নির্বাচন কমিশন রাজি থাকলে ভোট না পেলেও নির্বাচিত, অর্থাৎ সংসদ সদস্য হওয়া যায়। বর্তমান সংসদে অর্ধেকের বেশি সদস্য নির্বাচিত নন। কেউ নির্বাচনে অংশ না নিলে কমিশন কী করবে? যারা অংশ নিয়েছেন তারাই 'বিজয়ী'। কমিশন স্বস্তির সাথে এমন একটি আরামদায়ক নির্বাচন জাতিকে উপহার দিয়েছে। কিন্তু এমন নির্বাচনের সরকারকে দেশবাসী বা বিদেশবাসী মেনে নেয়নি। তাতে কী আসে যায়? মানা না মানার কারণে সরকার গঠন বা মন্ত্রিপরিষদ মনোনয়নে বাধা নেই। জাতিসঙ্ঘ বা আমেরিকা তো বলেনি যে, আমরা এমন সরকারের সাথে কাজ করব না। সংবিধান বলেনি, মোট ভোটের অর্ধেক না পেলে সরকার গঠন করা যাবে না কিংবা নির্বাচনী এলাকার অর্ধেক ভোট না পেলে কেউ সংসদ সদস্য হতে পারবেন না। এখন তো এক ভোট না পেলেও চলে। মন্ত্রিপরিষদের প্রায় ৮০ ভাগই অনির্বাচিত। তবুও বলা হয়, তারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমাদের সংসদ সদস্যরা যেন ব্রাহ্মণ এবং ব্রহ্মার বরপুত্র। যারা ভোট দেন বা দেন না,
তারা শুধুই জনসাধারণ (ইতরজন)। তাদের নামের আগে 'মাননীয়' লেখা যাবে না। দেশের মালিক জনসাধারণ তো (কমনার্স বা ইতরজন)। মহান হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। সব বাহিনীই রাষ্ট্র আর সরকারকে প্রাণ দিয়ে রা করছে। বলা হচ্ছে, তারা গণতন্ত্রকে রা করছেন। জনসাধারণের কাজ হচ্ছে, সরকারকে খাজনা দিয়ে লালনপালন করা। এটাই বিধান। যদি নিয়মিত খাজনা না দেন তাহলে প্রশাসন আপনাকে ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা করতে পারে। এসব
কিছুই আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় জনগণ হচ্ছে নিছক প্রজা। এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থায় আওয়ামী লীগ এখন মতায়। কথিত মন্দের ভালো গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আওয়ামী লীগ ভালো করে শিখেছে এবং অনুশীলন করে চলেছে। '৫৪ সালের নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগকে আমরা দেখে আসছি। তখন তো বিএনপির জন্মই হয়নি। বলা হয়, এ দলটি নাকি সেনাছাউনিতে জন্মগ্রহণ করেছে। অপর দিকে '৪৯ সালে জমিদারবাড়ি রোজ গার্ডেনে উর্দু ও ইংরেজি শব্দ মিলিয়ে আওয়ামী লীগ করা হয়েছে। অর্থাৎ ষোলআনা বাঙালি হতে পারেনি। তখন যে কাগজটি আওয়ামী মুসলিম লীগ বা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করত, তার আরবি নাম ইত্তেফাক (একতা বা ঐক্য)। মওলানা ভাসানীর বিরাট অবদান রয়েছে ইত্তেফাক প্রতিষ্ঠায়। একসময় এতে ছাপা হতো 'প্রতিষ্ঠাতা আবদুল হামিদ খান ভাসানী'। মানিক মিয়া প্রথমে ইত্তেফাকের ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন ভাসানী সাহেব। আজ বঙ্গবন্ধুই সবকিছু। ইত্তেফাক ও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠালগ্নের ইতিহাস মুছে গেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আজ আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র নেত্রী। এটা একটি রাজনৈতিক পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। পেপসি কোলার মতো এর ব্র্যান্ড হচ্ছে নৌকা। এই ব্র্যান্ডের এজেন্সি নিয়ে লাখ লাখ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে। আওয়ামী লীগ এখন একটি বিশ্বাসের নাম। এই দলের দর্শন হচ্ছে ধর্মহীনতা (সেকুলারিজম), জাতীয়তা হচ্ছে বাঙালিত্ব (বাংলাদেশী নয়)। বিশ্বের সব বাংলাভাষীকে বাঙালি বলা হয়। তাহলে তাদের এই অবস্থান বাংলাদেশের রাষ্ট্রসত্তার সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ? ভারতের বাঙালি আর বাংলাদেশের বাঙালি একই জাতিসত্তা নয়। পশ্চিম বাংলার কালচারকেও আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের কালচার মনে করে। সেকুলারদের কাছে মুসলমানিত্ব বা ইসলামের গুরুত্ব বাঙালিত্বের চেয়ে কম। সম্প্রতি হার্ভার্ডের শিক্ষক নোয়াহ
ফেল্ডম্যান তার এক গবেষণা পুস্তকে বলেছেন, বর্তমান বিশ্বে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়েছে; সাথে সাথে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থাও। সমাজতন্ত্র এর কাছে পরাজিত হয়েছে। কারণ চিন্তার সমাজতন্ত্র আর বাস্তবের সমাজতন্ত্র এক নয়। ভাবনার জগতে বুদ্ধিজীবীদের মগজে
সমাজতন্ত্র আছে। গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদ থেকে রেহাই বা মুক্তির পথ খুঁজছে জগতের নিপীড়িত মানুষ। তিনি বলেছেন, যদি সুযোগ দেয়া হয় তাহলে একমাত্র ইসলাম এর মোকাবেলা করতে পারে। আরো বলেছেন, মুক্ত অবাধ নির্বাচন হলে জগতের বহু দেশে ইসলামি
সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশও তেমন একটি দেশ। কিন্তু এখানে ইসলামকে নিন্দিত করে ফেলেছে আওয়ামী লীগ ও এর বুদ্ধিজীবীরা। ভারতের বিখ্যাত লেখিকা অরুন্ধতী রায় পুঁজিবাদকে ভৌতিক কাহিনী বলেছেন। পুঁজিবাদ কিভাবে মানুষকে শোষণ করে, তার ওপর বহু বই রয়েছে। পুঁজিবাদীরা ইসলামকে ভয় করে। বাংলাদেশেও রাষ্ট্র ইসলামকে ভয় পায়। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ মোট প্রদত্ত ভোটের ৩০ থেকে ৪০ ভাগ পেয়ে থাকে। এর মানে,
৬০ ভাগ ভোটার আওয়ামী লীগের সমর্থক নয়। কিন্তু তারা বহু ভাগে বিভক্ত।
শুধু একবার ভাবুন, জিয়া সাহেব যদি বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দল রেখে না যেতেন, তাহলে আওয়ামী রাজনীতির মোকাবেলা করত কে? বিএনপিও স্বচ্ছ ও নিরপে নির্বাচন হলে মোট প্রদত্ত ভোটের ৪০ ভাগ পেয়ে থাকে। বিএনপি বাংলাদেশে ইসলামি
আদর্শঘনিষ্ঠ জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি করেছে। অপর দিকে আওয়ামী লীগ ধর্মমুক্ত রাজনীতিতে বিশ্বাস করে, যা ভারতও চায়। ফলে বিএনপি কার্যত আওয়ামী লীগের বিকল্প রাজনীতির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যারা আওয়ামী রাজনীতির বিরোধী, তাদের জন্য বিএনপি একটি প্লাটফরম। এ বিষয়ে আমার চিন্তা অন্যদের কাছে ভুলও হতে পারে। মাত্র ৩৫ বছরের মধ্যেই বিএনপি এমন অবস্থানে পৌঁছেছে। ১০০ ভাগ সুষ্ঠু ও নিরপে নির্বাচন হলে বিএনপি মতায় আসবে বলে আওয়ামী লীগ জানে। তাই ২০০৬ সাল থেকে নানা কারসাজি ও টালবাহানা করে যাচ্ছে। এমন রাজনীতির কারণে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। তবুও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভারতবিরোধী, সর্বশেষ তা ক্রিকেট-মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। সীমান্তে নিয়মিত বাংলাদেশী কৃষক ও ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের হত্যার ব্যাপারে দেশবাসী খুবই ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশের বহু ভূমি ভারত দখল করে রেখেছে। নদীগুলোর পানি বন্ধ করে রেখেছে। এ ব্যাপারে সরকার নীরব। যিনি সমুদ্র জয়
করেছেন, তিনি নদী জয় করতে পারেন না। ভারতের সাথে আমাদের ব্যবসায়-বাণিজ্যের ধরন হলো ১০ আর ১০০। ভারত আইনি ও বেআইনিভাবে ১০ হাজার কোটি টাকার মাল রফতানি করে বাংলাদেশে। অপর দিকে বাংলাদেশ রফতানি করে মাত্র ১০০ কোটি টাকার মতো। যাহোক এ ক্ষেত্রে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে নীতিগত কোনো ফারাক থাকে না।
খিস্তিখেউড়ের ব্যাপারে বিএনপি পাল্লা দিতে পারে না। খালেদা জিয়া হাজারো গালাগালির মধ্যেও চুপ করে থাকেন। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী একজন বাগ্মীসম্রাজ্ঞী ও মুখরা রমণী। বিএনপিকে একটি জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দল হিসেবে প্রমাণ করার জন্য আওয়ামী লীগ তোলপাড় করে চলেছে। চলমান দুঃখজনক পরিস্থিতির জন্য কে দায়ী, এ কথা সে একবারও মনে করেন না। রাজনীতিতে নাকি বিবেক থাকতে নেই। '৯৬ সালে শেখ হাসিনার আন্দোলনের
কারণে খালেদা জিয়া ফেব্রুয়ারির নির্বাচন করে পদত্যাগ করেছিলেন। সে আন্দোলন ছিল জ্বালাও-পোড়াওয়ের আন্দোলন। সে সময় সরকার মানুষ হত্যা করেনি; এখন নানাভাবে শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলছেন, 'খালেদা জিয়াই সব মানুষকে হত্যা করছেন। তিনিই হুকুমের আসামি।' বিরোধী দলকে কঠোর হাতে দমন করে মতায় টিকে থাকার এ নীতি গ্রহণ করেছেন কার পরামর্শে? ক্ষমতাসীনেরা মনে করেন, দমননীতি চালিয়ে
গণতন্ত্রের বর্তমান নমুনা তিনি জারি রাখতে পারবেন।যেহেতু দেশে কার্যত গণতন্ত্র নেই সেহেতু চলমান আন্দোলন সফল করতে খালেদা জিয়াকে ফলপ্রসূ পথ অবলম্বন করতে হবে। অন্যথায় দেশের মানুষের বিরাট তি হয়ে যাবে। স্বেচ্ছাচারী সরকার বেশি দিন মতায় টিকে থাকতে পারে না। আমার কাছে বিষয়টি খালেদা জিয়া বা বিএনপি নয়; বর্তমান সঙ্কটে সবচেয়ে বেশি তির সম্মুখীন হবে বাংলাদেশ ও এ জাতি।
লেখক : কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
কোনো দলীয় বন্ধনে আবদ্ধ নই। দলীয় বন্ধনে চিন্তার স্বাধীনতা থাকে না। দলীয় কর্মী বা নেতা-উপনেতা থাকতে পারেন। দলীয় চিন্তাবিদ থাকতে পারেন কি না জানি না। দলীয় দর্শন থাকতে পারে বা এটা থাকাও জরুরি। দর্শন যদি না থাকে সে দল টিকতে পারে না। বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু আছে, বহু দলের মত প্রকাশের জন্য। কিন্তু অনেক দলের সৃষ্টির কারণ তেমন সুস্পষ্ট নয়। বহু দলের নামে বহু নেতার জন্ম হয়েছে। প্রফেসর বি চৌধুরী একটি দল করেছেন নিজের রাজনৈতিক অবস্থানকে রা করার জন্য। এ রকম বহু নেতাই নিজ অস্তিত্ব বা ব্যক্তিত্ব রার জন্য দল গড়েছেন। যেমন- মেনন ও ইনু সাহেবের দু'টি দলের তেমন কোনো ভোটব্যাংক নেই। তারা দু'জনই 'নৌকায় চড়ে বেঁচে আছেন'।
কয়েক ভাগে বিভক্ত জাসদ আছে, কিন্তু কেন, সে বিষয়ে হয়তো আপনাদের কোনো ধারণা নেই। রাজনীতির ছাত্রদের যদি প্রশ্ন করা হয়, তারাও উত্তর দিতে পারবেন না। বাংলাদেশে কত দল আছে তা জানার জন্য নির্বাচন কমিশনে যেতে হবে। কমিশন অনেক সময়
রাজনৈতিক কারণে দল গঠনে সহযোগিতা করে। যেমন-বিএনএফ। রাজধানীর গুলশানের সংসদ সদস্য বিএনএফের নেতা ও প্রতিষ্ঠাতা। অথচ তাকে কেউ চেনে না। জেনারেল মইনের সরকারের আমলে বিএনপিকে ভেঙে নতুন দল তৈরির চেষ্টা করেছিল নির্বাচন কমিশন। আইয়ুব খানের আমলে জেলা প্রশাসকেরা নির্বাচনে ভূমিকা পালন করতেন।
বহুবার লিখেছি, আওয়ামী মুসলিম লীগ বা আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতাদের ব্যর্থতার ফলে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আবেগ বা ন্যায়সঙ্গত অধিকারকে অস্বীকার করার ফলে কালক্রমে পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়। কার্যত পাকিস্তানি সামরিক শাসকেরা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল। ফলে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের একচ্ছত্র নেতায় পরিণত হন। বলা যায়, তিনিই বাঙালি মুসলমানের আশা-আকাক্সার প্রতীকে পরিণত হন। তিনি চেয়েছিলেন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে
সমস্যার সমাধান করতে। তিনি বা পূর্ব বাংলার কোনো নেতাই যুদ্ধ চাননি। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা জোর করে আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সারাজীবন মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। তবে মতায় এসে তিনি গণতন্ত্র ও বহুমতকে সহ্য করতে পারছিলেন না। তিনি একসময় একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করেন এবং প্রায় সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেন। পর্তুগাল, তথা সালাজারের দেশে এক সময় সব মত ও পথ বন্ধ ছিল। মুজিব মনে করতেন তিনি দেশের কল্যাণ চান, তাহলে এত দল ও মতের কী প্রয়োজন? একসময় তার মর্মান্তিক পতন ঘটেছে। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা সে সময় টুঁ-শব্দও করেননি, বরং কেউ কেউ তাকে
গালি দিয়েছেন। তার পতনের পর মতা চলে গেল দক্ষিণপন্থী আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোশতাকের কাছে। তার ক্যাবিনেটের সব মন্ত্রী ছিলেন আওয়ামী লীগের। পরে ক্ষমতা গ্রহণ
করেন সেনাপতি জিয়াউর রহমান। তিনি ছিলেন একজন সৎ, ধর্মপ্রাণ মানুষ। তিনিই '৭৫ সালে নিষিদ্ধ দলগুলোকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিলেন। তিনি সব ধরনের মত প্রকাশের পে ছিলেন। একসময় তিনি বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন অনেক দল ও মতের সমন্বয়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দল ছিল ন্যাপ। তখন ন্যাপের সভাপতি ছিলেন মশিউর রহমান যাদু মিয়া।
বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে দিল্লি থেকে ফিরে এসে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরলেন। তার আগমনের ক'দিন পর জিয়া নৃশংসভাবে নিহত হন। অনেকেই মনে করেন, ভারতের
গোয়েন্দা সংস্থা এ জন্য দায়ী। শেখ হাসিনা '৭৫ থেকে '৮০ সাল নাগাদ দিল্লিতে ভারত সরকারের মেহমান ছিলেন। অনেকেরই বিশ্বাস, তিনি ভারতীয় চাণক্য দর্শনে দীক্ষা লাভ করেন, যা তিনি এখন সফলভাবে প্রয়োগ করছেন। তার দর্শনই দলের দর্শন আর সরকারের দর্শন। রাষ্ট্রও এখন তা অনুসরণ করছে। এ ধরনের নীতির মূল দর্শন হলো আমার নিরঙ্কুশ নেতৃত্বে সরকার ও দল চলবে এমন কর্তৃত্ববাদী শাসকের সাথে বেশ কিছু পারিষদ ও
তোষক থাকে। তারা দিনরাত নেতা বা লিডারকে খুশি রাখার জন্য কথা বলে যায়। না বললে চাকরি থাকে না। ৫ জানুয়ারি দেশে নির্বাচনের নাটক হয়েছে। ভোটারের সাথে এ ধরনের নির্বাচনের সম্পর্ক থাকার প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, ভোট যা
পাওয়ার পেয়েছি, যথেষ্ট পেয়েছি। এটা তার দোষ নয়, তিনি তো সংবিধান মোতাবেক চলছেন। মানে তিনি আইন মেনে চলছেন। আমাদের সংবিধান বা নির্বাচনী বিধানে আছে, ভোট না পেলেও নির্বাচিত হওয়া যায়। যেমন- ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন। সারা জাতি জানতে পেরেছে, নির্বাচন কমিশন রাজি থাকলে ভোট না পেলেও নির্বাচিত, অর্থাৎ সংসদ সদস্য হওয়া যায়। বর্তমান সংসদে অর্ধেকের বেশি সদস্য নির্বাচিত নন। কেউ নির্বাচনে অংশ না নিলে কমিশন কী করবে? যারা অংশ নিয়েছেন তারাই 'বিজয়ী'। কমিশন স্বস্তির সাথে এমন একটি আরামদায়ক নির্বাচন জাতিকে উপহার দিয়েছে। কিন্তু এমন নির্বাচনের সরকারকে দেশবাসী বা বিদেশবাসী মেনে নেয়নি। তাতে কী আসে যায়? মানা না মানার কারণে সরকার গঠন বা মন্ত্রিপরিষদ মনোনয়নে বাধা নেই। জাতিসঙ্ঘ বা আমেরিকা তো বলেনি যে, আমরা এমন সরকারের সাথে কাজ করব না। সংবিধান বলেনি, মোট ভোটের অর্ধেক না পেলে সরকার গঠন করা যাবে না কিংবা নির্বাচনী এলাকার অর্ধেক ভোট না পেলে কেউ সংসদ সদস্য হতে পারবেন না। এখন তো এক ভোট না পেলেও চলে। মন্ত্রিপরিষদের প্রায় ৮০ ভাগই অনির্বাচিত। তবুও বলা হয়, তারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমাদের সংসদ সদস্যরা যেন ব্রাহ্মণ এবং ব্রহ্মার বরপুত্র। যারা ভোট দেন বা দেন না,
তারা শুধুই জনসাধারণ (ইতরজন)। তাদের নামের আগে 'মাননীয়' লেখা যাবে না। দেশের মালিক জনসাধারণ তো (কমনার্স বা ইতরজন)। মহান হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। সব বাহিনীই রাষ্ট্র আর সরকারকে প্রাণ দিয়ে রা করছে। বলা হচ্ছে, তারা গণতন্ত্রকে রা করছেন। জনসাধারণের কাজ হচ্ছে, সরকারকে খাজনা দিয়ে লালনপালন করা। এটাই বিধান। যদি নিয়মিত খাজনা না দেন তাহলে প্রশাসন আপনাকে ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা করতে পারে। এসব
কিছুই আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় জনগণ হচ্ছে নিছক প্রজা। এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থায় আওয়ামী লীগ এখন মতায়। কথিত মন্দের ভালো গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আওয়ামী লীগ ভালো করে শিখেছে এবং অনুশীলন করে চলেছে। '৫৪ সালের নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগকে আমরা দেখে আসছি। তখন তো বিএনপির জন্মই হয়নি। বলা হয়, এ দলটি নাকি সেনাছাউনিতে জন্মগ্রহণ করেছে। অপর দিকে '৪৯ সালে জমিদারবাড়ি রোজ গার্ডেনে উর্দু ও ইংরেজি শব্দ মিলিয়ে আওয়ামী লীগ করা হয়েছে। অর্থাৎ ষোলআনা বাঙালি হতে পারেনি। তখন যে কাগজটি আওয়ামী মুসলিম লীগ বা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করত, তার আরবি নাম ইত্তেফাক (একতা বা ঐক্য)। মওলানা ভাসানীর বিরাট অবদান রয়েছে ইত্তেফাক প্রতিষ্ঠায়। একসময় এতে ছাপা হতো 'প্রতিষ্ঠাতা আবদুল হামিদ খান ভাসানী'। মানিক মিয়া প্রথমে ইত্তেফাকের ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন ভাসানী সাহেব। আজ বঙ্গবন্ধুই সবকিছু। ইত্তেফাক ও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠালগ্নের ইতিহাস মুছে গেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আজ আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র নেত্রী। এটা একটি রাজনৈতিক পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। পেপসি কোলার মতো এর ব্র্যান্ড হচ্ছে নৌকা। এই ব্র্যান্ডের এজেন্সি নিয়ে লাখ লাখ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে। আওয়ামী লীগ এখন একটি বিশ্বাসের নাম। এই দলের দর্শন হচ্ছে ধর্মহীনতা (সেকুলারিজম), জাতীয়তা হচ্ছে বাঙালিত্ব (বাংলাদেশী নয়)। বিশ্বের সব বাংলাভাষীকে বাঙালি বলা হয়। তাহলে তাদের এই অবস্থান বাংলাদেশের রাষ্ট্রসত্তার সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ? ভারতের বাঙালি আর বাংলাদেশের বাঙালি একই জাতিসত্তা নয়। পশ্চিম বাংলার কালচারকেও আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের কালচার মনে করে। সেকুলারদের কাছে মুসলমানিত্ব বা ইসলামের গুরুত্ব বাঙালিত্বের চেয়ে কম। সম্প্রতি হার্ভার্ডের শিক্ষক নোয়াহ
ফেল্ডম্যান তার এক গবেষণা পুস্তকে বলেছেন, বর্তমান বিশ্বে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়েছে; সাথে সাথে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থাও। সমাজতন্ত্র এর কাছে পরাজিত হয়েছে। কারণ চিন্তার সমাজতন্ত্র আর বাস্তবের সমাজতন্ত্র এক নয়। ভাবনার জগতে বুদ্ধিজীবীদের মগজে
সমাজতন্ত্র আছে। গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদ থেকে রেহাই বা মুক্তির পথ খুঁজছে জগতের নিপীড়িত মানুষ। তিনি বলেছেন, যদি সুযোগ দেয়া হয় তাহলে একমাত্র ইসলাম এর মোকাবেলা করতে পারে। আরো বলেছেন, মুক্ত অবাধ নির্বাচন হলে জগতের বহু দেশে ইসলামি
সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশও তেমন একটি দেশ। কিন্তু এখানে ইসলামকে নিন্দিত করে ফেলেছে আওয়ামী লীগ ও এর বুদ্ধিজীবীরা। ভারতের বিখ্যাত লেখিকা অরুন্ধতী রায় পুঁজিবাদকে ভৌতিক কাহিনী বলেছেন। পুঁজিবাদ কিভাবে মানুষকে শোষণ করে, তার ওপর বহু বই রয়েছে। পুঁজিবাদীরা ইসলামকে ভয় করে। বাংলাদেশেও রাষ্ট্র ইসলামকে ভয় পায়। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ মোট প্রদত্ত ভোটের ৩০ থেকে ৪০ ভাগ পেয়ে থাকে। এর মানে,
৬০ ভাগ ভোটার আওয়ামী লীগের সমর্থক নয়। কিন্তু তারা বহু ভাগে বিভক্ত।
শুধু একবার ভাবুন, জিয়া সাহেব যদি বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দল রেখে না যেতেন, তাহলে আওয়ামী রাজনীতির মোকাবেলা করত কে? বিএনপিও স্বচ্ছ ও নিরপে নির্বাচন হলে মোট প্রদত্ত ভোটের ৪০ ভাগ পেয়ে থাকে। বিএনপি বাংলাদেশে ইসলামি
আদর্শঘনিষ্ঠ জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি করেছে। অপর দিকে আওয়ামী লীগ ধর্মমুক্ত রাজনীতিতে বিশ্বাস করে, যা ভারতও চায়। ফলে বিএনপি কার্যত আওয়ামী লীগের বিকল্প রাজনীতির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যারা আওয়ামী রাজনীতির বিরোধী, তাদের জন্য বিএনপি একটি প্লাটফরম। এ বিষয়ে আমার চিন্তা অন্যদের কাছে ভুলও হতে পারে। মাত্র ৩৫ বছরের মধ্যেই বিএনপি এমন অবস্থানে পৌঁছেছে। ১০০ ভাগ সুষ্ঠু ও নিরপে নির্বাচন হলে বিএনপি মতায় আসবে বলে আওয়ামী লীগ জানে। তাই ২০০৬ সাল থেকে নানা কারসাজি ও টালবাহানা করে যাচ্ছে। এমন রাজনীতির কারণে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। তবুও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভারতবিরোধী, সর্বশেষ তা ক্রিকেট-মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। সীমান্তে নিয়মিত বাংলাদেশী কৃষক ও ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের হত্যার ব্যাপারে দেশবাসী খুবই ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশের বহু ভূমি ভারত দখল করে রেখেছে। নদীগুলোর পানি বন্ধ করে রেখেছে। এ ব্যাপারে সরকার নীরব। যিনি সমুদ্র জয়
করেছেন, তিনি নদী জয় করতে পারেন না। ভারতের সাথে আমাদের ব্যবসায়-বাণিজ্যের ধরন হলো ১০ আর ১০০। ভারত আইনি ও বেআইনিভাবে ১০ হাজার কোটি টাকার মাল রফতানি করে বাংলাদেশে। অপর দিকে বাংলাদেশ রফতানি করে মাত্র ১০০ কোটি টাকার মতো। যাহোক এ ক্ষেত্রে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে নীতিগত কোনো ফারাক থাকে না।
খিস্তিখেউড়ের ব্যাপারে বিএনপি পাল্লা দিতে পারে না। খালেদা জিয়া হাজারো গালাগালির মধ্যেও চুপ করে থাকেন। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী একজন বাগ্মীসম্রাজ্ঞী ও মুখরা রমণী। বিএনপিকে একটি জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দল হিসেবে প্রমাণ করার জন্য আওয়ামী লীগ তোলপাড় করে চলেছে। চলমান দুঃখজনক পরিস্থিতির জন্য কে দায়ী, এ কথা সে একবারও মনে করেন না। রাজনীতিতে নাকি বিবেক থাকতে নেই। '৯৬ সালে শেখ হাসিনার আন্দোলনের
কারণে খালেদা জিয়া ফেব্রুয়ারির নির্বাচন করে পদত্যাগ করেছিলেন। সে আন্দোলন ছিল জ্বালাও-পোড়াওয়ের আন্দোলন। সে সময় সরকার মানুষ হত্যা করেনি; এখন নানাভাবে শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলছেন, 'খালেদা জিয়াই সব মানুষকে হত্যা করছেন। তিনিই হুকুমের আসামি।' বিরোধী দলকে কঠোর হাতে দমন করে মতায় টিকে থাকার এ নীতি গ্রহণ করেছেন কার পরামর্শে? ক্ষমতাসীনেরা মনে করেন, দমননীতি চালিয়ে
গণতন্ত্রের বর্তমান নমুনা তিনি জারি রাখতে পারবেন।যেহেতু দেশে কার্যত গণতন্ত্র নেই সেহেতু চলমান আন্দোলন সফল করতে খালেদা জিয়াকে ফলপ্রসূ পথ অবলম্বন করতে হবে। অন্যথায় দেশের মানুষের বিরাট তি হয়ে যাবে। স্বেচ্ছাচারী সরকার বেশি দিন মতায় টিকে থাকতে পারে না। আমার কাছে বিষয়টি খালেদা জিয়া বা বিএনপি নয়; বর্তমান সঙ্কটে সবচেয়ে বেশি তির সম্মুখীন হবে বাংলাদেশ ও এ জাতি।
লেখক : কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
উৎসঃ নয়া দিগন্ত
__._,_.___