বাংলা স্কুলের বর্নাঢ্য বাংলা বর্ষবরণ-১৪২২ |
নিউজ-বাংলা ডট কম | |
মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল ২০১৫ | |
নতুন বছরকে বরণ করে নিতে ওয়াশিংটন প্রবাসী হাজারো বাংগালী গত ১৮ই এপ্রিল সমবেত হয়েছিল ভার্জিনিয়ার ম্যানাসাসস্থ নোভা কলেজ পরিসরে। বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ইঙ্ক(বিসিসিডিআই)/বাংলা স্কুলের আয়োজনে বাংলা বর্ষ বরণের প্রথম এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নোভার ম্যানাসাস ক্যাম্পাসে সহসাই জেগে উঠল অজস্র বাংগালী। আবহাওয়ার পূর্বাভাস ছিল বৃষ্টি হবার। কিন্তু সম্ভাবনার এই কালো মেঘের ছায়া নয় দিগন্ত জূড়ে ছিল আলো ঝলমল দিনের আভাস। বর্ণিল সাজ আর রুপ এবং লাবন্যময় রমনীয় মোহনীয় পরিবেশে সহসাই নোভার ম্যানাসাস ক্যাম্পাস জেগে উঠে বাংগালীর মনমাতানো উচ্ছ্বাস আর উৎসবের রংগের ছটায়। দলে দলে লোকজন আসছে। কারো পরনে ঢাকাই লংগী, মাথায় গামছা। কারো গায়ে ফতুয়া, কেহ পরেছে টোপর। আর মেয়েরা এসেছে দলে দলে রংগীন শাড়ীতে, কপালে লাল টিপ আর ঘোপায়, বেনীতে সুশোভিত ফুলের অপরুপ সজ্জায়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব জিয়া উদ্দিন, রাষ্ট্রদূত পত্নী , মিশনের উপ প্রধান এম মুহিত, মিনিষ্টার কালচারাল তৌফিক হাসানসহ ও বাংলাদেশ দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ। দুপুরে বৈশাখী ভোজের আয়োজন । পান্তা ইলিশ, রকমারী ভর্তা, ডালের চর্চরী আরো কত কি। বৈশাখী আনন্দ ভোজের পর আনন্দ মুখর পরিবেশে বিকেল চারটার দিকে শুরু হল বৈশাখী বর্ষ বরণের সাংষ্কৃতিক পর্ব। বিসিসিডিআই/বাংলা স্কুলের এই আনন্দ বৈশাখী মেলার অনুষ্ঠানের গ্র্যান্ড স্পসর ছিল ডাটা এন টেক। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিরিন আক্তারের নেতৃত্বে ডাটা এন টেকের কর্মী এবং শিক্ষার্থীরা মঞ্চে গিয়ে তাঁদের সাফল্য গাঁথা তুলে ধরেন। গ্রেটার ওয়াশিংটনের প্রানবন্ত উপস্থাপিকা শতরূপা বড়ুয়ার উপস্থাপনায় শুরুতেই ছিল বাংলাদেশ এবং আমেরিকার জাতীয় সংগীত। এরপর বিসিসিডিআই এর সভাপতি শামীম চৌধুরীর শুভেচ্ছা বক্তব্য। সার্বজনীন বাংগালীর প্রানের উৎসবের গ্রাম বাংলা আর নাগরিক চেতনার সাথে প্রবাসের নানা সীমাবদ্ধাতার মাঝেও দেখতে দেখতে লোকে লোকারন্য হয়ে উঠল পুরো উৎসব স্থল। বিসিসিডিআই এর এই জমজমাট বর্ষ বরণ অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল নব বর্ষের আগমনী গান- বাংলা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি বিসিসিডিআই এর কর্মকর্তা এবং অভিভাবকরা "এসো হে বৈশাখ এসো এসো" গানের সুরে সুরে বাংলা নব বর্ষ বরণ করে নিল আনন্দ হিল্লোলে। আর চিরাচিত এই গানের মুগ্ধতা ছড়িয়ে পরে বর্ষ বরণের আনন্দ ধারায় দর্শক শ্রোতার অন্তরেও। এর পর বনানী চৌধুরীর পরিচালনায় বাংলা স্কুলের ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা বোস ও আদৃতার "এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার" গানের সাথে দ্বৈত নাচ, মেরিল্যান্ডের সিনথিয়া, মূর্ছনা বড়ুয়ার একক নৃত্য আর মেরিল্যান্ডের মঞ্জুরী নৃত্যাংগনের ক্ষুদে শিল্পী পরিবেশন মনিশা এবং পিটারের "মধুকর গুঞ্জরি বাজে" গানের তালে নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে বৈশাখী অনুষ্ঠানের ঝাঁপি খোলে। এরপর বাংলা স্কুলের গানের শিক্ষক নাসের চৌধুরীর পরিচালনায় বাংলা স্কুল মিউজিক একাডেমীর ছাত্র-ছাত্রীরা একে একে পরিবেশন করে বেশ কিছু গান। শিশু-কিশোরদের এই পরিবেশনা উপস্থিত দর্শক শ্রোতারা করতালি দিয়ে উৎসাহিত করেন। পুরনি ও আনি বড়ুয়া বাউল গানের নৃত্য, এরপর বড়দের পরিবেশনায় ছিল গন সংগীতের আসর। কখনো কবিতার ছন্দে আবার কথার মালায় ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক ফকির সেলিমের উপস্থাপনায় সংগীত পরিবেশন করেন মেরিনা রহমান, নাসের চৌধুরী, শারমিন জাহাঙ্গীর দিনার মনি এবং উৎপল বড়ুয়া। এরপর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। শুরু হলো দিবা-রাত্রীর বৈশাখী বরণের রাতের পর্বের অনুষ্ঠানমালা। আলোর বর্ণিল ছটায় এই পর্বের শুরুতেই ছিল বাংলা স্কুলের ড্যান্স একাডেমীর নৃত্য শিল্পীদের মনমুগ্ধ পরিবেশনা। একাডেমীর নৃত্য শিক্ষিকা বনানী চৌধুরীর পরিচালনায় নৃত্য শিক্ষার্থীদের বর্নাঢ্য পরিবেশনা উপস্থিত সকলকে মুগ্ধ করে। এরপর ছিল গ্রেটার ওয়াশিংটনের জনপ্রিয় শিল্পী রুমা ভৌমিকের পরিচালনায় গানের প্রতিযোগিতা। ভিন্নধর্মী এই প্রয়াসটি দর্শক শ্রোতারা আগ্রহ নিয়ে উপভোগ করে। এরপর মঞ্চে এলো তরুন প্রজন্মের তারকা অন্তরা রহমান কাউরী। বাংলা স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী ও প্রাক্তন নাচের শিক্ষিকা কাউরীর ক্লাসিক্যাল নৃত্য অনুষ্ঠানে নতুন মাত্রা যোগ করে। সবশেষে মঞ্চে আসে গ্রেটার ওয়াশিংটনের জনপ্রিয় ব্যান্ড গ্রুপ- "আরিচা ঘাট" । গ্রুপের লীড সিংগার মিরো জঙ্গির ব্যান্ড সংগীতের তালে এবং দোলায় উপস্থিত দর্শকরাও নেচে গেয়ে এই আনন্দ সংগীতে সামিল হন। অনুষ্ঠানে লটারীতে "গো ঢাকা ডট কম" এর ঢাকা-ওয়াশিংটন টিকেট বিজয়ী হন ইনারা ইসলাম অবশেষে রাত দশটারও কিছু পরে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (বিসিসিডিআই) এর সভাপতি শামিম চৌধুরী। আগামীতে বাংলাদেশের সাথে একই দিনে বাংলা নববর্ষ পালনের ঘোষনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। এবারের বাংলা স্কুলের বৈশাখী উৎসবের আয়োজন ছিল ব্যাপক এবং বর্নাঢ্য যা সংখ্যাগত এবং গুনগত বিচারে পূর্বের সকল মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। তা সত্ত্বেয় অনুষ্ঠাটি ছিল বেশ দৈর্ঘ্য। আগামীতে এই বিষয়টি একটু খেয়াল রাখার জন্য অনুরোধ করা যাতেই পারে। |
__._,_.___