উলঙ্গ চেতনার প্রতিরোধে 'জঙ্গি'-সভ্যতার বিপ্লব কি আসছে?
রেজাউল করিম রনি
"নারী তার বয়স কতটা হয়েছে তা নির্ধারণ করে পুরুষরা তার শরীরের প্রতি কতটা আগ্রহ বা অনাগ্রহ দেখায় তার ভিত্তিতে। এতে মর্মাহত হওয়া কি খুব হাস্যকর হয়ে উঠবে না?" -মিলান কুন্দেরা, অত্মপরিচয় পৃষ্ঠা-২৬, অনুবাদ: উদয়শংকর বর্মা। এটা কোন নারী তা কুন্দেরা বলেন নাই। এটা আধুনিকতার বিকারের আটকে যাওয়া নারী। সব নারীকে এই প্রেমে দেখা যাবে না।
তার পরে ভায়োলেন্স হলে.. বা তাঁর যৌনতাকে অবৈধ ক্ষমতার সোনার ছেলেরা খোলা ময়দানে পাইতে টাইলে আমরা প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠি। অতি মধ্যবিত্তপনার কারনে, সব কিছুকে নিজেদের আনন্দ-বিনোদনের একচেটিয়া বাজারে পরিণত করার ফলে এবং জাতীয় চেতনার দীল্লীয়রুপান্তরের ফলে বাংলার অদি সমাজের, আমাদের নিজস্ব যে ব্যাসিক এথিক্যাল অর্ডার আছে তা ভেঙে পড়তেছে -সেই তর্ক না করে পুলিশের দোষ খুঁজি! হাস্যকর। অন্য দিকে বাঙালি সংষ্কৃতির ধর্ষকামিতা উদাম হয়ে যাওয়ার পরে প্রগতীশীল বিলাপ কৌতুকের মতো বাঁজতে থাকে চারপাশে।
ভুভুজেলার বিকট চিৎকার যেমন ভাবে নারীর অর্তচিৎকার আড়াল করে ধর্ষণকে নিরাপদ করে তুলে তেমনি ভাবে বামাচারী ও নারীবাদি হুজুগও নারীকে আরও ভালনারেবল/ অসহায় করে তুলে।
নারীবাদিরে কথা বলছি এই জন্য যে, এইসব শহুরে নারীবাদিরা রাজনীতি ও ক্ষমতার প্রশ্নকে ভুলে ভোগবাদি পন্য সংষ্কৃতির আদর্শের ভিতরে খারায়া নারী স্বাধীনতা নারী স্বাধীনতা বলে চিল্লায় আর ধর্ষণের পরিবেশকে ঘনায়িত করে তুলে। আইডেনটিরি একটা পলিটিকস আছে। ফলে আইডেনটিটির ভায়োলেন্সও আছে। সেটা যেমন ফ্যামিনিন/নারীময় রুপে হাজির হতে পারে আবার ম্যাসকুলিন/ব্যাটাগিরি রুপেও দেখা দিতে পারে। কিন্তু নারীবাদিরা খামখা পুরুষকে শত্রু মনে করে। এই লিঙ্গভিত্তিক শত্রুতা আবিস্কার নারীকে আরও বিপদগ্রস্থ করে তুলে।
কাজেই আমাদের দেশের এলিটিস্ট নারীবাদ ধর্ষণ সংষ্কৃতি কে উৎসাহিত করা এবং এনজিও ফান্ড আনা ছাড়া আর কোন কাজে আসছে না। ছাত্র লীগের গুন্ডাদের বিরুদ্ধে এইসব প্রগতী অন্ধরা কোন পজিশন নিবে না। খালি গালি দিবে হুজুরদের। যারা পর্দার কথা কয় এরা নাকি বর্বর? এই হলো কানাদের বিচার। অবৈধ সরকারের জারজ পান্ডাদের বিরুদ্ধে কোন রাজনৈতিক প্রতিরোধ এরা করবে না। এটাই তাদের পলিটিক্যাল সার্কেল। সো এই যে প্যারাডকস/বিভ্রম তৈরি করে নারীবাদিরা ফাও বিপ্লবীপনা করে তার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এটাকে বুঝতে না পারলে বিপদ আরও বাড়বে। ছাত্র ইউনিয়ন টাইপের বাপপ্রতিক্রিয়াশীলরা সমাজের নিজস্ব এথিক্যাল গঠন না বুঝে নারীকে ইউরোপের মতো আধুনিক হতে বলে.. ফলে নারী সম্মান পাইবার চোরাবালিতে পা দিয়ে নিজেরে 'স্বাধীনভাবে' পথে নামায়। আর তখন ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা 'পশ' মেয়েদের খোলা শরীর নিয়ে একটু আমোদ নিতে চেষ্টা করে। ফলে এই ঘনটায় প্রগতীবিদ প্রতিবাদের রেজাল্ট হলো অশ্বডিম্ব। এরাই এইসব নারীদের গোন্ডাদের হাতে তুলে দিচ্ছে। আর অদ্ভুত ভাবে এই ছেলেদের এখন কিছু সেকালুর পন্ডিত হিরো বলছে। এরা হিরো না এরা এই মেয়েদের দানবের ভোগের মুখে ছেড়ে দিয়েছে নিজেদের অলক্ষে।
সংষ্কৃতি চেতনা দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে মোকাবে করার এই হাস্যকর বিরদের নিয়ে আমরা কই যাবো? এই খোলা সংষ্কৃতির বাজারিদের অবদানের ফসল লুটে খায় 'অনকালচার' লীগ পুলাপান। এরা গ্রাম্য। এরা রবীন্দ্র সঙ্গিত জানে না। অমিত-লাবন্য টাইপের মিটিমিটি প্রেম করতে পারে না। সুন্দর 'মান' বাংলায় কথা বরতে পারে না। এরা হয়তো গোপালি, এরা অনেক খ্যাত, এরা স্মার্টলি বান্দবী বাগাতে পারে না। এরা লিভটুগেদারের মতো অধুনিক না। চোখের সামনে যৌন বৈষম্য এরা কেমনে মানবে? সংষ্কৃতি নাই তাতে কি ক্ষতা তো আছে.. সো ল্যাংটা করতে তো সমস্য নাই। একদিনই তো। প্রতি দিন তো তোমরাই করো। এই হল হিংসার হিসাব। কিন্তু যখন দেখে তাঁদের সংস্কৃতি কর্মিরা ( বামরা লীগের সংষ্কৃতি কর্মি বৈ তো নয়) এতো বড় খোলাবাজার তৈরি করছে তখন সে এটা নিজের মনে করে হামলে পড়ে। তা না হলে ৪০ মিনিট ধরে রাস্তার মধ্যে উলঙ্গ শরীর দেখার 'বিকার-সুখ' কোন ভাবেই সম্ভব না। তাও ঢাবিতে। আবার তখন চিৎকার করে বলছিল, হালা এই জিনিস প্রতিদিন পাবি না ভিডিও করে রাখ… এই যে ঘৃণা মিশ্রিত কামনা এর একটা ভয়াবহ যৌনহিংসার দিক আছে। এটা সমাজের হায়ারাকির মধ্যে তৈরি হয়। ফলে 'গ্রাম্য' যুবক ( লীগের বেশির ভাগ পুলাপান সাবঅল্টার্ন বা প্রান্ত শ্রেণী থেকে এসেছে, নেতারা না কিন্তু) পথে সুযোগ পাইলে এলিট শরীর খুবলে খায়। এটা তখন যৌন সন্ত্রাসের অতিরিক্ত হয়ে ওঠে। আপনি যদি জিগান তখন সেই যুবক জবান দিবে যে মেয়ে বব কাট দিয়ে শীরর দেখায় ঘুরে তারে তো মেয়ে মনে করা ঠিক না। তোরে সে নটি মনে করে। কিন্তু নটির কোন অধিকার সে দিবে না। জোর কররে যা তা করবে। আর সুশীল রা নটির অধিকার নিয়ে সোচ্চার হবে। দেখা যাবে সেই গ্রাম্য পুলা ক্ষমতা শ্রেণীর সাথে থাকলেও সে 'গোড়া' যুক্তি দিয়ে নিজের অপকর্ম জাস্টিফাই করতে চায়। সেদিন টিভিতে এটাই বলতে চাইছিলাম যে, এই ধরণের যৌন সন্ত্রাসের একটা ক্লাস রুপ ( নট ইকোনোকিম ক্লাস, এটা অনেক বেশি কালচারাল ক্লাস) আছে। এটাকে সুশীল-এলিট সংস্কৃতি দিয়ে চিনা যাবে না। এই ঘটনার জন্য দায়ী সংষ্কৃতি ব্যবাসায়ীরাও। যারা গ্রাম বাংলার উৎসবটাকে শহরের হিন্দিগানের মজবা করে তুলছে। এর রেডিক্যাল অংশ যেমন ছায়া নট যতই রবী-ঠাকুরীয় আদর্শ মতো এটা পালন করতে চান না কেন তা উনাদের দখলে নাই। দিল্লীর মাইর তাদের চিন্তার বাইর। এরা অনেক নিরিহ হয়ে গেছে করপোরেট জমানায়। আর্ট-কালচারের নামে এরা ব্যাসিকেলি ইজ্জত লুটার প্রকল্পই হাতে নিছে। এগুলাও আমার বলবার কথা না। আমি বলতে চাইছি অন্য কথা।
আপনি সংষ্কৃতি চেতনার নামে বল্পাহারা ভোগের সুযোগ তৈরির যে আরবান আয়োজন করছেন তাতে খোদ সংষ্কৃতিটাই একটা ধর্ষকামির চরিত্র পাইতেছে। আর যখন এটাকে ধর্মমতের ভিত্তিতে মানুষজন অস্বীকার করছে তখন আপনি তাদের জঙ্গি বলছেন। মানুষ নীতি বলে খ্রিস্টান নীতি বা পশ্চিমা হিউম্যানিজব বুঝে না। আমাদের এখানে এটা ইসলামের নীতির দিকে তাকিয়েই ঠিক করা হয়। ফলে এখানে ধার্মিকতার সাথে নৈতিকতা যুক্ত হয়ে ফাংশন করে। অনৈতিক ধার্মিক সমাজে যে না্ তা না। কিন্তু সে আরও ঘৃণ্য। ( যারা বৈশাখী অনুষ্ঠানের বিরুধীতা করে এরা জঙ্গি-ইনু) তো এই জঙ্গিরা যে আশংকা করছিল তা তো আপনার সংষ্কৃতি চেতনা সত্য সত্য ঘটাই দেখাইল। সারা দেশে কম বেশি এমন ঘটনা ঘটেছে। প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের কমবেশি উলঙ্গ করা হইছে। কিছু জানা গেছে কিছু জানা যায় নাই। তো সমাজের এই যে বিকারপ্রাপ্তি, এটাকে তো মানা যায় না, লোকে মানবে না। কারণ সমাজে সব ছাত্রলীগ বা প্রগতীচেতনার অংশ না। এর বাইরে সমাজের একটা এথিক্যাল বনডেজ বা নৈতিক বন্ধন আছে। ধর্মমতের ভিন্নতার বাইরেও একটা নৈতিক বন্ধন আছে। দেখবেন হিন্দু মেয়েরাও স্বাভাবিক পর্দা করে চলে জনসমাজে।
এই বনডেজ টিকাই রাখছে সাধারণ জনমানুষ। অবশ্যই এটা ধর্মচেতনার অংশ হিসেবেও মানুষ চর্চা করে। এখন মূলধারা সংস্কৃতি পালন করতে গিয়ে মেয়েরা রাস্তায় উলঙ্গ হয়ে যাবে সে এটা মানবে কেন? সে তো প্রতিরোধ করবে। এবং এই প্রতিরোধের ফর্মটা হবে রক্তাক্ত। উলঙ্গ চেতনার প্রতিরোধে এটা হবে জঙ্গিপনার বিপ্লব। এবং জনগন তাদের সাপোর্ট দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। মনে রাখবেন, রাজনীতি মানে নৈতিক এজেন্সি। নৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামই রাজনীতিকে জনগনের সাথে মিশায় 'গণ' করে তুলে। যা হোক সে প্রতিরোধ করবে, করছেও। এখন তার প্রতিরুধ আরও শক্ত হবে। জনভিত্তি পাবে। আর তখন লড়াইটা একটা জেহাদি রুপ নিবেই। কারণ তার কথার কোন মেরিট আপনি স্বীকার করেন না। তারে স্বীকারের কোন জরুরত আপনি ফিল করেন না। বরং তখায় কথায় তারে পশ্চাদপদ, জঙ্গি ইত্যাদি বলেন। আর তাদের নিয়া একদল ক্লাউন বুদ্ধিজিবি ব্যাবসাও করে। সারা দিন ডুগডুগি নিয়ে ঝুটি মোরগের মতো নাচে আর ইসলামী বিপ্লবের নসিহত করে! এখন আপনার মূল ধারা সংষ্কৃতির ধর্ষকামিতার বিরুদ্ধে তার যে প্রতিরোধ এটা হবে নয়া গণযুদ্ধ। সংক্ষেপে কইলাম।
শেষ করি পুরানা কথা বলে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক মুক্তি দূর কল্পনার বিষয় হয়ে রইলেও সংস্কৃতির প্রশ্নে রক্তাকক্তি শুরু হয়ে গেছে…এটা আরও ভয়াবহ রুপ নিবে আগামীতে।
দ্র. কুন্দেরার লেখা পড়তে পড়তে হাল্কা কমেন্ট। জানি প্রচুর দ্বিমত আছে। থাকবে। এটা আমার সংক্ষেপিত কমেন্ট। ফাইনাল কোন মতামত না। এই ইস্যু নিয়ে আমার বই 'যৌন রাজনীতির সামাজিক ব্যাকরণ' কে আমারর মতামত ধরা যাবে। বইটা এখনও প্রকাশিত হয় নাই। এটা ছাপতে অনুমতি লাগবে না। বানান দেইখা ছাপলেই হবে। সবাইকে ধন্যবাদ।
উৎসঃ এস নিউজ
__._,_.___