বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে লুটপাট ও সেøাগানের রাজনীতি সৃষ্টি হয়েছে
॥ কামরুল হাসান॥
আমাদের দেশে রাজনীতিতে পেশাদারিত্ব সৃষ্টি হয়নি। তবে লুটপাট ও সেøাগানের রাজনীতি সৃষ্টি হয়েছে। এর মূল কারণ বিচারহীনতার সংস্কৃতি ।
জিল্লুর রহমান এর উপস্থাপনায় গত ১৪ এপ্রিল মঙ্গলবার রাতে চ্যানেল আইয়ের 'তৃতীয় মাত্রা' অনুষ্ঠানে এসব মন্তব্য করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, মেয়রের দায়িত্ব সম্পর্কে যাদের ধারণা রয়েছে বা যারা সত্যিকারের জনকল্যাণে নিবেদিত তাদেরকে নির্বাচিত করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ মেয়র প্রার্থী ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করেন, জনকল্যাণে তেমন চেষ্টা করেন না। মেয়রদের মনে রাখা উচিত এ পদটি পাবলিক সার্ভিস। জনগণের সেবা দেয়াই উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। এরমধ্যে কিছু মামলা জামিন যোগ্য। কিন্তু আদালত যদি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা নির্বাচন কমিশনের কিছু করার থাকবে না। এছাড়াও দেশে বহু অজ্ঞাত মামলা রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইচ্ছা করলে এসব মামলায় যেকাউকে গ্রেফতার করতে পারে। সমতল নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটা বিরাট বাধা।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনকে যেসব ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তা প্রয়োগ করা দরকার। জোর করে প্রার্থী প্রত্যাহার করানো কিংবা কাউকে ভোট প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করা নির্বাচনী অপরাধ। এই অপরাধের জন্য ৬ মাস থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইচ্ছামত প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছে। দলের ইচ্ছার বাইরে যেসব প্রার্থী রয়েছেন তাদেরকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে। নির্বাচন কমিশন এ নিয়ে কোনো কথা বলেনি। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করছে না।
লুৎফর রহমান এর সঞ্চালনায় গত ১২ এপ্রিল রোববার রাতে আরটিভির 'আওয়ার ডেমোক্রেসি' অনুষ্ঠানে ড. বদিউল আলম মজুমদার আরো বলেন, ইসি চাইলে সুষ্ঠু নির্বাচন হতেই পারে। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে যথেষ্ট ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তারা ইচ্ছা করলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনকে যেসব ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তা প্রয়োগ করা দরকার। জোর করে প্রার্থী প্রত্যাহার করানো কিংবা কাউকে ভোট প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করা নির্বাচনী অপরাধ। এই অপরাধের জন্য ৬ মাস থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইচ্ছামত প্রার্থী সমর্থন দিচ্ছে। দলের ইচ্ছার বাইরে যেসব প্রার্থী রয়েছেন তাদেরকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে। নির্বাচন কমিশন এ নিয়ে কোনো কথা বলেনি। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করছে না।
তিনি বলেন, ডিসিসি নির্বাচনের আগে বিএনপি নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। গাজীপুর সিটি নির্বাচন শুরু হওয়ার আগেও এই চাপ সৃষ্টি করেছিল। সেই নির্বাচনে ভোট কারচুপির কথা উল্লেখ করেছে। কিন্তু এরপরেও তাদের সমর্থিত প্রার্থী জয় লাভ করেছেন। তখন ভোট কারচুপির প্রশ্ন ওঠেনি।
ড. বদিউল আলম মজুমদার আরো বলেন, নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
মেয়রের কাজ সমাবেশে লোকবল এবং দলের ক্যাডারদের ঠিকাদারী দেয়া
সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বর্তমানে বেশ উৎসবের আমেজ চলছে। তবে বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল প্রথম থেকেই অনৈতিক কাজ করে আসছে এবং তা হলো প্রার্থীদের নমিনেশন দিচ্ছে সম্পূর্ণ দল থেকে, তাও আবার ঘটা করে। এখানে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয়ই আইন অমান্য করছে। বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের যেহেতু শক্ত মেরুদণ্ড নেই, তাই এই নিয়মের মোকাবেলা করার শক্তিও তাদের নেই। বাংলাদেশে বিগত বিশ-ত্রিশ বছরের অভিজ্ঞতা এটাই বলে যে, মেয়রের কাজ হলো রাজনৈতিক দলের সমাবেশে লোকবল সরবরাহ করা এবং দলের ক্যাডারদের ঠিকাদারী দেয়া। এছাড়া মেয়রের কোনো কাজ নেই। 'রাজনীতির সংক্রান্তি' আলোচ্য বিষয়ের উপর টোয়েন্টিফোর চ্যানেলের 'মুক্তবাক' অনুষ্ঠানে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ একথা বলেন।
মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, নতুন বছরটা সুন্দরভাবেই শুরু হোক এটা আমাদের সকলের কাম্য। তবে পুরনো বছরটা আপাত দৃষ্টিতে একটা স্বস্তির মধ্য দিয়ে শেষ হলেও এর মধ্যে অনেক নাটকীয়তার আশ্রয় নেয়া হয়েছে। বর্তমান সমাজের এই স্বস্তির অবস্থা কতক্ষণ থাকবে এটাই সবার কাছে এখন বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন। এমনও হতে পারে যে বর্তমানে রাজনীতিতে যে স্বস্তির অবহাওয়া বিরাজ করছে, তা পরবর্তী কোনো ঝড়ের পূর্বাভাস? যেহেতু আমরা ঘর পোড়া গরু, তাই সিঁধুরে মেঘ দেখলেই ডরাই।
সিটি নির্বাচনে রাজনীতি করতে আসিনি
আমি দল সমর্থিত প্রার্থী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। দলের সমর্থন আছে কিনা এটা আমার জন্য সমস্যা নয়। কারণ সিটি নির্বাচনে রাজনীতি করতে আসিনি। নির্বাচনে জয় লাভ করতে পারলে আমার প্রথম পদক্ষেপ হবে ঢাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা। যা রাজনৈতিক সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়। গত ১৩ এপ্রিল সোমবার রাতে এটিএন নিউজ এর 'নিউজ আওয়ার এক্সট্রা' অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক।
আনিসুল হক বলেন, ঢাকা শহরে অনেক সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যাগুলো বহু বছর ধরে চিহ্নিত। আগে মনোযোগ সহকারে এসব সমস্যা দেখা হয়নি। কিন্তু এখন যেহেতু একটা দায়িত্বে এসেছি সেহেতু সমস্যাগুলো অনুভব করছি।
অনুষ্ঠানে ডিসিসি দক্ষিণ নির্বাচন '২০১৫' জাতীয় পার্টির দলীয় মনোনিত মেয়র পদপ্রার্থী সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন বলেন, আমি ঢাকা শহরে বড় হয়েছি। আমার রাজনৈতিক জীবন ৩২ বছর। আমি মানবসেবা করার জন্য একটি সচ্ছল পরিবার থেকে রাজনীতি করতে এসেছি । আমার ভিত হচ্ছে সততা।
তিনি আরো বলেন, আজ রাজনীতিতে মানুষ দু'ভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রথমে জনগণকে সচেতন হতে হবে। ভোটাররা দলকে বিবেচনা না করে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিক। একজন যোগ্য প্রার্থীর পক্ষে ঢাকার সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
কামারুজ্জামানের ফাঁসিতে ক্ষুব্ধরা বিএনপিকেই ভোট দিবে
পৃথিবীর সকল দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একটি অনন্য অধ্যায়। তবে কোনো দেশেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পূর্ণ নিজস্ব আইনি কার্যক্রম বা তদন্তের দ্বারা সম্পন্ন করেনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারিক প্রক্রিয়া অনেক জটিল এবং এই বিচার নিয়ে সমালোচনা হওয়া ভিন্ন কিছু নয়।
'আন্দোলন, নির্বাচন ও আগামীর রাজনীতি' আলোচ্য বিষয়ের উপর চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের 'মুক্তবাক' অনুষ্ঠানে সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. আসিফ নজরুল একথা বলেন। তিনি বলেন, কামারুজ্জামানের মৃত্যুতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে খুব একটা প্রভাব পড়বে না। কারণ গণজাগরণ মঞ্চের যখন জোয়ার ছিল, তখন বিএনপি সেই মঞ্চে যায়নি এবং ঐ সময় বাংলাদেশের অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, বিএনপি আজকের পর থেকে শেষ হয়ে যাবে এবং তারা আর জীবনেও ভোট পাবে না। কিন্তু তার পর বিএনপি গাজীপুরের নির্বাচনে জয় লাভ করে। যারা কামারুজ্জামানের ফাঁসিতে ক্ষুব্ধ তারা সব সময় বিএনপিকেই ভোট দিবে। তবে যারা কামারুজ্জামানের ফাঁসিতে ক্ষুব্ধ নয়, তারা সরকারকে মৃদু বা প্রবলভাবে সাধুবাদ জানায়।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে ড. আসিফ নজরুল বলেন, নির্বাচন যদি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, তবে তা আমাদের রাজনীতির জন্য একটি বড় সুযোগ। আর যদি সঠিকভাবে সম্পন্ন না হয়, তবে এর খারাপ প্রভাব রাজনীতি উপর পড়বে।
__._,_.___