পেটে-ভাতে রাজনীতির অর্থনীতি
২৪ মার্চ, ২০১৫ ইং
অর্থনীতি
প্রফেসর ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী
২০২১ সাল হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়। এ সময়ে দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হবে। দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রূপকল্প ২০২১ গ্রহণ করা হয়েছে। গত ৫ বছরে রূপকল্প ২০২১-এর পোস্টমর্টেম করলে দেখা যায় যে, মূল সার উপজীব্য হচ্ছে পেটে-ভাতে রাজনীতির অর্থনীতি। রূপকল্প ২০২১ এবং প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০-১১-২০২১ হচ্ছে এদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অগ্রযাত্রার মূল ভিত্তি স্বরূপ। স্বাধীনতার সময়ে মোট দেশজ উত্পাদনের পরিমাণ যেখানে ১.৫% থেকে ২%-এর মধ্যে ছিল বর্তমানে তা ৬.২০% থেকে ৬.৭১% হয়েছে গত ছয় বছরে। জনগণের ক্ষমতায়ন হচ্ছে এদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার মূল নিউক্লিয়াস। মাথাপিছু আয় গত অর্থ বছরেই মার্কিন ডলার ১১৯০ তে উন্নীত হয়েছে যা ২০১৪-১৫ অর্থবছর শেষে ১২৫০ মার্কিন ডলারের অধিক হবে। এদিকে নারীর ক্ষমতায়ন, মানবিক উন্নয়ন সূচক, সামাজিক সূচকের দিক দিয়ে আমরা পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের তুলনায় এগিয়ে যাচ্ছি। দুর্নীতি দমনের জন্য মটিভেশনাল ফ্যাক্টর হিসাবে ট্রুথ কমিশন চালু করার বিষয়টি বিবেচনায় আনা দরকার। বিশ্ব উন্নয়ন রিপোর্ট ২০১৩-তে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বিশ্বের কিছু দেশ মানব উন্নয়ন সূচকে ভাল করছে আবার কিছু দেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভাল করেছে অথচ এদেশ উভয়ক্ষেত্রেই ভাল করেছে। আসলে এদেশের অর্থনীতি এখন মজবুত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভের পরিমাণ মার্কিন ডলার ২৩ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে, রিমিটেন্সের প্রবাহ ২৩.৫ মার্কিন ডলার বিলিয়নের বেশি, রফতানি আয় প্রায় ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মূল্যস্ফীতির হার ৬.৫% বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে দারিদ্র্যের হার হ্রাস করে ২৫% কম হয়েছে যা ১৯৯১ সালে ছিল ৫৭%। বস্তুত এদেশের অগ্রযাত্রায় সরকারি ও বেসরকারি উভয়খাতই সমান ভূমিকা রেখে চলেছে।
বস্তুত আজকের এ সাফল্য বেগবান হতে পেরেছে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রূপকল্প ২০২১ এবং প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১১-২০২১-এর জন্য। প্রেক্ষিত পরিকল্পনার মৌল বৈশিষ্ট্যসমূহ হচ্ছে দেশে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সামষ্টিক এবং সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যাষ্টিক অর্থনৈতিক ভিত্তি স্থাপন করা, মোট জাতীয় অভ্যন্তরীণ সঞ্চয়ের পরিমাণ ৮ থেকে ৯%-এ উন্নীত করা, মাথাপিছু আয় মার্কিন ডলার ২০০০ তে উন্নীত হওয়া, ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রবর্তন করা যাতে কর্মসংস্থানের ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয় এবং ৯০% -এর মত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। এ কারণে উদ্যোক্তা শ্রেণি গঠনে বর্তমান সরকার দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। মূল্যস্ফীতির হার ৬% থেকে ৮% বা তার কম বছরভিত্তিক হচ্ছে আর দারিদ্র্যের হার ১৪% নিচে হ্রাস করার উদ্যোগ রাখা হয়েছে।
ব্যাংকিং সেক্টর বেশ দক্ষতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে। যদিও কিছু কিছু ব্ল্যাক শিপ বিভিন্ন সময়ে বিরাজমান ছিল। মুদ্রানীতি জনকল্যাণ মূলক কর্মকাণ্ডে পরিচালিত হচ্ছে। পাশাপাশি ফাইন্যান্সিয়্যাল ইনক্লুশান থেকে আরম্ভ করে মাইক্রো, স্মল, মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর স্ট্র্যাটেজিক লিডার হিসাবে কাজ করে চলেছে। বহুধাবিভক্তকরণ পদ্ধতিতে ব্যাংকিং খাতের সেবা নানামুখী পদক্ষেপে পরিচালিত হচ্ছে যাতে জনগণ সঞ্চয়ের পাশাপাশি বিনিয়োগ উপযোগী প্রভাব পেয়ে থাকে। পাশাপাশি বিশেষ প্রচেষ্টায় দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ব্যাংকের সুদের হার হ্রাস করা হয়েছে। আবার ঋণ খেলাপীর আদায় বৃদ্ধির জন্য ডিজিটাল করার প্রয়াস নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশ খাদ্য উত্পাদনে কেবল স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেনি বরং শ্রীলংকায় চাল রফতানি করা শুরু হয়েছে। বিদ্যুত্ সমস্যা সমাধানকল্পে বেশকিছু যৌক্তিক পদক্ষেপ নেয়ায় ১১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করার ক্ষমতা অর্জিত হয়েছে। বর্তমানে পারমাণবিক চুল্লী বাহিত বিদ্যুত্ উত্পাদনের পাশাপাশি কয়লা নির্ভর বিদ্যুত্ উত্পাদন এবং ভারত-নেপাল-ভুটান থেকে বিদ্যুত্ আমদানির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
অবকাঠামাগত সংস্কারে সরকার বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে যা ২০১৮ সালের মধ্যে সমাপ্ত হলে জিডিপিতে অতিরিক্ত ১.২%-এর অধিক যুক্ত হবে। সড়ক নির্মাণ এবং লেইন সংযুক্তিকরণের ব্যবস্থা চলছে। পাশাপাশি রেলওয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন হচ্ছে।
দেশে আমদানি বিকল্পায়ন শিল্প এবং রফতানিমুখী শিল্পায়নের মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দেশে ১৬ কোটির বেশি লোকসংখ্যা। এদের পারচেজিং পাওয়ার বাড়ালে অভ্যন্তরীণ মার্কেটে ভোগপ্রবণতা বাড়বে। বাজার সম্প্রসারণ ঘটবে আর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। দেশের মানুষ যত বেশি স্বাবলম্বী হবে তত দেশের উন্নয়ন কাঠামোয় ইতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকবে।
নারীদের শিক্ষা প্রসারে বর্তমানে বারো ক্লাসের বদলে স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ২০১৪ সালের ১২.৮ মিলিয়ন ছাত্র-ছাত্রী স্টাইপেন্ড পেয়েছে—এর মধ্যে ৭৫% পরিমাণ হচ্ছে ছাত্রী। বস্তুত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা, শিশু মৃত্যুর হার কমানো, দারিদ্র্য হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে এদেশে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে।
দেশে এনবিআর-এর সাংগঠনিক কাঠামো আরো উন্নত করা দরকার। ইতোমধ্যে ই-টিআইএন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। আগামীতে ই-ভেট প্রচলন করা হচ্ছে। তবে সরাসরি ট্যাক্সের মাত্রা বাড়ানো উচিত। অপ্রত্যক্ষ কর ভেট বেশি বৃদ্ধি করলে ধনবানরা লাভবান হয়ে থাকে। অথচ দরিদ্রশ্রেণিরা ভেট-এর ক্ষেত্রে তেমন ইতিবাচক প্রভাব পান না। পাশাপাশি দোকানভেদে ভেট একাধিকবার গ্রহণ করা হয়—যা নিরীক্ষা করার জন্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। চলতি বছরে এডিপি-র পরিমাণ কিছুটা হ্রাস করা হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় পরবর্তীতে তা দেশের মানুষের আয় প্রবাহকে সুবিধা দেয়। সেখানে কর-জিডিপি অনুপাতে ১১% তা অবশ্যই বৃদ্ধি করতে হবে। প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো এবং কর প্রশাসনকে দক্ষ ব্যবস্থাপনায় কর্পোরেট গভার্নেন্সের আওতায় আনতে হবে। মানব সম্পদ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্যে প্রণোদনা দেয়া প্রয়োজন। জুলাই-ডিসেম্বর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫৮৪-৪৯ বিলিয়ন টাকা কর বাবদ আয় হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে একটি নীরব বিপ্লব চলছে। তথ্য ও সেবা কেন্দ্র দেশের প্রায় ৪৫০০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপিত হয়েছে। ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টেল তৈরি করা হয়েছে। কেন্দ্র থেকে আরম্ভ করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ওয়েব পোর্টেল সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ২৪,০০০। মোবাইল ফোন মানুষের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি। মোবাইল ব্যবহারকারীদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে নয় কোটি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় আমরা যে সমস্ত কর্মসূচি দেখতে পাচ্ছি তা আসলে বর্তমান সরকারের সাফল্যকে তাত্পর্যমণ্ডিত করছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে অর্থ প্রেরণ করছে। এ অর্থ দেশের উন্নয়নে বেশ ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। বিদেশে মানব সম্পদ প্রেরণে সরকার নানামুখী কর্মসূচি নিয়েছে। বেশকিছু ট্রেনিং-এর উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এই ট্রেনিংগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হওয়া বাঞ্ছনীয়। কেননা যারা প্রবাসে যাচ্ছেন হোয়াইট কালার লেবারই হোক বা ব্লু কালার লেবারই হোক তাদের প্রশিক্ষণ সুষ্ঠুভাবে হওয়া উচিত। যে দেশে যাবে সে দেশের ভাষা শিক্ষার জন্যে ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। বর্তমানে ভূ-রাজনৈতিক কারণে এশিয়ার রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ভ্যালু এডিশন ঘটা দরকার। এজন্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠতে হবে। তবে এটিকে কেউ কেউ "লুকিং এট দি ইস্ট" বলতে চাচ্ছে। কিন্তু 'লুকিং এট দি ইস্ট'-এতো সহজে বলা কিন্তু সহজ নয়। কেননা এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মধ্যে 'লুকিং এট দি ইস্ট' কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রচলিত হলেও বাংলাদেশে এটির ব্যাপকতা পায়নি। বরং এশিয়ান গ্লোবাল চেইনে ধীরে ধীরে সম্প্রসারণ ঘটলে দেশের উন্নয়নের গতিধারা বাংলাদেশের পক্ষে তখনই সক্ষম হবে যখন আমরা আমাদের নিজস্ব ক্যাপাসিটি বিল্ডিং করতে পারব। তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহ থেকে বহুমাত্রিক উপায়ে সহযোগিতা পেলে দেশের ভাল হতো।
কৃষিনির্ভর দেশ থেকে শিল্পায়নে রূপান্তর ঘটেছে। সেবামূলক খাতের ব্যাপকতা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে হবে। কেননা শিক্ষায় বিনিয়োগ হচ্ছে ধনাত্মক প্রতিদান। এজন্য গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মগজ ধোলাই যাতে না হয় এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গী হিসাবে নগণ্য কিছু ছাত্র-ছাত্রী নামধারীদের জন্য দেশে-বিদেশে ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। পাশাপাশি গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থনৈতিক পটভূমিতে আরো দক্ষতার সাথে যাতে মানব সম্পদ তৈরি হতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।
যেহেতু মানুষের কল্যাণে অর্থনীতি,সেহেতু জনগণের কাছ থেকে দায়বদ্ধতার মধ্যদিয়েই রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে। জনমানুষের কল্যাণে শ্রমজীবী, কৃষিজীবী থেকে আরম্ভ করে সর্বস্তরের মানুষের কাছে যেতে হবে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে বাজার ব্যবস্থার সম্প্রসারণ এবং ইম্পারফেকশান দূরীভূত করা দরকার। মার্কেটের তথ্যাবলী ইনফরমেশন সিমেট্রিক করার প্রয়াস নেয়া হয়েছে যা নির্ভর করে থাকে দায়িত্বপ্রাপ্তদের কর্তব্যে নিষ্ঠার উপর। বস্তুত: দেশের উন্নয়নের জন্য যারা রপ্তানিমুখী শিল্পায়নের দিকে জোর দিতে চান তারা দেশের যে বিশাল বাজার রয়েছে এবং মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পরিপূর্ণ হোক তার বিস্তৃতি না বজায় রেখে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় সংকোচনের জন্য জোর দেন। এটি অর্থনীতিতে স্বল্প ও মধ্যম মেয়াদে তেমন উপকারে আসবে বলে মনে হয় না। কেননা স্বল্প ও মধ্যম মেয়াদে যতবেশি অভ্যন্তরীণ বাজারের সম্প্রসারণ ঘটবে তত বণ্টন ব্যবস্থায় অপেক্ষাকৃত প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের ব্যক্তিবর্গ উপকৃত হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদানের ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী এবং অর্থ উপদেষ্টা দু'জনই পরীক্ষিতভাবে গত ছয় বছরের অধিককাল ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। সামস্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এবং বাজার ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণে তাদের ভূমিকা গৌরবের দাবিদার। দেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও বিশাল ভূমিকা রয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে একটি সুবিধাবাদী চক্র গড়ে উঠেছে যারা বিদেশের আনুকূল্যে কন্সালটেন্সীর জন্য বিভিন্ন পরিসংখ্যান যথাযথভাবে উপস্থাপন করা থেকে বিরত থাকেন। বরং সমাজ ব্যবস্থায় দেশের অগ্রগতিকে কালিমালিপ্ত করে থাকেন। এ সুবিধাবাদী কায়েমি গোষ্ঠীটি বর্ণচোরা হিসাবে অনেক ক্ষেত্রে ভুল তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করে থাকে। তাদের দেয়া সুপারিশ- মালা অনেক ক্ষেত্রেই দেশের স্বার্থের জন্য হানিকর হয়ে থাকে।
পুঁজি বাজার সংগঠিত করার কাজ চলছে। তবে সার্বিক অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও বৃহত্ শিল্পের বিকাশ সাধনের জন্য পুঁজিবাজারকে মূলত: শেয়ার মার্কেটভিত্তিক না রেখে ডেবট মার্কেট এবং ডেরিভেটিভ মার্কেটের সম্পসারণ বাঞ্ছনীয়। শেষোক্ত দু'টো মার্কেটের সম্প্রসারণ ব্যতীত দেশের অর্থনীতির সম্প্রসারণ সম্ভব নয়।
বাজার উন্মুক্ত করা কোন সমস্যা নয়- যদি দেশের অভ্যন্তরস্থ ব্যবসা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো অধিকতর প্রতিযোগিতামূলক হতে পারে। অথচ দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকগুলো এখনো নিজের পায়ে সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। কেননা যে ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা নেই সেক্ষেত্রে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রয়োজন। কারিগরি কৌশলই মূলত: প্রয়োজন। নচেত্ বৈদেশিক বিনিয়োগ একটি দেশে এলে তার বহুগুণ দেশ থেকে নিয়ে যায়। তারপরও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও ভৌত অবকাঠামো সংস্কারের ক্ষেত্রে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রয়োজন। আমাদের দেশের টেলিকমিউনিকেশন সেক্টরে বৈদেশিক বিনিয়োগ যেভাবে এসেছে গত বিশ বছরেও কিন্তু আমরা নিজেরা সক্ষমতা অর্জন করতে পারছিনে। দেশি উদ্যোক্তারা এক্ষেত্রে এগিয়ে এলে ভাল হয়। তবে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ সরকারের বারংবার উদ্যোগ সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে গতিশীল হতে পারছে না। এটি আসলে দু'পক্ষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি দূর করা গেলে সম্ভব এবং পারস্পরিক আস্থা দরকার।
প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আরম্ভ করে শহর সর্বত্র উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে বাংলাদেশ ব্যবহূত হচ্ছে। শিক্ষাবিস্তার, শিশুমৃত্যুর হার রোধ, সুপেয় পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, Economic Vuerability, মানব উন্নয়ন সূচক আয় প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য স্বাবলম্বী হওয়া এবং পরিবেশ প্রকৃতির উন্নয়নে বর্তমান কর্মকাণ্ড প্রশংসনীয়। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি উদ্যোক্তা শ্রেণি গঠনে ভূমিকা চলছে। তবে সমুদ্র সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তত মঙ্গল। "ডিজিটাল বাংলাদেশ" গড়ার যে গতি বর্তমানে সঞ্চারিত হয়েছে তার অংশ হিসাবে তৃণমূল পর্যায়ের যুবক-যুবতীদের মধ্যে সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও নেটওয়্যার সম্পর্কিত বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। "ডিজিটাল বাংলাদেশ" গড়ার যে গভীর প্রত্যয় রয়েছে, তা যেন কোনভাবেই ব্যাহত না হয়। দুর্নীতি হ্রাস করে সততা, ন্যায় নীতির মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায় থেকে আরম্ভ করে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবারই সাধন অব্যাহত থাকা বাঞ্ছনীয়। বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ পরিচালিত হয়ে দেশের অর্থনীতির যাতে ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য থাকা বাঞ্ছনীয়। রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে মানুষের পেটে-ভাতের অধিকার যেন হরণ না করা হয়, মানুষ আত্মপ্রত্যয়ী বলেই ফিনিক্স পাখির মতো ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেই আবার গড়তে শুরু করেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার ভাষায় " পেটে ভাতের রাজনীতির জন্য অর্থনীতির সার্থক বাস্তবায়ন ঘটছে। অর্থ উপদেষ্টা আগামী বাজেট প্রণয়নে আরো মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন আশা করি। কেননা আগামী অর্থবছরের সাথেই শুরু হতে যাচ্ছে ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও দেশ এগিয়ে চলছে। সন্ত্রাস, আগুনে পুড়ে, রক্তাক্ত হয়ে যারা মারা যাচ্ছে তারা তো এদেশেরই সন্তান। তাদের প্রতি অবিচার করে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা স্তব্ধ করা যাবে না।
n লেখক :ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়্যাল ইকোনোমিস্ট
ই-মেইল:Pipulbd@gmail.com
__._,_.___