Banner Advertise

Friday, November 28, 2014

[chottala.com] নেতাদের ওপর আস্থা নেই খালেদার ॥ বেকায়দায় বিএনপি



নেতাদের ওপর আস্থা নেই খালেদার ॥ বেকায়দায় বিএনপি
০ আন্দোলনের ইস্যু নেই 
০ মামলা নিয়ে সঙ্কট 
০ বিদেশী সমর্থন মিলছে না 
০ জোটের অবস্থাও নাজুক
 দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে চরম বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। না পারছে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে, না পারছে কোন্দল নিরসন করে দল গোছাতে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সর্বত্র নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। বেহাল দশা কাটিয়ে উঠতে দলের সিনিয়র নেতারা চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছেন না। খালেদা জিয়াও দলের নেতাদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। এ ছাড়া দলে চেন অব কমান্ড না থাকায় কেউ কারও নির্দেশ মানছেন না। এসব কারণে বিএনপিতে যে সাংগঠনিক স্থবিরতা চলছে তা কাটাতে হিমশিম খাচ্ছে দলের হাইকমান্ড।
এদিকে দলের সঙ্কট নিরসন বা সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করার কোন লক্ষণ না থাকায় আপাতত জেলায় জেলায় জনসভা কর্মসূচী পালন করে পরে সুবিধাজনক সময়ে কোন্দল নিরসন করে দল গোছানোর কাজ শুরু করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের কৌশল নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তবে এ কৌশলে সফলতা অর্জনে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা পুরোদমে সক্রিয় থাকবেন এমন আস্থা রাখতে পারছেন না তিনি। কারণ, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের আন্দোলনে সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা সফলতা এনে দিলেও কেন্দ্রীয় নেতারা খালেদা জিয়াকে পাশকাটিয়ে দূরে সরে গেছেন। নির্বাচনের পরও দলের অনেক সিনিয়র নেতা খালেদা জিয়াকে এড়িয়ে চলছেন। এ কারণে খালেদা জিয়াও তাঁদের প্রতি ক্ষুব্ধ।
দলের অবস্থা নাজুক থাকার পরও বিএনপিতে কেন্দ্র থেকে শুরু করে সর্বস্তরের দলীয় নেতাকর্মীরা গ্রুপিং-কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছে। ঢাকা মহানগরসহ সর্বস্তরেই দলের বেহাল দশা। কেন্দ্রীয় নেতাদের কোন্দলের প্রভাব সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে ৫ বছর পরও জাতীয় কাউন্সিল করতে পারছে না বিএনপি। এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া শুধু দলে নয়, পরিবারেও একাকী হয়ে পড়েছেন। বিদেশে অবস্থান করা ২ ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোকেও স্পর্শকাতর মামলার আসামি হওয়ায় দেশে ফিরিয়ে আনতে পারছেন না। 
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির এখন কি করা উচিত সেব্যাপারে দিশা খুঁজে পাচ্ছে না দলীয় হাইকমান্ড। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর দল গঠনের পর আর কখনও এ দলটিকে এমন দুঃসময় অতিক্রম করতে হয়নি বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে। তবে দলের একটি অংশ মনে করছে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগ যেভাবে আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিএনপিকেও সে পথেই যেতে হবে। 
জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় বিভিন্ন দেশ বিএনপির ওপর নাখোশ। তাদের মতে, সাংবিধানিক বাধ্যবাদকতার কারণে বিএনপির এ নির্বাচনে অংশ নেয়া উচিত ছিল। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আর সে নির্বাচনে বড় ধরনের কোন কারচুপি হলে ফলাফল বর্জন করে তারা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারত। তা না করে আগেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে রাজপথে নাশকতার পথ বেছে নেয়ার বিষয়টি বিদেশীরা নেতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। আর এ কারণেই নির্বাচনের পর বিভিন্ন দেশ একে একে আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন দেয়। বিশেষ করে জাপানের মতো উন্নত দেশ বর্তমান সরকারকে যে বিশাল অঙ্কের আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তাতে সারা বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো এ সরকারের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল হয়েছে বলে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
আন্দোলনের ইস্যু না পাওয়ায় হতাশ ॥ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে সরকার পতনের হুঙ্কার দিলেও ভাল ইস্যু না পাওয়ায় কোনভাবেই আন্দোলনের পথ খোঁজে পাচ্ছে না বিএনপি। নেতাকর্মীদের হতাশা কাটাতে বিএনপি হাইকমান্ড নানামুখী তৎপরতা চালালেও কিছুতেই সফলতা আসছে না। 
যেখানে কমিটি সেখানেই কোন্দল ॥ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দল গোছাতে গিয়ে বার বার হোঁচট খাচ্ছে বিএনপি। যেখানে কমিটি সেখানেই কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এ নিয়ে দলের হাইকমান্ড চরম অস্বস্তিতে রয়েছে। নির্বাচনের পর প্রথমেই শ্রমিক দলের কমিটি করতে গিয়ে হোঁচট খায় বিএনপি। খালেদা জিয়া ঘোষিত কমিটিকে চ্যালেঞ্জ করে পাল্টা কমিটি করেছে শ্রমিক দল নেতারা। এখনও দু'টি কমিটি প্যারালালভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এর পর ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি করতে গিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েন খালেদা জিয়া। বর্তমানে মির্জা আব্বাস ও হাবিব-উন-নবী সোহেলের দ্বন্দ্বের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপি। আর ১৪ অক্টোবর ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের পর থেকে পদবঞ্চিতরা এ কমিটি বাতিলের দাবিতে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। অছাত্র, আদুভাই, খুনী ও মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে গঠিত নতুন কমিটি বাতিল না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরা। পদবঞ্চিতরা প্রায়শই বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বোমা বিস্ফোরণ ও ছাত্রদল কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। তাদের ভয়ে ছাত্রদলের নতুন কমিটির নেতারা বিএনপি কার্যালয়ে প্রবেশের সাহস পাচ্ছে না। এই অবস্থা দেখে আপাতত আর কোন কমিটি গঠন না করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। 
যুদ্ধাপরাধের দায় এড়াতে পারছে না ॥ দল এবং জোটে যুদ্ধাপরাধী থাকায় দেশে-বিদেশে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে বিএনপি। নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল দাবি করলেও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দল ও জোটের নেতারা বিচারের সম্মুখীন হওয়ায় যুদ্ধারাধের দায় এড়াতে পারছে না বিএনপি। যুদ্ধারাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালের রায়ে ফাঁসির আসামি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও দলের নেতা আবদুল আলীম আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামি হিসেবে বর্তমানে কারাবন্দী রয়েছে। আর যুদ্ধাপরাধের মামলায় ২০ দলীয় জোটে বিএনপির শরিক জামায়াত নেতা গোলাম আযম আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় মাথায় নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। আর জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে আগেই ফাঁসি দেয়া হয়েছে। আরেক আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এখন কারাগারে। আর ফাঁসির অপেক্ষায় রয়েছেন একই দলের নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, কামারুজ্জামান ও আবদুস সোবহান।
বৈদেশিক সমর্থন মিলছে না ॥ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির প্রতি বেশ ক'টি দেশ প্রকাশ্যে সহানুভূতি প্রকাশ করলেও দৃশ্যপট পাল্টে যায় নির্বাচনের পর। এখন সৌদি আরব ও পাকিস্তানসহ ক'টি মুসলিম দেশ ছাড়া সকল দেশই ক্ষমতাসীন দলের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে এবং সরকারকে পুরোদমে সহযোগিতা করছে। দশম জাতীয় সংসদ প্রতিহত করতে আন্দোলন বিফল হওয়ার পর থেকে নানামুখী কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করেও দলের জন্য সুফল বয়ে আনতে ব্যর্থ হয় বিএনপি। 
এদিকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপি মনে করেছিল ভারতের নির্বাচনে যদি কংগ্রেসকে পরাজিত করে বিজেপি বিজয়ী হয় তাহলে নতুন সরকারের সমর্থন নিয়ে বিএনপি লাভবান হবে। তাই নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই বিএনপি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজসহ বিভিন্ন মন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর ভারত সফরের পর বিএনপির সে ধারণা পাল্টে যেতে থাকে। 
মামলা নিয়ে বেকায়দায় ॥ মামলা নিয়ে বেকায়দায় রয়েছে বিএনপি। চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে রয়েছে কয়েক হাজার মামলা। বিশেষ করে জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জড়িয়ে বিএনপিকে বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে ফেলেছেন চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ এ দলের সিনিয়র নেতারা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে ভাল হবে না। 
এদিকে দলের যে সকল নেতাকর্মী নির্বাচনের আগে আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকা-ে জড়িত ছিল তারা এখন মামলা, হামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে ঘরে থাকতে পারছে না। নিজ এলাকা ছেড়ে বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে তারা। কেউ কেউ দেশে ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। এসব নেতাকর্মীদের দলের উচ্চ পর্যায় থেকে তেমন কোন সহযোগিতাও দেয়া হচ্ছে না। তাই এ সকল বিএনপি নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এখন চরম অস্থিরতার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। তবে এই অস্থিরতা কাটাতে কোন কোন তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মী এখন আওয়ামী লাগে যোগ দিয়ে নিজেদের নিরাপদ রাখার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
দলের নেতাদের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না খালেদা জিয়া ॥ বর্তমান প্রেক্ষাপটে দলের কোন নেতার উপরই পুরোপুরি ভরসা রাখতে পারছেন না বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এ কারণে দলীয় কর্মকা- পরিচালনার ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যেই হোঁচট খেতে হয় তাঁকে। এ পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া এখন নিয়মিত দলের বাইরের কিছু লোকের পরামর্শ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। 
২০১১ সালের ৬ এপ্রিল দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দিয়ে তার উপর ভরসা রাখতে শুরু করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার নির্দেশ মতো রাজপথের আন্দোলন চাঙ্গা করতে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারেননি। এ কারণে মির্জা আব্বাসসহ দলের কিছু সিনিয়র নেতা আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য মির্জা ফখরুলের ওপর দোষারোপ করেছেন। একসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের উপর ভরসা রাখতেন চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। কিন্তু ২০১০ সালে মওদুদের পরামর্শে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে বাড়ি ছাড়া হওয়ার পর খালেদা জিয়া ব্যারিস্টার মওদুদের উপর চরম ক্ষুব্ধ হন। এরপর থেকে ব্যারিস্টার মওদুদও কৌশলে খালেদা জিয়ার কাছ থেকে দূরে সরে থাকেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি যখন সরকারবিরোধী লাগাতার আন্দোলনের ছক করে তখনই ব্যারিস্টার মওদুদ বিদেশে চলে যান। বিদেশে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগও রাখেননি তিনি। 
ওয়ান ইলেভেনের সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে বেঈমানী করে তাকে মাইনাস করে দল পরিবর্তনের চেষ্টা করলেও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সবকিছু ভুলে গিয়ে আবার ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি সাদেক হোসেন খোকাকে কাছে টেনে নেন খালেদা জিয়া। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কিছুদিন পালিয়ে থাকার পর গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দি হন সাদেক হোসেন খোকা। রাজধানীতে আন্দোলন চাঙ্গা করার চেষ্টা না করে খোকার পালিয়ে থাকা ও গ্রেফতারকে ভালভাবে নেননি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তাই সাদেক হোসেন খোকাকে ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব থেকে বিদায় নিতে হয়। তবে মির্জা আব্বাসকে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক করার পর তার কার্যক্রমেও সন্তুষ্ট নন খালেদা জিয়া। এভাবে দলের সিনিয়র নেতা এমকে আনোয়ার, হান্নান শাহ, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ কোন নেতার ওপরই পুরোপুরি ভরসা রাখতে পারছেন না খালেদা জিয়া। 
২০ দলীয় জোটের অবস্থা নাজুক ॥ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে এখন নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। কোন শরিক দল জোট ত্যাগ করার পর ডামি নেতা দিয়ে পাল্টা কমিটি গঠন করার কৌশলে নিয়েও জোটের ঐক্য ধরে রাখতে পারছেন না বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বরং বিএনপি জোটের বিভিন্ন শরিক দলের মধ্যে চলছে একে অপরকে বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কার। সহসা বিএনপি জোট ক্ষমতায় যেতে পারবে না ভেবেই ক্ষমতালোভী শরিক দলগুলো জোট ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বিএনপির জন্য এটা খারাপ ইংগিত বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 
অধিকাংশ জেলা কমিটি অকার্যকর ॥ নেতাদের কোন্দলের কারণে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেও বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এখনও অন্তত ৫০টি জেলার কমিটি গঠন করতে পারেনি দলের হাইকমান্ড। আর যেসব জেলার কমিটি করা হয়েছে তার মধ্যে বেশিরভাগ জেলাতেই পাল্টা কমিটি করেছে দলের বিদ্রোহী নেতারা। তাই বিএনপির অধিকাংশ জেলা কমিটিই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এর ফলে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন শক্তিশালী করতে পারছে না বিএনপি। 
কোন্দল সামাল দিতে পারছেন না দলীয় হাইকমান্ড ॥ দলের নেতাকর্মীদের কোন্দল সামাল দিতে পারছেন না বিএনপি দলীয় হাইকমান্ড। কোন্দলের কারণে বিভিন্ন স্তরে কমিটিও করতে পারছে না দলটি। যেখানেই কমিটি গঠনের কাজে হাত দেয়া হচ্ছে সেখানেই কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। ঢাকা মহানগর বিএনপি, শ্রমিক দল ও ছাত্রদলসহ বিএনপির বিভিন্ন স্তরে নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন্দলের কারণে এখন চরম দুরাবস্থা বিরাজ করছে। কোন্দলের কারণে দল গোছানোর কাজ এখন থেমে যাওয়ায় সিনিয়র নেতাদের প্রতি খালেদা জিয়া চরম ক্ষুব্ধ। তবে পরিস্থিতি প্রতিকূলে থাকায় কাউকেই এখন কিছু বলছেন না। 
সাংগঠনিক স্থবিরতা কাটাতে পারছে না ॥ নির্বাচন বর্জনের পর দীর্ঘদিনের জন্য আবারও ক্ষমতার বাইরে চলে আসায় বিএনপির সর্বস্তরে নতুন করে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি দলে যে সাংগঠনিক স্থবিরতা বিরাজ করছে তা কাটাতে পারছে না বিএনপি। সাংগঠনিক স্থবিরতা কাটাতে নির্বাচনের পর পরই তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয় বিএনপি হাইকমান্ড। এ জন্য সারাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার জন্য সিনিয়র নেতাদের নিয়ে ৫৬টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিক থেকে এসব কমিটি সারাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা সফর করে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ করতে গিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়ে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা বিএনপি হাইকমান্ডের কাছে অভিযোগ পাঠান যে নেতারা দশম জাতীয় নির্বাচনের আগে তাদের বিপদের মুখে ফেলে দিয়ে আত্মরক্ষার্থে পালিয়ে যান তারা নিজেদের ভুল স্বীকার না করে তৃণমূল পর্যায়ের কমিটি পুনর্গঠনের অধিকার রাখেন না। এ পরিস্থিতিতে তৃণমূল পর্যায়ে দল গোছানোর কাজ স্থগিত করতে বাধ্য হন খালেদা জিয়া। 
বর্তমানে বিএনপির নির্বাহী কমিটিসহ সারাদেশের অধিকাংশ ইউনিট কমিটিই মেয়াদ উত্তীর্ণ। এ ছাড়া বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিও মেয়াদ উত্তীর্ণ। এগুলো পুনর্গঠনের জন্য বার বার উদ্যোগ নিয়েও বাস্তবায়ন করতে পারছে না দলীয় হাইকমান্ড। এ পরিস্থিতিতে বিএনপির সর্বস্তরে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। 
দুর্বল হয়ে পড়েছে দলের থিঙ্ক ট্যাংক টিম ॥ বিএনপির থিঙ্ক ট্যাংক হিসেবে পরিচিত ক'জন বুদ্ধিজীবী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই কাজ করে আসছে। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তাদের মধ্যে হতাশা ভর করায় এ টিমের অনেকেই এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি মারা গেছেন এ টিমের সদস্য ড. পিয়াস করিম। তবে এখনও সক্রিয় আছেন অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, ড. ফরহাদ মাযহার, ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ কয়েকজন। 
সংলাপের আশা ছাড়ছে না ॥ আন্দোলন করার কোন সুযোগ না পেলেও নির্দলীয় সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচনের দাবিতে বর্তমান সরকারের সঙ্গে সংলাপের আশা ছাড়ছে না বিএনপি। তবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে যতবারই তারা সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে ততবারই সরকারী দলের পক্ষ থেকে সংলাপের আহ্বান নাকচ করা হয়।
ঝিমিয়ে পড়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপি ॥ সাদেক হোসেন খোকাকে মাইনাস করে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা মহানগরে বিএনপির দায়িত্ব মির্জা আব্বাসকে দিয়ে সফলতা অর্জন করতে পারেনি দলটি। বরং নেতাকর্মীরা কোন্দলে জড়িয়ে পড়ায় ঝিমিয়ে পড়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপি। এ বছর ১৮ জুলাই নতুন কমিটি গঠনের পর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস ও সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বিভিন্নভাবে হাকডাক দিলেও রাজধানীতে এখন বিএনপির কার্যক্রম নেই বললেই চলে। আর এ কারণেই বিএনপি এখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাবার সাহস পাচ্ছে না। এমনকি দলীয় নেতাদের কোন্দলের কারণে ঢাকা মহনগরের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলোও করা যাচ্ছে না বলে জানা গেছে। 
জামায়াত-হেফাজতের সঙ্গ ত্যাগের জন্য চাপ বাড়ছে ॥ জামায়াত-হেফাজতের সঙ্গ ত্যাগ করতে বিএনপির ওপর ঘরে-বাইরে চাপ বাড়ছে। একদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিদেশী কূটনীতিকদের ও অপরদিকে খোদ দলের একটি অংশের প্রবল চাপ থাকার পরও বিএনপি হাইকমান্ড জামায়াত-হেফাজতের সঙ্গ ত্যাগ করতে নারাজ। তবে পরবর্তীতে ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যে প্রয়োজনে জামায়াত-হেফাজতকে না ক্ষেপিয়ে কৌশলে দূরে রাখা যায় কি না এ রকম একটি চিন্তাও দলের শীর্ষমহলে আছে বলে জানা গেছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই ভারত ও ব্রিটেনের পক্ষ থেকেও জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের ব্যাপারে বিএনপির ওপর চাপ আসে। পরে আরও কিছু দেশ থেকে এ চাপ আসে। কিন্তু বিএনপি তখন বিষয়টি আমলে নেয়নি। বরং জামায়াতের পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে আন্দোলন চাঙ্গা করার কৌশল গ্রহণ করে। 
এদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের আপ্রাণ চেষ্টা করেও কোন পথ খুঁজে পাচ্ছে না বিএনপি। এ জন্য নানা কৌশল প্রয়োগ করলেও কোন কৌশলই কাজে আসছে না। অতীতের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে ১৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য ভারতের লোকসভা নির্বাচনের পর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সে দেশে সফরে গিয়ে নতুন সরকার ও বিভিন্ন প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অপর পক্ষ থেকে সাড়া না পেয়ে তিনি হতাশ হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 
কোন্দল চাঙ্গার আশঙ্কায় জাতীয় কাউন্সিল হচ্ছে না ॥ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দলের ৩ বছর পর পর জাতীয় কাউন্সিল করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলের পর ৫ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু জাতীয় কাউন্সিল করলে দলীয় কোন্দল চাঙ্গার আশঙ্কা থাকায় তা করা থেকে বিরত রয়েছে দলটি। তবে জাতীয় কাউন্সিল না হওয়ায় দলের নিষ্ক্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে সক্রিয় নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে নতুন নির্বাহী কমিটি গঠন করতে পারছে না বিএনপি। 
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দিয়ে ৫ বছর ॥ ২০১১ সালের ১৬ মার্চ বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মারা যাওয়ার পর ৬ এপ্রিল দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করা হয়। কিন্তু প্রায় ৫ বছরেও দলের নেতাককর্মীরা একজন ভারমুক্ত মহাসচিব পাননি। আর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হওয়ায় মির্জা ফখরুলও দলীয় কর্মকাণ্ড জোরালো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। কারণ দলের কোন কোন সিনিয়র নেতা তাঁকে মেনে নিচ্ছেন না। আর মির্জা ফখরুলকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মহাসচিব করবেন এমনটিও আপাতত ভাবতে পারছেন না খালেদা জিয়া। তাই মন্দের ভাল ভেবে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দিয়েই দল চালাচ্ছেন তিনি। 
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জনকণ্ঠকে বলেন, স্বৈরাচারী সরকার আমাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালাচ্ছে। মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে আন্দোলন থামাতে চাচ্ছে। কিন্তু এভাবে আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত করা যায় না। আমরা সরকারকে সময় দিয়েছি। সরকার নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে অবশ্যই আন্দোলন হবে। তিনি বলেন, দল গোছানোর কাজ চলছে। তবে সরকার আমাদের ওপর ডিক্টেটরশিপ চালাচ্ছে। তবে এভাবে ডিক্টেটরশিপ চালিয়ে অতীতেও কোন সরকার টিকতে পারেনি, এ সরকারও পারবে না। 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের কারণে বিএনপি নানামুখী সঙ্কটে পড়েছে। এ সরকার দলের নেতাকর্মীদের নামে মামলা, খুন. গুমসহ অত্যাচার-নির্যাতন চালাচ্ছে। তবে আমরা সঙ্কট কাটিয়ে একদিকে দল গোছানো ও অন্যদিকে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। কিন্তু সরকার মামলায় ফাঁসিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করছে। আমরা অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেই সঙ্কট নিরসন করে দেশে গণতন্ত্র ফিরেয়ে আনব। এ লক্ষ্য অর্জনে খালেদা জিয়া নির্দেশিত আন্দোলন কর্মসূচী সফল করতে হবে।


__._,_.___

Posted by: Gonojagoron Moncho <projonmochottar@gmail.com>


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]





__,_._,___