Banner Advertise

Wednesday, May 14, 2014

[chottala.com] নূর হোসেনের মাসোহারা পেতেন বিএনপি নেতারাও!



Wed, 14 May, 2014 10:06 PM
বিশ্বজিত দাস, জেলা প্রতিনিধি, বাংলামেইল২৪ডটকম

নারায়ণগঞ্জ: সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন এক সময় ছিলেন ট্রাকচালক। ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর মহাজোট ক্ষমতায় আসার পরই সিদ্ধিরগঞ্জে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেন তিনি। নূর হোসেনের যেমন ম্যানেজে ছিল আওয়ামী লীগ নেতা থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা তেমনি জেলা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির নেতারাও। তার সাম্রাজ্যের অর্জিত টাকার ভাগ যেতো আওয়ামী লীগের নেতা, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা এবং স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পকেটে। নূর হোসেনের আস্তানায় বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের দেখা গেছে অনেকবার। মাঝারি সারির নেতাদেরকে দিয়ে নিয়মিত মাসোহারা পকেটে ভরতেন শীর্ষ নেতারা। এমনকি হেফাজতের লংমার্চসহ অন্যান্য কর্মসূচিতেও নূর হোসেন মোটা অংকের টাকা প্রদান করেছিলেন। নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা এসব তথ্য উদঘাটন করেছে।

নূর হোসেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও তার ছোটভাই মোহাম্মদ নূর উদ্দিন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক। মূলত তার মাধ্যমেই নূর হোসেনের সঙ্গে বিএনপির বর্তমান নেতাদের সখ্যতা গড়ে উঠে। সম্পৃক্ত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক আলী হোসেন প্রধান, সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ।

মোহাম্মদ নূর উদ্দিন মিয়া বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও মহাজোট সরকারের আমলে তিনি পেয়েছেন শর্টগানের লাইসেন্স। ভাই নূর হোসেনই তাকে শর্টগানের লাইসেন্স পাইয়ে দেন। যদিও গত ৫ মে প্রশাসন সেই অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করেছে। সেভেন মার্ডারের পর থেকে নূর হোসেনের ছোটভাই নূর উদ্দিন পলাতক রয়েছেন।

এও অভিযোগ আছে, অন্যতম প্রতিপক্ষ বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিনকে কোণঠাসা করতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি নেতাদের টাকা দিয়ে চাঙা রাখতেন নূর হোসেন। গিয়াসউদ্দিন যাতে বিএনপির আলোচনায় আসতে না পারেন সেজন্য জেলা বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে তরুণ দলের এক নেতার মাধ্যমে পরোক্ষ সখ্যতা গড়ে তুলেন তিনি। আর সে সূত্র ধরেই এক সময়ের যুবদল নেতা মিয়া নূর উদ্দিনকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক করা হয়। এর পেছনে ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামান, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শাহ আলমের সঙ্গে নূর উদ্দিনের ছিল ভালো সম্পর্ক। নূর উদ্দিন সিদ্ধিরগঞ্জের রাজনীতি করলেও মূলত ফতুল্লাতেই ছিল তার দাপট। কুতুবপুরের বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম পান্না মোল্লার বন্ধু নূর উদ্দিনের নিয়মিত যাতায়াত ছিল শাহ আলমের ফতুল্লার বাসাতে। এর রেশ ধরেই নূর হোসেনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠে শাহ আলমের। গত বছরের শেষের দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ের টেকপাড়াতে নতুন একটি বিলাসবহুল ভবন উদ্বোধন করেন নূর হোসেন। এ উপলেক্ষে একটি মেজবান পার্টির আয়োজন করেন তিনি। সেখানে শাহ আলম দীর্ঘ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য বুধবার বিকেলে শাহ আলমের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারসহ ৭ জনের লাশ উদ্ধারের পর পুলিশের অভিযানে নূর হোসেনের ওই বিলাসবহুল বাড়ি থেকে রক্তমাখা হাইএস গাড়ি উদ্ধারসহ ১৬ জনকে আটক করা হয়েছিল।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আলী হোসেন প্রধান, সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, যুগ্ম-আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেনসহ আরো বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গেও নূর হোসেনের লেনদেন ছিল বলে অভিযোগ। মূলত এসব নেতারাই মিয়া মোহাম্মদ নূর উদ্দিনকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক করতে লবিং ও সুপারিশ করছিলেন। আর এর পেছনের মূল কারিগর ছিলেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শাহ আলম।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির একজন প্রভাবশালী ও শীর্ষ নেতার সঙ্গেও ছিল নূর হোসেনের সম্পর্ক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই নেতা মূলত জেলা তরুণ দলের সভাপতি টিএইচ তোফার মাধ্যমে নূর হোসেনের সঙ্গে লিয়াজো করাতেন। তোফা প্রতি মাসে নূর হোসেনের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা এনে ওই শীর্ষ নেতাকে দিতেন।

তরুণ দলের সভাপতি টিএইচ তোফা আর্থিক লেনদনের বিষয়টি অস্বীকার করলেও বিভিন্ন বিচার শালিসের ব্যাপারে নূর হোসেনের অফিসে তার যাতায়াত ছিল বলে স্বীকার করেন। সেই সঙ্গে একটি গভীর নলকূপ, এলাকার একটি মসজিদ ও মাদরাসার উন্নয়নের জন্য নূর হোসেনের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন বাংলামেইলের কাছে।

এছাড়াও তিনি দাবি করেন, নূর উদ্দিনকে থানা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক বানানোর পেছনে অধ্যাপক মামুন মাহমুদের জোর লবিং ও সুপারিশ ছিল। মামুন মাহমুদের পাশাপাশি আরো যারা সুপারিশ করেছিলেন তাদের মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক আলী হোসেন প্রধান, যুগ্ম-আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, মুক্তিযোদ্ধা কামালউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন নেতা ছিলেন।

তিনি আরো জানান, নূর উদ্দিনের পরিবর্তে তাকেই যুগ্ম-আহ্বায়ক করার কথা ছিল। জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার যুগ্ম-আহ্বায়ক হিসেবে তার নাম প্রস্তাবও করেছিলেন। কিন্তু ওই নেতাদের কারণে তার নাম বাদ দিয়ে নূর উদ্দিনকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করে কমিটির অনুমোদন দেন তৈমুর আলম খন্দকার ও কাজী মনিরুজ্জামান। এর মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন কাজী মনিরুজ্জামান ও শাহ আলম।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আলী হোসেন প্রধান নূর হোসনের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে বাংলামেইলকে বলেন, 'একটি মহল আমাদের রাজনৈতিকভাবে হেয় করানোর জন্য নূর হোসেনের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বেড়াচ্ছে।'

নূর উদ্দিনকে টাকার বিনিময়ে থানা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক করা হয়েছে কি না সেটা তিনি জানেন না দাবি করে বলেন, '১৯৯১ সালে যখন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম তখন জেলা যুবদলের সদস্য এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন নূর উদ্দিন। এরপর তাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক বানিয়েছেন জেলা বিএনপির নেতারা। ওই কমিটি তারা অনুমোদন দিয়েছেন।'
 
নূর উদ্দিনের বিরুদ্ধে এখনো কেনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'আমি নূর উদ্দিনের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে জেলা বিএনপির নেতাদের জানিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কোনো সিদ্ধান্ত আমাকে জানায়নি।'
 
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বাংলামেইলকে বলেন, 'আমি একজন অধ্যাপক মানুষ। সমাজে আমার একটা অবস্থান রয়েছে। নিচে নামলে কতোটা নিচে নামা যায় যে, আমি নূর হোসেনের কাছ থেকে টাকা নেব। আমার নিজেরই হাজারো কর্মী আছে। আর আমি যদি নূর হোসেনের কাছ থেকে টাকা নিতাম তাহলে আমার বিরুদ্ধে ৮টি মামলা হতো না। এর মধ্যে হেফাজতকর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে ৫টি মামলা আর ৩টি মামলা বিভিন্ন হরতাল ও আন্দোলন সংগ্রামের।'

নূর উদ্দিনকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করতে তার সুপারিশের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, 'একজন সদস্য সচিব কীভাবে সুপারিশ করে? কমিটি হওয়ার আগে আমার নিজের জন্যই তো আমি সুপারিশ করতে পারি না। নূর উদ্দিনকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করেছেন জেলা বিএনপি আর কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা।'

অভিযোগের বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বাংলামেইলকে বলেন, 'এগুলো সব মিথ্যা কথা। এমন অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।'

এদিকে পুলিশের বিশেষ শাখার এক জেলা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বাংলামেইলকে বলেন, 'নূর হোসেন ৫ মে শাপলা চত্বরের কর্মসূচিতে আসার জন্য স্থানীয় হেফাজত নেতাদের টাকা দেন। এছাড়াও ২০১৩ সালের ১ মে কাঁচপুর বালুর মাঠে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শ্রমিক সমাবেশে ৫ লাখ টাকা দেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।'

বাংলামেইল২৪ডটকম/ এস


  1. নূর হোসেনের 'সাম্রাজ্য' দখলে নিচ্ছেন বিএনপির গিয়াস! দায়ও ...

    নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের অফিস, মার্কেট, বালুমহালসহ অবৈধ নানা প্রতিষ্ঠান বেদখল হয়ে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পলাতক নূর হোসেনের 'সাম্রাজ্য' দখল করে নিচ্ছেন বিএনপির সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন ও তাঁর...


__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]





__,_._,___