ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে গুপ্ত হত্যা ও চোরাগোপ্তা হামলার জন্য বিএনপিকে দায়ী করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রীকে অপরাজনীতির পথ পরিহার করে স্বাভাবিক রাজনীতি করার আহবান জানিয়ে বলেন, 'নির্বাচনে না এসে যে ভুল করেছেন তার খেসারত এদেশের জনগণ কেন দেবে। যাদের পরামর্শে আন্দোলন করেছেন, নির্বাচনে আসেননি তাদের কাছে যান।' তিনি বলেন, 'বিএনপির একজন নেতা বলেছেন চোরাগোপ্তা হামলা করে তারা সরকারের পতন ঘটাবে। দেশে এখন যত গুম হত্যার ঘটনা ঘটছে এতে তারা যে দায়ী তাতে কোন সন্দেহ নেই।' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চোরাগোপ্তা হামলা করে যারা রাজনীতি করতে চায় তাদের থেকে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহবান জানান।
শেখ হাসিনা আজ মহান মে দিবস উপলক্ষে গাজীপুরে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। জাতীয় শ্রমিকলীগ এ জনসভার আয়োজন করে। জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি সভাপতি শুক্কুর মাহমুদের সভাপতিত্বে সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আজমত উল্লাহ, আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানাক ও সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি বক্তব্য রাখেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের জন্য। এ দেশের খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন,আওয়ামীলীগ যখন সরকার গঠন করে শ্রমজীবি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। আয় বৃদ্ধি পায়। দরিদ্র মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে সারের কোন সমস্যা হয় না। এখন সারের জন্য কৃষকদের জীবন দিতে হয় না। অথচ বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন সার চাওয়ায় ১৮ কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে এবং জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় হত্যা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পদদলিত করে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করেন। তখন থেকে হত্যার রাজনীতি শুরু হয়। তিনিই প্রথম ক্ষমতায় এসে এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে রাজনীতি শুরু করেন। রাজাকার-আলবদরদের ক্ষমতায় বসান, উপদেষ্টা বানান। পরবর্তিতে তার স্ত্রী বেগম জিয়া একই ধারাবাহিকতায় যুদ্ধাপরাধীদের পূণর্বাসিত করেন। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পতাকা তুলে দেন যুদ্ধাপরাধীদের হাতে, যাদের বিচার শুরু হয়েছে এবং রায়ও কার্যকর হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। কৃষকরা ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার আমলে সারের দাবি জানানোয় ১৮ কৃষককে হত্যা করা হয়েছিল।তিনি বলেন, তারা ক্ষমতায় আসার আগে বলেন, বন্ধ কলকারখানা চালু করবেন। কিন্তু করেন তার উল্টো। আদমজীর মতো বৃহৎ পাটকল বন্ধ করে দেন তারা। ক্ষমতায় এসে খুলনা, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ ও গাজীপুরের বিভিন্ন কলকারখানা বন্ধ করে দেন। হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বন্ধ কলকারখানা চালু করে। বিজিএমসির ৮টি কারখানা চালু করা হয়।
তিনি বলেন, সরকার পতন আন্দোলনের নামে তিনি বাসের ঘুমন্ত ড্রাইভার ও হেলপার, সিএনজির ড্রাইভারকে পেট্রোল বোমা মেরে হত্যা করেন, স্কুলছাত্রীকে হত্যা করেন। ধর্মের রাজনীতির নামে কোরান শরিফ পুড়িয়ে কিভাবে ইসলামের হেফাজত হয় প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রমিকদের কল্যাণে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আমলে শ্রমিকরা ন্যায্য দাবি জানাতে গিয়ে গুলি খেয়েছেন। ১৭ জন শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার হাতে রক্তের দাগ লেগে আছে। প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, বেগম জিয়া বাংলাদেশে জিএসপি সুবিধা বন্ধ করে দেয়ার জন্য আমেরিকার কাছে চিঠি লিখেছিলেন। সংসদে যখন বলা হলো তখন তিনি বলেন এ চিঠি তিনি লেখেননি। কিন্তু ঐ পত্রিকা কনফার্ম করেছে লেখাটি বেগম খালেদা জিয়ার।
শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনের নামে ধংস ও ভাংচুর করে বাংলাদেশের অগ্রগতি থামাতে পারলেন না তখন বিদেশীদের কাছে নালিশ করেন । নালিশ করে কি পেয়েছেন সেই প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ শ্রমিকদের সেবক। তার সরকার গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়েছে। চাকরির বয়সীমা ৫৭ বছর থেকে ৬০ বছর বাড়িয়েছে। বিএনপি সরকারের আমলে একজন দিনমজুর যে টাকা কামাই করতেন তা দিয়ে এক কেজি চালও কিনা যেতনা উল্লেখ করে তিনি বলেন এখন একজন শ্রমিক যা আয় করেন তা দিয়ে ১২ কেজি চাল কেনা যায়। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামীলীগের রাজনীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য। জাতির পিতা আমাদের যে শিক্ষা দিয়ে গেছেন সে লক্ষ্য নিয়েই সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,আমরা বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে তুলবো। ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন," আসুন । এক সাথে কাজ করি । পরাজিত শক্তি যাতে মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর ছিনি মিনি খেলতে না পারে সে ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করি"। শেখ হাসিনা গাজীপুরে শ্রমিকদের ডরমেটরি, আবাসন ব্যবস্থা, বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট তৈরি করা এবং গ্রামে ফিরতে আগ্রহী বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের ঘোষণা দেন । প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এই গাজীপুর থেকেই মুক্তিযুদ্ধের প্রতিরোধ তৈরি হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, শ্রমিকনেতা ময়েজ উদ্দিন ও আহসানউল্লাহ মাস্টারের অবদানের কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।তিনি জাতির পিতা এবং যারা রক্ত দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
__._,_.___