যা কিছু ক্লেদ, গ্লানি পাপ, যা কিছু জীর্ণ-শীর্ণ-দীর্ণ – বৈশাখের রুদ্র দহনে পুড়ে হোক ছাই এই অঙ্গীকারে ওয়াশিংটনে পালিত হল বর্ষবরন ১৪২১
তাপস নিঃশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে উড়ায়ে' দিতে প্রভাতের অলোকচ্ছটায় আবহমান এ বাংলার দিক-দিগšত উদ্ভাসিত করে ভোরের নতুন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে এসেছে বাংলা বছরে নতুন দিন। আকাশ-বাতাস ও প্রকৃতিকে অগ্নিস্নানে শূচি করে তুলতে আবার এসেছে বৈশাখ। 'দূরের পলাতক বলাকার ঝাঁকে' হারিয়ে গেল ১৪২০। নুতন বছরের আজি এ ঊষার পুণ্য লগনে' বাঙালীর কায়মনো প্রার্থনা : যা কিছু ক্লেদ, গ্লানি পাপ, মূঢতা, যা কিছু জীর্ণ-শীর্ণ-দীর্ণ, যা কিছু পুরাতন তা বৈশাখের রুদ্র দহনে পুড়ে হোক ছাই। বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক। বর্ষবরণের উৎসবের আমেজে মুখরিত আজ বাংলার চারদিক। নতুনের আবাহনে কবিগুরুর সেই চিরায়ত সুর বাঙালীর প্রাণে প্রাণে অনুরণন তুলবে : এসো হে বৈশাখ এসো এসো হে . . .।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রকৃতি নির্ভর এই গানের সুরের মূর্ছনায় গত ১৯ এপ্রিল শনিবার হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশীর উপস্থিতি ও প্রানবন্ত অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত হল বাংলা বর্ষবরন উৎসব ১৪২১। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত মান্যবর রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রদূত সহধর্মীনী রিফাত সুলতানা কাদের, ও ডেপুটি মিশন প্রধান আবদুল মুহিত।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রবাসের জনপ্রিয় ব্যান্ডদল বিবাগী। ব্যান্ডদলটি পরপর তিনটি জনপ্রিয় গান পরিবেশন করে উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করেন। ব্যান্ড দল বিবাগীর সদস্যরা হলেন ক্যানি, তুর্ঘো, শাফি ও নাফি। এরপর মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করেন মেরিল্যান্ড আগত রোজারিও ও তার দল। নৃত্য পরিবেশন করেন সিনথিয়া ও তার দল এবং প্রিয়াংকা। নৃত্য পরিবেশন শেষে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসের সদ্য প্রয়াত তিন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের রূহের মাফেরাত কামনায় এক মিনিট নিরাবতা পালন করা হয়। সদ্য প্রয়াত তিন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা হলেন ড. আবদুর রাজ্জাক (ওয়াশিংটন ডিসি), মানবাধীকার কর্মী রতন বড়ূয়া (নিউইয়র্ক) এবং শিল্পী ঠাকুর রাসেল (নিউইয়র্ক)।
এরপর মঞ্চে পরিবেশন করা হয় দলীয় নৃত্য। রোজমেরী মিতু গোনজালভেজ এর পরিচালনায় ও কোরিওগ্রাফিতে অনুষ্ঠিত এই দলীয় নৃত্যে অংশগ্রহন করে ক্রিষ্টিনা, ষ্টেফানি, এলেন, এগনেস, ইভানা, অনিমা, সকুর্ণ, রিধা, অনুপমা, কারিনা, সুবর্ণা, টিনা, ঐষি, নিষিতা, রূপন্তি ও পুষ্পিতা।
দলীয় নৃত্য শেষে সঙ্গীত পরিবেশন করে টগর, উৎপল বড়–য়া ও সুকান্ত বড়–য়া। এরপর মঞ্চে বর্ষবরনের কবিতা আবৃতি করেন প্রবাসের বিশিষ্ট আবৃতিকার ড. জাফরুল হাসান। কবিতা আবৃতি শেষে মঞ্চে এসে নববর্ষের শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের। এই সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রিফাত সুলতানা কাদের, ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামেলির কর্মকর্তা আবু রুমি, শামসুন পারভিন, আকতার হোসেন, ফাহমিদা শম্পা, নুরুল আমিন নুরু সহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের এর নববর্ষের শুভেচ্ছা শেষে মঞ্চে সমবেত কন্ঠে পরিবেশিত হয় কবিগুরু রবী ঠাকুরের প্রকৃতি প্রেম নির্ভর এবং বৈশাখের চীরন্তন সঙ্গীত "এসো হে বৈশাখ…"। আবু রুমির পরিচালনায় এতে অংশগ্রহন করেন রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের, রিফাত সুলতানা কাদের, ডেপুটি মিশন প্রধন আবদুল মুহিত, বিসিসিডিআই সভাপতি শামীম চৌধুরী, শামসুন পারভিন, ফাহমিদা শম্পা, বুলবুল আক্তার, শামশিষ সুহাষ, ড. জাফরুল হাসান, শিব্বীর আহমেদ, সাবরিনা চৌধুরী ডোনা, আরিফুর রহমান স্বপন, সাবরিনা রহমান, আবদুস সাত্তার, শরাফত হোসাইন বাবু সহ অন্যান্যরা।
এরপর মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করে বাংলাদেশ বুড্ডিষ্ট কমিউনিটি। নৃত্যটির কোরিওগ্রাফি করেন বনাণী বড়ূয়া এবং নৃত্যে অংশগ্রহন করে নিভা বড়ূয়া, লাকি বড়ূয়া, অদিতি বড়–য়া, রিফি বড়ূয়া, উর্মিলা বড়ূয়া, রিতা বড়–য়া, মিমি বড়–য়া, বাধন বড়–য়া, অতষি বড়–য়া, অবন্তি বড়–য়া, সুস্মিতা বড়–য়া, কৌশিক বড়–য়া, অংকিতা বড়–য়া, সুসান্তিকা বড়–য়া, পরাগ বড়–য়া, স্বপ্নিল বড়–য়া, সুস্ময় বড়–য়া, দিবিয়া বড়–য়া, ও আনন্দ বড়–য়া।
বাংলাদেশ বুড্ডিষ্ট কমিউনিটি নৃত্য শেষে মঞ্চে আবারো নৃত্য পরিবেশন করে সুরবিতানের শিল্পীবৃন্দ। নৃত্যটি পরিচালনা করেন বুলবুল আক্তার। এরপর মঞ্চে একে একে সঙ্গীত পরিবেশন করে মেট্র বউল নামে পরিচিত মোহাম্মদ জাফর, আমন্ত্রীত শিল্পী ক্লোজ আপওয়ান তারকা শিল্পী পলাশ রয় এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার শিল্পী অনিমা ডি কষ্টা। এরপর মঞ্চে র্যাফেল ড্র লটারি অনুষ্ঠিত হয়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজ কর্মকর্তাদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই র্যাফেল ড্র এর মাধ্যমে দুটি ওয়াশিংটন-ঢাকা-ওয়াশিংটন বিমান টিকেট প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানের ষ্পন্সর হিসাবে সহযোগীতা করেছে ফ্রন্টটেক – গ্র্যান্ড স্পন্সর, ইতিহাদ এয়ারওয়েজ – এক্সিকিউটিভ স্পন্সর, পার্টনার রিয়েল ষ্টেট – রাজিব হক, বাংলাবাজার, এশিয়া হালাল, মোহাম্মদ আলী – ন্যাশনওয়াইড ইন্সুরেন্স, ঢাকা হোম – মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, কাজী টি ইসলাম – ই এন্ড আর ট্যাক্স সল্যুশান, দিলাল আহমেদ – ফেয়ারওয়ে, আবু হক, ও রাজা – ঘরের খাবার। এছাড়াও অনুষ্ঠানে প্রায় ৬০টির মত ষ্টল বসে। ষ্টলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শাড়ী, চুড়ি, গয়না, গার্মেন্টস, খেলনা সহ বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান। অনুষ্ঠানে মঞ্চ নিয়ন্ত্রন, নিরাপত্তা ও ষ্টল ব্যবস্থাপনায় ছিলেন আবু রুমি, আক্তার হোসাইন, নুরুল আমীন নুরু, মজনু মিয়া ও সুমন।
অনুষ্ঠানে শব্দ নিয়ন্ত্রনে ছিলেন শিশির ও প্রান্তিক, মিউজিক : কিবোর্ড – সৌমি, ড্রাম – ক্যানী, অক্টোপ্যাড – প্রান্তিক, লিড গিটার – শফি, বেইজ গিটার – তুর্ঘো, ও তবলায় – আশীষ বড়–য়া। এছাড়াও সহযোগিতায়: অনিক, আকিব, বাপ্পি, সামির, হাজী, খোকন, সেনা ও মোস্তফা। অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় ছিলেন ভয়েস অব আমেরিকার বিশিস্ট সাংবাদিক সাবরিনা চৌধুরী ডোনা ও লেখক সাংবাদিক শিব্বীর আহমেদ।
বাঙালি জীবনের অসাম্প্রদায়িক, সার্বজনীন একটি উৎসব হল পহেলা বৈশাখ, বর্ষবরণের দিন, শুভ নববর্ষ। এদিনটি প্রতিটি বাঙালির জীবনে নিয়ে আসে উৎসব আমেজ আর ফুরফুরে বাতাসের দিন বসšত। আলপনা আঁকা শাড়ি আর পাঞ্জাবি ছাড়া যেন এদিনটিকে আর পালন করাই যায় না। সাথে লাল সবুজ আর সাদার মিশেলে হাতে, গালে ফুলকি আঁকা এখন হাল ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে। প্রতি বছরই ক্রমশ বাড়ছে বর্ষবরণের আমেজ। দিনভর আয়োজন আর পরিবেশনা শেষে বাঙালির বর্ষবরনের এই আমেজকে বুকে ধারন করেই সন্ধ্যা ৬টায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন ফ্রেন্ডস ফ্যামেলির কর্মকর্তা আবু রুমি ও আক্তার হোসাইন। খবরের সাথে ছবিগুলোয় সহযোগীতা করেছেন বিপ্লব দত্ত ও কামরুল ইসলাম কামাল।
__._,_.___