On Tuesday, April 1, 2014 12:47 PM, Muhammad Ali <manik195709@yahoo.com> wrote:
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী test@gmail.com |
এটা কি অজ্ঞানতা, না সজ্ঞান দেশদ্রোহিতা?
01 April 2014, Tuesday
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, 'মূর্খের সঙ্গে তর্ক করিও না।' ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ও জিয়াউর রহমানও নিহত হওয়ার পর যখন তাঁর হাতে গড়া দল বিএনপি ক্ষমতায় বসে শুধু স্বাধীনতাযুদ্ধের আদর্শ মুছে ফেলা নয়, স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা শুরু করে, তখন এক পরিচিত আলেমকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, মূর্খ যদি অত্যাচারী শাসক হয় ও ক্ষমতায় বসে অনবরত মিথ্যাচার করে, তাহলেও কি তার প্রতিবাদ করা থেকে বিরত থাকতে হবে? আলেম সাহেব জবাব দিয়েছিলেন, এ সম্পর্কে পবিত্র হাদিসের স্পষ্ট নির্দেশ 'অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য কথা বলাই সর্বোত্তম জেহাদ'।
বিএনপি এখন শাসনক্ষমতায় নেই। কিন্তু অত্যাচারী শাসক থাকাকালে যে মিথ্যাচার তারা শুরু করেছিল, যে মিথ্যাচারগুলো তারা দেশবাসীকে গিলতে বাধ্য করেছিল, তার প্রচার এখনো অব্যাহত রয়েছে। শুধু আগের মিথ্যাচারগুলো অব্যাহত রাখা নয়, তার সঙ্গে নতুন নতুন মিথ্যা যোগ করা হচ্ছে। এই মিথ্যাগুলো অজ্ঞানতাপ্রসূত উক্তি নয়, ইচ্ছাকৃত দেশদ্রোহিতা। বর্তমান সরকারের উচিত রাষ্ট্রের স্বার্থেই এর বিরুদ্ধে সাংবিধানিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং দেশের সচেতন মানুষেরও উচিত সাবেক অত্যাচারী শাসকদের এই মিথ্যার জোর ও সম্মিলিত প্রতিবাদ করা; যা অবশ্যই জেহাদের সমতুল্য।
এটা কি অজ্ঞানতা, না সজ্ঞান দেশদ্রোহিতা?
জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর তাঁর স্ত্রী বেগম খালেদার নেতৃত্বে বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে পুনর্গঠিত হতে যাচ্ছিল। কিন্তু জিয়াপুত্র তারেক রহমান লায়েক হওয়ার পর সেই প্রক্রিয়ায় বাধা পড়ে। একদিকে তারেক সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরাট ঘাঁটি হাওয়া ভবন গড়ে তোলেন। অন্যদিকে স্বাধীনতার শত্রু ও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সঙ্গে 'আত্মীয়তা' পাতিয়ে দেশে ধর্মীয় জঙ্গিবাদের অভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় মদদদাতা হয়ে ওঠেন। এ জন্য ভারতের নরেন্দ্র মোদির মতো বাংলাদেশের তারেক রহমানকেও আমেরিকা তাদের দেশে যেতে অনুমতি দিতে চায়নি বলে জানা যায়।
বাংলাদেশে এক-এগারোর সময় এই যুবাবয়সী কালাপাহাড়ের পতন ঘটে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। জেনারেল মইন ও ফখরুদ্দীনের এক-এগারোর সরকারই দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায়। জেলে তাঁর ওপর নির্যাতন হয়েছিল বলেও তারেক পরে দাবি জানান। জেলে থাকাকালে আর রাজনীতি করবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে এবং তাঁর কৃতকর্মের জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে তিনি চিকিৎসার নামে জামিনে মুক্ত হয়ে লন্ডনে যান এবং সেই থেকে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ বিদেশে আছেন। লন্ডনের শহরতলিতে ভাড়া করা যে রাজকীয় বাড়িতে তিনি বাস করেন, সেটি দেখলে মনে হবে, মিসরের সিংহাসনচ্যুত রাজা ফারুকও নির্বাসনে এত বিলাস-বৈভবের মধ্যে বাস করেননি। এই বিলাসের অর্থ জোগানের উৎস কোথায়, কেউ জানে না। তিনি নাকি এখনো অসুস্থ, ভালো করে হাঁটতে পারেন না। কিন্তু ফেসবুকে নৈশনাচের ক্লাবে তাঁর আনন্দ-স্ফূর্তি করার ছবি প্রচারিত হয়।
তারেক রহমান কি সত্যই লন্ডনে অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং রাজনীতি থেকে দূরে আছেন? মোটেই তা নয়। তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রায়ই সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, রিয়াদ (পাকিস্তানেও যান কি না তা জানা যায়নি) সফর করেন। বাজারে গুজব, তিনি পেট্রোডলারের পৃষ্ঠপোষকতা পান, পাকিস্তানের আইএসআই ও ভারতের সন্ত্রাসী দাউদ ইব্রাহিম গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ। যিনি বিদেশে বসে চুটিয়ে রাজনীতি করতে পারেন, সভায় দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ বক্তৃতা করতে পারেন, পাঁচ-ছয় বছর যাবৎ বিদেশে তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তা কি পাগলেও বিশ্বাস করবে? তিনি সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও টাকা পাচারের গুরুতর অভিযোগে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কী করে বছরের পর বছর ধরে জামিনে থাকেন এবং বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তের রাজনীতি করতে পারেন, তার রহস্যও আমি বুঝি না।
গুরুতর অভিযোগের বিচার এড়িয়ে, জামিনে মুক্ত আসামি হিসেবে বিদেশে বসে কারো পক্ষে এভাবে বছরের পর বছর দেশে সরকার উচ্ছেদের চক্রান্ত চালানোর অবাধ অধিকার ভোগের দ্বিতীয় নজির বিশ্বের আর কোথাও নেই। জানা যায়, বাংলাদেশের গত ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে যোগ দেওয়ায় ইচ্ছা বিএনপির অধিকাংশ নেতা, এমনকি খালেদা জিয়ারও ছিল। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার লক্ষ্যে তারেক রহমানই জামায়াতের সঙ্গে ঘোঁট পাকিয়ে তাঁর মা ও দলকে নির্বাচন বর্জনে বাধ্য করেন এবং জামায়াতের সঙ্গে মিলে দেশে ভয়াবহ সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর পরামর্শ দেন। এই একটি মাত্র অপরাধেই তারেক রহমানের জামিন বাতিল করে তাঁকে দেশে এনে দেশদ্রোহিতার মামলাতেও কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত।
বিদেশে বসে তারেক রহমান স্বাভাবিক রাজনৈতিক কাজকর্মে জড়িত থাকলেও হয়তো আপত্তি করার কিছু থাকত না। কিন্তু তাঁর রাজনীতি অবৈধভাবে দেশের সরকার উচ্ছেদের চক্রান্তের। বিদেশে রাজনৈতিক সভা ডেকে তিনি যেসব কথাবার্তা বলতে শুরু করেছেন, তা একটি সরকারের বিরুদ্ধে কথাবার্তা নয়, তা দেশের সংবিধান ভঙ্গকারী ও স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি ও রাষ্ট্রবিরোধী কথাবার্তা। এগুলো মোটেই অজ্ঞানতা প্রসূত উক্তি নয়। স্বজ্ঞান রাষ্ট্রদ্রোহিতা। এ ধরনের উক্তি অন্য যেকোনো স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে করা হলে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বিচার ও সাজা হতো। বাংলাদেশে তারেক রহমানের ব্যাপারে এর অন্যথা হওয়া উচিত নয়।
গত ২৫ মার্চ লন্ডনে হঠাৎ এক সভা ডেকে তারেক রহমান যে কথাবার্তা বলেছেন, তাকে মূর্খের কথাবার্তা বলে উড়িয়ে দেওয়া ঠিক হবে না বলে অনেকেরই ধারণা। এমনকি তা অজ্ঞানতাপ্রসূত উক্তিও নয়। তা অসদুদ্দেশ্যমূলক মিথ্যাচার ও রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক বক্তব্য। দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন বলে তারেক যে হাস্যকর উক্তিটি করেছেন, সে সম্পর্কে ঢাকার অন্য একটি দৈনিকে গতকাল (৩১ মার্চ, সোমবার) আমি বিশদ আলোচনা করেছি। এখানে তার পুনরুল্লেখ নিষ্প্রয়োজন। তবে তাঁর বিকৃত মস্তিষ্কের কয়েকটি আবিষ্কার সম্পর্কে দু-একটা কথা বলছি।
তারেক প্রশ্ন তুলেছেন, 'আওয়ামী লীগ কর্তৃক নতুন করে ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিবস পালনের হেতু কী?' এর জবাব ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণার পটভূমি যে ৭ মার্চ, এ কথা কি ঐতিহাসিক সত্য নয়? এই দিনই কি বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেননি- 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম'? ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়, কিন্তু ৭ মার্চ সেই ঘোষণার কি আনুষ্ঠানিক দিবস নয়?
আমেরিকার স্বাধীনতাযুদ্ধে ফিলাডেলফিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়। তার আগে ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর প্রস্তুতিতেই জর্জ ওয়াশিংটন কি স্বাধীনতাযুদ্ধের ডাক দেননি? সেই দিবসটিও কি অদ্যাবধি আমেরিকায় পালন করা হয় না? পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ সালে। এই দিনটি তার স্বাধীনতা দিবস। কিন্তু এই দিবসের আগে ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে পাকিস্তান প্রস্তাব উত্থিত হয়। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পরও কি এই দিবসটি পাকিস্তান দিবস হিসেবে পালিত হয়নি? পরে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান এদিনে পার্লামেন্টে গৃহীত হলে এই দিনটিকে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবেও পালন করা হতো। সুতরাং ৭ মার্চের মতো একটি ঐতিহাসিক দিবস পালন করা হবে না কেন? মূর্খদের এই মিথ্যাচার নিয়ে বিতর্কে জড়াতেও লজ্জা হয়।
কত বড় মূর্খ হলে এক ব্যক্তি বলতে পারে, '৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিবস হলে ৮ মার্চ মুজিবনগর সরকার গঠিত হলো না কেন? ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো কেন? ৭ মার্চের পরও শেখ মুজিব পাকিস্তানিদের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক করেন কী করে?' এটা অজ্ঞানতাপ্রসূত প্রশ্ন নয়; উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য বিকৃতি। ৭ মার্চ স্বাধীনতার ডাক দিয়েই ৮ মার্চ সরকার গঠিত হয় কী করে? আমেরিকার স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরদিনই কি জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়েছিল? ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পরদিন ২৪ মার্চ কি পাকিস্তান সরকার গঠিত হয়েছিল? তার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল সাত বছর।
বাংলাদেশেও ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই পরদিন সরকার গঠনের কোনো সুযোগ ছিল না। বঙ্গবন্ধু রক্তপাত ও যুদ্ধ এড়াতে চেয়েছিলেন। সে জন্য ইয়াহিয়া ও ভুট্টো ঢাকায় এলে তিনি তাঁদের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে বসেননি। তিনি আলোচনা বৈঠকে বসেছিলেন। আলোচনার বিষয়ও ছিল তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়া নয়, এটা গো-মূর্খদের আবিষ্কার। মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ছিল সামরিক জান্তা কর্তৃক ছয় দফা মেনে নিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। কিন্তু ইয়াহিয়া ও ভুট্টো ছয় দফার দুটি দাবি কিছুতেই মেনে নিতে চাননি। একটি, পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) জন্য বাঙালিদের দ্বারা স্বতন্ত্র প্যারামিলিশিয়া গঠন ও সহজে বিনিময়যোগ্য (easily convertible) মুদ্রা ব্যবস্থা এবং বৈদেশিক বাণিজ্য প্রদেশের হাতে ন্যস্ত করা। সামরিক জান্তা তাতে রাজি হয়নি।
আলোচনা ভেঙে যায়। বঙ্গবন্ধু সমঝোতা করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন, এটি একটি জঘন্য মিথ্যাচার। তিনি ছয় দফার দুই দফা ছেড়ে দিলে বিনা আলোচনা-বৈঠকেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঢাকা বৈঠকে আসার আগেই ঘোষণা করেছিলেন, শেখ মুজিব পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু ছয় দফা ছেড়ে দিলেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতেন। তিনি নির্বাচন-জয়ী। কোনো দেনদরবারই করতে হতো না।
আর ছয় দফা দাবি ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল ভিত্তি। পাকিস্তানের শাসকরাই এটাকে বিচ্ছিন্নতার দাবি আখ্যা দিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে শেখ মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আসামি করে ফাঁসি দিতে চেয়েছিল। তারেক রহমানের যা বিদ্যাবুদ্ধি, তাতে এসব ইতিহাস-ভূগোল কি তাঁর জানা আছে? ৭ মার্চের ভাষণের পরও বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ ও রক্তপাত এড়ানোর জন্য ইয়াহিয়ার সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। কিন্তু তাঁর নির্দেশে বাংলাদেশ চলেছে। তিনি ৭ মার্চের পরই সরকারি দায়িত্ব গ্রহণ করেননি কে বলল? ২৩ মার্চ তো তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকাই উড়িয়েছেন। এত সব ঐতিহাসিক ঘটনার পরও মূর্খরা কী বলতে চায়?
৭ মার্চ স্বাধীনতাযুদ্ধের ডাক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পরদিনই সরকার গঠনের পরিস্থিতি ও সুযোগ কোনোটাই ছিল না। নেতারা তখনো আলোচনা ও যুদ্ধ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। ইয়াহিয়া আলোচনা অসমাপ্ত রেখে ঢাকা ছাড়তেই সম্ভাব্য গ্রেপ্তার ও হামলার আশঙ্কায় বঙ্গবন্ধু ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতারা তাঁর নির্দেশে আত্মগোপন করেন এবং দেশ ছাড়েন। অত্যল্পকালের মধ্যে তাঁরা প্রবাসী সরকার গঠন করেন। এটা অনেক দেশের মুক্তিযুদ্ধেই ঘটেছে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে প্যারিসের পতনের অনেক দিন পর জেনারেল দ্য গলে লন্ডনে এসে প্রবাসী সরকার গঠন করেছিলেন। মুজিবনগর সরকার গঠনে ২২ দিন দেরি হওয়া যদি এতই আপত্তিকর ঠেকে, তাহলে তখনকার মেজর জিয়া নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণার পরদিনই সরকার গঠন করলেন না কেন? তিনিও কেন ভারতে পালিয়ে গেলেন?
স্বাধীনতাযুদ্ধের ডাক দিয়ে ও স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালেও শত্রুপক্ষের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসা কোনো নতুন ঘটনা নয়। ভিয়েতনাম যুদ্ধে ভিয়েতকং সেনাপতি জেনারেল গিয়াপ বারবার মার্কিন সেনাপতিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের যুদ্ধের সময়ও ইয়াসির আরাফাত শান্তি আলোচনার জন্য যুদ্ধবিরতি ঘটিয়ে ইসরায়েলে গেছেন। তাতে তিনি ফিলিস্তিনিদের মুক্তিসংগ্রাম চাননি- এ কথা কোনো মূর্খও বলবে না।
তারেক রহমানের সবচেয়ে বড় ধৃষ্ট উক্তি 'স্বাধীনতা সম্পর্কে শেখ মুজিবের কোনো ধারণাই ছিল না', যে নেতা ১৭ বছর অনবরত জেলজুলুম সহ্য করে, দুবার ফাঁসির মামলার আসামি হয়ে দীর্ঘকালের সাধনা ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন, তাঁর স্বাধীনতা সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না; তাহলে সেই ধারণা ছিল কি সেনাবাহিনীর এক মেজরের, যিনি বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু হওয়ার দিনটিতেও তাঁর পাকিস্তানি বসের হুকুমে বাঙালি হত্যার জন্য আনীত অস্ত্র চট্টগ্রাম পোর্ট থেকে খালাস করে আনার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন এবং তাঁকে এক প্রকার জোর করে ধরে এনে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা দ্বিতীয়বার পাঠ করানোর জন্য মাইকের সামনে বসানো হয়? এটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট। অন্য কোনো বাঙালি সেনা অফিসার তখন চট্টগ্রামে থাকলে তাঁকে দিয়েই এই ঘোষণা পাঠ করানো হতো। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি প্রথম পাঠ করেন আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান।
সবচেয়ে হাস্যকর প্রশ্ন হলো, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণাটি ৩২ নম্বর ধানমণ্ডি থেকে কয়েক মাইল দূরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থানরত বিদেশি সাংবাদিকদের না পাঠিয়ে দূরে চট্টগ্রামে কেন পাঠালেন? বালখিল্য প্রশ্ন। সবাই জানেন, ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিদেশি সাংবাদিকরা তখন হানাদার বাহিনীর নির্দেশে অবরুদ্ধ। তাঁদের কাছে ঘোষণাটি পাঠিয়ে সারা দেশের মানুষকে জানানো যাবে না। ফলে ওয়্যারলেসেও আওয়ামী লীগের নেতাদের মাধ্যমে তা প্রচার করা হয়েছে। একজন বিদেশি সাংবাদিক বলেছেন, তিনি বেতারে ক্ষীণকণ্ঠে প্রচারিত স্বাধীনতার ঘোষণাটি শুনেছেন।
তারেক রহমানের আরেকটি মিথ্যাচার, দৈনিক ইত্তেফাকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছাপা হয়নি। পত্রিকাটি সেদিন সেই ভাষণের কী হেডিং দিয়েছে, তা পত্রিকাটির ইচ্ছার ব্যাপার। পত্রিকাটি আওয়ামী লীগেরও প্রাতিষ্ঠানিক মুখপত্র ছিল না। একটি পত্রিকার খবরের হেডিংয়ের কাটিং দেখিয়ে একমাত্র অজমূর্খরাই ইতিহাসের সত্য ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। গণহত্যা বন্ধ করার দাবিতে আওয়ামী লীগ ২৭ মার্চ ধর্মঘটের ডাক দিয়ে থাকলে তা ৭ মার্চের ভাষণের বা মুক্তিযুদ্ধ শুরু করার ডাকের পরিপন্থী হলো কেমন করে, তা শুধু এই পত্রিকাটির কাটিং যাঁরা তারেক রহমানকে সরবরাহ করেছেন, তাঁরাই বলতে পারেন।
তারেক রহমানের আরেকটি আবিষ্কার, রাজনীতিকরা স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। যে রাজনীতিকরা পাকিস্তান আমলের ২৪ বছর ধরে বাঙালির ভাষা-সংস্কৃতি ও শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন, স্বাধীনতার ডাকটি তো তাঁরাই দিয়েছেন। স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বও রাজনীতিকরা ও একটি রাজনৈতিক সরকারই দিয়েছে। তখনকার মেজর জিয়াউর রহমানও সেই রাজনৈতিক সরকারের আনুগত্য মেনে তাদের নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। কারো এক দিনের বেতার ঘোষণায় স্বাধীনতা আসেনি। আর কলকাতার গড়ের মাঠে দাঁড়িয়ে কেউ যদি বলে, আমি ভারতের রাষ্ট্রপতি, তা যেমন পাগলামি, তেমনি তা নিয়ে তার সন্তানদের কারো মাতামাতিও পাগলামি অথবা অসৎ ও অশুভ কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া আর কিছু নয়। মূর্খতাকে ক্ষমা করা যায়; কিন্তু মিথ্যাচারকে নয়।
(কালের কণ্ঠ, ০১/০৪/২০১৪)
__._,_.___