এইখানে এক নদী ছিল...
24 Mar, 2014
'বাজান, আমার নামডা একটু লেহেন না বাজান, øান করতে গ্যাছিলাম, আফনেদেরে ধরতে পারি নাই, একটা ফডু তুলেন, নামডা একটু লেহেন না বাজান, ঘরডাতে কিছু নাই, কিছু সাহায্য পাইলেও কয়ডা দিন তো চলন যাইব'-মৃতপ্রায় ধলেশ্বরী নদীর তীর ঘেঁষে দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে এমনই আকুতি জানাচ্ছিলেন সত্তরোর্ধŸ কুলদা রাজবংশী। একসময় সবই ছিল রাজার বংশের এই বিধবা নারীর। বাড়ির পাশের খরস্রোতা নদীতে ঝকঝকে ইলিশ আর নানা জাতের দেশি মাছ ধরে আনত স্বামী। মাছগুলোর মতোই তখন চকচক করত সর্বাঙ্গ। সবই এখন স্বপ্ন। ধলেশ্বরীর সঙ্গে সঙ্গে মরে গেছে তার সবকিছু। স্বামী বলাই রাজবংশী মারা গেছেন অনেক আগেই। তার তিন ছেলের একজনও বাবার পেশায় নেই। মাছ ধরা ছেড়ে দিয়ে সবাই নিজের মতো নতুন পেশা বেছে নিয়েছেন। আর উঠানের মাঝখানে তালপাতার ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে সঙ্গহীন জীবন কাটাচ্ছেন স্বামী-সংসারহীন এ বৃদ্ধা। সাভারের তেঁতুলঝরা ইউনিয়নের পানপাড়া গ্রামের কুলদাই শুধু নন, সত্য রাজবংশী, ধীরেন্দ্র রাজবংশী, অবিরাম রাজবংশীসহ ধলেশ্বরী নদীর দুই পাড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার জেলে পরিবারের অবস্থা এখন এমনই। ফি দিন সকাল-সন্ধ্যা নিয়ম করে দেবতার পুজো-অর্চনা চললেও ভাগ্য তাদের সহায় হয়নি। এমনই এক পরিস্থিতিতে এবার সারাবিশ্বে ঘটা করে পালিত হলো বিশ্ব পানি দিবস। এবার এ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল 'পানিই শক্তি।' পানির জন্য শক্তির প্রয়োজন। আর শক্তির জন্যও পানির প্রয়োজন। কিন্তু নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় পানির সংকটে মানুষ দিন দিন শক্তিহীন, পেশাহীন হয়ে পড়ছে।
যে ধলেশ্বরীর সঙ্গে দুই পাড়ের জেলে পরিবারের এত দিনের চেনাজানা, সে নদী এখন মৃতপ্রায়, তাদের কোনো উপকারেই আসে না। প্রায় শুকিয়ে যাওয়া নদীতে যেটুকু পানি আছে, তাও বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যে মারাত্মক দূষিত হয়ে পড়েছে। ক্রমেই কঙ্কালসার হয়ে পড়ছে নদী। সেই সঙ্গে নদীপাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকাও যাচ্ছে বদলে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে কথা হয় কুলদা রাজবংশী, সত্য রাজবংশী, ধীরেন্দ্র রাজবংশী, অবিরাম রাজবংশীসহ অনেকের সঙ্গে। তাদের দিন-গুজরান এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের পেশা নেই, পেশার নিশ্চয়তাও নেই। আর সে কারণে কোনো আনন্দ নেই জেলেপাড়ায়। রাজবংশী সম্প্রদায়ের বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষ বীরেন্দ্র জানান, যে নদীর জলে ছিল তাদের সবকিছু, এখন সেই নদীর পানি কেউ ছুঁয়েও দেখে না। পানিতে হাত দিলেই চুলকানি হয়। আর দূষিত পানির কারণে এলাকায় মশার উপদ্রবও বেড়েছে, বেড়েছে রোগ-ব্যাধিও। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, রাজনৈতিক পরিচয়ধারী প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে ধলেশ্বরী। নদীর দু'ধারে ডায়িং হাউস আর ইটভাটা। অনেকে জমির দখল রাখতে না পেরে প্রভাবশালীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন ভিটেমাটি।
রানী রাজবংশী জানান, খরস্রোতা নদীটির এমন করুণ রূপ বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে নদীপাড়ের মানুষের জীবনযাত্রা। অনেকে এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় যোগ দিচ্ছেন। নদীটির সঙ্গে সঙ্গে এখানে বসবাসরত রাজবংশী সম্প্রদায়ও এখন হারাতে বসেছে বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
একই অবস্থা মানিকগঞ্জের কালিগঙ্গা নদীর। ঢাকা-খুলনা হাইওয়ের তরা ব্রিজের নিচে নদীতে এখন সামান্যই পানি। সেই পানিতেও চলছে দূষণের মহোৎসব। ফলে আশপাশের চাষাবাদ মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। কৃষিকাজ ছেড়ে নদীপাড়ের মানুষ ভিড়ছে অন্য পেশায়। আর এক সময়ের বিশাল এই নদীর বুক থেকে ট্রাক ভরে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু।
এ বিষয়ে এনজিও ফোরামের অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের প্রধান যোসেফ হালদার জানান, শুধু নদীর সংরক্ষণের যথাযথ সিদ্ধান্ত না থাকায় আজ এ অবস্থা। নদীগুলো অবৈধ দখল হয়ে গেলেও সরকার ও প্রশাসন নিশ্চুপ। কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য এতটাই দূষিত করেছে এসব নদীর পানিকে যে তা আর পরিশোধনযোগ্য নেই। তিনি বলেন, শুধু সচেতনতা ও সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে ৩২ থেকে ৩৫ শতাংশ পানির অপচয় হচ্ছে। আর এ পানি তুলতে খরচ হচ্ছে অতিরিক্ত জ্বালানি। বলা হয়, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে সুপেয় পানির জন্য। তাই আমাদের পানির ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথের এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার চারপাশে ৭ হাজার শিল্পকারখানা থেকে প্রতিদিন এক দশমিক ৫ মিলিয়ন ঘনমিটার তরল বর্জ্য বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার ৪ নদীতে পড়ছে, যা নদীর পানিকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। যে কারণে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগের পানি ভয়াবহ দূষণের শিকার। একই কারণে ঢাকার পার্শ্ববর্তী ধলেশ্বরী, বংশাই, বংশী, কালিগঙ্গা, ইছামতী ও খিশরাসহ অন্যান্য নদীর পানিও দূষিত হয়ে পড়েছে। আর প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নদীও শুকিয়ে যাচ্ছে।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, একাদশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে নদীর সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় হাজার। নদীগুলো ছিল প্রশস্ত গভীর ও পানিতে টইটুম্বর। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন নামক সংগঠনের দেয়া তথ্যমতে, দেশে (শীতকালে ও গ্রীষ্মকালে পানি থাকে) এমন নদীর সংখ্যা ২৩০টি এবং সরকারি হিসেবে (শুধু গ্রীষ্মকালে পানি থাকে) এমন নদীর সংখ্যা ৩২০টি। এই নদীগুলোর মধ্যে বর্তমানে ১৭টি নদী তার চরিত্র সম্পূর্ণ হারিয়ে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে গিয়ে ঠেকেছে।
সূত্র জানায়, শুষ্ক মৌসুমে দেশে ৯৭ শতাংশ নদীর পানির প্রবাহ ও পরিমাণ হ্রাস পায়। ভারত থেকে আসা ৫৪টি নদীর উজান অঞ্চলে (ভারতীয় অংশে) ভারত সরকারের নির্মিত বাঁধ/ব্যারাজ ও বিভিন্ন প্রয়োজনে পানি প্রত্যাহারমূলক কার্যক্রমই তার প্রধান কারণ। পলি জমে তলা ভরাট হয়ে বাংলাদেশের ১৮৭টি নদী শুকিয়ে গেছে, যা মোট নদীর ২৮ শতাংশ। অন্যদিকে ৭৭ শতাংশ নদীর মুখে পলি জমে পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। ৪১ শতাংশ নদী ব্যাপক ভাঙনের শিকার। দখলজনিত কারণে দেশে ১৫৮টি প্রশস্ত নদী ক্ষীণকায় হয়ে পড়েছে। দেশের ১১ শতাংশ নদী শিল্পবর্জ্য নিঃসৃত রাসায়নিক দ্রব্য দ্বারা ব্যাপক দূষণের শিকার। ধারণা করা হচ্ছে, এমন অবস্থা বিরাজমান থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরো ২৫টি নদী দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
'বাজান, আমার নামডা একটু লেহেন না বাজান, øান করতে গ্যাছিলাম, আফনেদেরে ধরতে পারি নাই, একটা ফডু তুলেন, নামডা একটু লেহেন না বাজান, ঘরডাতে কিছু নাই, কিছু সাহায্য পাইলেও কয়ডা দিন তো চলন যাইব'-মৃতপ্রায় ধলেশ্বরী নদীর তীর ঘেঁষে দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে এমনই আকুতি জানাচ্ছিলেন সত্তরোর্ধŸ কুলদা রাজবংশী। একসময় সবই ছিল রাজার বংশের এই বিধবা নারীর। বাড়ির পাশের খরস্রোতা নদীতে ঝকঝকে ইলিশ আর নানা জাতের দেশি মাছ ধরে আনত স্বামী। মাছগুলোর মতোই তখন চকচক করত সর্বাঙ্গ। সবই এখন স্বপ্ন। ধলেশ্বরীর সঙ্গে সঙ্গে মরে গেছে তার সবকিছু। স্বামী বলাই রাজবংশী মারা গেছেন অনেক আগেই। তার তিন ছেলের একজনও বাবার পেশায় নেই। মাছ ধরা ছেড়ে দিয়ে সবাই নিজের মতো নতুন পেশা বেছে নিয়েছেন। আর উঠানের মাঝখানে তালপাতার ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে সঙ্গহীন জীবন কাটাচ্ছেন স্বামী-সংসারহীন এ বৃদ্ধা। সাভারের তেঁতুলঝরা ইউনিয়নের পানপাড়া গ্রামের কুলদাই শুধু নন, সত্য রাজবংশী, ধীরেন্দ্র রাজবংশী, অবিরাম রাজবংশীসহ ধলেশ্বরী নদীর দুই পাড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার জেলে পরিবারের অবস্থা এখন এমনই। ফি দিন সকাল-সন্ধ্যা নিয়ম করে দেবতার পুজো-অর্চনা চললেও ভাগ্য তাদের সহায় হয়নি। এমনই এক পরিস্থিতিতে এবার সারাবিশ্বে ঘটা করে পালিত হলো বিশ্ব পানি দিবস। এবার এ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল 'পানিই শক্তি।' পানির জন্য শক্তির প্রয়োজন। আর শক্তির জন্যও পানির প্রয়োজন। কিন্তু নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় পানির সংকটে মানুষ দিন দিন শক্তিহীন, পেশাহীন হয়ে পড়ছে।
যে ধলেশ্বরীর সঙ্গে দুই পাড়ের জেলে পরিবারের এত দিনের চেনাজানা, সে নদী এখন মৃতপ্রায়, তাদের কোনো উপকারেই আসে না। প্রায় শুকিয়ে যাওয়া নদীতে যেটুকু পানি আছে, তাও বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যে মারাত্মক দূষিত হয়ে পড়েছে। ক্রমেই কঙ্কালসার হয়ে পড়ছে নদী। সেই সঙ্গে নদীপাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকাও যাচ্ছে বদলে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে কথা হয় কুলদা রাজবংশী, সত্য রাজবংশী, ধীরেন্দ্র রাজবংশী, অবিরাম রাজবংশীসহ অনেকের সঙ্গে। তাদের দিন-গুজরান এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের পেশা নেই, পেশার নিশ্চয়তাও নেই। আর সে কারণে কোনো আনন্দ নেই জেলেপাড়ায়। রাজবংশী সম্প্রদায়ের বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষ বীরেন্দ্র জানান, যে নদীর জলে ছিল তাদের সবকিছু, এখন সেই নদীর পানি কেউ ছুঁয়েও দেখে না। পানিতে হাত দিলেই চুলকানি হয়। আর দূষিত পানির কারণে এলাকায় মশার উপদ্রবও বেড়েছে, বেড়েছে রোগ-ব্যাধিও। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, রাজনৈতিক পরিচয়ধারী প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে ধলেশ্বরী। নদীর দু'ধারে ডায়িং হাউস আর ইটভাটা। অনেকে জমির দখল রাখতে না পেরে প্রভাবশালীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন ভিটেমাটি।
রানী রাজবংশী জানান, খরস্রোতা নদীটির এমন করুণ রূপ বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে নদীপাড়ের মানুষের জীবনযাত্রা। অনেকে এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় যোগ দিচ্ছেন। নদীটির সঙ্গে সঙ্গে এখানে বসবাসরত রাজবংশী সম্প্রদায়ও এখন হারাতে বসেছে বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
একই অবস্থা মানিকগঞ্জের কালিগঙ্গা নদীর। ঢাকা-খুলনা হাইওয়ের তরা ব্রিজের নিচে নদীতে এখন সামান্যই পানি। সেই পানিতেও চলছে দূষণের মহোৎসব। ফলে আশপাশের চাষাবাদ মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। কৃষিকাজ ছেড়ে নদীপাড়ের মানুষ ভিড়ছে অন্য পেশায়। আর এক সময়ের বিশাল এই নদীর বুক থেকে ট্রাক ভরে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু।
এ বিষয়ে এনজিও ফোরামের অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের প্রধান যোসেফ হালদার জানান, শুধু নদীর সংরক্ষণের যথাযথ সিদ্ধান্ত না থাকায় আজ এ অবস্থা। নদীগুলো অবৈধ দখল হয়ে গেলেও সরকার ও প্রশাসন নিশ্চুপ। কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য এতটাই দূষিত করেছে এসব নদীর পানিকে যে তা আর পরিশোধনযোগ্য নেই। তিনি বলেন, শুধু সচেতনতা ও সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে ৩২ থেকে ৩৫ শতাংশ পানির অপচয় হচ্ছে। আর এ পানি তুলতে খরচ হচ্ছে অতিরিক্ত জ্বালানি। বলা হয়, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে সুপেয় পানির জন্য। তাই আমাদের পানির ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথের এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার চারপাশে ৭ হাজার শিল্পকারখানা থেকে প্রতিদিন এক দশমিক ৫ মিলিয়ন ঘনমিটার তরল বর্জ্য বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার ৪ নদীতে পড়ছে, যা নদীর পানিকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। যে কারণে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগের পানি ভয়াবহ দূষণের শিকার। একই কারণে ঢাকার পার্শ্ববর্তী ধলেশ্বরী, বংশাই, বংশী, কালিগঙ্গা, ইছামতী ও খিশরাসহ অন্যান্য নদীর পানিও দূষিত হয়ে পড়েছে। আর প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নদীও শুকিয়ে যাচ্ছে।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, একাদশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে নদীর সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় হাজার। নদীগুলো ছিল প্রশস্ত গভীর ও পানিতে টইটুম্বর। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন নামক সংগঠনের দেয়া তথ্যমতে, দেশে (শীতকালে ও গ্রীষ্মকালে পানি থাকে) এমন নদীর সংখ্যা ২৩০টি এবং সরকারি হিসেবে (শুধু গ্রীষ্মকালে পানি থাকে) এমন নদীর সংখ্যা ৩২০টি। এই নদীগুলোর মধ্যে বর্তমানে ১৭টি নদী তার চরিত্র সম্পূর্ণ হারিয়ে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে গিয়ে ঠেকেছে।
সূত্র জানায়, শুষ্ক মৌসুমে দেশে ৯৭ শতাংশ নদীর পানির প্রবাহ ও পরিমাণ হ্রাস পায়। ভারত থেকে আসা ৫৪টি নদীর উজান অঞ্চলে (ভারতীয় অংশে) ভারত সরকারের নির্মিত বাঁধ/ব্যারাজ ও বিভিন্ন প্রয়োজনে পানি প্রত্যাহারমূলক কার্যক্রমই তার প্রধান কারণ। পলি জমে তলা ভরাট হয়ে বাংলাদেশের ১৮৭টি নদী শুকিয়ে গেছে, যা মোট নদীর ২৮ শতাংশ। অন্যদিকে ৭৭ শতাংশ নদীর মুখে পলি জমে পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। ৪১ শতাংশ নদী ব্যাপক ভাঙনের শিকার। দখলজনিত কারণে দেশে ১৫৮টি প্রশস্ত নদী ক্ষীণকায় হয়ে পড়েছে। দেশের ১১ শতাংশ নদী শিল্পবর্জ্য নিঃসৃত রাসায়নিক দ্রব্য দ্বারা ব্যাপক দূষণের শিকার। ধারণা করা হচ্ছে, এমন অবস্থা বিরাজমান থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরো ২৫টি নদী দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
উৎসঃ মানবকন্ঠ
__._,_.___