Banner Advertise

Tuesday, March 18, 2014

[chottala.com] ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব




বুধবার, ১৯ মার্চ ২০১৪, ৫ চৈত্র ১৪২০
ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব
এম. আর. মাহবুব
ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব আমাদের জাতীয় ইতিহাসের একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ১৯২৭ সালে ২৩ ডিসেম্বর বরিশালে গৌরনদী থানার কাজী কসবা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী আবদুল মজিদ এবং মাতার নাম আছিয়া খাতুন। গোলাম মাহবুব ১৯৪২ সালে টরকী বন্দর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং সে বছরই কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত হন। তিনি ১৯৪২ সালে সমগ্র দেশব্যাপী স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে বিভাগোত্তর রাজনীতিতে অংশ নেন। ১৯৪৪ সালে তিনি আবুল হাশিমের প্রেরণায় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ ভর্তি হন কিন্তু রাজনৈতিক কারণে জেলে থাকায় চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। পরে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে এলএলবি ডিগ্রী লাভ করেন। কাজী গোলাম মাহবুব পেশাগত জীবনে একজন সফল আইনজীবী ছিলেন। তিনি ১৯৫৩ সালে বরিশালে আইন ব্যবসা শুরু করেন এবং ১৯৫৮ সাল থেকে ঢাকায় হাইকোর্ট স্থায়ীভাবে এই পেশায় নিয়োজিত হন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে কাজী গোলাম মাহবুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পাকিস্তানের শিকার হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। ঐ হরতালে তিনি গ্রেফতার হন এবং জীবনের প্রথম কারাভোগের অভিজ্ঞতা লাভ করেন। ১১ মার্চ হরতাল কর্মসূচী চলার সময় সচিবলায়ের সম্মুখে একটি পিকেটিং গ্রুপে নেতৃত্ব দেন কাজী গোলাম মাহবুব। তিনি তোপখানা রোডের দিক সচিবালয়ের ২য় গেটের সামনে পিকেটারদের নিয়ে অবস্থান গ্রহণ করেন। এক পর্যায়ে পুলিশের আইজি জাকির হোসেনের গাড়ি সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হলে তারা সেটি গতিরোধ করার জন্য রাস্তায় শুয়ে পড়েন। এই সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণ চালায়। কাজী গোলাম মাহবুব পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে গ্রেফতার হন। ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকা বার লাইব্রেরিতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে এক সভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে পরিষদের আহ্বায়ক নিযুক্ত হন কাজী গোলাম মাহবুব। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানব্যাপী ১৯৫২ সালে ভাষা-আন্দোলন সংগঠনের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নির্দেশক এবং কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠিত সভাসমূহের আয়োজক হিসেবে মূল ভূমিকা পালন করেন। সংগ্রাম পরিষদের গৃহীত কর্মসূচীকে সাফল্য ম-িত করার জন্য তিনি নানা কর্মোদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং সারা দেশব্যাপী প্রচার কার্য চালিয়ে যান। ১১ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি পতাকা দিবস পালন করা হয়। এসব সভা ও প্রতিবাদ কর্মসূচীতে কাজী গোলাম মাহবুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০ ফেব্রুয়ারি সরকার ১৪৪ ধারা জারি করলে ঐদিনই সন্ধ্যায় ৯৪ নং নবাবপুর রোডে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সভায় অন্যদের মধ্যে কাজী গোলাম মাহবুবও বক্তব্য রাখেন। ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথমে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও পরে এই আন্দোলনের পক্ষে কাজ করেন। একুশের গুলি বর্ষণের পরবর্তী গোপন বৈঠক ডাকেন এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩ ঘটিকায় মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে ভাষা-আন্দোলনের কারারুদ্ধ কর্মী আলী আজমলের রুমে আরেকটি বৈঠক ডাকেন। 
২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ তারিখে গুলি ও হত্যাযজ্ঞের পর কৌশলে গোপন স্থানে কাজী গোলাম মাহবুব আরও কয়েকটি বৈঠক করেন এবং গ্রেফতার করেন এবং গ্রেফতার এড়িয়ে আন্দোলন পরিচালনা করেন। একুশের ঘটনাবলী সম্পর্কে তৎকালীন পূর্ব-পাক প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমীনের বেতার ভাষণের তীব্র প্রতিবাদকারী এবং সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে ২৬ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ঐতিহাসিক বিবৃতি প্রদান করেন। ভাষা-আন্দোলনের দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করা হয় এবং ১৯৫২ সালের ২ মার্চ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি পত্রিকায় কাজী গোলাম মাহবুবসহ নয়জন ভাষাসৈনিককে ধরিয়ে দেয়ার জন্য সরকারীভাবে ৫০০০ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এই নয়জনের মধ্যে সর্বপ্রথম নামটি ছিল কাজী গোলাম মাহবুবের। হুলিয়া মাথায় নিয়ে ভাষা-আন্দোলন সংগঠনে শান্তিনগরে ৭ মার্চ ১৯৫২ তারিখে গোপন বৈঠকের আয়োজন করে আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণ করেন। ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে পালনের জন্য আরমানিটোলা মাঠে আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় অন্যতম বক্তা ছিলেন কাজী গোলাম মাহবুব। ভাষা-আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য তিনি ১৯৫২ সালে এবং ১৯৫৩ সালে গ্রেফতার হন এবং বহুদিন জেলে বন্দী থাকেন।
কাজী গোলাম মাহবুব ১৯৯৩-৯৪ সালে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার স্বার্থে আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে তিনি সে সময় দলীয় এবং সরকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। কাজী গোলাম মাহবুবের নেতৃত্বে আইনজীবী সমাজে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কাছে নতিস্বীকার করে তৎকালীন সরকার সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী নিয়োগ প্রদান করেন। কাজী গোলাম মাহবুব দলীয় বিভাজনের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী ও সাহসী কণ্ঠস্বর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার তিন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী কাজী গোলম মাহবুব ১৯ মার্চ, ২০০৬ ইং তারিখে ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। ভাষা-আন্দোলনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ২০০২ সালে একুশে পদক, ২০০০ সালে তমদ্দুন মজলিশের মাতৃভাষা পদক এবং ২০০২ সারে আওয়ামী লীগের ভাষাসৈনিক পদকসহ অসংখ্য পদকে ভূষিত হন। তার মৃত্যুর পর ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ধানম-ির ৯ ও ১০ নং সড়কের নাম 'ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব সড়ক' নামকরণ করেছে। লেখক : রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক, গবেষক
mrmahabub@yahoo.com
প্রকাশ : বুধবার, ১৯ মার্চ ২০১৪, ৫ চৈত্র ১৪২০

বঙ্গবন্ধুর সাথে ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব (১৯৭২)



__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]





__,_._,___