Banner Advertise

Tuesday, March 11, 2014

[chottala.com] প্রেম দিয়েছ তুমি কিন্তু পানি দিতে পারলাম না আমি



প্রেম দিয়েছ তুমি কিন্তু পানি দিতে পারলাম না আমি

অলিউল্লাহ নোমান
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আওয়ামী লীগের জনসভা। সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথির ভাষণ দিলেন। শিক্ষণীয় অনেক বাণী দিয়েছেন। তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতেই সব কথা বলেছেন। ভোটারবিহীন জবরদস্তির নির্বাচনে বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী তিনি। তার বক্তব্য ভবিষ্যত্ প্রজন্মের জন্য অনেক শিক্ষণীয়। শব্দচয়নে ছিল সাহিত্যের ছোঁয়া।
বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী ছিলেন এমনটাই দাবি তার। তারই প্রভাব বক্তব্যের পরতে পরতে। যদিও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় দেখা যায় শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রাপ্ত নাম্বার নিয়ে বেরসিক সমালোচকরা নানা কথা বলে বেড়ান। বেরসিকদের কেউ কেউ ঠাট্টা করে বলেন ৩ পেয়েছিলেন। মাস্টার সাহেবকে বাড়িতে ডেকে এনে সেটা ৩৩ করা হয়। তবে বাংলায় যে তিনি ভালো ছিলেন বক্তব্য থেকে বোঝা যায়। রবীন্দ্রসাহিত্য রপ্ত করেছেন সেটার বহিঃপ্রকাশ ঘটে তার শব্দচয়নে।
ছোটবেলায় পরিবার থেকে মানুষ আচার-আচরণ শেখেন। লেখাপড়া শেখেন বিদ্যালয় থেকে। রাষ্ট্রীয় আচার-আচরণ শেখেন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের কাছ থেকে। শিশুকালে পরিবার, বিদ্যালয় এবং প্রতিবেশীর কাছ থেকে যতটুকু শেখা হয়, সেটার প্রতিফলন ঘটে বাকি জীবনে। বড় হওয়ার পর রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে যোগ দিলেও ছোটবেলায় শিক্ষালাভ করা আচরণের প্রভাব থেকে যায়। এটাই চিরন্তন।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বয়সও কম নয়। ষাটোর্ধ্ব বয়সের মুরব্বি। ইতোমধ্যে দাদি-নানি হয়েছেন। নাতি-নাতনির বয়সের সন্তানরা সবাই তার কাছ থেকেই শিখবেন। রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী কীভাবে কথা বলছেন, মুখের বাচনভঙ্গি কেমন, শব্দচয়ন টেলিভিশনে শুনে শিশুরা অনুকরণ করার চেষ্টা করবে। প্রধানমন্ত্রীর মতো আগামী দিনে বড়মাপের মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখবে। এটাই তো শিশুদের কাজ। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কী শিখছে শিশুরা! ৭ মার্চ আওয়ামী লীগের জনসভায় দেয়া ভাষণে উচ্চারিত কতগুলো শব্দ নিয়ে পরিবারের মুরব্বিরা বিপাকে পড়েছেন শিশুদের কাছে।
আমার অতিপরিচিত এক বন্ধুর সাত বছর বয়সের একটি সন্তান রয়েছে। টেলিভিশনের খবরে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনে বাবার কাছে দৌড়ে আসে। বাবা, বল তো দেখি, 'দুজনে মিলে কুজনে কী কথা'র মানেটা কী? বাবা জানতে চান কোথায় শুনলে তুমি সেটা? জবাবে সন্তান বলে, ওই যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলতেছে বদু কাকার সঙ্গে নতুন শাড়ি পরে কে জানি বসে ছিল! তারা দুজনে মিলে কুজনে কথা বলেছে। বদু কাকাটা কে? সন্তানের এই প্রশ্নের কী জবাব দেবেন বাবা! রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। সন্তান তো এর একটা ব্যাখ্যা চাইতেই পারে।
ইতোমধ্যে পরেরদিন দেখা গেল শেখ হাসিনার বদু কাকা পত্রিকায় প্রতিবাদ পাঠালেন। প্রতিবাদে তিনি কিছু ধর্মীয় বাণী শেখানোর চেষ্টা করলেন। নিজের নামের বাংলা তরজমাটা জানানোর চেষ্টা করলেন প্রতিবাদে। তার নামটা যে আরবি! এটাতে তো সাম্প্রদায়িক গন্ধ রয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো আর সাম্প্রদায়িক নন। তিনি তো অসাম্প্রদায়িক লোক। সুতরাং নামের বিকৃত উচ্চারণ করেননি তিনি। বরং অসাম্প্রদায়িক শব্দে রূপ দিয়েছেন নামটির! সেটাই বুঝলেন না প্রধানমন্ত্রীর বদু কাকা।
ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাবেক রাষ্ট্রপতি। প্রবীণ রাজনীতিক তিনি। নাম বিকৃতি করায় তিনি মনে কষ্ট পেয়েছেন। তার প্রতিবাদ থেকে সেটা বোঝা গেছে। কষ্ট পাওয়ারই কথা! এজন্যই হয়তো প্রতিবাদ করেছেন। বলেছেন এটা অশালীন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে এই নিন্দিত শব্দগুলো ব্যবহার মানায়। তবে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসা কোনো ব্যক্তির মুখে এ ধরনের বক্তব্য বেমানান। তিনি চেয়ারের ইজ্জতের কথা মনে করিয়ে দিলেন। পরিবার থেকে যে যা-ই শিখুন না কেন, রাষ্ট্রীয় চেয়ারের মর্যাদা আলাদা। চেয়ারের মর্যাদা বোঝানোর চেষ্টা করলেন প্রবীণ রাজনীতিক সাবেক রাষ্ট্রপতি।
প্রবীণ রাজনীতিক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ৬ মার্চ দেখা করেছিলেন ১৯ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে। এই সাক্ষাত্ নিয়ে কটাক্ষ করেন ভোটারবিহীন নির্বাচনে বিজয়ী শেখ হাসিনা। অত্যন্ত স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতেই কটাক্ষমূলক শব্দগুলো উচ্চারণ করেছেন তিনি। বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রচর্চা থেকেই হয়তো তার এই শব্দগুলোর আমদানি। তিনি রবীন্দ্রভক্ত। কারণ বাংলাদেশে একটি বিশেষ ধর্মের লোকরাই 'চাচা' শব্দটিকে 'কাকা' হিসেবে সম্বোধন করেন। তাঁরই প্রতিফলন দেখা যায় রবীন্দ্রসাহিত্যে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীরও সেই দিকে বিশেষ দুর্বলতা থাকতে পারে। কারণ অসাম্প্রদায়িক দাবিদার হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রটির সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে।
শেখ হাসিনা শুধু প্রবীণ রাজনীতিক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে নন, সঙ্গে তিনি কটাক্ষ করেছেন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ১৯ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও। শেখ হাসিনার বক্তব্যগুলো হুবহু ছিল এরকম— 'ছবিতে দেখলাম লাল শাড়ি পরে বদু কাকার সঙ্গে কথা বলছেন। জানি না তিনি রজনীগন্ধা নিয়ে গিয়েছিলেন কি-না। এক সময় তো এমন তাড়া খেয়েছিলেন যে রেললাইনের তলা দিয়ে পালাতে হয়েছিল। তখন তিনি বলেছিলেন, আমি একগুচ্ছ রজনীগন্ধা নিয়ে গেলাম। আজ দেখি দুজনে বসে কুজনে কী কথা বলে।'
সেই ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ৫ জানুয়ারির (অবশ্য ভোটারের নীরব প্রত্যাখ্যান হওয়া) নির্বাচনে বিজয়ের রহস্য জানালেন। বললেন—হরতাল, অবরোধ, আন্দোলন চলার পরও আওয়ামী লীগ দক্ষতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করেছে। তাই আবার জয় পেয়েছে। জনগণ নৌকায় আবার ভোট দিয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা যেটা বলেননি, সেটা হলো—এই ভোটে মানুষ যায়নি। অনেক কেন্দ্রের দরজায় কুকুর শুয়ে থাকার ছবি প্রকাশিত হয়েছে। তিনশ' আসনের মধ্যে ১৫৩ আসনে মানুষকে ভোট দেয়ার জন্য বলাই হয়নি। বাকি ছিল ১৪৭ আসন। সেখানেও মানুষ যায়নি। তারপরও আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে; সেটা কিন্তু বলেননি প্রধানমন্ত্রী।
আরো যেটা বলা হয়নি ভাষণে, সেটা হলো—বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট যাতে নির্বাচনে না আসে, সুকৌশলে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছিল ৫ জানুয়ারি। এজন্য আগে থেকেই এক সময়ে আমার দাবিতে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমি নিজেই বাতিল করে দিয়েছি; যাতে এটা নিয়ে চেঁচামেচি করতে করতে সময় পার করে দেয় বিএনপি। কারণ নির্বাচনে এলে পরিণতি কী হতো, সেটা উপজেলা নির্বাচনই সাক্ষী। এজন্য বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার যত কৌশল ছিল, সবই নেয়া হয়েছে। এতে কোনো কার্পণ্য করা হয়নি। এ কথাগুলো তিনি বলেননি ৭ মার্চের ভাষণে।
বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী শেখ হাসিনা ১৯ দলীয় জোট নেত্রী সম্পর্কে বলতে গিয়ে সাহিত্যের রস ছড়ালেন বক্তব্যে। বললেন, 'যিনি ১৫ দিন ঘর থেকেই বের হননি, নির্বাচনের আগে ঘন ঘন বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেন, আমাদের নামে নালিশ করেন। নালিশ করে কী পেয়েছেন! নালিশ করে বালিশ পেয়েছেন!'
শেখ হাসিনা সাহিত্যের রসে নালিশ করে বালিশ পাওয়ার কথা বললেও আসল কথাটা বলেননি। নির্বাচনের আগে ১৫ দিন বিরোধীদলীয় নেত্রীকে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। হিন্দুস্তানের প্রতি অনুগত রাষ্ট্রীয় আওয়ামী বাহিনীগুলো ব্যবহার করে বাড়ির গেটে বালুভর্তি ট্রাক রাখা হয়েছে, যাতে বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে বের হতে না পারেন বিরোধী নেত্রী। পায়ে হেঁটে বের হতে চাইলে তাকে হিন্দুস্তান অনুগত বাহিনীগুলো গেটেই আটকে দিয়েছে। ঘেরাও দিয়ে রেখেছে তার বাড়ি। বাড়িতে কাউকে ঢুকতে দিইনি ১৫ দিন। এটা কিন্তু বলেননি শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার না বলা কথাগুলোর মধ্যে আরো ছিল, বিরোধী নেত্রীর বাড়ির সামনে যারাই এসেছেন তাদের ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ-র্যাব। বাড়ির সামনে এলে কাউকে রেহাই দেয়া হয়নি। বিরোধী নেত্রীর ডাকা মার্চ ফর ডেমোক্রেসি প্রতিহত করতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সব যানবাহন বন্ধ করা হয়েছে দেশব্যাপী। দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেয়া হয়েছে রাস্তায়। প্রস্তুত রাখা হয়েছিল আওয়ামী গুণ্ডা বাহিনী। মহিলা গুণ্ডা দিয়ে সুপ্রিমকোর্টে হামলা চালানো হয়েছে। যারাই উঁকি দেয়ার চেষ্টা করেছে, তাদেরই গুণ্ডা বাহিনী ডাণ্ডা দিয়ে ঠাণ্ডা করেছে। এই কথাগুলো কিন্তু বলেননি শেখ হাসিনা। তিনি শুধু বলেছেন নালিশ করে বালিশের কথা।
শেখ হাসিনার ভাষায় বদু কাকার কথা রসিয়ে রসিয়ে বললেন। কিন্তু নিজের আলিঙ্গনের কথা ভুলে গেলেন। এই বদু কাকাদের আলিঙ্গন করার জন্য তার কতই না উদগ্রীব অপেক্ষা ছিল ২০০৬ সালে। এছাড়া আমাদের দেশীয় নারীদের ঐতিহ্য শাড়িকে তিনি কটাক্ষ করলেন। অথচ নিজে তার অতিপ্রিয় হিন্দুস্তানি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলিঙ্গনের জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় থাকেন অহর্নিশ।
এই তো সেদিন (৫ মার্চ) বিমসটেক সম্মেলনে মিয়ানমারে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত দেখা মেলে দাদাবাবুর সঙ্গে। দুজনে মিলে তখন শুধু কুজনে কথা হয়নি। ছবিতে দেখা যায় হাত ধরে দাদাবাবুর কাছে তিস্তার পানি চেয়েছিলেন; কিন্তু তাও মিলল না। তুমি প্রেম দিয়েছ তবে আজ পানি দিতে পারলাম না আমি। অপেক্ষায় থাকো অনন্তকাল।
লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত


__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]





__,_._,___