Banner Advertise

Thursday, December 12, 2013

[chottala.com] “মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম এখনও চলছে” একাত্তরের বিজয় : ২



"মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম এখনও চলছে" একাত্তরের বিজয় -  
সরদার সিরাজুল ইসলাম
(পূর্ব প্রকাশের পর)
জনগণের দাবি নস্যাত করার উদ্দেশ্যে ইয়াহিয়া খান ১০ মার্চ গোলটেবিল বৈঠকের আহ্বান জানান এবং বঙ্গবন্ধু তা প্রত্যাখ্যান করেন। ইয়াহিয়া পুনরায় প্রতারণার পথ বেছে নিয়ে ৬ মার্চ বেতার/ টিভিতে প্রচারিত ভাষণে সংসদ অধিবেশনের দিন পুনরায় ধার্য করেন ২৫ মার্চ। 
অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের নির্দেশ মোতাবেক গ্রামে গঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী পুলিশ-বিডিআর আনসারের প্রাক্তন সৈনিকদের সংগঠিত ও সামরিক ট্রেনিং দানের কাজ চলতে থাকে এমনকি পাকবাহিনীতে কর্মরত সৈনিক অফিসারদের প্রস্তুত থাকার জন্য যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। মওলানা ভাসানী ৯ মার্চ পল্টনে ও ১৬ মার্চ চট্টগ্রামের জনসভায় বলেন, 'শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে, খামোখা কেউ তাকে অবিশ্বাস করবেন না। ২৫ মার্চের মধ্যে কোন কিছু করা না হলে মুজিবের সঙ্গে মিলিয়া তুমুল আন্দোলন শুরু করিব।'
১৪ মার্চ '৭১ ভুট্টো করাচীর নিস্তার পার্কের জনসভায় 'শেখ মুজিবের দাবি মোতাবেক পার্লামেন্টের বাইরে সংবিধান সংক্রান্ত সমঝোতা ছাড়া ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে পৃথকভাবে দু'টি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার' দাবি জানান। ১৫ মার্চ ইয়াহিয়া খান আলোচনার নামে ঢাকায় আসেন কিন্তু তখন পূর্ব পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর হাতে। বিমানবন্দর থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনে যেতে ইয়াহিয়াকে বঙ্গবন্ধুর অনুমতি নিতে হয়েছে। ভুট্টো আসেন ২১ মার্চ। আলোচনা চলে ২৪ মার্চ পর্যন্ত। মুজিব-ইয়াহিয়া, ভুট্টো-ইয়াহিয়া-মুজিব বৈঠককালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সহকর্মী ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, কামারুজ্জামান, খন্দকার মোস্তাক ও ডক্টর কামাল হোসেন। এই সব আলোচনায় বঙ্গবন্ধু প্রতিপক্ষকে বোঝাতে চেয়েছিলেন বাংলার জনগণ জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে তাই স্বাধীনতা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই এবং তা বিনা রক্তপাতে হলেই তাতে সম্পর্ক ভাল থাকবে। বঙ্গবন্ধুর আপোসহীনতার স্বীকৃতি পাওয়া যায় ২৬ মার্চ ইয়াহিয়া খানের বেতার ভাষণ থেকে। এতে বলা হয়, 'শেখ মুজিব পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা ও কায়েদে আজমের ছবি পুড়িয়েছে, প্যারালাল সরকার চালিয়েছে এবং তার কাছ থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার ঘোষণা আদায় করতে চেয়েছেন। 'উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু নিজে শুধু জয় বাংলার পতাকা উত্তোলন করেননি বরং যে গাড়ি নিয়ে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সাক্ষাতে যেতেন তাতে শোভা পেত জয় বাংলার পতাকা। ১৯ মার্চ '৭১ বঙ্গবন্ধু স্বহস্তে লিখিত এক ইশতেহারে ঘোষণা করেন, 'বাংলাদেশের সাত কোটি মানুষের সার্বিক মুক্তির জন্য আমাদের আজকের এই সংগ্রাম। অধিকার বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে। বুলেট বন্দুক বেয়নেট দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে আর স্তব্ধ করা যাবে না, কেননা জনতা আজ ঐক্যবদ্ধ। লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকারে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। ঘরে ঘরে গড়ে তুলতে হবে প্রতিরোধের দুর্গ। আমাদের দাবি ন্যায় সঙ্গত তাই সাফল্য আমাদের সুনিশ্চিত। জয় বাংলা।'
কিন্তু চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। মুজিব- ইয়াহিয়া বৈঠকের আনুষ্ঠানিকতা সমাপ্তি ঘোষণা না দিয়ে ইয়াহিয়া ২৫ মার্চ (৭১) সন্ধ্যায় করাচী পালিয়ে যান বাঙালীদের হত্যার নির্দেশ দিয়ে। ভুট্টো অবশ্য ২৬ মার্চ সকালের ফ্লাইটে করাচী পৌঁছে স্বস্তি প্রকাশ করেন, 'পাকিস্তান রক্ষা পেয়েছে।' ২৫ মার্চ রাতেই পাকিস্তান বাহিনী বাঙালীদের উপর শুরু করে বর্বরোচিত গণহত্যা।
অসহযোগ আন্দোলন তথা ইয়াহিয়া-মুজিব আলোচনার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু তার জনগণকে প্রস্তুত করছিলেন সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিরোধ করতে। ঘটনা প্রবাহের প্রতি তার ছিল তীক্ষè দৃষ্টি। ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া খানের পলায়নের খবর পেয়ে ঢাকা বিমানবন্দর ত্যাগের পূর্বেই বিকেল সাড়ে ৬টায় চট্টগ্রামের জন্য বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রতিবেশী একেএম মোশারফ হোসেন (বিএনপি প্রতিমন্ত্রী-২০০১...) এবং নঈম গওহর মারফত যে নির্দেশ এমআর সিদ্দিকীর কাছে প্রেরণ করেন তা হচ্ছে 'লিবারেট চিটাগাং, টেকওভার এডমিনিসট্রেশন, প্রসিড ফর কুমিল্লা। এমআর সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ যখন পান তখন তার বাড়িতে জাতীয় প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যসহ সহকর্মী এমএ মান্নান এমএ মজিদ, আতাউর রহমান কায়সার, ডা. জাফর, অধ্যাপক খালেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তারা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ নিয়ে পূর্বপরিচিত সেনাবাহিনীর বাঙালী অফিসার ও সদস্যদের কাছে পৌঁছে দেন। ডা. জাফর যান তৎকালীন ইপিআর ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলামের বাসায়। ক্যাপটেন রফিক রাত পৌনে ন'টায় মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের কথা ডা. জাফরকে জানিয়ে বলেন, অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টের কাছে খবরটা পৌঁছে দিতে। অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিস ছিল ক্যান্টনমেন্টের বাইরে শোলশহরে ২নং রেলগেটের কাছে। ক্যাপ্টেন রফিক বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন এই খবর ইবিআরসি'র দফতরে পৌঁছে রাত ১১টার দিকে। এর অনেক আগেই চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে পাকবাহিনী বাঙালী সৈনিকদের হত্যা করতে শুরু করেছে এবং গুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল ইবিআরসি অফিস থেকে। বাঙালী সৈনিকরা অনেকে পাহাড়ী এলাকা দিয়ে বেরিয়ে যায় এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূইয়া গুলির আওয়াজ ক্যান্টনমেন্টের বাইরের বাসায় বসে শুনতে পান এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য শহর এলাকায় চলে আসেন। রাত ১১টায় যখন ইবিআরসি দফতরে ক্যাপ্টেন রফিকের বার্তা পৌছে তখন ডিউটি অফিসার ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান জানান, ইউনিট প্রধান মেজর জিয়াউর রহমান 'সোয়াত' জাহাজে আনীত পাকবাহিনীর অস্ত্র খালাসের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে পথে রওনা হয়ে গেছেন। ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান তথন মোটরসাইকেল নিয়ে মেজর জিয়াকে ফিরিয়ে আনতে যান এবং আগ্রাবাদ (পাঠানটুলী) এলাকা দেখতে পান যে জিয়া রাস্তায় বাঙালীর দেয়া ব্যারিকেড পরিষ্কার করছেন বন্দরে যাওয়ার জন্য। ঘটনাবলীর বিবরণ দিয়ে ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান জিয়াকে ব্যারাকে নিয়ে আসেন। রাত দু'টায় ব্যারাকে ফিরে এসে মেজর জিয়া তাঁর বাঙালী সৈনিকদের কাছে বিদ্রোহের কথা ঘোষণা করে 'স্থানটি নিরাপদ নয়' এই অজুহাতে শেষ রাতের দিকে শোলশহর রেল লাইন দিয়ে কালুরঘাট ব্রিজ পার হয়ে বোয়ালখালী থাকার করইলডাঙ্গা গ্রামে পাহাড়ের কাছে অবস্থান নেন ২৬ মার্চ সকাল ১০টায়। 
ঘটনা প্রবাহ লক্ষ্য করে বঙ্গবন্ধু নিশ্চিত হন যে, হয় তাঁকে বন্দী অথবা হত্যা করা হবে। কিন্তু তার পূর্বে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রস্তুত করে ফেলেন এবং রাত বারোটা নাগাদ বন্দী হওয়ার পূর্বেই টিএন্ডটি/ইপিআর ওয়ারলেসের মাধ্যমে সারাদেশে প্রচারের ব্যবস্থা নেন। রাত ১০টার মধ্য বঙ্গবন্ধু তাঁর সহকর্মী তাজউদ্দীন আহমদ, যুবনেতা শেখ মনি, তোফায়েল আহমেদ, নূরে আলম সিদ্দিকী প্রমুখ বিশ্বস্তদের নিরাপদে চলে গিয়ে কিভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করবেন তা বুঝিয়ে দিয়ে তাঁর বাড়ি থেকে দ্রুত বিদায় করে দেন। স্বাধীনার মূল ঘোষণাটি ছিল ইংরেজীতে যা নিম্নরূপ-
This may be may last message. From today Bangladesh is Independent. I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with whatever you have to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on untill the last soldier of the Pakistan army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved. JOY BANGLA.
(সূত্র : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র ৩য় খন্ড পৃঃ ১)
রাত বারোটা নাগাদ একদিকে বঙ্গবন্ধুকে পাকবাহিনী বন্দী করে অপরদিকে (২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে) বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে রেকর্ডকৃত স্বাধীনতা ঘোষণা বাণী টিএন্ডটি/ ইপিআর ওয়ারলেস নেটওয়ার্কে সারাদেশব্যাপী প্রচার হতে থাকে। চট্টগ্রামে ওয়ারলেস বিভাগের মাধ্যমে রাত একটা নাগাদ জহুর আহম্মদ চৌধুরী স্বাধীনতার ঘোষণাটি পান এবং তা এমএ হান্নান এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বঙ্গানুবাদ করে সাইক্লোস্টাইল করে শহরে বিতরণের ব্যবস্থা করেন। এছাড়া সে রাতেই মাইকযোগে প্রচার করা হয় যে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। সমগ্র বাংলাদেশের জেলা/ মহকুমা শহরে সে রাতেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন বলে প্রচারিত হয়। ২৬ মার্চ সকাল নাগাদ গ্রামাঞ্চলেও টিএন্ডটির মাধ্যমে টেলিগ্রাম আকারে এই খবর ছড়িয়ে পরে। হানাদার বাহিনীর জেনারেল নিয়াজীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালেক 'উইটনেস টু সারেন্ডার' নামক প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ সম্মিলিত যে গ্রন্থটি রচনা করেছেন তাতে (পৃঃ ৫) উল্লেখ রয়েছে, 'যখন প্রথম গুলিটি বর্ষিত হলো, ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেডিও সরকারী তরঙ্গের কাছাকাছি একটি তরঙ্গ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষীণ কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, মনে হলো পূর্ব রেকর্ডকৃত। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ঘোষণা করলেন।' তৎকালীন ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত প্রভাবশালী ছাত্রনেতা কাজী আরেফ আহমেদ (পরবর্তীতে জাসদ সংগঠক-প্রয়াত) সাপ্তাহিক বিচিত্রা স্বাধীনতা দিবস সংখ্যা/৯০ এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে উল্লেখ করেন, 'রাত ১০টার কিছু পর সিরাজুল আলম খান বঙ্গবন্ধুর বাড়ি থেকে ইকবাল হলে এসে তাদের জানালেন যে, কিছু সময়ের মধ্যে শেখ মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষণা ইপিআর-এর পিলখানার ওয়্যারলেস সেট থেকে প্রচার করা হবে। 'কাজী আরেফ ও মেজর সিদ্দিকী সালেকের ভাষ্য থেকে ইহাই স্পষ্ট যে, বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে স্বাধীনতা ঘোষণার বাণীটি টেপে ধারণ হয় ইয়াহিয়া খানের ঢাকা ত্যাগের সন্ধ্যা এবং রাত ১০টার মধ্যে কোন এক সময় যা ইপিআর ও টিএন্ডটি বিভাগের মাধ্যমে রাত ১২টার পর প্রচার করার নির্দেশ দেয়া হয়। 
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক এমএ হান্নান চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কালুরঘাটের ট্রান্সমিটিং সেন্টার চালু করে স্বকণ্ঠে প্রচার করেন দুপুর দুটো নাগাদ। একই দিন রাতে বিবিসির সান্ধ্যকালীন অধিবেশনে বলা হয়, 'শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন ঘোষণা করেছেন, যা গোপন বেতার থেকে প্রচারিত হয়েছে। অপরদিকে পাকিস্তানী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, পূর্ব পাকিস্তানে তার সরকারের কর্তৃত্ব পুনঃ প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের উপর যুদ্ধ শুরু করেছেন। 'এমএ হান্নানের কণ্ঠেই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারিত হয়েছিল বলে তৎকালীন ঘটনার প্রত্যক্ষকারী মেজর মীর শওকত আলী, ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভূইয়া প্রমুখ তাঁদের গ্রন্থে/ রচনায় উল্লেখ করেছেন। মেজর মীর শওকত আলীর (পরে লে. জে. এবং বিএনপি নেতা-মন্ত্রী) ভাষায়, 'যদি বলা হয় প্রথম বেতার কার বিদ্রোহী কণ্ঠে স্বাধীনতার কথা উচ্চারিত হয়েছিল তা হলে আমি বলবে যে চট্টগ্রামের হান্নান ভাই সেই বিদ্রোহী কণ্ঠস্বর।' (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র- নবম খণ্ড দ্রষ্টব্য)।
মেজর জিয়াউর রহমান বেতার ভাষণ দেন ২৭ মার্চ। তিনি ২৬ মার্চ করইলডাঙ্গা গ্রামে ছিলেন। স্বাধীন বাংলা বেতার প্রতিষ্ঠার অন্যতম সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ তাঁর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র গ্রন্থে (পৃঃ ৫২) লিখেছেন, বেতার কেন্দ্র পাহারা দেয়ার জন্য মেজর জিয়াকে করইল ডাঙ্গা গ্রাম থেকে বেতার কেন্দ্রে নিয়ে আসেন ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় এবং বেতার ভাষণ দেন। মেজর জিয়া ১৯৭২ সালে দৈনিক বাংলায় স্বাধীনতা দিবস সংখ্যা (বর্তমানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র ৯ম খ- পৃঃ ৪৪ এ সংযোজিত দলিল) এবং ১৯৭৪ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রার প্রকাশিত নিবন্ধে উল্লেখ করেন যে, তিনি ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে এসে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন। এই রচনায় মেজর জিয়া উল্লেখ করেছেন, জাতির জনক বঙ্গগবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ তাঁর কাছে গ্রীন সিগন্যাল মনে হয়েছিল। তিনি যে ২৫ মার্চ রাতে ১১টায় 'সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে যাচ্ছিলেন, তাও উল্লেখ রয়েছে। উক্ত নিবন্ধে ২৭ মার্চ/ ৭১ সন্ধ্যায় পরে জিয়াউর রহমান যে ভাষণ দেন তাঁর কণ্ঠে বাণীবদ্ধ টেপ থেকে নিম্নে তুলে দেয়া হলো-
The Government of the Sovereign State of Bangladesh on behalf of our Great Leader, the supreme commander of Bangladesh Sheikh Mujibur Rahman, we hereby proclaim the independence of Bangladesh and the Government headed by Sheikh Mujibur Rahman has already been formed. It is further proclaimed that Sheikh Mujibur Rahman is the sole leader of the elected representetives of seventy five Million People of Bangladesh, and the Government headed by him is the only legitimate government of the Independent Sovereign government of the people of the Independent Sovereign State of Bangladesh, which is legally and constitutionally formed, and is worthy of being recognised by all the governments of the World. I therefore, appeal on behalf of our Great Leader Sheikh Mujibur Rahman to the government of all the democratic countries of the world, specially the Big Power and the neighbouring countries to recognise the legal government of Bangladesh and take effective steps to stop immediately the awful genocide that has been carried on by the army of occupation from Pakistan. The guiding principle of a new state will be first neutrality, second peace and third friendship to all and enmity to none. May Allah help us. JOY BANGLA".
বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ/ ৭১ যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তারই সূত্র ধরে মুক্তিযুদ্ধ এগুতে থাকে এবং ১০ এপ্রিল/ ৭১ মুজিবনগরে সরকার গঠন ও স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। উক্ত দলিলটি সংবিধানের উৎস এবং অংশ হিসেবে মুদ্রিত। মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তারা হলেন : 
(১) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- রাষ্ট্রপতি
(২) সৈয়দ নজরুল ইসলাম- উপরাষ্ট্রপতি এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি
(৩) তাজউদ্দীন আহমেদ- প্রধানমন্ত্রী
মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্য
(১) ক্যাপ্টেন মনসুর আলী
(২) কামরুজ্জামান এবং
(৩) খন্দকার মোশতাক আহমদ

মন্ত্রিসভা ১৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে শপথগ্রহণ করে এবং নির্বাচিত জাতীয় সদস্য (আওয়ামী লীগ) কর্নেল এমএজি ওসমানীকে জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে সেনাপতি নিয়োগ করা হয়। বস্তুত বঙ্গবন্ধুর নামে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের মুজিবনগর সরকারের নিযুক্ত বিভিন্ন সেক্টর কমান্ডার গণবাহিনী, মুজিববাহিনীসহ অসংখ্য বাহিনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া মুজিবনগর সরকারের একটি উপদেষ্টা কমিটি ছিল যার প্রধান ছিলেন মওলানা ভাসানী। নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল ১১টি আঞ্চলিক বেসামরিক প্রশাসন।

দুই
মুক্তিযুদ্ধ একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফসল। জনযুদ্ধ, সামরিক বিদ্রোহ নয়। অসাম্প্রদায়িক, সর্বজনীন যার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল পাক-হানাদার বাহিনীকে বিতারণ।
তৎকালীন জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত ছিল কোন রাষ্ট্রের অংশ স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে কোন জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্র স্বীকৃতি বা সহযোগিতা দেবে না। অথচ বিশ্বের জনমত ও প্রত্যক্ষ সমর্থন ছাড়া কোন রাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছে এমন কোন নজির নেই। বঙ্গবন্ধু এই বাস্তবতার আলোকে পাকবাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার পরেই আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। যার ফলে বিশ্ববাসীর সমর্থন পাওয়া যায় এজন্য যে এটি মামুলি কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বা হঠকারিতা নয়। একটি নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর না করে বরং পাক-জান্তা সেই দলের নেতাকর্মী এবং সেই অঞ্চলের সব জনগোষ্ঠীকে হত্যাযজ্ঞে লিপ্ত হয়। অর্থাৎ বাঙালীর জন্য স্বাধীনতা ছাড়া বিকল্প ছিল না এটা বিশ্ববাসীর কাছে নিশ্চিত করতে পারলেই সমর্থন পাওয়া যায়। আর বঙ্গবন্ধু যদি ভারতে যেতেন তাহলেও এতটা ক্রিয়াশীল হতো না। বন্দী হওয়ার ফলে তাঁর মুক্তি ও স্বাধীনতা সমার্থক হলে বেগবান হয়েছিল (বঙ্গবন্ধুর জন্য রোজা রেখেছেন হাজারো বাঙালী)। বঙ্গবন্ধুর এই কৌশলটি যথাসময়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারঙ্গমতার একটি নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে বিশ্বে প্রশংসিত। বস্তুত পাকবাহিনী আক্রমণ শুরু করেছিল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। ভেবেছিল তাদের নেতা মুজিবকে বন্দী করলেই বাঙালীরা ঠা-া হবে। কিন্তু এটা যে জনযুদ্ধে পরিণত হবে তা কল্পনা করতে পারেনি।
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2013-12-13&ni=157476


বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০১৩, ২৮ অগ্রহায়ন ১৪২
 "মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম এখনও চলছে" ॥ একাত্তরের বিজয় - ১
সরদার সিরাজুল ইসলাম
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০১৩, ২৮ অগ্রহায়ন ১৪২
শেষ হাসি স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তিই হাসবে তবে সরকারকে কঠোর হতে হবে
স্বদেশ রায়
এই লেখা যখন ওয়েবে পাঠক পাবেন বা সকালে পত্রিকায় পড়বেন তখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তির উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা থাকবে। তাঁদের মতো আমিও উৎকণ্ঠিত। তবে হতাশ নই। বরং স্থির বিশ্বাস থেকে বলতে চাই, ১৬ ডিসেম্বরের আগে কসাই কাদেরের ফাঁসি বাংলাদেশের মাটিতে হবেই। হয়ত বলা হতে পারে এতটা দুর্গম পথ কেন স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তিকে পাড়ি দিতে হচ্ছে। এর প্রথম উত্তর রবীন্দ্রনাথ থেকে দেয়া যায়, শ্রেয়কে দিতে হয় দুর্মূল্য। পাশাপাশি এটাও বলতে হয়, সত্যের পথ অনেক কঠিন ও কঠোর। মঙ্গলবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে যখন টেলিভিশনের পর্দায় . . .
আমাদের জাতীয় পতাকা
বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল রক্তস্নাত। ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে এবং হাজার হাজার মা-বোনের সম্ভ্রমহানির মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয় আমাদের লাল-সবুজ পতাকাশোভিত বাংলাদেশের। চিরসবুজ আমাদের এই বাংলাদেশ। দেশের তরুণরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল স্বতঃস্ফূর্তভাবে। পতাকার সবুজ ও লাল রং ব্যবহারের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, সবুজ রং বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক, বৃত্তের লাল রং উদীয়মান সূর্য, স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীদের রক্তের প্রতীক। বাংলাদেশ জাতীয় পতাকার এই রূপটি ১৯৭২ সালের ১৭ . . .




__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___