শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩, ২৯ অগ্রহায়ন ১৪২০ শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে বাঁধভাঙ্গা জোয়ার
স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হওয়ায় আনন্দ মিছিল করেছে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ। প্রজন্মে চত্বরে ছিল বাঁধভাঙ্গা জোয়ার। ফাঁসি কার্যকরে কোন বাধা নেই এমন ঘোষণা আসার পরেই বেলা সোয়া ১২টার দিকে মিছিলটি শাহবাগ থেকে বাংলামোটর হয়ে আবার প্রজন্ম চত্বরে ফিরে আসে। সন্ধ্যায় মশাল মিছিল করেছে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা। কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত প্রজন্ম চত্বরে গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থান অব্যাহত থাকবে।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনরত প্রতিবাদী জনতার জন্য বৃহস্পতিবার ছিল একটি অন্যরকম দিন। ৪২ বছরের বাংলাদেশে এমন খুশির খবর নিয়ে আর কোন সকাল হয়নি। স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর সকল চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে বিজয় নিশ্চিত হলো সাধারণ মানুষের। প্রমাণ হলো তারুণ্যের আন্দোলন কখনও বৃথা যায় না। সত্যের জয় অনিবার্য। এদিনে আকাশে যতগুলো জাতীয় পতাকা উড়েছে সবগুলোই ছিল ঠিক অন্যরকম। '৭১-এর ঘাতক কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় চূড়ান্ত হওয়ায় শহীদের আত্মা শান্তি পেয়েছে-এ কথাই যেন লাল সবুজের পতাকা বার বার জানান দিচ্ছিল।
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আমরা আশা করছি দ্রুতই সরকার যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকর করবেন। এছাড়া আমাদের পূর্ব ঘোষিত সকল কর্মসূচী পালন করা হবে। রায় কার্যকর হওয়ার পরেই আমাদের অবস্থান তুলে নেয়া হবে। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও মঙ্গলবার রাত দশটা ২০ মিনিটে চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত রায় কার্যকর স্থগিত করেন। খবর পেয়ে গণজাগরণ মঞ্চ সঙ্গে সঙ্গে শাহবাগে টানা অবস্থান নেয়। মঙ্গলবার রাত ১২টা ১মিনিটে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
ভোর থেকে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ শাহবাগে আসতে থাকেন। প্রজন্ম চত্বরের মূল পয়েন্টে অবস্থান নেন তারা। এ কারণে তিনদিক থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সবার মুখে মুখে উচ্চারিত হয় প্রতিবাদী সেøাগান, গান। 'রাখাল ছেলে বাজায় বাঁশি-কাদের মোল্লার হলো ফাঁসি', জয় হলো রে জয় হলো-শাহবাগের জয় হলো', 'দড়ি ধরে মারো টান-কাদের যাবে পাকিস্তান', 'দে-দে-দে ঝুলাইয়া দে-কাসাই কাদের রে ঝুলাইয়া দে, 'জামায়াত-শিবিরের হামলা-রুখে দাঁড়াও বাংলা, সাম্প্রদায়িক নির্যাতন-রুখে দাঁড়াও জনগণ, দাবি মোদের একটাই-এ মুহূর্তে ফাঁসি চাই, ফাঁসি হবে গুলিস্তানে-লাশ যাবে পাকিস্তানে'-এমন সেøাগানে সেøাগানে দিনভর মুখরিত ছিল শাহবাগ।
কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পর শাহবাগের দৃশ্যপট পাল্টে যায়। দলে দলে প্রজন্ম চত্বরে আসতে থাকেন প্রতিবাদী জনতা। কেউ ঢোল, কেউ বা কর্তাল সহ বিভিন্ন বাদ্য বাজনা বাজাতে থাকেন। ছোট-ছোট পতাকা নিয়ে আসেন অনেকে। আকাশে ওড়ানো হয় বড় বড় অসংখ্য জাতীয় পতাকা। ভি-চিহ্ন দেখিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন আন্দোলনকারীরা।
চলতি বছরের ৫ মে কসাই কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এদিন রাত থেকেই শুরু হয় গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন। কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে ফুসে ওঠে দেশবাসী। শাহবাগে এসে জড়ো হয় লক্ষ কোটি মানুষ। দেশের সকল জেলা উপজেলায় গণজাগরণ মঞ্চ করে আন্দোলনে অংশ নেন প্রতিবাদী জনতা। দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে আন্দোলনের ব্যাপকতা ছড়িয়ে পড়ে। প্রবাসী বাঙালীরা বিভিন্ন দেশে গণজাগরণ মঞ্চ করে আন্দোলন শুরু করেন। ব্লগার এ্যান্ড অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়। এক পর্যায়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে এ ডাক ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে এ প্রথম বারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আহ্বানের মধ্য দিয়ে তীব্র গণআন্দোলন সংগঠিত হয়। দীর্ঘমেয়াদী অহিংস এ গণআন্দোলন গোটা বিশ্বের মধ্যে নজির স্থাপন করে।
শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩, ২৯ অগ্রহায়ন ১৪২০
শাহবাগে উল্লাস, আনন্দ মিছিল
নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: ২৩:২১, ডিসেম্বর ১২, ২০১৩
Video - Ganajagaran Manch (12-12-2013):
ফাঁসির খবরে শাহবাগে উল্লাস
নিজস্ব প্রতিবেদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2013-12-12 23:15:03.0 BdST Updated: 2013-12-12 23:18:20.0 BdST
আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের পর শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে উল্লাসে ফেটে পড়েন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ।
"ফাঁসিতেও প্রতিক্রিয়া নেই বিএনপির"
__._,_.___