Banner Advertise

Tuesday, October 8, 2013

[chottala.com] বেপরোয়া দুর্নীতির উপাখ্যান- ৮ : টেলিফোনের রাঘব-বোয়াল



বেপরোয়া দুর্নীতির উপাখ্যান- ৮ : টেলিফোনের রাঘব-বোয়াল

আলাউদ্দিন আরিফ
বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতির সবচাইতে বড় সেক্টর হয়ে পড়েছে টেলিযোগাযোগ খাত। এই খাতে দুর্নীতির কোনো অন্ত নেই। খোদ প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের প্রভাবশালী সদস্য থেকে শুরু করে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগ ও মহাজোট এবং অঙ্গসংগঠনের নেতা, উপনেতা, পাতিনেতা সবাই এই সেক্টরকে যেন খাবলে খাচ্ছেন। টেলিযোগাযোগের অধীন মন্ত্রণালয় ও দফতরের অসাধু কর্মকর্তারাও লুটপাটের ভাগ নিতে সরকারের প্রভাবশালীদের বেশুমার সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন। টেলিফোন সেক্টর থেকে গত চার বছরে যে কত হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে, তার কোনো হিসাব নেই। সংশ্লিষ্টরা শুধু এটুকু বলছেন যে, টেলিযোগাযোগ সেক্টরের লুটপাট বন্ধ করা গেলে ওই টাকা দিয়ে কমপক্ষে দুটি পদ্মা সেতু করা সম্ভব ছিল। আর ওই টাকার পুরোটাই গেছে রাঘব-বোয়ালদের হাতে। এসব রাঘব-বোয়াল এতই প্রভাবশালী যে বিটিআরসি, বিটিসিএল, টেলিটক বা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ কর্মকর্তারাও তাদের সম্পর্কে মুখ খুলতে চান না। এরপরও বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় প্রকাশিত খবর ও টেলিকম সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে টেলিযোগাযোগ সেক্টরে লুটপাট ও দুর্নীতির কিছু নমুনা পাওয়া গেছে। দুর্নীতির কারণে টেলিযোগাযোগ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে।

ভিওআইপি
টেলিযোগাযোগ খাতে লুটপাটের সবচাইতে বড় মাধ্যম ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল বা ভিওআইপি। সংশ্লিষ্টদের হিসাবমতে, অবৈধ ভিওআইপির কারণে প্রতিদিন কমপক্ষে ১২ কোটি টাকা এবং মাসে কমপক্ষে ৩৭৫ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মিনিট আইএসডি ইনকামিং কলে তিন সেন্ট রাজস্ব পায় সরকার। প্রতিদিন দেশে আসা ১০ কোটি মিনিটের বেশি কলের মধ্যে ৭ কোটিই আনা হচ্ছে চোরাপথে ভিওআইপির মাধ্যমে, যার পুরো টাকাই চলে যাচ্ছে রাঘব-বোয়ালদের পকেটে। খোদ রাষ্ট্রীয়
মালিনাকাধীন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড বা বিটিসিএলের কর্মকর্তারাও ভিওআইপি ব্যবসায় জড়িত। তারা হাজার হাজার কোটি টাকার ভিওআইপির ব্যবসা করলেও বিটিসিএলে ভিওআইপির দায়ে ২২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নামে মাত্র ৭টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর বাইরে ভিওআইপির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, ভিওআইপি ব্যবসা জায়েজ করতে সরকারি দলআশ্রিত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ৮৪৪টি লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। গত ১৬ জানুয়ারি ভিওআইপি বা ভিএসপি লাইসেন্সের জন্য ১ হাজার ৪টি প্রতিষ্ঠানের নাম চূড়ান্ত করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। প্রতিটি লাইসেন্সের জন্য ফি হিসেবে ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করে নিয়েছে বিটিআরসি।

ছয় আইটিসি লাইসেন্সে ব্যাপক অনিয়ম
৬ মাসের মধ্যে অপারেশনে যাওয়ার শর্ত দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল টেরেসট্রিয়াল কেবল (আইটিসি) লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল ৬টি প্রতিষ্ঠানকে। এর মধ্যে নভোকম লিমিটেড নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের অপারেশন শুরু করে। ওয়ান এশিয়া-এএইচএলজেভি, বিডিলিংক কমিউনিকেশন লিমিটেড, ম্যাংগো টেলিসার্ভিসেস লিমিটেড, সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেড এবং ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেড নির্ধারিত সময়ে তাদের অপারেশন শুরু করতে পারেনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আইটিসি লাইসেন্স নিয়ে ব্যাপক রাজনীতি হয়েছে। লাইসেন্সের গাইডলাইনের শর্ত ভঙ্গ করে সরকার ৩টির জায়গায় ৬টি আইটিসি লাইসেন্স দিয়েছে। কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দেশ-বিদেশের প্রভাবশালী মহলের চাপে সরকার অধিকসংখ্যক লাইসেন্স দিয়েছে। তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির চাপে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী এক সিদ্ধান্তে মার্কিং সিস্টেমকে প্রভাবিত করে ৩টির জায়গায় ৬টি লাইসেন্স দিয়েছে। ৬টি কোম্পানির সঙ্গেই ক্ষমতাসীন দলের কোনো কোনো রাজনীতিবিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। শোনা যাচ্ছে, সামিট কমিউনিকেশনকে এই লাইসেন্স দেয়ার জন্য ৩টির স্থলে ৬টি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। আইটিসি লাইসেন্স পাওয়া ওয়ান এশিয়া নামের কোম্পানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীর ছোট ভাই সরাসরি জড়িত আছেন। বিডিলিংক নামের কোম্পানির সঙ্গে ডাক ও টেলিযোগ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কয়েকজন জড়িত।
ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) অপারেটর ম্যাংগো টেলিসার্ভিসও একটি আইটিসি লাইসেন্স পেয়েছে। জানা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানের দুই শীর্ষব্যক্তি মীর মাসুদ ও আবদুল মান্নান ঢাকা ক্লাবে মন্ত্রীর প্রতিদিনের আড্ডার সঙ্গী এবং মন্ত্রীর সব সফরে সঙ্গী থাকতেন। মন্ত্রীর বহু অপকর্মের সঙ্গী মাসুদ ও মান্নানের প্রতিষ্ঠান ম্যাংগোকে এনটিটিএন ও ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্সও দেয়া হয়েছে।

লাইসেন্স আর লাইসেন্স
বিটিআরসির বার্ষিক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত টেলিযোগাযোগ খাতের ২৬টি সেক্টরে ৯৩৯টি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। অনেকটা মাছের বাজারের মতো পানির দামে সরকারি দলআশ্রিত ব্যক্তি ও সরকারি প্রভাবশালীদের তদবিরে লাইসেন্স বিলি করা হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে পছন্দের ব্যক্তিকে লাইসেন্স দেয়ার জন্য শর্তও শিথিল করা হয়েছে। আবার অনেক সময় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে লাইসেন্স সংখ্যা বাড়ানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে। বিটিআরসির তথ্যমতে, ২৬টি সেক্টরে যেসব লাইসেন্স দেয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে— ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে সার্ভিসেস (আইজিডব্লিউ) ২৯টি, ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ সার্ভিসেস (আইসিএক্স) ২৬টি, ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে সার্ভিসেস (আইআইজি) ৩৬টি, ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস এক্সেস (বিডব্লিউএ) ২টি, সেলুলার মোবাইল টেলিকম অপারেটর ৬টি, ইন্টারন্যাশনাল টেরেসট্রিয়াল কেবল ৬টি, পাবলিক সুইস টেলিফোন নেটওয়ার্ক অপারেটর (পিএসটিএন) ১২টি, ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) ২টি, ন্যাশনওয়াইড অপটিক্যাল ফাইবার টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ১টি, ভেহিকেল ট্রাকিং সার্ভিসেস ১৪টি, ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিফোনি সার্ভিস প্রোভাইডার-ন্যাশনওয়াইড ২৯টি, ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিফোনি সার্ভিস প্রোভাইডার সেন্ট্রাল জোন ৭টি, ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিফোনি সার্ভিস প্রোভাইডার জোনাল ৩টি, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার- ন্যাশনওয়াইড ১১৬টি, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার- সেন্ট্রাল জোন ৯১টি, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার- জোনাল ৬৩টি, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার- ক্যাটাগরি-এ ১২৬টি, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, ক্যাটাগরি-বি ২৬টি, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ক্যাটাগরি-সি ১০টি, ভিস্যাট-ইউজার ৪৪টি, ভিস্যাট- প্রোভাইডার ১২টি, ভিস্যাট প্রোভাইডার উইথ হাব ৫টি, কল সেন্টার ১৯৪টি, হোস্টেড কল সেন্টার ৪১টি, হোস্টেড কল সেন্টার সার্ভিস প্রোভাইডার ৩৬টি এবং ইন্টারন্যাশনাল কল সেন্টার ২টি।
লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ছেলের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান 'সেনগুপ্ত টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডে'র নামে আইসিএক্স লাইসেন্স দেয়া হয় ২০১২ সালের এপ্রিলে। লাইসেন্স ইস্যুর মাত্র ৬ মাস আগেও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আইটি ইঞ্জিনিয়ার সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ছেলে সৌমেন সেনগুপ্ত রাতারাতি একটি (আইসিএক্স) ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জের কর্ণধার বনে যান। লাইসেন্স ফি হিসেবে বিটিআরসিকে দেয়া ৫ কোটি টাকার উত্স নিয়েও সৌমেন সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে নানা প্রশ্ন ওঠে। নির্বাচনী হলফনামায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন মাত্র ৭ লাখ টাকা। আর ওই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকাকালীন তার ছেলে সৌমেন সেনগুপ্তের বেতন ছিল মাসে সাকল্যে ৫০ হাজার টাকা। সেখানে হঠাত্ কোনো ধরনের ব্যাংক লোন ছাড়া সংশ্লিষ্টদের মতে তাদের দু'জনের আয়ের সঙ্গে লাইসেন্সের জন্য ৫ কোটি টাকা ফি পরিশোধ সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। একজন সাধারণ চাকরিজীবী সৌমেন এত টাকা কোথায় পেলেন? কীভাবে পরিশোধ করলেন আইসিএক্স লাইসেন্স ফি'র ৫ কোটি টাকা? তাছাড়া আইসিএক্স অবকাঠামো তৈরিতে আরও অন্তত ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। সেক্ষেত্রে ওই টাকা কীভাবে আসবে, এসব নিয়েও রয়েছে নানা রহস্য।
এছাড়া ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য সুনামগঞ্জের একজন এমপি, কেরানীগঞ্জ এলাকার একজন এমপি, ঢাকার তেজগাঁও এলাকার একজন এমপি, আওয়ামী লীগের সাবেক একজন মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা টেলিযোগাযোগ খাতের লাভজনক লাইসেন্সগুলো নিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের মেয়ে টেলিযোগাযোগ খাতের দুটি লাইসেন্সের মালিক হয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার তার নিজ নামে গেটওয়ে লাইসেন্স নিয়েছেন। সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর তার নামে একটি লাইসেন্স নিয়েছেন। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন একাধিক ক্যাটাগরির টেলিযোগাযোগ লাইসেন্স নিয়েছেন। বিডিলিংক নামে আইটিসি লাইসেন্স, ইন্টারনেট গেটওয়ে আইআইজির লাইসেন্স তার নামে সরাসরি রয়েছে। আইটিসি এবং আইআইজি লাইসেন্সের ক্ষেত্রে তিনি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন নাম ব্যবহার করেন। ওই দুটি লাইসেন্স নিজের নামে রাখলেও অন্য দুটি লাইসেন্সের মালিকানা পরিবর্তন করেন। বাংলাটেল লিমিটেড আইজিডব্লিউ এবং জীবনধারা সলিউশন লিমিটেড আইসিএক্সের মালিকানাও ছিল তার। সেখানে পরে তিনি তার ভাইয়ের নাম লেখান। নিজের নামে একাধিক লাইসেন্স নেয়ার বিধান না থাকায় তিনি এই কৌশলের আশ্রয় নেন। তিনি পরে যে নাম পরিবর্তন করার জন্য আবেদন করেছেন, সেটিও এখন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।
এছাড়া স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের মেয়ে সৈয়দা আমরিন রাখি ও নানকের স্ত্রী সৈয়দা আরজুমান বানু, আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান, মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন বাবলু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-হানিফ, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর দুই ছেলে এবং ছেলের বউদের নামসহ সরকারের মন্ত্রী ও এমপি এবং আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে বিপুল সংখ্যক লাইসেন্স নেয়া হয়েছে।

পানির দরে থ্রিজি লাইসেন্স
মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে থ্রিজি নিলামকে প্রতিযোগিতামুক্ত করে অতি অল্প মূল্যে জনগণের সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়েছে। এর ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এর নেপথ্যেও বড় ধরনের বাণিজ্য হয়েছে বলে অনেকেই সন্দেহ করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিটিআরসির থ্রিজি নিলামে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছে সরকারের নতি স্বীকার করেছে। এতে সরকারের প্রভাবশালী কোনো কোনো ব্যক্তি বিশাল লাভবান হয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সমালোচকরা বলেন, ভারতে থ্রিজি নিলামে সময় লেগেছে ৩৪ দিন এবং সেখানে তুমুল প্রতিযোগিতার কারণে সরকারের প্রত্যাশিত আয় সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার হলেও প্রকৃতপক্ষে আয় হয়েছে ১১ বিলিয়ন ডলার। অথচ বাংলাদেশে থ্রিজি নিলামে সময় লেগেছে মাত্র এক ঘণ্টা। ভিত্তিমূল্য হিসাবে থ্রিজি তরঙ্গ থেকে বাংলাদেশ সরকারের ৮০০ মিলিয়ন ডলার আয় করার প্রত্যাশা থাকলেও কোম্পানিগুলোর যোগসাজশ, বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে অংশ নিতে না দেয়া ও প্রতিযোগিতাবিহীন নিলামের কারণে আয় হয়েছে মাত্র ৫১৫ মিলিয়ন ডলার।

মাত্র ৭০ লাখ টাকায় এয়ারটেলকে ওয়ারিদের শেয়ার
প্রভাবশালী পরিবারের এক ব্যক্তির মধ্যস্থতায় নজিরবিহীনভাবে মাত্র ৭০ লাখ টাকায় ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েছে ভারতী এয়ারটেল। একই ব্যক্তির তদবিরে ওই সময়ে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকার ৫ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম ফ্রি দেয়া, সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বিটিসিএল ও টেলিটকের অবকাঠামো ব্যবহার করে দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের সুবিধা দেয়া, ভিওআইপির অভিযোগ এনে দেশীয় ল্যান্ডফোন অপারেটরগুলো বন্ধ করে তাদের বিটিএস ও জিএসএম ফ্রিকোয়েন্সিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় এয়ারটেলকে। ওই সময় সারা দেশে বিদ্যুত্ সংযোগ বন্ধ থাকা সত্ত্বেও এয়ারটেলের বিটিএসের জন্য পর্যাপ্ত বিদ্যুত্ সংযোগ দেয়া, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি, বিটিআরসির নিয়ম না মেনে রাস্তাঘাটে রেজিস্ট্রেশন বিহীন সিমকার্ড বিক্রি করাসহ অসংখ্য প্রশ্নবিদ্ধ সুবিধা দেয়া হয়েছে এয়ারটেলকে। ২০০৬ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ধাবি গ্রুপকে চারদলীয় জোট সরকার দেশের ষষ্ঠ মোবাইল অপারেটর হিসেবে ওয়ারিদের লাইসেন্স দেয়। এ জন্য ওয়ারিদের কাছ থেকে ফি আদায় করা হয় ৫০ মিলিয়ন ডলার। ওয়ারিদের ৭০ শতাংশ শেয়ার কিনে ২০১০ সালের ২০ ডিসেম্বর এয়ারটেল যাত্রা শুরু করে। ২০১১ সালের ৪ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকার একটি হোটেলে ওয়ারিদের শেয়ার ভারতী এয়ারটেলকে হস্তান্তর করা হয়। ওই সময় আবুধাবিতে ধাবি গ্রুপের একজন মুখপাত্র জানান, তারা এক বিলিয়ন ডলারে ওয়ারিদের ৭০ শতাংশ শেয়ার ভারতী এয়ারটেলের কাছে হস্তান্তর করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে তথাকথিত লোকসানি প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে নজিরবিহীন জালিয়াতির মাধ্যমে ধাবি গ্রুপের কাছ থেকে ওয়ারিদের শেয়ার মাত্র ৭০ লাখ দেখানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী শেয়ার মূল্যের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বিটিআরসিকে দিতে হয়। সে হিসেবে দাবি গ্রুপ ওয়ারিদের ৭০ শতাংশ শেয়ার এক বিলিয়ন ডলারে বিক্রি করলে বিটিআরসি পাওনা হওয়ার কথা ছিল ৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার বা ৫৫ লাখ ডলার। টাকার হিসেবে প্রায় ৩৮৫ কোটি টাকা। মাত্র এক লাখ ডলার দাম দেখানোর কারণে ৭০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করলে রাজস্ব পাওয়া গেছে ৫ হাজার ডলার বা ৩ লাখ ৮০ হাজার ৫০ টাকা। ওই সময় বিটিআরসির বিরোধিতা সত্ত্বেও ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি, সরকারের উপদেষ্টা ও কয়েকজন প্রভাবশালী প্রবাসী ব্যক্তির কারণে বিটিআরসি টোকেন মূল্যে ওয়ারিদের শেয়ার হস্তান্তর দেখাতে বাধ্য হয়। ওই সময় বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, ভারতীয় এয়ারটেল মাত্র ৭০ লাখ টাকায় অর্থাত্ একশ টাকার প্রতিটি শেয়ার ৬ পয়সা দরে ক্রয় করেছে। অথচ এর আগে মোবাইল অপারেটর একটেলে এ কে খান গ্রুপের ৩০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে। ওই শেয়ার ৩৫০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে কিনে নিয়েছিল জাপানের এনটিটি ডকুমো। ওই শেয়ার বিক্রি থেকে তখনকার সরকার প্রায় ১৩২ কোটি টাকা ফি আদায় করেছিল। তারও আগে সিটিসেল প্যাসিফিক টেলিকমের শেয়ার সিং টেলের কাছে হস্তান্তর থেকে সরকার শত কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে।
এছাড়া নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিটিআরসি এয়ারটেলকে প্রায় বিনা মূল্যে ৫ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম (তরঙ্গ) বরাদ্দ দেয়। যার মাধ্যমে সরকারের ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে সাতশ' কোটি টাকা। অক্টোবরে বিটিআরসি এয়ারটেলের ১৮শ' ব্যান্ডের ৫ মেগাহার্টজের বদলে ৯শ' ব্যান্ডের ৫ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম বরাদ্দ দেয়। ২০২০ সাল পর্যন্ত এই স্পেকট্রাম ব্যবহার করতে পারবে তারা। অথচ ১৮শ' ব্যান্ডের স্পেকট্রামের চেয়ে ৯শ' ব্যান্ডের স্পেকট্রামের দাম দ্বিগুণ। তাছাড়া এয়ারটেলকে নতুন করে স্পেকট্রাম দিতে গিয়ে আইএসটিএন নামে একটি দেশি কোম্পানির কাছ থেকেও কিছু স্পেকট্রাম নিয়ে নেয়া হয়েছিল। নতুন প্রস্তাবিত টেলিফোন নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সে হিসেবে হিসেবে ৫ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের মূল্য ২১৪ দশমিক ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

দোয়েল ল্যাপটপে লুটপাট
সরকারি মালিনাকাধীন দোয়েল ল্যাপটপ প্রকল্পে বড় ধরনের পুকুর চুরির প্রমাণ মিলেছে। পুরো প্রকল্প ভেস্তে গেছে। প্রকল্প ফ্লপ করলেও এর থেকে লুটে নেয়া হয়েছে শত শত কোটি টাকা। ল্যাপটপ উত্পাদনের যন্ত্রপাতি আমদানি ও ক্রয়ে দুর্নীতি যেন কল্পকাহিনীকেও হার মানিয়েছে। দেড় লাখ ডলারের পণ্যমূল্য দেখানো হয়েছে ১০ লাখ ৬ হাজার ৫৪০ ডলার। নিম্নমানের এসব পণ্যক্রয়ে ৩০০ শতাংশ বেশি দাম দেখানো হয়েছে। অর্থের ভাগবাটোয়ারা হয়েছে মালয়েশিয়ার পেনাং ও নিউইয়র্কে। বাড়তি দাম দেখানো ও লুটপাটের অর্থ সাবেক টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন রাজুসহ বিশাল সিন্ডিকেটের পকেটে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দোয়েল ল্যাপটপ তৈরির মালয়েশিয়ান অংশীদার টিএফটি টেকনোলজি গ্রুপও মন্ত্রী ও তার সহযোগীদের দুর্নীতির কথা স্বীকার করেছেন। প্রতিষ্ঠানটির ওই সময়কার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল ওয়াং নিজেই স্বীকার করেছেন মন্ত্রীর দুর্নীতির কথা।
জানা গেছে, টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস) ও মন্ত্রণালয়ের একটি একটি বিশাল সিন্ডিকেটে ওই অর্থ আত্মসাত্ করে। মিডিয়াকে মাইকেল ওয়াংয়ের পাঠানো ই-মেইলের তথ্যমতে টাকার ভাগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন পেয়েছেন। ওই তালিকায় দোয়েল ল্যাপটপ কোম্পানির প্রধান নির্বাহীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) নাজিম হাসানসহ বড় একটি সিন্ডিকেট। টেশিসের সাধারণ কর্মকর্তারা জানান, ৩০০ শতাংশ বেশি দাম দেখিয়ে যেসব পণ্য আমাদানি করা হয়েছে যার অধিকাংশই ছিল অকেজো। ল্যপটপ উত্পাদন করতে গিয়ে দেখা গেছে সেগুলো কোনো কাজেই আসেনি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি যাচাই করতে গিয়ে দেখতে পান মূলত ল্যাপটপের সরঞ্জামের নামে এলসিডি টিভির সরঞ্জাম আমাদানি করা হয়েছে। সেগুলোও চোরাইপথে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে টেশিসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ল্যাপটপের নামে ৩০০ শতাংশ দাম বেশি দেখিয়ে টেলিভিশনের যন্ত্রপাতি আমদানি করাসহ পুরো প্রকল্পটি ছিল লুটপাটের মচ্ছব। আমরা বিষয়টি জেনেও চাকরি বাঁচানোর জন্য চুপ করে আছি। কারণ এই সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার পরিবর্তন হওয়ার আগ পর্যন্ত কথা বলা মানে চাকরি খোয়ানো।

টেলিটকে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি
রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অডিট অধিদফতর ২০১২ সালেই টেলিটকে ৬০০ কোটি টাকার দুর্নীতি চিহ্নিত করে। কাগজপত্রে উল্লেখ থাকলেও টেলিটকের ভাণ্ডারে কোটি কোটি টাকার সিমকার্ড ও স্ক্র্যাচ কার্ডের কোনো হদিস পায়নি অডিট দফতর। প্রতিষ্ঠানটির লেজার ও অন্যান্য হিসেবে মজুত দুই ধাপে ৩১ কোটি টাকার স্ক্র্যাচকার্ড ও ক্যাশকার্ড খাতটি ছিল। সিমকার্ড খাতটি ছিল প্রায় ৫০ কোটি টাকার। দরপত্র ছাড়াই দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের প্রভাবশালীদের মাধ্যমে টেলিটকের যন্ত্রপাতি আমদানির সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল। টেলিটকের সরকারি দল আশ্রিত বিভিন্ন ব্যক্তিকে নিয়মবহির্ভূতভাবে উচ্চবেতনে নিয়োগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। শুধু বেতনভাতার মাধ্যমে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকার বেশি লুটপাট হয়েছে বলে টেলিযোগাযোগ খাতসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে বোর্ড অনুমোদিত ২৫৬ জনবলের বিপরীতে ৫০০ জনের বেশি জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির অরগানোগ্রামে অ্যাসোসিয়েট, মার্কেট কো-অর্ডিনেটর, মার্কেট প্রমোটর, অপারেটর কাম অ্যাসিট্যান্ট পদ না থাকলেও এসব পদ তৈরি করে উচ্চ বেতনে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আউটসোর্সিংয়ের কোনো সুযোগ না থাকার পরও সরকারি দল আশ্রিত ব্যক্তিদের তিনটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাতটি পড়ে ১৬৫ জন নিয়োগ করে আউটসোর্সিংয়ের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত্ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মালিনাকাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিটিআরসি থেকে বাড়তি সুবিধা নিয়ে থ্রিজি সেবা দেয়ার নামেও বড় ধরনের অনিয়ম করেছে টেলিটক।

বিটিসিএলে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি
বিটিসিএলে দুর্নীতির শেষ নেই। ঘাটে ঘাটে অনিয়ম আর দুর্নীতিই বিটিসিএলে নিয়ম। টেন্ডারে অনিয়ম ও লুটপাট, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাঙ্ক এক্সচেঞ্জের রেকর্ড বা সিডিআর থেকে তথ্য মুছে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আত্মসাত্ করা হয়েছে। টেন্ডার কারচুপির মাধ্যমে আত্মসাত্ করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শত শত কোটি টাকা। বিভিন্ন এলাকায় এক হাজার ৪৩১ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার লাইন, ১১টি মাইক্রোওয়েব লিঙ্ক বসানো, ৪০০ কোটি টাকার এক্সচেঞ্জ স্থাপনে অনিয়ম, বিলে অনিয়ম, রাজস্ব ফাঁকিসহ বিভিন্নভাবে হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তি ও বিটিসিএলের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।

টাকা দিচ্ছে না ক্ষমতাসীনরা
সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পরিবারের কাছে আটকে রয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হাজার কোটি টাকা। বারবার তাগাদা দেয়ার পরও তারা টাকা পরিশোধ করেনি। টাকা তো দিচ্ছেনই না বরং বিটিআরসির শর্ত ভঙ্গ করে চলেছে। শর্ত খেলাপ করার কারণে চারটি আন্তর্জাতিক গেটওয়ে অপারেটরের (আইজিডব্লিউ) কল আদান-প্রদান স্থগিত করেছে বিটিআরসি। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক গেটওয়ে রাতুল টেলিকমের কাছে বিটিআরসির পাওনা ৭০ কোটি টাকারও বেশি। এই প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশের মালিক স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের মেয়ে সৈয়দা আমরিন রাখি। আরও ২০ শতাংশের মালিক নানকের স্ত্রী সৈয়দা আরজুমান বানু। গত দুই প্রান্তিকে অর্থাত্ জানুয়ারি থেকে তারা রেভিনিউ শেয়ারিং হিসেবে বিটিআরসিকে কোনো টাকা দেয়নি। এমন পরিস্থিতিতে তাদের চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়, তারা মাসে ১০ লাখ মিনিটের বেশি কল আনা-নেয়া করতে পারবে না। কিন্তু তারা বিটিআরসির আদেশ না মেনে বেশি কল আনা-নেয়া করেছে।
সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের মেয়ের কোম্পানি ক্লাউড টেলের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান ভিশন টেল লিমিটেড। গত জুন পর্যন্ত ভিশন টেলের কাছে বিটিআরসির পাওনা ৯০ কোটি টাকা। এ কারণে মাসে ১০ লাখ মিনিটের বেশি কল আনা-নেয়া করতে পারবে না বলে তাদের চিঠি দেয় বিটিআরসি। কিন্তু তারা বিটিআরসির আদেশ না মেনে বেশি কল আনা-নেয়া করেছে। সম্প্রতি তাদের সব ধরনের কল আদান-প্রদান স্থগিত করে বিটিআরসি। যদিও আবুল হোসেনের আগে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন তার মেয়ে ভিশন টেলের মালিকানা ছেড়ে দিয়েছেন।
ডিজিকম টেলিকম ও কে টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডও বিটিআরসির মোটা অঙ্কের অর্থ ফাঁকি দিয়েছে। ডিজিকম টেলিকমের কাছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা পাওনা থাকায় তাদের কল আদান-প্রদান আগেই স্থগিত করা হয়। গত মার্চ পর্যন্ত পাওনা পরিশোধের পর গতকাল তাদের কল আদান-প্রদান চালু করা হয়েছে। আর কে টেলিকমের অন্যতম মালিক আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান। পাওনা না দেয়ায় তাদেরও কল আদান-প্রদান স্থগিত করেছে বিটিআরসি।
মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন বাবলুর কোম্পানি ফার্স্ট কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের কাছে বিটিআরসির পাওনা ছিল প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অবশ্য কিছু টাকা তারা পরিশোধ করেছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল হানিফের মালিকানাধীন টেলেক্স লিমিটেডের কাছেও বিটিআরসির পাওনা প্রায় ৪০ কোটি টাকা। প্রথমে তার নামে লাইসেন্স না হলেও পরে কোম্পানিটি কিনে নেন তিনি। যদিও টেলেক্সের মালিকানার বিষয়ে অস্বীকার করেছেন মাহবুব উল আলম হানিফ।
প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর দুই ছেলে এবং ছেলের বউদের নামে নেয়া হয়েছে ওয়ান এশিয়া অ্যালায়েন্স গেটওয়ের লাইসেন্স। এই কোম্পানির কাছেও পাওনা প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সম্প্রতি কিছু টাকা পরিশোধ করেছেন তারা। অবৈধ কল টার্মিনেশনের জন্য বিটিআরসি এই তিনটি কোম্পানির সব সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। পরে আবার চালু করা হয়।

অন্যান্য
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রকল্পে অনিয়ম ও এই প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ফলে এই প্রকল্প অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভিওআইপির অভিযোগ এনে দেশীয় ৫টি পিএসটিএন ঢাকা ফোন, ওয়ার্ল্ডটেল, র্যাংকস টেল, পিপলস টেল ও ন্যাশনাল টেল বন্ধ করে দেয়া, তাদের তরঙ্গ ও লাইসেন্স বাতিল করা, এসব প্রতিষ্ঠানের শত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়া, পরে অনুমোদন দিতে আবার কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে একাধিক মোবাইল অপারেটরকে পণ্য আমদানির সুযোগ দেয়া হয়েছে। বাজারে নিম্নমানের মোবাইল সেট আমদানি ও বিক্রির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চোরাইপথে অবাধে শত শত কোটি টাকার মোবাইল সেট আনার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। যারা বৈধ পথে মোবাইল সেট এনেছে তাদেরও দুর্নীতি করে আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে মোবাইল সেট আমদানির সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। ফোন কোম্পানিগুলোর টুজি লাইসেন্স নবায়ন নিয়েও দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ সাবমেরিন কোম্পানিতে বিদেশি ঠিকাদার নিয়োগ, মুনাফার টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ, বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেয়া, একই কাজের নামে একাধিক বিল ভাউচার দেয়াসহ অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেনি সরকার।


__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___