'ধর্ম ও রাজনীতি : দক্ষিণ এশিয়া' এবং বাংলাদেশে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার
মিলু শামস
ঔপনিবেশিক পূর্বসূরিতার ঐতিহাসিক দুর্ভাগ্য এই যে, আজও আমরা নিজেদের ইতিহাস দেখি ঔপনিবেশিক প্রভুর চোখে। অন্তত সতেরো শ' সাতান্ন থেকে ঊনশি শ' সাতচল্লিশ পর্যন্ত এ উপমহাদেশে তাদের প্রত্যক্ষ শাসনকাল পর্যন্ত তো অবশ্যই। পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজের কাছে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের প্রচলিত যে ইতিহাস তা ইংরেজ এবং তাদের এদেশীয় সহযোগীদের উদ্দেশ্যমূলক রচনা। একেই আমরা নিজেদের ইতিহাস বলে জেনে এসেছি। আড়াই শ' বছরের বেশি সময় ধরে তারা সিরাজ-উদ-দৌলাকে দুর্বলচিত্ত অপরিণামদর্শী লম্পট নবাব হিসেবে চিত্রিত করেছে। তাঁর এ দুর্বলতা এবং প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে বিধ্বস্ত বাংলা বিহার উড়িষ্যার দেখভাল বা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য ইংরেজরা বাধ্য হয়ে রাজ্য দখল করেছিল। নইলে রাজ্য বা ভারত দখলের কোন ইচ্ছেই তাদের ছিল না! ইতিহাসের এমন পাঠই এতকাল দিয়ে এসেছেন একদল ঐতিহাসিক। একজন স্বাধীন নবাবকে এক বিদেশী বাণিজ্য কোম্পানি ও তাদের দোসররা নানামুখী ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে প্রহসনের যুদ্ধে পরাজিত করে এদেশ দখল করেছিল। সেই অন্যায় অধিকারকে ন্যায্যতা দেয়ার জন্য ইতিহাসকে এভাবে উপস্থাপন করা ঔপনিবেশিক শাসকদের নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করার জন্য অপরিহার্য হয়।
নিজের দেশ ও স্বাধীন নবাবের প্রতি স্থানীয়দের মনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে বহুমুখী অপপ্রচারের মধ্য দিয়ে তা প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই প্রচলিত ইতিহাস পাঠ- সিরাজের প্রতি করুণা যত জাগায়, শ্রদ্ধা জাগায় তার চেয়ে অনেক কম। একজন 'দুর্বলচিত্ত' পরাজিত নবাবের করুণ পরিণতি আবেগ তাড়িত করে কিন্তু এভাবে ভাবায় না যে, সিরাজ-উদ-দৌলা ছিলেন ইংরেজ ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের সম্মিলিত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদী ভারতীয় নবাব। যিনি সব ধরনের টোপ প্রত্যাখ্যান করে নিজ দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ইংরেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে দোদুল্যমানতায় আচ্ছন্ন হননি। এভাবে দেখায় না যে, তিনি ছিলেন আধিপত্য বিস্তারকারী ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী প্রথম ভারতীয় বীর। ইতিহাসকে উল্টো করে দেখার এ প্রবণতা শতভাগ ঔপনিবেশিক চাতুরি। বুদ্ধিবৃত্তির দাসত্বমুক্ত কয়েকজন ঐতিহাসিক এই চাতুরির স্বরূপ উন্মোচন করেছেন সম্প্রতি ইউরোপের বিভিন্ন আর্কাইভস, ব্রিটিশ লাইব্রেরির ইন্ডিয়া অফিস রেকর্ডসে রাখা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নথিপত্র, 'প্রাইভেট পেপারস' এবং হল্যান্ডের রাজকীয় আর্কাইভসে সংরক্ষিত ডাচ কোম্পানির দলিল পত্র ঘেঁটে।
যাহোক, আজকের লেখার বিষয়Ñ 'ধর্ম ও রাজনীতি : দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক দু'দিনের গণবক্তৃতা। বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী আয়োজিত সময়োপযোগী ও দরকারি এ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ধর্ম ইতিহাস ও রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা ধর্মকে রাজনীতির বাইরে রাখার অপরিহার্য শর্তে একমত হয়ে গণবক্তৃতা করেছেন। সবার বক্তব্যের মূল সুর অভিন্নÑ ধর্মনিরপেক্ষতা গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত। এ শর্ত পূরণ ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার কখনও ভাল কিছু বয়ে আনেনি। তাই ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা রাখতেই হবে। নইলে কোনটিই সুস্থ থাকবে না। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ক্ষতিকর প্রভাব রাষ্ট্রকে কতভাবে আক্রান্ত করতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো তার প্রমাণ। ধর্মনিরপেক্ষ দক্ষিণ এশিয়া গড়তে তাই এ অঞ্চলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
উপমহাদেশে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের উৎস সন্ধান করতে গেলে পলাশী প্রসঙ্গ আসবেই। সতেরো শ' সাতান্ন সালের তেইশ জুন সেখানে প্রহসনের যুদ্ধে জয়ী হয়ে ইংরেজ রাজত্বের যে ইতিহাস শুরু হয়েছিল তার সঙ্গেই জড়িয়ে আছে উপমহাদেশে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের ইতিহাস। সিরাজ-উদ-দৌলা সম্পর্কে বিদ্বেষ ছড়াতে গিয়ে যেসব কল্পকাহিনী সে সময় চালু করা হয়েছিল তাতে হিন্দু-মুসলিম বিদ্বেষের বীজ ছড়ানো হয়েছিল উদ্দেশ্যমূলকভাবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে বীজ অঙ্কুরিত হয়ে ডালপালা ছড়িয়ে মহীরূহ হয়েছে। এই মারণাস্ত্রকে অন্যতম হাতিয়ার করে দু'শ' বছর শাসন করে গেছে ইংরেজ। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার যে বীজ তারা সযতেœ রোপণ করেছিল আজকের ভারত তা থেকে এখনও মুক্ত হতে পারেনি। ইতিহাস সম্মিলনীর গণবক্তৃতায় যোগ দিতে আসা ভারতের জামিয়া মিল্লাহ্্ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুশিরুল হাসানও বললেন সে কথাÑ ভারতবর্ষ স্বাধীনের পর রাজনীতিবিদরা অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনের লক্ষ্যে তেমন কোন কাজ করেননি। যদি তারা সেভাবে করতেন, তাহলে অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠন সম্ভব হতো। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসাম্প্রদায়িকতার কোন বিকল্প নেই। বিভক্ত সমাজে যারা ঘৃণা ছাড়াতে চান, তারাই ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করেন। বর্ণ প্রথা সমাজ ভাষাÑ এগুলো নির্বাচনের জন্য দরকার হয়। আসলে এগুলো একটি পরিচয় তৈরি করে, আর রাষ্ট্র এসবের সঙ্গে সমঝোতা করে। বহু ধর্ম আর বহু সংস্কৃতি থাকবেই, তাই বলে তা রাষ্ট্রযন্ত্রে টেনে আনা ঠিক না। ইতিহাসে এর সুফল কখনও দেখা যায়নি।
অধ্যাপক হাসান বলেছেন, ভারতবর্ষ স্বাধীনের পর রাজনীতিবিদরা অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনে তেমন উদ্যোগ নেননি। না নিতে পারার অন্যতম কারণ সম্ভবত স্বাধীনতার নামে ভারতবর্ষ আসলে পেয়েছিল ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন বা ডমিনিয়ন স্টেটাস। ইংরেজের প্রত্যক্ষ শাসনের অবসান হলেও পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেরোনো রাজনীতিবিদদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। সুতরাং তাদের শাসনে ঔপনিবেশিক শাসকদের ছায়া থাকবে। তাই স্বাভাবিক, সময়ের বিবর্তন ও বিশ্ব রাজনীতির বাঁক বদলের সঙ্গে প্রভু বদল হলেও শুধু ভারত নয়, গোটা উপমহাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার এখনও সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। প্রত্যেক দেশের নিজস্ব বাস্তবতা অনুযায়ী এ অস্ত্র প্রয়োগ হয়। ধর্ম থেকে রাজনীতি বা রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা করার জন্য দক্ষিণ এশীয় বিশেষজ্ঞদের এ মতবিনিময়ের আয়োজন প্রশংসনীয় নয় শুধু, ভীষণ জরুরীও।
সম্মেলনে অংশ নিতে পাকিস্তান থেকে এসেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদীর ছেলে পাকিস্তানের জনপ্রিয় কলামিস্ট সাইয়েদ হায়দার ফারুক মওদুদী। তিনি এদেশের রাজনীতির ঘোরতর অসঙ্গতি চিহ্নিত করে যে প্রশ্ন রেখেছেন তা এদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষদের আরও একবার আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশই সম্ভবত বিরলতম সেই দেশ যে দেশের জন্মের সরাসরি বিরোধিতাকারী দল স্বাধীনতার পর শাসন ক্ষমতার অংশীদার হয়ে দেশ পরিচালনা করেছে। হায়দার ফারুক মওদুদী বিস্মিত। তাঁর প্রশ্ন, যে দল এদেশের জন্মে বিশ্বাস করে না, এদেশের স্বাধীনতা স্বীকার করে না, সে দল এদেশে রাজনীতি করে কী করে? শুধু প্রশ্নই করেননি অভিমতও দিয়েছেনÑ ঊনিশ শ' একাত্তর সালে বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোন নৈতিক অধিকার নেই। জামায়াত বাংলাদেশের শুধু বিরোধিতা করেনি, এখানে গণহত্যায় অংশ নিয়েছে। জন্ম-পরিচয়হীন সন্তানের যেমন সম্পত্তিতে কোন অধিকার থাকে না, জামায়াতের তেমনি এদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই। তিনি হয়ত জানেন অথবা সবটুকু জানেন না যে, ভোটের রাজনীতির সুবিধাবাদী চরিত্রের সুযোগ নিয়ে জামায়াত এদেশের শাসক দলগুলোর ঘাড়ে চেপে শুধু রাজনীতিই নয়, স্বাধীন দেশের পতাকা উড়িয়ে জাতীয় সংসদে আইন প্রণেতার আসনেও বসেছে। এদেশের মানুষের হৃদয়ে জামায়াতে ইসলামীর কোন জায়গা নেই। কিন্তু নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলের কাছে তারা জামাই আদর পায়। রাজনীতি থেকে ধর্ম আলাদা করতে হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার এ জায়গাটি চিহ্নিত করা সবচেয়ে জরুরী। স্বাধীন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত মুক্তিযোদ্ধাদের লাথিমারার ধৃষ্টতা ও 'ভি' চিহ্ন দেখানোর দুঃসাহস পেয়েছে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত হওয়ার এবং সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদদের চারিত্রিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে। বাংলাদেশে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার ভারতের চেয়ে মাত্রা এবং চরিত্রগতভাবে সম্পূর্ণ আলাদা। ঊনিশ শ' চুয়ান্ন সালে পূর্ব বাংলা থেকে মুসলিম লীগ উচ্ছেদের পর এখানে সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হালে আর পানি পায়নি। ষাট দশকের শেষ দিক থেকে জামায়াত সংগঠিত হতে থাকে। কিন্তু চারিত্র্য বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে তারা সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল নয়, ধর্মীয় মৌলবাদী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিকশিত হয়। সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে মুসলিম লীগের আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল হিন্দু সম্প্রদায় আর জামায়াতে ইসলামীর লক্ষ্য হচ্ছে বামপন্থী প্রগতিশীল সহ সব ধরনের সেক্যুলার গোষ্ঠী।
কিন্তু সাতচল্লিশ সালের পর থেকে পূর্ব বাংলায় যে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলন হয়েছিল, যার দৃষ্টান্ত এ উপমহাদেশে বিরল, জনগণ যেভাবে সাম্প্রদায়িকতাসহ ধর্মের সব ধরনের রাজনৈতিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে একটানা সংগ্রাম করেছেন তাতে স্বাধীন দেশে সেক্যুলার এবং প্রগতিশীল ধারার স্বাভাবিক বিকাশ ঘটবে এমনটাই ছিল স্বাভাবিক প্রত্যাশা, কিন্তু বাস্তবচিত্র প্রায় উল্টো। রাজনীতি ও সমাজ জীবনে ধর্মের বাড়াবাড়ি যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন এমনকি পাকিস্তান আমলেও দেখা যায়নি। কেন এমন হলো? এর উত্তর এককথায় কেউ দিতে চাইলে তা কেবল এ জটিল বিষয়ের সরলীকরণ করা হবে। শুধু এটুকু বলা যায়, দেশীয় রাজনীতির রঙ্গ মঞ্চে যা মঞ্চায়িত হয় তার মূল প্রম্পটার আন্তর্জাতিক। দু'হাজার এক সালের এগারো সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে বোমা বিস্ফোরণের পর বিশ্ব রাজনীতিতে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের নতুন নতুন কম্পোনেন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের চরম অবনতি এ সময়ের মৌলবাদী রাজনীতির উল্লেখযোগ্য দিক।
গত কয়েক দশকে দেশে মাদ্রাসাকেন্দ্রিক যেসব সংগঠন গড়ে উঠেছে তারা তাদের অর্থের যোগানদারদের পরিকল্পিত ছক অনুযায়ী কাজ করছে। ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার নামে এসব সংগঠন কর্মীদের সংগঠিত করলেও তাদের মূল উদ্দেশ্য নির্দোষ ধর্ম প্রচার নয়, ধর্মযুদ্ধ বা জেহাদের নামে প্রগতিশীল ও সেক্যুলার শক্তি ও সংগঠনের ওপর আক্রমণ চালানো। এ জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সুস্থ প্রগতিশীল ধারার চর্চাকে অস্থিতিশীল করা এদের মূল কাজ।
বাংলাদেশে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের এত বিস্তৃতির আরেক কারণ স্বাধীনতার পর থেকে দেশে বামপন্থী রাজনৈতিক আন্দোলনের সঠিক বিকাশ না ঘটা। বামপন্থী আন্দোলনের ক্রমশ মেধা ও নেতৃত্বহীন হয়ে পড়া যে শূন্যতা সৃষ্টি করেছে সেখানে ধর্মের নামে নানা আবর্জনা সহজে ঢুকতে পারছে। বামপন্থী আন্দোলনের সঠিক চর্চা ও বিকাশ ঘটলে এদেশে বিপ্লব না হোক অন্তত সেক্যুলার ও প্রগতিশীল হিসেবে রাষ্ট্রের ভারসাম্য বজায় থাকত। ধর্মের নামে যেসব অপশক্তি জেঁকে বসে রাষ্ট্রকে মধ্যযুগের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে, সে পরিস্থিতির মুখো মুখি হতে হতো না। ভাবতে অবাক লাগে সাতচল্লিশের পর থেকে শক্তিশালী কৃষক-শ্রমিক আন্দোলন, সাম্প্রদায়িকতা বা রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, বাঙালী জাতীয়বাদী আন্দোলন, উনসত্তরের গণআন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাওয়া স্বাধীন বাংলাদেশে বেয়াল্লিশ বছর পর 'হেফাজতে ইসলাম' নামের সংগঠন মধ্যযুগীয় জীবন ধারার তেরো দফা দাবি নিয়ে রাস্তায় নামে। আর গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত শাসকশ্রেণীর এক পক্ষের প্রত্যক্ষ সমর্থন পায়। ভোটের বৈতরণী পার হতে অন্য পক্ষও এর প্রতি ঝুঁকতে দ্বিধা করে না।
আগেই বলেছি, বাংলাদেশের রাজনীতির দুর্বলতম এ উপসর্গ দূর করতে না পারলে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার দূর করা কোনভাবে সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী যে চমৎকার উদ্যোগ নিয়েছে তা সমস্যার গোড়া উপড়ানোর দিকেই ক্রমশ অগ্রসর হওয়ার পথ তৈরি করবে- সমস্ত সেক্যুলার ও প্রগতিশীল শক্তির এটাই প্রত্যাশা।
নিজের দেশ ও স্বাধীন নবাবের প্রতি স্থানীয়দের মনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে বহুমুখী অপপ্রচারের মধ্য দিয়ে তা প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই প্রচলিত ইতিহাস পাঠ- সিরাজের প্রতি করুণা যত জাগায়, শ্রদ্ধা জাগায় তার চেয়ে অনেক কম। একজন 'দুর্বলচিত্ত' পরাজিত নবাবের করুণ পরিণতি আবেগ তাড়িত করে কিন্তু এভাবে ভাবায় না যে, সিরাজ-উদ-দৌলা ছিলেন ইংরেজ ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের সম্মিলিত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদী ভারতীয় নবাব। যিনি সব ধরনের টোপ প্রত্যাখ্যান করে নিজ দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ইংরেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে দোদুল্যমানতায় আচ্ছন্ন হননি। এভাবে দেখায় না যে, তিনি ছিলেন আধিপত্য বিস্তারকারী ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী প্রথম ভারতীয় বীর। ইতিহাসকে উল্টো করে দেখার এ প্রবণতা শতভাগ ঔপনিবেশিক চাতুরি। বুদ্ধিবৃত্তির দাসত্বমুক্ত কয়েকজন ঐতিহাসিক এই চাতুরির স্বরূপ উন্মোচন করেছেন সম্প্রতি ইউরোপের বিভিন্ন আর্কাইভস, ব্রিটিশ লাইব্রেরির ইন্ডিয়া অফিস রেকর্ডসে রাখা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নথিপত্র, 'প্রাইভেট পেপারস' এবং হল্যান্ডের রাজকীয় আর্কাইভসে সংরক্ষিত ডাচ কোম্পানির দলিল পত্র ঘেঁটে।
যাহোক, আজকের লেখার বিষয়Ñ 'ধর্ম ও রাজনীতি : দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক দু'দিনের গণবক্তৃতা। বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী আয়োজিত সময়োপযোগী ও দরকারি এ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ধর্ম ইতিহাস ও রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা ধর্মকে রাজনীতির বাইরে রাখার অপরিহার্য শর্তে একমত হয়ে গণবক্তৃতা করেছেন। সবার বক্তব্যের মূল সুর অভিন্নÑ ধর্মনিরপেক্ষতা গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত। এ শর্ত পূরণ ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার কখনও ভাল কিছু বয়ে আনেনি। তাই ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা রাখতেই হবে। নইলে কোনটিই সুস্থ থাকবে না। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ক্ষতিকর প্রভাব রাষ্ট্রকে কতভাবে আক্রান্ত করতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো তার প্রমাণ। ধর্মনিরপেক্ষ দক্ষিণ এশিয়া গড়তে তাই এ অঞ্চলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
উপমহাদেশে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের উৎস সন্ধান করতে গেলে পলাশী প্রসঙ্গ আসবেই। সতেরো শ' সাতান্ন সালের তেইশ জুন সেখানে প্রহসনের যুদ্ধে জয়ী হয়ে ইংরেজ রাজত্বের যে ইতিহাস শুরু হয়েছিল তার সঙ্গেই জড়িয়ে আছে উপমহাদেশে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের ইতিহাস। সিরাজ-উদ-দৌলা সম্পর্কে বিদ্বেষ ছড়াতে গিয়ে যেসব কল্পকাহিনী সে সময় চালু করা হয়েছিল তাতে হিন্দু-মুসলিম বিদ্বেষের বীজ ছড়ানো হয়েছিল উদ্দেশ্যমূলকভাবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে বীজ অঙ্কুরিত হয়ে ডালপালা ছড়িয়ে মহীরূহ হয়েছে। এই মারণাস্ত্রকে অন্যতম হাতিয়ার করে দু'শ' বছর শাসন করে গেছে ইংরেজ। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার যে বীজ তারা সযতেœ রোপণ করেছিল আজকের ভারত তা থেকে এখনও মুক্ত হতে পারেনি। ইতিহাস সম্মিলনীর গণবক্তৃতায় যোগ দিতে আসা ভারতের জামিয়া মিল্লাহ্্ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুশিরুল হাসানও বললেন সে কথাÑ ভারতবর্ষ স্বাধীনের পর রাজনীতিবিদরা অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনের লক্ষ্যে তেমন কোন কাজ করেননি। যদি তারা সেভাবে করতেন, তাহলে অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠন সম্ভব হতো। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসাম্প্রদায়িকতার কোন বিকল্প নেই। বিভক্ত সমাজে যারা ঘৃণা ছাড়াতে চান, তারাই ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করেন। বর্ণ প্রথা সমাজ ভাষাÑ এগুলো নির্বাচনের জন্য দরকার হয়। আসলে এগুলো একটি পরিচয় তৈরি করে, আর রাষ্ট্র এসবের সঙ্গে সমঝোতা করে। বহু ধর্ম আর বহু সংস্কৃতি থাকবেই, তাই বলে তা রাষ্ট্রযন্ত্রে টেনে আনা ঠিক না। ইতিহাসে এর সুফল কখনও দেখা যায়নি।
অধ্যাপক হাসান বলেছেন, ভারতবর্ষ স্বাধীনের পর রাজনীতিবিদরা অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনে তেমন উদ্যোগ নেননি। না নিতে পারার অন্যতম কারণ সম্ভবত স্বাধীনতার নামে ভারতবর্ষ আসলে পেয়েছিল ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন বা ডমিনিয়ন স্টেটাস। ইংরেজের প্রত্যক্ষ শাসনের অবসান হলেও পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেরোনো রাজনীতিবিদদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। সুতরাং তাদের শাসনে ঔপনিবেশিক শাসকদের ছায়া থাকবে। তাই স্বাভাবিক, সময়ের বিবর্তন ও বিশ্ব রাজনীতির বাঁক বদলের সঙ্গে প্রভু বদল হলেও শুধু ভারত নয়, গোটা উপমহাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার এখনও সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। প্রত্যেক দেশের নিজস্ব বাস্তবতা অনুযায়ী এ অস্ত্র প্রয়োগ হয়। ধর্ম থেকে রাজনীতি বা রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা করার জন্য দক্ষিণ এশীয় বিশেষজ্ঞদের এ মতবিনিময়ের আয়োজন প্রশংসনীয় নয় শুধু, ভীষণ জরুরীও।
সম্মেলনে অংশ নিতে পাকিস্তান থেকে এসেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদীর ছেলে পাকিস্তানের জনপ্রিয় কলামিস্ট সাইয়েদ হায়দার ফারুক মওদুদী। তিনি এদেশের রাজনীতির ঘোরতর অসঙ্গতি চিহ্নিত করে যে প্রশ্ন রেখেছেন তা এদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষদের আরও একবার আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশই সম্ভবত বিরলতম সেই দেশ যে দেশের জন্মের সরাসরি বিরোধিতাকারী দল স্বাধীনতার পর শাসন ক্ষমতার অংশীদার হয়ে দেশ পরিচালনা করেছে। হায়দার ফারুক মওদুদী বিস্মিত। তাঁর প্রশ্ন, যে দল এদেশের জন্মে বিশ্বাস করে না, এদেশের স্বাধীনতা স্বীকার করে না, সে দল এদেশে রাজনীতি করে কী করে? শুধু প্রশ্নই করেননি অভিমতও দিয়েছেনÑ ঊনিশ শ' একাত্তর সালে বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোন নৈতিক অধিকার নেই। জামায়াত বাংলাদেশের শুধু বিরোধিতা করেনি, এখানে গণহত্যায় অংশ নিয়েছে। জন্ম-পরিচয়হীন সন্তানের যেমন সম্পত্তিতে কোন অধিকার থাকে না, জামায়াতের তেমনি এদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই। তিনি হয়ত জানেন অথবা সবটুকু জানেন না যে, ভোটের রাজনীতির সুবিধাবাদী চরিত্রের সুযোগ নিয়ে জামায়াত এদেশের শাসক দলগুলোর ঘাড়ে চেপে শুধু রাজনীতিই নয়, স্বাধীন দেশের পতাকা উড়িয়ে জাতীয় সংসদে আইন প্রণেতার আসনেও বসেছে। এদেশের মানুষের হৃদয়ে জামায়াতে ইসলামীর কোন জায়গা নেই। কিন্তু নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলের কাছে তারা জামাই আদর পায়। রাজনীতি থেকে ধর্ম আলাদা করতে হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার এ জায়গাটি চিহ্নিত করা সবচেয়ে জরুরী। স্বাধীন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত মুক্তিযোদ্ধাদের লাথিমারার ধৃষ্টতা ও 'ভি' চিহ্ন দেখানোর দুঃসাহস পেয়েছে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত হওয়ার এবং সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদদের চারিত্রিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে। বাংলাদেশে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার ভারতের চেয়ে মাত্রা এবং চরিত্রগতভাবে সম্পূর্ণ আলাদা। ঊনিশ শ' চুয়ান্ন সালে পূর্ব বাংলা থেকে মুসলিম লীগ উচ্ছেদের পর এখানে সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হালে আর পানি পায়নি। ষাট দশকের শেষ দিক থেকে জামায়াত সংগঠিত হতে থাকে। কিন্তু চারিত্র্য বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে তারা সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল নয়, ধর্মীয় মৌলবাদী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিকশিত হয়। সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে মুসলিম লীগের আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল হিন্দু সম্প্রদায় আর জামায়াতে ইসলামীর লক্ষ্য হচ্ছে বামপন্থী প্রগতিশীল সহ সব ধরনের সেক্যুলার গোষ্ঠী।
কিন্তু সাতচল্লিশ সালের পর থেকে পূর্ব বাংলায় যে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলন হয়েছিল, যার দৃষ্টান্ত এ উপমহাদেশে বিরল, জনগণ যেভাবে সাম্প্রদায়িকতাসহ ধর্মের সব ধরনের রাজনৈতিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে একটানা সংগ্রাম করেছেন তাতে স্বাধীন দেশে সেক্যুলার এবং প্রগতিশীল ধারার স্বাভাবিক বিকাশ ঘটবে এমনটাই ছিল স্বাভাবিক প্রত্যাশা, কিন্তু বাস্তবচিত্র প্রায় উল্টো। রাজনীতি ও সমাজ জীবনে ধর্মের বাড়াবাড়ি যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন এমনকি পাকিস্তান আমলেও দেখা যায়নি। কেন এমন হলো? এর উত্তর এককথায় কেউ দিতে চাইলে তা কেবল এ জটিল বিষয়ের সরলীকরণ করা হবে। শুধু এটুকু বলা যায়, দেশীয় রাজনীতির রঙ্গ মঞ্চে যা মঞ্চায়িত হয় তার মূল প্রম্পটার আন্তর্জাতিক। দু'হাজার এক সালের এগারো সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে বোমা বিস্ফোরণের পর বিশ্ব রাজনীতিতে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের নতুন নতুন কম্পোনেন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের চরম অবনতি এ সময়ের মৌলবাদী রাজনীতির উল্লেখযোগ্য দিক।
গত কয়েক দশকে দেশে মাদ্রাসাকেন্দ্রিক যেসব সংগঠন গড়ে উঠেছে তারা তাদের অর্থের যোগানদারদের পরিকল্পিত ছক অনুযায়ী কাজ করছে। ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার নামে এসব সংগঠন কর্মীদের সংগঠিত করলেও তাদের মূল উদ্দেশ্য নির্দোষ ধর্ম প্রচার নয়, ধর্মযুদ্ধ বা জেহাদের নামে প্রগতিশীল ও সেক্যুলার শক্তি ও সংগঠনের ওপর আক্রমণ চালানো। এ জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সুস্থ প্রগতিশীল ধারার চর্চাকে অস্থিতিশীল করা এদের মূল কাজ।
বাংলাদেশে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের এত বিস্তৃতির আরেক কারণ স্বাধীনতার পর থেকে দেশে বামপন্থী রাজনৈতিক আন্দোলনের সঠিক বিকাশ না ঘটা। বামপন্থী আন্দোলনের ক্রমশ মেধা ও নেতৃত্বহীন হয়ে পড়া যে শূন্যতা সৃষ্টি করেছে সেখানে ধর্মের নামে নানা আবর্জনা সহজে ঢুকতে পারছে। বামপন্থী আন্দোলনের সঠিক চর্চা ও বিকাশ ঘটলে এদেশে বিপ্লব না হোক অন্তত সেক্যুলার ও প্রগতিশীল হিসেবে রাষ্ট্রের ভারসাম্য বজায় থাকত। ধর্মের নামে যেসব অপশক্তি জেঁকে বসে রাষ্ট্রকে মধ্যযুগের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে, সে পরিস্থিতির মুখো মুখি হতে হতো না। ভাবতে অবাক লাগে সাতচল্লিশের পর থেকে শক্তিশালী কৃষক-শ্রমিক আন্দোলন, সাম্প্রদায়িকতা বা রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, বাঙালী জাতীয়বাদী আন্দোলন, উনসত্তরের গণআন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাওয়া স্বাধীন বাংলাদেশে বেয়াল্লিশ বছর পর 'হেফাজতে ইসলাম' নামের সংগঠন মধ্যযুগীয় জীবন ধারার তেরো দফা দাবি নিয়ে রাস্তায় নামে। আর গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত শাসকশ্রেণীর এক পক্ষের প্রত্যক্ষ সমর্থন পায়। ভোটের বৈতরণী পার হতে অন্য পক্ষও এর প্রতি ঝুঁকতে দ্বিধা করে না।
আগেই বলেছি, বাংলাদেশের রাজনীতির দুর্বলতম এ উপসর্গ দূর করতে না পারলে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার দূর করা কোনভাবে সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী যে চমৎকার উদ্যোগ নিয়েছে তা সমস্যার গোড়া উপড়ানোর দিকেই ক্রমশ অগ্রসর হওয়ার পথ তৈরি করবে- সমস্ত সেক্যুলার ও প্রগতিশীল শক্তির এটাই প্রত্যাশা।
__._,_.___