Banner Advertise

Tuesday, September 24, 2013

[chottala.com] সংবিধানের বাকশালি সংশোধনী



সংবিধানের বাকশালি সংশোধনী

এম এ নো মা ন
১. প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও মহাজোট নেত্রী শেখ হাসিনা নিজের সব পদে বহাল থেকে এবং বর্তমান জাতীয় সংসদ বহাল রেখেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছেন। শেখ হাসিনার এ অবস্থানকে সব শ্রেণীর সব পর্যায়ের পেশাজীবী, শ্রমজীবী, কর্মজীবী মানুষ প্রত্যাখ্যান করে সংলাপের মাধ্যমে বিরাজমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন। এর মধ্যে ব্যতিক্রমও দেখা যাচ্ছে। স্বঘোষিত বেকুব ও আহাম্মক আবদুল গাফফার চৌধুরী তার নেত্রী শেখ হাসিনার এবারের অবস্থানকে সঠিক বলে উল্লেখ করে গত ৯ সেপ্টেম্বর দৈনিক যুগান্তরে একটি নিবন্ধ লিখেছেন।(২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তিনি একাধিক লেখায় উল্লেখ করেছিলেন, আওয়ামী লীগ ১৭০ থেকে ১৯০টি আসনে জয়লাভ করবে। নির্বাচনে আ.লীগ ৫৮টি আসন পাওয়ার পর নিজের ইনফরমেশন গ্যাপের কথা উল্লেখ করে তিনি নিজেকে আহাম্মক ও বেকুব হিসেবে চিহ্নিত করে প্রবন্ধ লেখেন) সংসদ বহাল রেখে নিজের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার অবস্থানকে আগাচৌ সংসদীয় রীতিতে ইতিবাচক দিক উল্লেখ করে বিভিন্ন যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন।
২. বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের একটি বিতর্কিত রায়ের দোহাই দিয়ে আইন মন্ত্রণালয় সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা উঠিয়ে দিতে পঞ্চদশ সংশোধনীর উদ্যোগ নেয়। আইন মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আমি ওইদিন আইনমন্ত্রী মহোদয়কে এ বিষয়ে তিনটি প্রশ্ন করেছিলাম। এখানে পাঠকদের উদ্দেশে তা উল্লেখ করলাম। (এক) আপিল বিভাগের রায়ে দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, অখণ্ডতা ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা রক্ষায় আগামী দুটি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার অধীনে হতে পারে। রায়ের এ অংশটি সরকার উপেক্ষা করছে কেন? (দুই) বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অধীনে ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচন হলে আপনার দল আওয়ামী লীগ মেনে নেবে কিনা? (তিন) তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আপিল বিভাগের সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণার আগে আপনি খসড়া সংবিধান নামে একটি সংবিধান প্রকাশ করে সেখান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি উঠিয়ে দিয়েছেন। ভবিষ্যতে বিশৃঙ্খলার জন্য আপনি দায়ী থাকবেন কিনা? সেদিন আইনমন্ত্রী আমার এ তিনটি প্রশ্নের জবাব দেননি।
৩. তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণার তিন মাস আগেই এ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনে সরকার। ২০১১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সরকার একটি খসড়া সংবিধান প্রকাশ করে। এতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়। খসড়া সংবিধান প্রকাশের তিন মাস পর একই বছরের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীসংক্রান্ত মামলায় আপিল বিভাগ মৌখিকভাবে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করে। রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করা হলেও দেশের শান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে পরবর্তী দুটি জাতীয় নির্বাচন এই ব্যবস্থার অধীনে হতে পারে বলে মত দেয়া হয়। আপিল বিভাগের এ রায়ের কথা উল্লেখ করে সরকার একই বছরের অক্টোবর মাসে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী আনে। এই সংশোধনীর ১১ মাস পরে ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। বিদায়ী প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক অবসরে থেকে এ রায়ে স্বাক্ষর করেন।
৪. মুন সিনেমা হলের মালিকানা দাবি করে দায়ের করা একটি রিট পিটিশনের আলোকে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ সংবিধানের গোটা পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে রায় দেয়। পরে কিছু সংশোধনীসহ আপিল বিভাগ হাইকোর্টের ওই রায় বহাল রাখে। আপিল বিভাগের এ রায় প্রকাশের পর ২০১১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সংবিধান থেকে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করে আইন মন্ত্রণালয়। পুনর্মুদ্রিত এ সংবিধানে ৯৯ অনুচ্ছেদে আমূল পরিবর্তন আনা হয়। পুনর্মুদ্রিত সংবিধানের আগের (১৪তম সংশোধনীর আলোকে প্রকাশিত) সংবিধানের ৯৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, 'কোনো ব্যক্তি অতিরিক্ত বিচারকরূপে দায়িত্ব পালন ব্যতীত বিচারক পদে দায়িত্ব পালন করিয়া থাকিলে উক্ত পদ হইতে অবসর গ্রহণের কিংবা অপসারিত হইবার পর তিনি কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের নিকট ওকালতি বা কার্য করিতে পারিবেন না, অথবা বিচারবিভাগীয় বা আধা-বিচারবিভাগীয় পদ অথবা প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টার পদ ব্যতীত প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে বহাল হইবেন না।' পুনর্মুদ্রিত সংবিধানের ৯৯ অনুচ্ছেদে 'প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টার পদ'—এই শব্দগুলোর পরে 'ব্যতীত' শব্দটি বাদ দেয়া হয়েছে। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টার পদে অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের অধিষ্ঠিত হওয়ার বিধান রহিত হয়ে গেছে পুনর্মুদ্রিত সংবিধানের মাধ্যমে। নতুন করে ছাপানো এ সংবিধানের ৯৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'কোনো ব্যক্তি (এই সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদের বিধানাবলি অনুসারে) অতিরিক্ত বিচারকরূপে দায়িত্ব পালন ব্যতীত বিচারকরূপে দায়িত্ব পালন করিয়া থাকিলে উক্ত পদ হইতে অবসর গ্রহণের বা অপসারিত হইবার পর তিনি কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের নিকট ওকালতি বা কার্য করিবেন না এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ লাভের যোগ্য হইবেন না (আধা- বিচারবিভাগীয় পদ অথবা প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টার পদ)।
৫. ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্বলিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিষয়ে বিদায়ী প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের রায়ে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানপরিপন্থী। দেশের স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার স্বার্থে আগামী দুটি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা উচ্চ আদালতের কোনো বিচারককে যুক্ত করা যাবে না।
৬. বিদায়ী প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকারসংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিষয়ে ২০১১ সালের ১০ মে মৌখিকভাবে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন। বিচারপতি খায়রুল হকের মৌখিক রায়ের ওপর ভিত্তি করেই সরকার একই বছরের অক্টোবর মাসে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পন্ন করে। এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুরোপুরি বাদ দেয়া হয়। যদিও বিচারপতি খায়রুল হক তার রায়ে রাষ্ট্রের শান্তি, শৃঙ্খলা ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে পরবর্তী দুই টার্মের জন্য তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। রায় দেয়ার সাত দিনের মাথায় বিচারপতি খায়রুল হক অবসরে যান। আদালতের রায়ের দোহাই দিয়ে সরকার সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের ১১ মাস পর ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিচারপতি খায়রুল হক অবসরকালীন অবস্থায় নিজের বাসায় থেকে পূর্ণাঙ্গ রায় লিখে তাতে স্বাক্ষর করেন। পূর্ণাঙ্গ রায়েও বিচারপতি খায়রুল হক সরকারের সংশোধিত সংবিধানের প্রতিফলন ঘটান।
৭. নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় সম্পর্কে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩(ক) ও (খ) উপধারায় সরকার প্রধানকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে—(ক) মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে; এবং (খ) মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে :'
অপরদিকে এ সংবিধানের ৫৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'সংসদ ভাঙ্গিয়া দিবার জন্য লিখিতভাবে (প্রধানমন্ত্রী) রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শদান করিবেন এবং তিনি অনুরূপ পরামর্শদান করিলে রাষ্ট্রপতি, এই মর্মে সন্তুষ্ট হইলে, সংসদ ভাঙ্গিয়া দিবেন।'
রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ প্রদান সম্পর্কে সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোনো পরামর্শদান করিয়াছেন কিনা এবং করিয়া থাকিলে কী পরামর্শদান করিয়াছেন, কোনো আদালত সেই সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের তদন্ত করিতে পারিবেন না।'
নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখাও প্রধানমন্ত্রী ঠিক করবেন। প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে একই মন্ত্রিসভাও বহাল রাখতে পারবেন। ছোট কিংবা বড়ও করতে পারবেন। সবকিছুই নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ইচ্ছার ওপর। এ বিষয়ে বর্তমান সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'একজন প্রধানমন্ত্রী থাকিবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেরূপ নির্ধারণ করিবেন, সেইরূপ অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকিবেন।'
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল সম্পর্কে সংবিধানের ৫৭ অনুচ্ছেদের (১) উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হইবে, যদি—(ক) তিনি কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন; অথবা (খ) তিনি সংসদ-সদস্য না থাকেন।' একই অনুচ্ছেদের (২) উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন হারাইলে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করিবেন, কিংবা সংসদ ভাঙ্গিয়া দিবার জন্য লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শদান করিবেন এবং তিনি অনুরূপ পরামর্শদান করিলে রাষ্ট্রপতি, অন্য কোনো সংসদ-সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন নহেন এই মর্মে সন্তুষ্ট হইলে, সংসদ ভাঙ্গিয়া দিবেন।' (৩) উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই অযোগ্য করিবে না।'
সুপ্রিমকোর্টের রায়ের দোহাই দিয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীকে প্রত্যাখ্যান করে সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, দেশে এখন কার্যত কোনো সংবিধান নেই। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার সংবিধানের যে রূপ দিয়েছে—এটাকে কোনো অবস্থায়ই সংবিধান বলা যায় না। মূলত দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্যই এসব করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির লক্ষ্যে এটা করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রয়োজনে আমি ফাঁসির রশিতে ঝুলব, তার পরেও আমি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সমালোচনা করে যাব। এক ব্যক্তির একগুঁয়েমির কারণেই দেশে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। সরকার ইচ্ছাকৃতভাবেই অবৈধভাবে সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ওপর দিয়ে সুনামি বইয়ে দিয়েছে।
৮. সংবিধানের বহুল বিতর্কিত চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার বিধান করেছিলেন। একই সঙ্গে এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে কয়েকটি বিশেষ অনুচ্ছেদ যুক্ত করে আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাসন বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এ জন্য মুল সংবিধানের ষষ্ঠ ভাগের পর 'ষষ্ঠ-ক' নামে পৃথক একটি ভাগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সংবিধানে বিশেষ বিধান অন্তর্ভুক্ত করে নিজেকে নির্বাচন ছাড়াই রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন তিনি।
সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকদের রাজনৈতিক অধিকার হরণের পাশাপাশি ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতাও হরণ করা হয়। জনগণের সব ধরনের মৌলিক অধিকারও হরণ করা হয় সংবিধানের ওই সংশোধনীর মাধ্যমে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের বিদ্যমান কয়েকটি অনুচ্ছেদে সংশোধনী এনে ও নতুন অনুচ্ছেদযুক্ত সুপ্রিমকোর্টের স্বাধীনতাকেও হরণ করা হয়। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংবিধানে এই বিধানগুলো সংযোজিত হয়। এর আগে জাতীয় সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তিনি একদলীয় বাকশালের বিধানসম্বলিত সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী বিল পাস করে নেন। এ ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর মাত্র আট মাসের মাথায় একই বছরের ২০ আগস্ট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদ সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে একদলীয় বাকশালি শাসন ব্যবস্থা বিলুপ্তসহ সংবিধানের অন্যান্য বিধান মুলতবি ঘোষণা করেন। পরে জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে 'দ্বিতীয় প্রোকলামেশন (পঞ্চম সংশোধনী) আদেশ, ১৯৭৮-এর (১৯৭৮ সালের দ্বিতীয় প্রোকলামেশনের ৪নং আদেশ) দ্বিতীয় শিডিউলের ক্ষমতা বলে সংবিধানের 'ষষ্ঠ-ক ভাগ- জাতীয় দল' বিলুপ্ত করা হয়। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগসহ নিষিদ্ধঘোষিত বামপন্থী ও ডানপন্থী নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক দল আবার রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পায়।
৯. চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ১১৭ অনুচ্ছেদের পর ১১৭ক নামে পৃথক একটি অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই অনুচ্ছেদের দফা ১-এ বলা হয়েছে, 'রাষ্ট্রপতির নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এই সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে বর্ণিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহের কোনো একটা পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করিবার উদ্দেশ্যে অনুরূপ করা প্রয়োজন, তাহা হইলে তিনি, আদেশ দ্বারা, নির্দেশ দিতে পারিবেন যে, রাষ্ট্রে শুধু একটা রাজনৈতিক দল (অতঃপর জাতীয় দল নামে অভিহিত) থাকিবে।' দফা ২ এ বলা হয়েছে যে, 'যখন (১) দফার অধীন কোনো আদেশ প্রণীত হয়, তখন রাষ্ট্রের সকল রাজনৈতিক দল ভাঙ্গিয়া যাইবে এবং রাষ্ট্রপতি জাতীয় দল গঠন করিবার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করিবেন।' দফা ৩-এ বলা হয়েছে যে, 'জাতীয় দলের নামকরণ, কর্মসূচি, সদস্যভুক্তি, সংগঠন, শৃঙ্খলা, অর্থসংস্থান এবং কর্তব্য ও দায়িত্ব সম্পর্কিত সকল বিষয় রাষ্ট্রপতির আদেশ দ্বারা নির্ধারিত হাইবে।' একই অনুচ্ছেদের দফা ৪-এ বলা হয়েছে, '(৩) দফার অধীন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রণীত আদেশ-সাপেক্ষে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি জাতীয় দলের সদস্য হইবার যোগ্য হইবেন।'
১০ . চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে স্থাপিত ১১৭ক অনুচ্ছেদের দফা ৫-এ বলা হয়েছে, 'এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে তাহা সত্ত্বেও যখন জাতীয় দল গঠিত হয়, তখন কোনো ব্যক্তি (ক) যদি তিনি, যে তারিখে জাতীয় দল গঠিত হয়, সেই তারিখে সংসদ-সদস্য থাকেন, তাহা হইলে তিনি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাতীয় দলের সদস্য না হইলে সংসদ-সদস্য থাকিবেন না এবং সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে।' একই দফার উপ-অনুচ্ছেদ খ-এ বলা হয়েছে, 'যদি তিনি জাতীয় দলের দ্বারা রাষ্ট্রপতি বা সংসদ-সদস্য নির্বাচনে প্রার্থীরূপে মনোনীত না হন, তাহা হইলে অনুরূপ নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি বা সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য হইবেন না।' উপ-অনুচ্ছেদ গ-এ বলা হয়েছে, 'জাতীয় দল ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করিবার বা অনুরূপ দলের সদস্য হইবার কিংবা অন্যভাবে অন্যরূপ দলের কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করিবার অধিকারপ্রাপ্ত হইবেন না।'
১১. চর্তুথ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে 'রাষ্ট্রপতি-সংক্রান্ত বিশেষ বিধান' নামে একটি বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে, 'সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও এই আইন প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে, (ক) এই আইন প্রবর্তনের অব্যবহিত পূর্বে যিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, তিনি রাষ্ট্রপতির পদে থাকিবেন না এবং রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইবে; (খ) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হইবেন এবং রাষ্ট্রপতির কার্যভার গ্রহণ করিবেন এবং উক্ত প্রবর্তন হইতে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি-পদে বহাল থাকিবেন যেন তিনি এই আইনের দ্বারা সংশোধিত সংবিধানের অধীন রাষ্ট্রপতি-পদে নির্বাচিত হইয়াছেন।'
১২. চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে প্রতিস্থাপিত ৫১ নং অনুচ্ছেদের দফা ১-এ বলা হয়েছে যে, এই সংবিধানের বিধানাবলী- সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ হইতে পাঁচ বছরের মেয়াদে তাঁহার পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন : তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তাঁহার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন।'
আবদুল গাফফার চৌধুরী সরকারের সংবিধান নিয়ে এহেন অপকর্মের যৌক্তিকতা কীভাবে খুঁজে পেলেন, তা বোঝা মুশকিল।


__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___