'অসমাপ্ত বিপ্লব' শেষ করার সুযোগ চাইলেন জয়
নিজস্ব প্রতিবেদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2013-09-13 18:33:56.0 BdST Updated: 2013-09-13 19:51:22.0 BdST
নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশায় 'সফল'দের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে অংশ নিয়ে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
গত পাঁচ বছরে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি আগামীতে আবারো ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগ কী কী করতে চায় তার বিবরণও দিয়েছেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে 'রূপকল্প ২০২১, গত ৫ বছরের অর্জন, আগামী ৫ বছরের অঙ্গীকার' শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে জয়ের সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও ব্যান্ডশিল্পী মাকসুদুল হক।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী জয় সম্প্রতি দেশে এসে রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য করে আলোচনার ঝড় তোলেন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের সামনে 'রাইজিং স্টার'।
"এটা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি করেছে। এটা মাথায় রেখে আমি আপনাদের অনুরোধ করব, মানুষকে আপনারা বলবেন- আনফিনিশড রেভ্যুলেশন আমাদের ফিনিশ করতে হবে। আওয়ামী লীগকে সুযোগ দিতে হবে।"
এর আগে গত অগাস্টে তরুণদের সঙ্গে এক খোলামেলা আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীপুত্র জয় বলেছিলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অর্ধেক এগিয়েছে।
শুক্রবারের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসতে পারলে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ থেকে ৮-১০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হবে। মোবাইল ফোনের চতুর্থ প্রজন্মের (ফোর জি) সেবা চালু করা হবে।
"আওয়ামী লীগ যদি চায়- এমন কিছু নেই যা পারে না।"
জয়ের বিশ্বাস, আওয়ামী লীগের 'রূপকল্প ২০২১' বাস্তবায়ন করতে পারলে 'উন্নত বাংলাদেশ' গড়ার সুযোগ তৈরি হবে।
"তরুণ প্রজন্ম আমাদের সেখানে নিয়ে যেতে পারবে। সেখানে পৌঁছানোর জন্য ধারাবাহিকতা ধরে রাখা প্রয়োজন এটা মাথায় রাখতে হবে এবং বাংলাদেশের মানুষকে মনে করিয়ে দিতে হবে।"
পাশাপাশি জনগণ যাতে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়- সেজন্য তরুণদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ক্ষমতার পরিবর্তন হলে দেশ আবার সন্ত্রাস ও লুটপাটে ফিরে যাবে-এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে জয় বলেন, "এখন সরকারে পরিবর্তন আসলে আগে যে পরিস্থিতি ছিল সেখানেই ফিরে যেতে হবে। যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছিল সব শেষ হবে। সন্ত্রাসীরা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তারা চলে আসবে।"
গত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের কাজের খতিয়ান দিয়ে তিনি বলেন, "আওয়ামী লীগ যদি পাঁচ বছরে এ রকম এগিয়ে আনতে পারে, তাহলে কল্পনা করে দেখেন, আরো পাঁচ বছরে আমরা দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে পারব। এখানেই কথা আসে ধারাবাহিকতার।"
এ প্রসঙ্গে সাবেক চার দলীয় জোট সরকারের সমালোচনাও করেন জয়।
তিনি বলেন, "ক্রিকেটে জয় পাচ্ছি, এভারেস্ট বিজয় হয়েছে। আমরা চাই বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। আগের পাঁচ বছর বিশ্বে আমাদের লজ্জা করে থাকতে হতো। জঙ্গিবাদ, দুর্নীতিবাজ এবং শেষমেষ স্বৈরাচারীরা ক্ষমতা আসে।"
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে এদেশের অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করা হয় বলেও মন্তব্য করেন জয়।
তিনি বলেন, মালয়শিয়া-সিঙ্গাপুর এগিয়ে যেতে পেরেছিল, কারণ যারা স্বাধীনতা দিয়েছে তারাই দেশের উন্নয়ন করেছে। অথচ বাংলাদেশে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি সেই সুযোগ পায়নি।
"স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ক্ষমতা দখল করে রাজাকারদের দেশে আনে, জঙ্গিবাদ দেশে আনে। আমরা এজন্য পিছিয়ে পড়েছি। তবে সেই স্বাধীনতার চেতনাকে মুছে ফেলা যায়নি।"
জয় বলেন, ৭৫ থেকে ১৬ বছর লেগেছে স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত হতে, গণতন্ত্র ফিরে পেতে। শেষমেষ তা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ফিরে এসেছে।
বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা তুলে ধরে জয় বলেন, তরুণ প্রজন্ম জেগে ওঠায় '৭৫-এর মতো তারা ক্ষমতা দখল করে থাকতে পারেনি। তারা নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। আর ওই নির্বাচনে জনগণের রায় নিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু হয়।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ 'শান্তি ও সমৃদ্ধির' না 'আতঙ্কের' হবে- তা নির্ধারণের সময় এসেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচ বার প্রথম হয়েছিল। এখন সেখানে ৪০তম অবস্থানে নেমে এসেছে। এটা অনেক বড় পরিবর্তন।
জোট সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে জয় বলেন, "২০০৬ সালে বিশ্বের খবরে বাংলাদেশকে বলা হয়- বাংলাদেশ আরেকটা পাকিস্তান হতে যাচ্ছে। সস্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দেশকে আতঙ্কে রেখেছে। সেটার ভিকটিম ছিলাম আমরা। বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কোর্ট, সারা দেশের উপর হামলা চলেছে।
"৩০ মিনিটে ৫০০ জায়গায় বোমা হামলায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আসে।"
মহাজোট সরকার সেই পরিস্থিতি থেকে দেশকে বের করে এনেছে উল্লেখ করে জয় বলেন, এ সরকারের মেয়াদে এ ধরনের বোমা হামলা হয়নি। মৌলবাদী-জঙ্গীবাদীরা কিছু করতে পারেনি।
তবে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে ক্ষমতায় পরিবর্তন আনা হলে দেশ আবারো জঙ্গিবাদে ফিরে যাবে বলে আশঙ্কার কথা জানান সজীব ওয়াজেদ জয়।
প্রায় তিন ঘণ্টার অনুষ্ঠানে বিএনপি- জামায়াত জোট সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন জয়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেরও বিবরণ দেন।
২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার আশা প্রকাশ করে জয় বলেন, "সেপথে আমরা অনেক এগিয়েছি। কাজ আমাদের অর্ধেক হয়েছে। লাইনে দাঁড়িয়ে ফরম নিতে হয় না। কাজ অনেক সহজ হয়েছে।"
'সুচিন্তা ফাউন্ডেশন' নামের একটি সংগঠনের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার যারা সফল এবং ভবিষ্যতে যারা নেতৃত্বে আসবেন, তাদের সঙ্গে জয়কে মুখোমুখি করতেই এ অনুষ্ঠানের আয়োজন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সাকিব আল হাসান বলেন, "বাংলাদেশ ক্রিকেট ভালো করছে, এই ধারা অব্যাহত রাখতে চাই।"
অন্যদের সঙ্গে দর্শক সারিতে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও। জয়ের বক্তব্যের পর সবার জন্য আলোচনা উন্মুক্ত করা হয়। সেখানে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন জয়।
সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ঢাকা ট্রিবিউটনের সম্পাদক জাফর সোবহান, অধ্যাপক সাদেকা হালিম এবং জয়ের খালাত ভাই ও শেখ রেহনার ছেলে রেজোয়ান সিদ্দিকী ববী এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
__._,_.___