এবারের নির্বাচন একাত্তরের বিপ্লবের শেষযুদ্ধ
আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে রাজাকারদের পরাস্ত করুন ॥ টাঙ্গাইলে জয়
মহিউদ্দিন আহমেদ/ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল থেকে ॥ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বচনকে '৭১ সালের বিপ্লবের শেষ যুদ্ধ উল্লেখ করে এই যুদ্ধে জয়ের জন্য আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতার পক্ষশক্তি জয়ী হতে পারলে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের শেষ করা হবে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে আগামী নির্বাচনে কোন শক্তি তাদের হারাতে পারবে না। স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় যেতে ওঁৎপেতে আছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় এলে ঘরে ঘরে বিদ্যুত এবং স্কুলে স্কুলে কম্পিউটার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন জাতির জনকের দৌহিত্র। রংপুরের জনসভায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার দেয়া বক্তব্য সম্পর্কে জয় বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী ঘোষণা দিয়েছেন ক্ষমতায় গেলে তারা সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করে দেবেন। এটা আমরা হতে দেব না। দেশের মানুষ তা প্রতিহত করবে।
দলের পক্ষে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণার ™ি^তীয় দিন সোমবার টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত পথসভা, কর্মিসভা ও জনসভায় তিনি বক্তৃতা করেন। এসব সমাবেশে সজীব ওয়াজেদ জয় আরও বলেন, 'আপনারা আমাকে কথা দিন, ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। দলের জন্য, দেশের জন্য কাজ করবেন। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে ইনশাআল্লাহ। আমার দৃঢ় বিশ^াস বাংলার মানুষ নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখবে। তরুণ প্রজšে§র উদ্দেশে তিনি বলেন, তরুণ প্রজšে§র উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা আমার সঙ্গে থাকুন। আসুন আমরা একসঙ্গে অসমাপ্ত বিপ্লব শেষ করি। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একসঙ্গে বিজয়ী হয়ে আসি।
সজীব ওয়াজেদ জয় সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস থেকে বের হয়ে টাঙ্গাইলের উদ্দেশে রওনা হন। বেলা সোয়া ১১টায় টাঙ্গাইলের মধুপুর রাণী ভবানী মডেল স্কুল মাঠে পৌঁছলে তাঁকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা দেয়া হয়। স্থানীয় আদিবাসীদের ভাষায় সঙ্গীত ও ফুল ছিটিয়ে বরণ করে নেয়া হয় জাতির জনকের দৌহিত্রকে। সমাবেশে বক্তৃতার আগে খাদ্যমন্ত্রী এবং এই আসনের এমপি ড. আবদুর রাজ্জাক, মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি খোন্দকার শফিউদ্দিন মনি এবং সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার আলম খান বাবু তাঁকে ফুলের তোড়া ও ক্রেস্ট প্রদান করেন।
টাঙ্গাইল যাওয়ার পথে বেলা সাড়ে ১২টায় ঘাটাইল ও বেলা সোয়া ১টায় এলেঙ্গা বটতলায় সমবেত হাজার হাজার মানুষের অনুরোধে দুইটি অনির্ধারিত পথসভায় বক্তৃতা দেন সজীব ওয়াজেদ জয়। ঘাটাইলে স্থানীয় এমপি আমানুর রহমান খানও বক্তব্য রাখেন। জয় বেলা ২টায় টাঙ্গাইল শহরের ভাসানী হলে পৌঁছে সেখানে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এ্যাডভোকেট শামসুর রহমান খান শাহজাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মিসভায় যোগ দেন। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় ও তাদের প্রশ্নে উত্তর দেন।
দুপুরে টাঙ্গাইল সার্কিট হাউসে মধ্যাহ্নভোজ ও বিশ্রাম শেষে বিকেল ৪টায় মির্জাপুরের জামুরকি আবদুল গনি স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত পথসভায় বক্তব্য রাখেন জয়। সব শেষে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা বঙ্গবন্ধু কলেজ মাঠে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত আরেকটি পথসভায় বক্তৃতা করেন তিনি। সেখান থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে যান। তরুণ এই কম্পিউটার বিজ্ঞানীর প্রথমবারের মতো টাঙ্গাইল সফর ও নির্বাচনী কর্মসূচীকে ঘিরে জেলাজুড়ে ব্যাপক আনন্দমুখর পরিবেশ ও উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। সাদা পাঞ্জাবির ওপর মুজিব কোর্ট পরিহিত জয়ের যাত্রাপথে তাঁকে স্বাগত জানিয়ে হাজার হাজার ব্যানার, পোস্টার, প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন লাগানো হয়। বিভিন্ন স্থানে নৌকা প্রতীক সংবলিত অসংখ্য তোরণও দেখা গেছে। রাস্তার দুই ধারে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী-সমর্থক দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে ও স্লোগানে স্লোগানে তাঁকে স্বাগত জানান। ব্যান্ডের তালে তালে নেচেগেয়ে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি করেন তাঁরা। তাঁকে একনজর দেখতে সব শ্রেণী-পেশার হাজার হাজার নারী-পুরুষ বিশেষ করে বিপুলসংখ্যক নারী সমবেত হয়েছিলেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান তাঁকে। জয়ের গাড়িবহরে পাপড়ি ছিটিয়ে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করা হয়। জয়ও গাড়ির মধ্য থেকে হাত নেড়ে তাদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। কোথাও কোথাও সমবেত মানুষের অনুরোধে গাড়ি থেকে নেমে তাঁদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ও করেছেন তিনি। আর প্রতিটি জনসভা, কর্মিসভা ও পথসভা ছিল লোকে লোকারণ্য। জয়ের সফরসঙ্গী হিসেবে এসব কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা একেএম এনামুল হক শামীম, আবদুস সোবহান গোলাপ, এসএম কামাল হোসেন, লিয়াকত শিকদার, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, জোবায়দুল হক রাসেল, হাসিবুর রহমান, তারেক শামস খান হিমু, ফজলুল হক, যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোল্লা মোঃ আবু কাওছার, সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম।
সমাবেশগুলোতে আগামী নির্বাচনে দলের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীপুত্র বলেন, ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ আওয়ামী লীগকে হারাতে পারবে না। মনে রাখতে হবে, দলকে জেতাতে হবে যাতে আমরা দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করতে পারি। কে প্রার্থী হয়েছেন, তা দেখলে চলবে না। দলকে জেতানো দরকার। দেশের মানুষকে এটাও মনে করিয়ে দিতে হবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই কেবল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় পূর্ণ হবে।
তিনি বলেন, আমরা উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা শুরু করেছিলাম, তার অর্ধেক শেষ হয়েছে। দুর্নীতিমুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পথেও অর্ধেক এগিয়েছি। বাকি অর্ধেক কাজ শেষ করতে হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতাও ধরে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যত আমরা উজ্জ্বল করব, যাতে বিশে^র বুকে এই দেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। জয় বলেন, আমাদের বিরোধী দল স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের মন্ত্রী বানিয়েছিল। আমরা সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছি। রায় হয়েছে, সাজাও হয়েছে। এখন বাকি সেই রায় কার্যকর করার। সেজন্য আওয়ামী লীগকে ফের ক্ষমতায় রাখা দরকার। আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় গেলে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করব। সরকারের উন্নয়ন কাজ তুলে ধরে জয় বলেন, আমরা কাজ করেছি বাংলার মানুষের জন্য। গত সাড়ে চার বছরে বিদ্যুত দিয়েছি, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট করেছি। এখন খাদ্যের অভাব নেই। আগে প্রত্যেক বছর মঙ্গায় ভাতের অভাবে মানুষ মারা যেত। এখন কেউ আর ভাতের অভাবে মারা যায় না।
সজীব ওয়াজেদ জয় আরও বলেন, একাত্তরে আমরা একটি বিপ্লব শুরু করেছিলাম। আমার নানা বঙ্গবন্ধু একটি সুখী-সমৃদ্ধ, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন। শেখ হাসিনার সরকার একাত্তরের সেই অসমাপ্ত বিপ্লব শেষ করার কাজ শুরু করেছেন। আমরা সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে যাচ্ছি। সেজন্য আওয়ামী লীগের ফের ক্ষমতায় আসা প্রয়োজন। এবার ক্ষমতায় এলে স্কুলে স্কুলে কম্পিউটার এবং ঘরে ঘরে বিদ্যুত দেয়া হবে বলে আবার উল্লেখ করেন তিনি।
নারীদের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, এই সরকারের আমলে করা নারী উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়ন হবে, কেবল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফায় সমর্থন দিয়ে আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেছেন, নারীরা ক্লাস ফাইভের বেশি পড়তে পারবে না। চাকরি করতে পারে না। তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় এলে নারী উন্নয়ন হবে কিভাবে? নারী উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতা দরকার। স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় আসতে ওঁৎপেতে বসে আছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র বলেন, বিএনপির সময় দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ছিল। আমরা সেই সন্ত্রাস কমিয়ে দেশে শান্তি ফিরিয়ে এনেছি। আগামী নির্বাচনে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসতে না পারলে, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় এলে সেই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ ফিরে আসবে। আমরা যে বিদ্যুত উৎপাদন বাড়িয়েছি, সেটা বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক করেছি, সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা যে সারের দাম কমিয়েছি, সেটা বেড়ে যাবে। দেশে অন্ধকার নেমে আসবে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছিল। তারা আবার ক্ষমতায় এলে দেশ আবারও দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হবে। জয় বলেন, বিএনপি আমলে সন্ত্রাসের রাজত্ব ছিল। আমরা সেই সন্ত্রাস কমিয়েছি। গত সাড়ে চার বছরে একটি বোমা হামলাও হতে দেইনি।
তিনি বলেন, বিএনপি বলেছে নারীরা ক্লাস ফাইভের বেশি পড়তে পারবে না, চাকরি করতে পারবে না। তার মানে বিএনপি ক্ষমতায় এলে মেয়েরা চাকরি হারাবে, তাদের আয়-উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারের উন্নয়ন কাজের বিবরণ তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, বিএনপির আমলে দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আমরা দুর্নীতি কমিয়ে বিশ্বের ৪০তম স্থানে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।
দলের পক্ষে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণার ™ি^তীয় দিন সোমবার টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত পথসভা, কর্মিসভা ও জনসভায় তিনি বক্তৃতা করেন। এসব সমাবেশে সজীব ওয়াজেদ জয় আরও বলেন, 'আপনারা আমাকে কথা দিন, ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। দলের জন্য, দেশের জন্য কাজ করবেন। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে ইনশাআল্লাহ। আমার দৃঢ় বিশ^াস বাংলার মানুষ নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখবে। তরুণ প্রজšে§র উদ্দেশে তিনি বলেন, তরুণ প্রজšে§র উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা আমার সঙ্গে থাকুন। আসুন আমরা একসঙ্গে অসমাপ্ত বিপ্লব শেষ করি। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একসঙ্গে বিজয়ী হয়ে আসি।
সজীব ওয়াজেদ জয় সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস থেকে বের হয়ে টাঙ্গাইলের উদ্দেশে রওনা হন। বেলা সোয়া ১১টায় টাঙ্গাইলের মধুপুর রাণী ভবানী মডেল স্কুল মাঠে পৌঁছলে তাঁকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা দেয়া হয়। স্থানীয় আদিবাসীদের ভাষায় সঙ্গীত ও ফুল ছিটিয়ে বরণ করে নেয়া হয় জাতির জনকের দৌহিত্রকে। সমাবেশে বক্তৃতার আগে খাদ্যমন্ত্রী এবং এই আসনের এমপি ড. আবদুর রাজ্জাক, মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি খোন্দকার শফিউদ্দিন মনি এবং সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার আলম খান বাবু তাঁকে ফুলের তোড়া ও ক্রেস্ট প্রদান করেন।
টাঙ্গাইল যাওয়ার পথে বেলা সাড়ে ১২টায় ঘাটাইল ও বেলা সোয়া ১টায় এলেঙ্গা বটতলায় সমবেত হাজার হাজার মানুষের অনুরোধে দুইটি অনির্ধারিত পথসভায় বক্তৃতা দেন সজীব ওয়াজেদ জয়। ঘাটাইলে স্থানীয় এমপি আমানুর রহমান খানও বক্তব্য রাখেন। জয় বেলা ২টায় টাঙ্গাইল শহরের ভাসানী হলে পৌঁছে সেখানে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এ্যাডভোকেট শামসুর রহমান খান শাহজাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মিসভায় যোগ দেন। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় ও তাদের প্রশ্নে উত্তর দেন।
দুপুরে টাঙ্গাইল সার্কিট হাউসে মধ্যাহ্নভোজ ও বিশ্রাম শেষে বিকেল ৪টায় মির্জাপুরের জামুরকি আবদুল গনি স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত পথসভায় বক্তব্য রাখেন জয়। সব শেষে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা বঙ্গবন্ধু কলেজ মাঠে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত আরেকটি পথসভায় বক্তৃতা করেন তিনি। সেখান থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে যান। তরুণ এই কম্পিউটার বিজ্ঞানীর প্রথমবারের মতো টাঙ্গাইল সফর ও নির্বাচনী কর্মসূচীকে ঘিরে জেলাজুড়ে ব্যাপক আনন্দমুখর পরিবেশ ও উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। সাদা পাঞ্জাবির ওপর মুজিব কোর্ট পরিহিত জয়ের যাত্রাপথে তাঁকে স্বাগত জানিয়ে হাজার হাজার ব্যানার, পোস্টার, প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন লাগানো হয়। বিভিন্ন স্থানে নৌকা প্রতীক সংবলিত অসংখ্য তোরণও দেখা গেছে। রাস্তার দুই ধারে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী-সমর্থক দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে ও স্লোগানে স্লোগানে তাঁকে স্বাগত জানান। ব্যান্ডের তালে তালে নেচেগেয়ে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি করেন তাঁরা। তাঁকে একনজর দেখতে সব শ্রেণী-পেশার হাজার হাজার নারী-পুরুষ বিশেষ করে বিপুলসংখ্যক নারী সমবেত হয়েছিলেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান তাঁকে। জয়ের গাড়িবহরে পাপড়ি ছিটিয়ে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করা হয়। জয়ও গাড়ির মধ্য থেকে হাত নেড়ে তাদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। কোথাও কোথাও সমবেত মানুষের অনুরোধে গাড়ি থেকে নেমে তাঁদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ও করেছেন তিনি। আর প্রতিটি জনসভা, কর্মিসভা ও পথসভা ছিল লোকে লোকারণ্য। জয়ের সফরসঙ্গী হিসেবে এসব কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা একেএম এনামুল হক শামীম, আবদুস সোবহান গোলাপ, এসএম কামাল হোসেন, লিয়াকত শিকদার, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, জোবায়দুল হক রাসেল, হাসিবুর রহমান, তারেক শামস খান হিমু, ফজলুল হক, যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোল্লা মোঃ আবু কাওছার, সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম।
সমাবেশগুলোতে আগামী নির্বাচনে দলের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীপুত্র বলেন, ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ আওয়ামী লীগকে হারাতে পারবে না। মনে রাখতে হবে, দলকে জেতাতে হবে যাতে আমরা দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করতে পারি। কে প্রার্থী হয়েছেন, তা দেখলে চলবে না। দলকে জেতানো দরকার। দেশের মানুষকে এটাও মনে করিয়ে দিতে হবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই কেবল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় পূর্ণ হবে।
তিনি বলেন, আমরা উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা শুরু করেছিলাম, তার অর্ধেক শেষ হয়েছে। দুর্নীতিমুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পথেও অর্ধেক এগিয়েছি। বাকি অর্ধেক কাজ শেষ করতে হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতাও ধরে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যত আমরা উজ্জ্বল করব, যাতে বিশে^র বুকে এই দেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। জয় বলেন, আমাদের বিরোধী দল স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের মন্ত্রী বানিয়েছিল। আমরা সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছি। রায় হয়েছে, সাজাও হয়েছে। এখন বাকি সেই রায় কার্যকর করার। সেজন্য আওয়ামী লীগকে ফের ক্ষমতায় রাখা দরকার। আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় গেলে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করব। সরকারের উন্নয়ন কাজ তুলে ধরে জয় বলেন, আমরা কাজ করেছি বাংলার মানুষের জন্য। গত সাড়ে চার বছরে বিদ্যুত দিয়েছি, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট করেছি। এখন খাদ্যের অভাব নেই। আগে প্রত্যেক বছর মঙ্গায় ভাতের অভাবে মানুষ মারা যেত। এখন কেউ আর ভাতের অভাবে মারা যায় না।
সজীব ওয়াজেদ জয় আরও বলেন, একাত্তরে আমরা একটি বিপ্লব শুরু করেছিলাম। আমার নানা বঙ্গবন্ধু একটি সুখী-সমৃদ্ধ, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন। শেখ হাসিনার সরকার একাত্তরের সেই অসমাপ্ত বিপ্লব শেষ করার কাজ শুরু করেছেন। আমরা সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে যাচ্ছি। সেজন্য আওয়ামী লীগের ফের ক্ষমতায় আসা প্রয়োজন। এবার ক্ষমতায় এলে স্কুলে স্কুলে কম্পিউটার এবং ঘরে ঘরে বিদ্যুত দেয়া হবে বলে আবার উল্লেখ করেন তিনি।
নারীদের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, এই সরকারের আমলে করা নারী উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়ন হবে, কেবল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফায় সমর্থন দিয়ে আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেছেন, নারীরা ক্লাস ফাইভের বেশি পড়তে পারবে না। চাকরি করতে পারে না। তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় এলে নারী উন্নয়ন হবে কিভাবে? নারী উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতা দরকার। স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় আসতে ওঁৎপেতে বসে আছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র বলেন, বিএনপির সময় দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ছিল। আমরা সেই সন্ত্রাস কমিয়ে দেশে শান্তি ফিরিয়ে এনেছি। আগামী নির্বাচনে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসতে না পারলে, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় এলে সেই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ ফিরে আসবে। আমরা যে বিদ্যুত উৎপাদন বাড়িয়েছি, সেটা বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক করেছি, সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা যে সারের দাম কমিয়েছি, সেটা বেড়ে যাবে। দেশে অন্ধকার নেমে আসবে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছিল। তারা আবার ক্ষমতায় এলে দেশ আবারও দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হবে। জয় বলেন, বিএনপি আমলে সন্ত্রাসের রাজত্ব ছিল। আমরা সেই সন্ত্রাস কমিয়েছি। গত সাড়ে চার বছরে একটি বোমা হামলাও হতে দেইনি।
তিনি বলেন, বিএনপি বলেছে নারীরা ক্লাস ফাইভের বেশি পড়তে পারবে না, চাকরি করতে পারবে না। তার মানে বিএনপি ক্ষমতায় এলে মেয়েরা চাকরি হারাবে, তাদের আয়-উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারের উন্নয়ন কাজের বিবরণ তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, বিএনপির আমলে দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আমরা দুর্নীতি কমিয়ে বিশ্বের ৪০তম স্থানে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।
__._,_.___