কাদের মোল্লার ফাঁসি রায় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিজয়
প্রফেসর মোঃ শাদাত উল্লা
গত ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি না দেয়া সেদিন গোটা জাতিকে হতবাক করেছিল। সবার আশা ছিল বাচ্চু রাজাকারের মতো কাদের মোল্লারও ফাঁসি হবে। আমি একটা কলামে লিখেছিলাম, একজন অপরাধীর আর কত অপরাধ প্রমাণ হলে তার ফাঁসি হবে, যার অপরাধ বাচ্চু রাজাকারের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি এবং একাধিক গণহত্যায় নেতৃত্ব দিয়ে 'কসাই' খেতাব অর্জন করেছিল? অবশেষে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি রায় দিয়েছে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এটিই প্রথম কোন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায়। সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া এ রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ রায়ে জাতির আশা পূরণ হয়েছে। তাই এই রায়ে আমার মতো হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা আনন্দিত। এই রায়ের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিজয় হয়েছে। এই বিজয় তরুণ প্রজন্মের বিজয়। এই বিজয় রাজধানীর শাহবাগে অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ও ব্লগারদের বিজয়; মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সমগ্র জনতার ঐতিহাসিক বিজয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায় ঘোষিত হলে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে তোলা হয় ফাঁসির দাবি। অহিংস এ আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে যায় সারাদেশে, এমনকি দেশের বাইরেও। দেশের স্বাধীনতার পক্ষশক্তির বিভিন্ন পর্যায় থেকে তরুণ প্রজন্মের এ আন্দোলনকে সমর্থন দেয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় ট্রাইব্যুনালের আইন নিয়ে। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে আদালতের দ-াদেশের পর আসামিপক্ষের আপীলের সুযোগ থাকলেও বাদী বা সরকারের আপীলের সুযোগ ছিল না। আইনের এ 'মারাত্মক ত্রুটি' ও 'অসম সুযোগ' পরিবর্তন করার দাবি জানায় গণজাগরণ মঞ্চ। সব মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন সংশোধন করা হয়। এ সংশোধনীতে রাষ্ট্রপক্ষ আপীল করার সুযোগ পায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর কাদের মোল্লার ফাঁসি রায় হয়েছে। রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশের জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা যে সহিংসতা শুরু করেছে, তা এককথায় দুর্বৃত্তপনা। অবিলম্বে এসব বন্ধ করা উচিত।
দেশ যখন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে এগিয়ে চলছে, ঠিক তখনই জামায়াত-শিবির এসব তা-ব চালিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। একাত্তরে তারা যেমন নির্বিচারে মানুষ হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট করতে দ্বিধাবোধ করেনি, স্বাধীন দেশেও তারা একই ধারায় রাজনীতির নামে তা-ব চালাচ্ছে। রায়ের প্রতিবাদে জামায়াত-শিবির দুই দিন যে হরতাল দিয়েছে তা কোনভাবে কাম্য নয়। হরতালের প্রথম দিন বুধবার হরতাল সমর্থকদের ছোড়া ইটের আঘাতে নোয়াখালীর আবু নাছের নামে সিএনজি চালকের মৃত্যুর খবর খুবই বেদনাদায়ক। বৃহস্পতিবার হরতালের দিন তাদের সহিংসতা ছিলো আরও ব্যাপক ও ভয়াবহ। এদিন এক সিএনজি যাত্রীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়; বোমা ছুঁড়ে দগ্ধ করে দেয়া হয় দুই ট্রাক চালক ও এক বাস ড্রাইভারকে। জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা পুলিশের ওপর চালিয়ে যাচ্ছে একের পর এক হামলা। এসব কিসের আলামত? আমার কথা হলো, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-ের রায় যেহেতু এসেছে সর্বোচ্চ আদালত থেকেÑ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ থেকে, সেহেতু জামায়াত-শিবিরের তা মেনে নেয়া উচিত। তাছাড়া তারা তো পূর্ণ আইনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিল। বিচারিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে হেরে গিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় মেনে না নেয়ার মধ্যে কোন যুক্তি থাকতে পারে না। সবচেয়ে বড় কথা, জামায়াতে ইসলামী যেহেতু একটি রাজনৈতিক দল, তাই দেশে রাজনীতি করতে হলে তাদের প্রচলিত আইন-কানুন, বিধিবিধান মেনেই তা করতে হবে।
আমাদের জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধ এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়, যেখানে দেশের স্বাধীনতাবিরোধী একাত্তরের রাজাকার-আলবদরদের অনুসারী কিছু ব্যক্তি ছাড়া গোটা দেশ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি রায় দিয়েছে। সব ক'টি রায়ের পরই চুপ থাকছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তাদের এ রকম একটি জাতীয় আবেগজড়িত বিষয়ে নিশ্চুপ থাকাটা কারও কাম্য হতে পারে না। সংশ্লিষ্ট মামলায় একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী একজন ঘাতকের সর্বোচ্চ দ- প্রাপ্য হওয়া সত্ত্বেও তাকে যাবজ্জীবনের মতো 'লঘুদ-' দেয়া হলে দেশবাসীর তা মেনে নেয়ার কথা নয়। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় রায় দিয়েছেন একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে কবি মেহেরুন্নেসা, সাংবাদিক আবু তালেবসহ সাহিত্যিক-সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও বহু স্বাধীনতাকামী মানুষকে হত্যা এবং গণহত্যায় প্রত্যক্ষ সহায়তার দায়ে অভিযুক্ত একজন কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে জামায়াত-শিবির যে অগণতান্ত্রিক আন্দোলন করছে, রাজপথে যানবাহন ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের ওপর হামলাসহ যে তা-ব চালিয়েছে এবং হরতাল ডেকেছে, তা শুধু দেশের উচ্চ আদালতের বিচারের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন নয়, দেশবাসীর আবেগের প্রতিও চরম অসম্মান আর অনাস্থা প্রদর্শন। পক্ষান্তরে এই রায়ে প্রমাণ হলো, অপরাধ যত আগেই সংঘটিত হোক, তা কখনও তামাদি হয় না। 'একাত্তরের কসাই'য়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-াদেশের এ রায় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনারই বিজয়। একই সঙ্গে এই রায়ের মধ্য দিয়ে আইনের শাসনেরও অধিষ্ঠান ঘটেছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর জামায়াত এবং ছাত্রশিবির বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আগেও অবশ্য তারা উগ্র ছিল। দিন যতই যাচ্ছে তাদের আচরণ তত বেশি দেশব্যাপী মানুষের কাছে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। ছাত্রশিবিরের হাঙ্গামার দৃশ্য দেখে মানুষ যে বিষয়টি বুঝতে পারছে তা হচ্ছে, এখন যদি ছাত্রশিবিরের কর্মীরা এমন, তাহলে একাত্তর সালে তাদের পূর্বসূরি ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতাকর্মীদের আচরণ কেমন ছিল? ধর্ম রক্ষার কথা বলে তারা নিজেরাই ধর্মবিরোধী, মানবতাবিরোধী কার্যকলাপ করছে। দেশে আইনের শাসনকে অবজ্ঞা করছে। এ দেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। স্বাধীন দেশে বসবাস করে, এ দেশের আলো-ছায়া উপভোগ করে তারা দেশের সঙ্গে বেইমানি করছে। তারা যেন মায়ের সঙ্গে বেইমানি করছে।
কাদের মোল্লার রায়ে শাহবাগ চত্বরে গড়েওঠা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের ন্যায্যতাও স্বীকৃতি পেল। গণজাগরণ মঞ্চের ফলে তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের স্বাদ একটু হলেও পেয়েছিল। সবার আন্দোলনের ফলেই আজ এই রায়। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ধর্মান্ধ ও জঙ্গী গোষ্ঠীর হামলার শিকার হয়েছেন কয়েকজন কর্মী ও সংগঠক। কিন্তু দেশমাতৃকা ও স্বজাতির বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের হোতাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি থেকে সরে আসেনি গণজাগরণ মঞ্চ। জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজত থেকে সহিংসতা, অপবাদ ও বিষোদ্গার উপেক্ষা করে অরাজনৈতিক এই মঞ্চের মেধাবী তরুণরা তাদের আন্দোলন টিকিয়ে রাখার পুরস্কার পেল। আমরা দেখেছি, শাহবাগের তারুণ্যকে এ জন্য কম মূল্য দিতে হয়নি। তারুণ্যের ডাক শুনে শুভবুদ্ধির উদয় নয়, বরং অন্ধকারের অনুসারীদের কাছ থেকে আলোর পথের এই যাত্রীরা পেয়েছে 'নাস্তিক' তকমা। চিরকাল ধর্মব্যবসা করে আসা জামায়াতে ইসলামী গণজাগরণের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বেকায়দাই পড়েছে। নিজেদের পিঠ বাঁচাতে তারা আবারও ধর্মের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। ধর্মের নামে জামায়াত '৭১-এর রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করেছে। আজ তারা একই কায়দায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ফুঁসেওঠা গণজাগরণকে টার্গেট করে তাদের কর্মীদের একে পর এক হামলা করছে। শুধু শাহবাগ নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে গণজাগরণ মঞ্চে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটিয়েছিল, যা কোন অর্থে মেনে নেয়ার মতো নয়। এই রায়ের মধ্য দিয়ে তারুণ্যের এই সংগঠনের প্রাথমিক বিজয় সাধিত হয়েছে বলে আমি মনে করি। এর মধ্য দিয়ে তারা ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে এবং ইতিহাসের সেই অমোঘ সত্যই আরেকবার প্রমাণ করেছে
দেশ যখন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে এগিয়ে চলছে, ঠিক তখনই জামায়াত-শিবির এসব তা-ব চালিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। একাত্তরে তারা যেমন নির্বিচারে মানুষ হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট করতে দ্বিধাবোধ করেনি, স্বাধীন দেশেও তারা একই ধারায় রাজনীতির নামে তা-ব চালাচ্ছে। রায়ের প্রতিবাদে জামায়াত-শিবির দুই দিন যে হরতাল দিয়েছে তা কোনভাবে কাম্য নয়। হরতালের প্রথম দিন বুধবার হরতাল সমর্থকদের ছোড়া ইটের আঘাতে নোয়াখালীর আবু নাছের নামে সিএনজি চালকের মৃত্যুর খবর খুবই বেদনাদায়ক। বৃহস্পতিবার হরতালের দিন তাদের সহিংসতা ছিলো আরও ব্যাপক ও ভয়াবহ। এদিন এক সিএনজি যাত্রীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়; বোমা ছুঁড়ে দগ্ধ করে দেয়া হয় দুই ট্রাক চালক ও এক বাস ড্রাইভারকে। জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা পুলিশের ওপর চালিয়ে যাচ্ছে একের পর এক হামলা। এসব কিসের আলামত? আমার কথা হলো, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-ের রায় যেহেতু এসেছে সর্বোচ্চ আদালত থেকেÑ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ থেকে, সেহেতু জামায়াত-শিবিরের তা মেনে নেয়া উচিত। তাছাড়া তারা তো পূর্ণ আইনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিল। বিচারিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে হেরে গিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় মেনে না নেয়ার মধ্যে কোন যুক্তি থাকতে পারে না। সবচেয়ে বড় কথা, জামায়াতে ইসলামী যেহেতু একটি রাজনৈতিক দল, তাই দেশে রাজনীতি করতে হলে তাদের প্রচলিত আইন-কানুন, বিধিবিধান মেনেই তা করতে হবে।
আমাদের জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধ এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়, যেখানে দেশের স্বাধীনতাবিরোধী একাত্তরের রাজাকার-আলবদরদের অনুসারী কিছু ব্যক্তি ছাড়া গোটা দেশ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি রায় দিয়েছে। সব ক'টি রায়ের পরই চুপ থাকছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তাদের এ রকম একটি জাতীয় আবেগজড়িত বিষয়ে নিশ্চুপ থাকাটা কারও কাম্য হতে পারে না। সংশ্লিষ্ট মামলায় একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী একজন ঘাতকের সর্বোচ্চ দ- প্রাপ্য হওয়া সত্ত্বেও তাকে যাবজ্জীবনের মতো 'লঘুদ-' দেয়া হলে দেশবাসীর তা মেনে নেয়ার কথা নয়। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় রায় দিয়েছেন একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে কবি মেহেরুন্নেসা, সাংবাদিক আবু তালেবসহ সাহিত্যিক-সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও বহু স্বাধীনতাকামী মানুষকে হত্যা এবং গণহত্যায় প্রত্যক্ষ সহায়তার দায়ে অভিযুক্ত একজন কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে জামায়াত-শিবির যে অগণতান্ত্রিক আন্দোলন করছে, রাজপথে যানবাহন ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের ওপর হামলাসহ যে তা-ব চালিয়েছে এবং হরতাল ডেকেছে, তা শুধু দেশের উচ্চ আদালতের বিচারের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন নয়, দেশবাসীর আবেগের প্রতিও চরম অসম্মান আর অনাস্থা প্রদর্শন। পক্ষান্তরে এই রায়ে প্রমাণ হলো, অপরাধ যত আগেই সংঘটিত হোক, তা কখনও তামাদি হয় না। 'একাত্তরের কসাই'য়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-াদেশের এ রায় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনারই বিজয়। একই সঙ্গে এই রায়ের মধ্য দিয়ে আইনের শাসনেরও অধিষ্ঠান ঘটেছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর জামায়াত এবং ছাত্রশিবির বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আগেও অবশ্য তারা উগ্র ছিল। দিন যতই যাচ্ছে তাদের আচরণ তত বেশি দেশব্যাপী মানুষের কাছে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। ছাত্রশিবিরের হাঙ্গামার দৃশ্য দেখে মানুষ যে বিষয়টি বুঝতে পারছে তা হচ্ছে, এখন যদি ছাত্রশিবিরের কর্মীরা এমন, তাহলে একাত্তর সালে তাদের পূর্বসূরি ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতাকর্মীদের আচরণ কেমন ছিল? ধর্ম রক্ষার কথা বলে তারা নিজেরাই ধর্মবিরোধী, মানবতাবিরোধী কার্যকলাপ করছে। দেশে আইনের শাসনকে অবজ্ঞা করছে। এ দেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। স্বাধীন দেশে বসবাস করে, এ দেশের আলো-ছায়া উপভোগ করে তারা দেশের সঙ্গে বেইমানি করছে। তারা যেন মায়ের সঙ্গে বেইমানি করছে।
কাদের মোল্লার রায়ে শাহবাগ চত্বরে গড়েওঠা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের ন্যায্যতাও স্বীকৃতি পেল। গণজাগরণ মঞ্চের ফলে তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের স্বাদ একটু হলেও পেয়েছিল। সবার আন্দোলনের ফলেই আজ এই রায়। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ধর্মান্ধ ও জঙ্গী গোষ্ঠীর হামলার শিকার হয়েছেন কয়েকজন কর্মী ও সংগঠক। কিন্তু দেশমাতৃকা ও স্বজাতির বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের হোতাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি থেকে সরে আসেনি গণজাগরণ মঞ্চ। জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজত থেকে সহিংসতা, অপবাদ ও বিষোদ্গার উপেক্ষা করে অরাজনৈতিক এই মঞ্চের মেধাবী তরুণরা তাদের আন্দোলন টিকিয়ে রাখার পুরস্কার পেল। আমরা দেখেছি, শাহবাগের তারুণ্যকে এ জন্য কম মূল্য দিতে হয়নি। তারুণ্যের ডাক শুনে শুভবুদ্ধির উদয় নয়, বরং অন্ধকারের অনুসারীদের কাছ থেকে আলোর পথের এই যাত্রীরা পেয়েছে 'নাস্তিক' তকমা। চিরকাল ধর্মব্যবসা করে আসা জামায়াতে ইসলামী গণজাগরণের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বেকায়দাই পড়েছে। নিজেদের পিঠ বাঁচাতে তারা আবারও ধর্মের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। ধর্মের নামে জামায়াত '৭১-এর রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করেছে। আজ তারা একই কায়দায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ফুঁসেওঠা গণজাগরণকে টার্গেট করে তাদের কর্মীদের একে পর এক হামলা করছে। শুধু শাহবাগ নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে গণজাগরণ মঞ্চে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটিয়েছিল, যা কোন অর্থে মেনে নেয়ার মতো নয়। এই রায়ের মধ্য দিয়ে তারুণ্যের এই সংগঠনের প্রাথমিক বিজয় সাধিত হয়েছে বলে আমি মনে করি। এর মধ্য দিয়ে তারা ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে এবং ইতিহাসের সেই অমোঘ সত্যই আরেকবার প্রমাণ করেছে
শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ৬ আশ্বিন ১৪২০
__._,_.___