বিএনপিকে হতাশার বার্তা কূটনীতিকদের
এনাম আবেদীন
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
অলৌকিক কিছু না ঘটলে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে আপাতত কোনো সমঝোতা হচ্ছে না। কারণ এতদিনের তৎপরতার পর ঢাকাস্থ কূটনীতিকরাও আলোচনা বা সমঝোতার আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন। বরং কূটনীতিকদের কাছ থেকে বিএনপির কাছে ‘হতাশার বার্তা’ যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, সরকারের নীতিনির্ধারকরা কূটনীতিকদের কোনো পরামর্শই শুনছে না। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের পরামর্শ সরকার গ্রহণ করছে না বলে বিএনপিকে জানানো হয়েছে। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পদস্থ এক কূটনীতিক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতাকে এ ধরনের তথ্য জানিয়ে বলেন, সরকার কার্যত তাদের সব প্রস্তাব নাকচ করছে। ফলে সমঝোতার ভবিষ্যৎ কী হবে তা তারা জানেন না।
সরকার কাদের পরামর্শ শুনছে জানতে চাইলে ওই নেতার কাছে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী একটি দেশ এবং বিশ্বরাজনীতিতে তাদের বিরোধী শিবিরের প্রভাবশালী একটি দেশের নাম বলেন, যে দেশটির সঙ্গে এ সরকারের সময় বড় ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে।
এছাড়া সম্প্রতি জাপান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরাও অনানুষ্ঠানিক আলাপচারিতায় একই ধরনের বার্তা বিএনপিকে দিয়েছে। বলেছে, সংলাপের ব্যাপারে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে নমনীয় কোনো ভাব নেই। এর আগে জাতিসংঘের উদ্যোগে একটি সমঝোতা প্রস্তাব সরকার নাকচ করে দেয়। সর্বশেষ বড় দুই দলকে ওয়াশিংটনে নিয়ে যাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট আমন্ত্রণ জানিয়েছে। দু’পক্ষ রাজি হলে আগামী ১ অক্টোবর ওয়াশিংটনে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। কিন্তু এর কোনোটাতেই ফল বেরিয়ে আসবে বলে বিএনপি এখন আর মনে করে না। দলটির নেতাদের উপলব্ধি হল, পরিস্থিতি পয়েন্ট ও নো রিটার্নের দিকে চলে গেছে। ইতিবাচক কিছুই আর হবে না।
কারণ কিছুদিন আগ পর্যন্ত বড় দুটি দলের নেতাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হতো। বলা হতো, শেষ পর্যন্ত একটা উপায় বের হবেই। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ওই আলোচনা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে গেছে। উপরন্তু প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, নির্বাচন ঠেকানোর বা যুদ্ধ করার মতো শক্তি বিএনপির নেই। এসব কারণে দুই দল ও জোটের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমে বৈরী হচ্ছে। সমর্থক গোষ্ঠীর মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। এ পরিস্থিতিতে বিএনপি বলছে, নির্দলীয় সরকারের দাবির বিষয়ে নিষ্পত্তি রাজপথের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই হবে। জানা গেছে, দলটি সে পথেই অগ্রসর হচ্ছে। আগামী ২৪ অক্টোবরের পরবর্তী আন্দোলন কৌশল নিয়ে হিসাব মেলাচ্ছে দলটি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, একটি উদার ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শেষ পর্যন্ত সমঝোতার চেষ্টা করে যাবে। কিন্তু সরকার কোন পথ বেছে নেয় তার ওপর সবকিছু নির্ভর করবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বসহ সবাই সমঝোতার কথাই বলছে। দেশের সুশীল সমাজও সমঝোতার প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে বলতে প্রায় গলদঘর্ম। অথচ সরকার এর তোয়াক্কা করছে না। এভাবে চলতে থাকলে রাজপথই আমাদের শেষ ভরসা।
স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. আবদুল মঈন খান জানান, এতদিন কূটনীতিকরা প্রায় সবাই সমঝোতার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু সরকারের একগুঁয়েমির কারণে সম্ভবত তারা হাল ছেড়ে দেবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কূটনীতিকরা ব্যর্থ হবেন এ কথা সরাসরি তারা বলতে পারেন না। কিন্তু এটাও সত্য যে, তাদের গত দুই বছরের তৎপরতায় এ পর্যন্ত কোনো ফলাফল বেরিয়ে আসেনি। তাই তাদের আশাহত হওয়া স্বাভাবিক।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার জাতিসংঘের উদ্যোগ যেখানে নাকচ করে দিয়েছেন সেখানে ঢাকার কূটনীতিকদের উদ্যোগ আর কী কাজে লাগে! ফলে তারা আস্তে আস্তে আশাহত হবেন এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, সম্ভবত সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা একতরফা নির্বাচন করবে। পাশাপাশি তারা এও চায় না যে, বিএনপি নির্বাচনে আসুক। ফলে আমাদের রাজপথেই নামতে হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা বলেন, মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর সরকারের বিরুদ্ধে অলআউট আন্দোলন শুরু হবে। তিনি বলেন, ওই সময় বোঝা যাবে রাজপথে কার কত নৈতিক শক্তি। এক প্রশ্নের জবাবে খোকা বলেন, কৌশলগত কারণেই সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মকৌশল খোলাসা করা সম্ভব নয়। তবে এটা ঠিক যে, জনসম্পৃক্ততাই হবে আন্দোলনের মূল অবয়ব। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে যেভাবে জনমত তাতে গণঅভ্যুত্থান পরিস্থিতি সৃষ্টিও অসম্ভব নয় বলে মনে করেন খোকা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা বলেন, মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর সরকারের বিরুদ্ধে অলআউট আন্দোলন শুরু হবে। তিনি বলেন, ওই সময় বোঝা যাবে রাজপথে কার কত নৈতিক শক্তি। এক প্রশ্নের জবাবে খোকা বলেন, কৌশলগত কারণেই সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মকৌশল খোলাসা করা সম্ভব নয়। তবে এটা ঠিক যে, জনসম্পৃক্ততাই হবে আন্দোলনের মূল অবয়ব। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে যেভাবে জনমত তাতে গণঅভ্যুত্থান পরিস্থিতি সৃষ্টিও অসম্ভব নয় বলে মনে করেন খোকা।
__._,_.___