উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দিন : শেখ হাসিনা
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট, ২০১৩
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে চলমান উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাবা-মা, ভাই-ভাবী সবাইকে হারিয়ে আজ তিনি রাজনীতি করছেন বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। প্রয়োজনে বাবার মতো বাংলার মানুষের জন্য বুকের সব রক্ত ঢেলে দেবেন। পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া তার ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ও তার পাচার করা টাকা রক্ষা করতে দুবার সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় শুক্রবার তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনকের ৩৮তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আরেকবার নৌকায় ভোট দিন। আমার আর কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই। বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই আমার লক্ষ্য। এর জন্য প্রয়োজনে বাবার মতো জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। ঢাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিবরণ তুলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আপনারা বঞ্চিত হননি। ঢাকায় অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। এ মেয়াদে আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ চলছে। এ বিচারও শেষ হবে। আগামীতে নৌকায় ভোট দিয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সহযোগিতা করবেন।
বিএনপি-জামায়াত জোটের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণের কল্যাণের জন্য। তারা (বিএনপি জোট) ক্ষমতায় আসে নেয়ার জন্য। শুধু নেয় না পাচারও করেছে। সে পাচার হওয়া জনগণের টাকা আবার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া তার ছেলে কোকোর পাচার করা টাকা ও তার ছেলেকে রক্ষা করতে দুবার সিঙ্গাপুরও গিয়েছিলেন। কিন্তু রক্ষা করতে পারেননি। সিঙ্গাপুরের আদালত টাকা ফেরত দিয়েছেন। কী জবাব দেবেন বিএনপি নেত্রী।
১৫ আগস্টের খুনিদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার কী সম্পর্ক- এমন প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্র"য়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে পঁচাত্তরের ঘাতকদের সংসদে বসালেন কেন? বলেন, পঁচাত্তরের সঙ্গে তার (খালেদার) কী সম্পর্ক। খুনিদের সঙ্গেই বা কী সম্পর্ক।
পঁচাত্তরের মর্মান্তিক ঘটনার পর তার দেশে ফেরার স্মৃতিচারণ করে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান আমাকে দেশে আসতে দেয়নি, মানুষ চেয়েছে বলে আসতে পেরেছি, কিন্তু আসার পর ধানমণ্ডি ৩২-এ মিলাদ পড়তেও যেতে দেয়নি। তার স্ত্রী আমার পরিবার হারানোর দিনে নতুন শাড়ি পরে সেজে-গুজে বড় কেক কাটেন। জিয়াউর রহমানের স্ত্রী এটা করবে এমনটাই স্বাভাবিক। তিনি তো দেশের স্বাধীনতায়ই বিশ্বাস করেন না। তাকে কষ্ট দেয়ার জন্য এদিন জন্মদিন পালন কিনা প্রশ্ন রাখেন শেখ হাসিনা।
সাম্প্রতিক সময়ের 'চুল' বিতর্ক নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) বললেন আন্দোলনের বাতাসে নাকি আমার চুল উড়ে যাবে। আমি তো মাথায় ঘোমটা দিয়ে থাকি। আমার পরচুলা নেই। যা আছে সবই আসল। যার (খালেদা জিয়া) মাথা থেকে পা পর্যন্ত সবই নকল তার উড়ে যাওয়ার ভয় আছে।
হেফাজত ও মানবাধিকার সংস্থা অধিকার মানুষের লাশ নিয়েও প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, হেফাজত ঢাকা অবরোধ করে সমাবেশ করতে চাইল আমরা করতে দিলাম। কিন্তু এ সমাবেশে বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজত কী নৃশংস বর্বরতা চালিয়েছে তা দেশের মানুষ দেখেছে। এত কোরআন একসঙ্গে এর আগে পৃথিবীর কোথাও পোড়ানো হয়নি। তারা বায়তুল মোকাররমে আগুন দিল। আর পুলিশ তাদের উৎখাত করতে গেলে একজন পুলিশ সদস্যসহ ১১ জন নিহত হয়। আর তারা অপপ্রচার চালালো আড়াই হাজার মারা গেছে, আমরা বললাম তালিকা দেন। পরে অধিকার দিল ৬১ জনের তালিকা। এসব যে মিথ্যা এখন তা প্রমাণিত হয়েছে। অধিকারের প্রতিবেদনে যাদের নাম তাদের মধ্যে তিনজন জীবিত। ঠিকানার হদিস পাওয়া যায়নি অনেকের। কয়েকজনের নাম দুই-তিনবার লেখা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি হত্যার রাজনীতিটাই ভালো করতে পারে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন, সব নির্বাচন করলেন শেখ হাসিনার অধীনে। আপনার দলের নেতারা পর্যন্ত বলেছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। এখন এসে কিসের বায়না। এটা মামার বাড়ির আবদার না। সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমরা স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও শহীদ দিবস পালন করি কিন্তু খালেদা জিয়া এসব দিবস পালন করতে পারেন না। তাই তিনি জাতির শোকের দিন নিজের মিথ্যা জন্মদিন পালন করেন। ড. ইউনূস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে লোক দেশের জনগণকে আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে নিষেধ করতে পারেন। তিনি নিরপেক্ষ নন। তার কাছে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আগামী নির্বাচন নেত্রীর (শেখ হাসিনা) অধীনেই হবে। ইনশাল্লাহ আবার খালেদা জিয়াকে পরাজিত করে আমরাই জয়ী হব। বিদেশীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিদেশী বন্ধুদের বলতে চাই। বন্ধু আছেন, বন্ধু হয়েই থাকুন, প্রভু হওয়ার চেষ্টা করবেন না।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন সাজেদা চৌধুরী, সাহারা খাতুন, মাহবুব-উল আলম হানিফ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, হাবিবুর রহমান মোল্লা, রহমত উল্লাহ, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কামাল আহমেদ মজুমদার, আসলামুল হক, ফজলে নূর তাপস, ফয়েজ উদ্দিন মিয়া, বজলুর রহমান, মুকুল চৌধুরী, হাজী সেলিম, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওলাদ হোসেন, জাহানারা বেগম, সানজিদা খানম প্রমুখ। বিকাল ৩টায় জনসভা অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও দুপুর ১২টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেত হতে থাকেন। নেতাকর্মীদের হাতে বিভিন্ন প্লাকাডে যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করা, বারবার দরকার শেখ হাসিনার সরকার, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোটকে বিজয়ী করুনসহ বিভিন্ন স্লোগান লেখা ছিল। শোক দিবসের এ সভায় ঢাকার বিভিন্ন আসনের এমপি এবং সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের পোস্টার শোভা পায়।
__._,_.___