নিবন্ধন-সংক্রান্ত রিটের শুনানি শুরু'জামায়াতের গঠনতন্ত্র মদিনা সনদ ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক' নিজস্ব প্রতিবেদক
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দাখিল করা রিট আবেদন চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার শুনানিতে রিট আবেদনকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র 'ইসলামের প্রথম সংবিধান' মদিনা সনদ, বাংলাদেশের সংবিধান ও জনগণের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা কাদিয়ানিদের মুসলমান মনে করে না। বিভিন্ন সুফি-সাধককে মুসলিম বলে মনে করে না। ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, মদিনা সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কিছু ইসলামিক হতে পারে না।
বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিট আবেদনকারীর আইনজীবীর বক্তব্য শোনার পর আগামী ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। গতকাল এ শুনানি শুরুর আগে 'ইসির পক্ষ থেকে লিখিত জবাব আদালতে দাখিল করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারির পক্ষ থেকে একটি আবেদন করা হয়। এ আবেদনে সেক্রেটারির ছেলেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়া হয়েছে। আদালত বলেছেন, এটা রাজনৈতিক দলের বিষয়। এখানে তো ছেলেকে অ্যাটর্নি দিতে পারেন না। আদালত আবেদনটি সংশোধন করতে বলেন।' শুনানির সময় জামায়াতের পক্ষে অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
তানিয়া আমীর গতকাল রিট আবেদন পাঠ করেন। এ সময় তিনি বলেন, অনেকে মদিনা সনদকে পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান বলে মনে করেন। এই সনদের মাধ্যমে নবী মুহাম্মদ (সা.) অন্যদের সঙ্গে সমঝোতা করেছিলেন। এ সনদে মুসলমানদের সঙ্গে অপর পক্ষে যারা চুক্তি স্বাক্ষর করেন তাদের মধ্যে বিভিন্ন অমুসলিম গোত্রপ্রধান, এমনকি নাস্তিকরাও ছিলেন। তিনি আরো বলেন, মদিনার সব জনগণ মিলে এই সনদের ভিত্তিতে রাষ্ট্র কাঠামো নির্ধারণ করে। সে সময় ইসলামী বা কোনো ধর্মগ্রন্থ আরোপ করা হয়নি। ওখানে ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার- এর ভিত্তিতে রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ইসলামের ধর্মগ্রন্থ সবার ওপর আরোপ করে দিতে চায়। তিনি বলেন, 'জামায়াত বলছে, তারা এ দেশে ইসলাম কায়েম করবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- তারা কখন, কোথায় ও কিভাবে ইসলাম কায়েমের এই দায়িত্ব পেয়েছে। স্বয়ং রাসুল (সা.)-কেও এই দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তিনি কেবল ম্যাসেঞ্জার ছিলেন। জামায়াতে ইসলামী এ দেশীয় রাজনৈতিক দল নয়। এটা আন্তদেশীয় রাজনৈতিক দল। এর শাখা বিভিন্ন দেশে রয়েছে।
ব্যারিস্টার তানিয়া বলেন, চার কারণে জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে পারে না। জামায়াত নীতিগতভাবে জনগণকে সকল ক্ষমতা উৎস বলে মনে করে না। সেই সঙ্গে আইন প্রণয়নে জনপ্রতিনিধিদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকেও স্বীকার করে না। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুসারে কোনো সামপ্রদায়িক দল নিবন্ধন পেতে পারে না। অথচ কাজে-কর্মে ও বিশ্বাসে জামায়াত একটি সামপ্রদায়িক দল। তিনি বলেন, নিবন্ধন পাওয়া রাজনৈতিক দল ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গের কোনো বৈষম্য করতে পারবে না। কিন্তু জামায়াতের শীর্ষপদে কখনো কোনো নারী বা অমুসলিম যেতে পারবে না। এ ছাড়া কোনো দলের বিদেশে কোনো শাখা থাকতে পারবে না। অথচ জামায়াত বিদেশের একটি সংগঠনের শাখা। তারা স্বীকারই করে তাদের জন্ম ভারতে। বিশ্বজুড়ে তাদের শাখা রয়েছে। কিন্তু আমাদের সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দলের বিদেশে কোনো শাখা থাকতে পারবে না। এ দলটি ইসলামের সোল এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে বলে বেড়ায়।
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের সভাপতি হুমায়ূন কবির, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন ২০০৯ সালে রিট আবেদনটি করেন। হাইকোর্ট ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন। ৬ সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। রুলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি(১)(বি)(২) ও ৯০(সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়। জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।http://www.kalerkantho.com/?view=details&type=gold&data=news&pub_no=1210&cat_id=1&menu_id=14&news_type_id=1&index=1
Also Read:
বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিট আবেদনকারীর আইনজীবীর বক্তব্য শোনার পর আগামী ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। গতকাল এ শুনানি শুরুর আগে 'ইসির পক্ষ থেকে লিখিত জবাব আদালতে দাখিল করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারির পক্ষ থেকে একটি আবেদন করা হয়। এ আবেদনে সেক্রেটারির ছেলেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়া হয়েছে। আদালত বলেছেন, এটা রাজনৈতিক দলের বিষয়। এখানে তো ছেলেকে অ্যাটর্নি দিতে পারেন না। আদালত আবেদনটি সংশোধন করতে বলেন।' শুনানির সময় জামায়াতের পক্ষে অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
তানিয়া আমীর গতকাল রিট আবেদন পাঠ করেন। এ সময় তিনি বলেন, অনেকে মদিনা সনদকে পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান বলে মনে করেন। এই সনদের মাধ্যমে নবী মুহাম্মদ (সা.) অন্যদের সঙ্গে সমঝোতা করেছিলেন। এ সনদে মুসলমানদের সঙ্গে অপর পক্ষে যারা চুক্তি স্বাক্ষর করেন তাদের মধ্যে বিভিন্ন অমুসলিম গোত্রপ্রধান, এমনকি নাস্তিকরাও ছিলেন। তিনি আরো বলেন, মদিনার সব জনগণ মিলে এই সনদের ভিত্তিতে রাষ্ট্র কাঠামো নির্ধারণ করে। সে সময় ইসলামী বা কোনো ধর্মগ্রন্থ আরোপ করা হয়নি। ওখানে ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার- এর ভিত্তিতে রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ইসলামের ধর্মগ্রন্থ সবার ওপর আরোপ করে দিতে চায়। তিনি বলেন, 'জামায়াত বলছে, তারা এ দেশে ইসলাম কায়েম করবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- তারা কখন, কোথায় ও কিভাবে ইসলাম কায়েমের এই দায়িত্ব পেয়েছে। স্বয়ং রাসুল (সা.)-কেও এই দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তিনি কেবল ম্যাসেঞ্জার ছিলেন। জামায়াতে ইসলামী এ দেশীয় রাজনৈতিক দল নয়। এটা আন্তদেশীয় রাজনৈতিক দল। এর শাখা বিভিন্ন দেশে রয়েছে।
ব্যারিস্টার তানিয়া বলেন, চার কারণে জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে পারে না। জামায়াত নীতিগতভাবে জনগণকে সকল ক্ষমতা উৎস বলে মনে করে না। সেই সঙ্গে আইন প্রণয়নে জনপ্রতিনিধিদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকেও স্বীকার করে না। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুসারে কোনো সামপ্রদায়িক দল নিবন্ধন পেতে পারে না। অথচ কাজে-কর্মে ও বিশ্বাসে জামায়াত একটি সামপ্রদায়িক দল। তিনি বলেন, নিবন্ধন পাওয়া রাজনৈতিক দল ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গের কোনো বৈষম্য করতে পারবে না। কিন্তু জামায়াতের শীর্ষপদে কখনো কোনো নারী বা অমুসলিম যেতে পারবে না। এ ছাড়া কোনো দলের বিদেশে কোনো শাখা থাকতে পারবে না। অথচ জামায়াত বিদেশের একটি সংগঠনের শাখা। তারা স্বীকারই করে তাদের জন্ম ভারতে। বিশ্বজুড়ে তাদের শাখা রয়েছে। কিন্তু আমাদের সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দলের বিদেশে কোনো শাখা থাকতে পারবে না। এ দলটি ইসলামের সোল এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে বলে বেড়ায়।
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের সভাপতি হুমায়ূন কবির, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন ২০০৯ সালে রিট আবেদনটি করেন। হাইকোর্ট ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন। ৬ সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। রুলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি(১)(বি)(২) ও ৯০(সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়। জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।http://www.kalerkantho.com/?view=details&type=gold&data=news&pub_no=1210&cat_id=1&menu_id=14&news_type_id=1&index=1
Also Read:
শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০১৩, ২৯ চৈত্র ১৪১৯
জামায়াতের গঠনতন্ত্রের সঙ্গে মদিনা সনদও সাংঘর্ষিক
শুনানিতে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর
__._,_.___