ধর্মের সঙ্গে আন্দোলনের বিরোধ নেই: গণজাগরণ মঞ্চ
নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ২৬-০২-২০১৩
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলন কোনো ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধের জন্য নয়। কোনো ধর্মের সঙ্গে এ আন্দোলনের কোনো বিরোধ নেই। এ আন্দোলনের কর্মীরা সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। এ আন্দোলন চলছে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে। গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ধর্মের অপপ্রচার নিয়ে কোনো কথা হয়নি।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে ওই দিন বিকেলে এ আন্দোলন শুরু হয়। ২২ দিন ধরে চলা এ আন্দোলন নিয়েই মূলত আজকের এই সংবাদ সম্মেলন। সংবাদ সম্মেলনে ধর্মীয় অবমাননা, আন্দোলনকারীদের নিয়ে বিভ্রান্তির জবাব, আন্দোলনের উদ্দেশ্যসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়।
জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে ইমরান এইচ সরকার বলেন, 'যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলছে, চলবে।' তিনি বলেন, 'কিছু ব্লগারের ব্যক্তিগত লেখাকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এ আন্দোলনের ওপর মিথ্যা দায় চাপিয়ে দিচ্ছে। আমরা সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, কোনো ধর্মীয় অবমাননার সঙ্গে এ আন্দোলনের কর্মীরা নেই। আমরা যে কোনো ধর্মের অবমাননার বিরুদ্ধে। আমরা মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নামে কুত্সার বিরুদ্ধে। এ রকম অপতত্পরতার বিরুদ্ধে আমরা সব সময় সোচ্চার।'
ইমরান এইচ সরকার বলেন, 'আমরা লক্ষ করেছি যে রাজীব হায়দারকে হত্যার পর তারই নামে অ্যাকাউন্ট খুলে নানা প্রকার বানোয়াট মন্তব্য করেছে "আমার দেশ" গং। এ কাজ করে তারা নিজেরাই ধর্মের অবমাননা করেছে। তাদেরই মহানবীর প্রতি কোনো ভালোবাসা ছিল না, ছিল অবমাননা।'
ইমরান বলেন, 'দেশবিরোধীরা এখানেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তারা মসজিদে, বায়তুল মোকাররমের গালিচায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। মসজিদ থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়েছে। মসজিদের খতিবকে হুমকি দিয়েছে। তারা মসজিদ থেকে সহিংসতা শুরু করে।' ইমরান প্রশ্ন করেন, 'এ ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তারা দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চায়?' তিনি বলেন, 'ইতিমধ্যে আলেম সমাজ জানিয়েছে, যারা মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট করে তারা কী ধরনের মুসলমান? এদের বাংলাদেশবিরোধী চরিত্র স্পষ্ট হয়েছে উঠেছে। আমাদের ভাষা-আন্দোলনের স্মৃতির শহীদ মিনার যারা ভাঙচুর করে, তারা কতটা সহিংস, তা সহজেই অনুমান করা যায়।'
ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক আন্দোলনকারীদের পক্ষে দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, 'শহীদ মিনার ভাঙলে, মসজিদে আগুন দিলেও কি আপনারা চুপ করে বসে থাকবেন? কেন আপনারা চুপ করে বসে থাকবেন? আপনাদের নীরবতা তাদের আরও প্রশ্রয় দেবে। আমাদের এ লড়াই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের লড়াই। আমাদের লড়াইয়ে তারা আবারও ৭১-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।'
জামায়াত-শিবিরের প্রতি ইঙ্গিত করে ইমরান বলেন, 'তারা যুদ্ধাপরাধের ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে নেমেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি দেশকে গড়তে হলে তাদের নিক্ষেপ করতে হবে আঁস্তাকুড়ে।'
ইমরান বলেন, 'সম্মানিত দেশবাসী, বাংলাদেশ আজ আরও একটি মুক্তিযুদ্ধের সামনে দাঁড়িয়ে। এ লড়াই দেশপ্রেমিকের লড়াই। এ লড়াই কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে নয়, এ লড়াই ধর্মবিরোধীও নয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমরা জয় ছিনিয়ে এনেছি, এবারও নেব।'
অর্থের উৎস
ইমরান বলেন, এ কথা অনস্বীকার্য যে, দীর্ঘ ২১ দিন যাবত্ আন্দোলন চালিয়ে যাবার পেছনে একটি শক্ত অর্থনৈতিক ভিত প্রয়োজন। সে ভিত্তি গণজাগরণের মঞ্চেরও রয়েছে। শুরুর দিন থেকে অর্থাত্ ৫ ফেব্রুয়ারি রাত থেকেই গণচাঁদা তুলে সকলের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এর পর থেকে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির উদ্যোগে এখানে খাবার আসতে থাকে। সে খাবার আমাদের ভলানটিয়ারদের মাধ্যমে বিলি বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়। অনেক সময় যাঁরা খাবার দেন, তারাও বিলি করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের ভলানটিয়াররা তাঁদের সাহায্য করেন। এ ছাড়াও অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সাহায্য করে থাকেন। তবে গণজাগরণ মঞ্চ বরাবরই বিনয়ের সঙ্গে জানাচ্ছে, আমাদের এই মুহূর্তে আর্থিক সাহায্যের তেমন একটা প্রয়োজন নেই।'
ধর্ম সংক্রান্ত বিভ্রান্তির জবাব
ইমরান বলেন, 'আমরা শুরুতেই একটি কথা জানিয়ে দিয়েছি, গণজাগরণ মঞ্চের অনুপ্রেরণা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ যেমন কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে ছিল না, তেমনি এ আন্দোলনের সঙ্গেও ধর্মের কোনো বিরোধ নেই। এ আন্দোলনের প্রথম থেকেই গণজাগরণ মঞ্চ সব ধর্মের মানুষের অনুভূতির প্রতি আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধাশীল ছিল এবং আছে। ভবিষ্যতে এর কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, "ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার।" কিন্তু এই আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করার নানা অপচেষ্টা আমরা লক্ষ করেছি। আপনারা দেখেছেন, কিছু ব্লগারের ব্যক্তিগত লেখাকে কেন্দ্র করে কীভাবে জামায়াত-শিবির ও তার দোসররা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে। তারা আন্দোলনের ওপর বিভিন্ন মিথ্যা দায় চাপিয়ে দিতে চাইছে। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলছি, কোনো ধরনের ধর্মীয় অবমাননাকর অপতত্পরতার সঙ্গে প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণ মঞ্চের সম্পর্ক নেই। আমরা যেকোনো ধর্মীয় অবমাননার বিরুদ্ধে। আমরা মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সম্পর্কে সব রকমের কুরুচিপূর্ণ আক্রমণের বিরোধিতা করি, তীব্র নিন্দা জানাই। এ ধরনের অপতত্পরতাকে কোনোভাবেই এই গণজাগরণ মঞ্চে প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি, কখনো দেওয়া হবেও না। বায়ান্নতে যেমন করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বাংলাকে হিন্দুদের ভাষা বলা হয়েছিল। ১৯৭১ অন্যায় শোষণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দেওয়া হয়েছিল, একইভাবে আজকে গণহত্যাকারীদের বাঁচাতে ন্যায়সংগত আন্দোলনকে ধর্মবিরোধী আখ্যা দেওয়া হয়েছে।'
ঢাকা, ২৫ ফেব্রুয়ারি ॥ সোমবার ॥ ২০১৩ ॥
লেখক : সম্পাদক, একপক্ষ।
নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ২৫-০২-২০১৩
watch the video at the site:
http://prothom-alo.com/detail/date/2013-02-24/news/331602
তরুণদের মূলধারা
আবার হরতাল, আবার প্রতিহতের ডাক তরুণদের
বিএনপি এই... বিস্তারিত
Terrorists
Youths term Jamaat-Shibir; from Rayerbazar rally, they urge all to resist today's hartal, call upon police to rise up to its historic reputation
__._,_.___