বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৩, ৮ ফাল্গুন ১৪১৯
রাজীব ধর্মভীরু ছিল কিন্তু ধর্মের নামে ব্যবসা অপছন্দ করত
এ পৃথিবীতে অনেক মিথ্যাবাদীর ইতিহাস জেনেছি , কিন্তু জামাতের মত মিথ্যুক আর একটাও পাই নাই । সত্যবাদিতা ও ত্যাগের মহিমার জন্য সারা দুনিয়ায় ইসলামের প্রদীপ জ্বলজল করে জলছে । অথচ এই জামাত ইসলামের দোহাই দিয়ে আমাদের দেশে অতীতে যা করেছে , তা শুধু শুনেছি কিন্তু চোখে দেখি নাই । আর গত কিছুদিন ধরে জামাতের আসল রুপ দেখে বড় বেশি আতঙ্কিত হইলাম । রাস্তায় চলন্ত গাড়িতে ডিল চুড়ে মারা ,রোগীর এ্যাম্বুলেন্সে হামলা করা , গাড়ি থামিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়া , অনলাইনে নিত্য নতুন মিথ্যা কাহিনী বানিয়ে প্রচার করা । ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মানুষ হত্যা করা । ইচ্ছামত ইসলামের ব্যাখ্যা দেয়া । নিজেদের সুবিধামত কোরআন – হাদিসের ব্যাখ্যা দেয়া । এই যদি হয় জামাত , তাহলে ইসলাম তো তার নামের পিছনে বড় বেশি বেমানান । আমার মতে জামাত কোন সঠিক ইসলামী দল নয় , ইহার প্রধান উদ্দেশ্য অর্থ উপার্জন এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নিজেদের মউদুদি আদর্শের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা । যা একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান কোনভাবে মেনে নিতে পারে না । সরকার যদি চায় জামাতকে নিষিদ্ধ করতে , তাহলে আমাদের কারো কোন আপত্তি থাকার কথা নয় । http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-02-19/news/330293
Also read:
গাফফার খান চৌধুরী ॥ আমার পুরো পরিবার নামাজী। আমি ও আমার স্ত্রী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি। ছেলেরা হয়ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে না। কিন্তু এমন কোন দিন নেই যে, আমার ছেলেরা সারাদিনে এক ওয়াক্ত নামাজও আদায় করেনি। এমন দিন আমার চোখে অন্তত পড়েনি। আমার ছেলে রাজীবকে ছোটবেলায় পবিত্র কোরান শিক্ষা দিয়েছি। সে ইসলামের বিরুদ্ধে বা ধর্মের বিরুদ্ধে কোনদিন একটি কথাও বলেনি। লেখা তো দূরের কথা। রাজীব একজন সাচ্চা মুসলমান। সে ধর্মের নামে ব্যবসাকে খুবই অপছন্দ করত। রাজীব অত্যন্ত প্রগতিশীল ও ধর্মভীরু ছেলে ছিল। মৃত্যুর পর রাজীবকে কাফের, ইহুদী বা নাস্তিক হিসেবে প্রচার করার বিষয়টি গভীর ষড়যন্ত্র। আমি মুক্তিযোদ্ধা। রাজীব মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মানুষ। তাই পরিকল্পিতভাবে রাজীবের ইমেইল আইডি হ্যাক করে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে রাজীবের হত্যাকারী জামায়াত-শিবির। এদিকে রাজীব হত্যায় কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। মামলাটি স্পর্শকাতর। তাই গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে ৩ জন নিহত হয়। নিহতরা জামায়াত-শিবির কর্মী বলে জামায়াত দাবি করে। ওইদিনই রাত প্রায় ৯টার দিকে রাজধানীর পল্লবী থানাধীন কালশী এলাকার পলাশনগরের ৫৬/৩ নম্বর টিনশেড বাড়ির সামনে জবাই করে হত্যা করা হয় ব্লগার রাজীবকে। এ ব্যাপারে রাজীবের পিতা ডা. নাজিমুদ্দিন বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় কাউকে আসামি করা হয়নি। পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে।
মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, রাজীব হত্যা মামলাটি খুবই স্পর্শকাতর। মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে রাজীব হত্যা মামলায় কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তবে হত্যাকারীদের গ্রেফতারে চেষ্টা অব্যাহত আছে।
নিহত রাজীবদের বাড়িটি প্রায় ৫ কাঠা জমির ওপর নির্মিত। বাড়ির সঙ্গে বিশাল একটি একতলা বাড়িতে বসবাস করে ২২টি পরিবার। রাজীবদের বাড়ির সামনে পর পর ৩টি বহুতল বাড়ি। এরপর একটি মোড়ে কোনার দিকে মান্নান ফার্নিচার মার্ট নামে একটি দোকান আছে। বাড়িটির চারদিকে ৬ ফুট প্রাচীর। প্রাচীরের ওপর আর কিছুই নেই। অনায়াসে প্রাচীর টপকে ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব। বাড়িটি মূল রাস্তা থেকে প্রায় ৩ ফুট নিচে। মাটি ফেলে রাস্তা উঁচু করে তৈরি করায় বাড়িটি নিচের দিকে পড়েছে। বাড়ির পেছনে কোন প্রাচীর নেই। সেখানে ঝিল। ঝিলে গভীর পানি। পানির ওপর কচুরি পানা আর জঙ্গলের আস্তর। পুরো বাড়ি সেগুন গাছ। বাড়িতে দুইটি মাত্র কক্ষ। একটি কক্ষে রাজীব থাকত। আর অপর কক্ষটিতে রাজীবের ছোট ভাই নেওয়াজ মুর্তজা হায়দার নোবেল ও তার খালাত ভাই গালিব থাকত। ৩ জনেই চাকরি করত। ওই এলাকায় রাজীবের প্রচুর আত্মীয়স্বজন রয়েছে। রাজীবের দুই খালার বাসা রাজীবদের বাসা থেকে মাত্র ৫০ গজের মধ্যে। রাজীবকে বাড়ির গেট থেকে মাত্র ১৫ ফুট উত্তর দিকে একটি ল্যাম্পপোস্টের নিচে ছুরিকাঘাত ও জবাই করে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থলে চাপ চাপ রক্ত ও রক্তের দাগ রয়েছে। হত্যার সময় রাস্তার আলোগুলো জ্বলছিল না।
বাড়িটির ঠিক সামনের ৫৯/১, এ নম্বর তিনতলা জীবন নীড়ের দ্বিতীয় তলার বাসিন্দা নবম শ্রেণী ছাত্রী অমিতা জনকণ্ঠকে বলেন, ঘটনার সময় ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স ও সিলেট রয়্যালর্সের মধ্যে বিপিএলের টি টুয়েন্টির তুমুল ক্রিকেট খেলা চলছিল। আমরা সবাই ক্রিকেট খেলা নিয়ে উত্তেজনায় ছিলাম। ওই সময় টিভির শব্দও বেশি থাকায় বাইরের কোন কিছুই বোঝা যায়নি। পরে খবর পেয়ে তারা রাজীবকে রাস্তায় মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। অমিতার বাবা ওই সময় বাইরে ছিলেন। অমিতার ভাইও ক্রিকেট খেলা নিয়ে মত্ত ছিল। বাড়িটির তৃতীয় তলার বাসিন্দা বাড়ির মালিকও জানান, ঘটনার সময় তারা কিছুই বুঝতে পারেননি। বাড়িটির নিচ তলার বাসিন্দা বেসরকারী নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র হিমেল জনকণ্ঠকে বলেন, হত্যাকা-ের সময় তাঁরা বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু কিছুই দেখতে পাননি। তারা বাসার ভেতরে থাকায় মাত্র ১০ ফুট সামনেই রাজীবকে হত্যা করার পরও তারা দেখতে পাননি। পাশের রেজা কোচিং সেন্টারের মালিক কবির হোসেন জানান, রাজীব ভাল ছেলে হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। তার সম্পর্কে খারাপ কোন কিছু শোনা যায়নি। আশপাশের দোকানীরাও জানিয়েছেন, রাজীব ভাল ছেলে ছিল। বিবাহিত জীবনে সে সুখী। তার স্ত্রীকে দেখা যেত। স্ত্রীর সঙ্গে সদা হাসিখুশী দেখা যেত রাজীবকে। বাহ্যিকভাবে রাজীবের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর ছিল বলে বোঝা যেত। কোন সময় ঝগড়া বিবাদ বা কলহ শোনা যায়নি।
রাজীবের খুনের বিষয়ে তাঁর পিতা ডা. নাজিমুদ্দিন (৫৭) জনকণ্ঠকে বলেন, আমি ১৯৭০ সালে এসএসসি পাস করি। এরপর ঢাকা কলেজের প্রথম বর্ষে ভর্তি হই। তখন সবেমাত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। আমি গ্রামের বাড়ি কাপাসিয়ায় গিয়ে সেনা কর্মকর্তাদের সহায়তায় সরোজপুরে বনের মধ্যে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করি। ক্যাম্পে আমরা ২৫ জনের মতো ট্রেনিং নেই। এরপর আমরা এলাকার নিরাপত্তায় নিয়োজিত হই। কলেজ পাস করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস তৃতীয় ব্যাচের ছাত্র হিসেবে ভর্তি হই। বাবা-মা আমাকে চাচাত বোন নার্গিসের সঙ্গে বিয়ে দেন। স্বাধীনতা লাভের অনেক পরে আমি বিদেশে যাই। সেখানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর ডিগ্রী অর্জন করি। আবার দেশে ফিরে আসি।
১৯৮০ সালের খুব সম্ভবত ২ আগস্ট রাজীবের জন্ম। রাজীব বেসরকারী এশিয়ান প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে। চাকরি করছিল বুয়েটের একজন বিখ্যাত আর্কিটেক্ট শিক্ষকের ফার্মে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কত মানুষকে অকাতরে শহীদ হতে দেখেছি। বেঁচে থাকাকে আল্লাহর চরম আশীর্বাদ হিসেবে মনে করি। তাই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেও নামাজ পড়ি এবং পরিবারের সবাইকে নামাজ ও পবিত্র কোরান শিক্ষা দেই। ছোটবেলায় আমার ছেলেদের নামাজ শিক্ষা দিয়েছি। পবিত্র কোরান শিক্ষা দিয়েছি। আমার দুই ছেলে হয়ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করত না। কিন্তু সারাদিনে এক ওয়াক্ত নামাজও আদায় করেনি, এমন দিনের কথা অন্তত আমার মনে পড়ে না। আমার চোখেও পড়েনি। রাজীব প্রগতিশীল ছেলে হলেও খুবই ধর্মভীরু ছিল।
সে পারিবারিক কারণেই মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মানুষ ছিল। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কোন কিছুই সে মেনে নিতে পারত না। রাজীব প্রথমে ক্যাপ্টেন ক্লো নামে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ব্লগে লিখত। এরপর থাবা বাবা নামে ব্লগে লিখত।
কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা যাবজ্জীবন সাজা পাওয়ার পর দেশবাসীর প্রতি ভি চিহ্ন প্রদর্শন করে। এতে রীতিমতো ক্ষেপে যায় শুভ। ব্লগে কাদের মোল্লার এমন আচরণের প্রতিবাদ জানায়। রাজীবের সঙ্গে আরও কিছু ছেলে আছে যারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে ব্লগে লেখে। তাদের সঙ্গে রাজীবের যোগাযোগ ছিল। সে যোগাযোগের সূত্রধরেই রাজীবরা শাহবাগে জমায়েত হয়। আর সেই জমায়েতের মধ্যদিয়েই রচিত হতে চলেছে স্বাধীন দেশের আরেক ইতিহাস। রাজীব দীর্ঘদিন ধরেই ব্লগে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে লিখছিল। কিন্তু কোন দিন রাজীব মুরতাদ, কাফের, ইহুদী, নাস্তিক ইত্যাদি কথা শোনা যায়নি। হঠাৎ করেই রাজীব মারা যাওয়ার পর এসব প্রচার হচ্ছে। এমন প্রচারের পেছনে গভীর ষড়ষন্ত্র আছে। খুব সম্ভবত রাজীবের ইমেইল হ্যাক করে তার ব্লগের মাধ্যমে এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমি চিকিৎসক হিসেবে বলতে পারি, রাজীবের হত্যাকারীরা পেশাদার। রাজীবকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, এ ধরনের হত্যাকা- জামায়াত-শিবির করে থাকে। রাজীবকে জামায়াত-শিবিরই হত্যা করেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। হত্যার পর রাজীব সম্পর্কে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিতে হত্যাকারী জামায়াত-শিবির রাজীবের ইমেইল হ্যাক করে তাঁর ব্লগের মাধ্যমে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। রাজীবের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর সম্পর্ক খুবই ভাল। রাজীব তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে খুবই খুশি ও সুখী ছিল। রাজীবের স্ত্রীও রাজীবকে নিয়ে খুশি ও সুখী ছিল।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে ৩ জন নিহত হয়। নিহতরা জামায়াত-শিবির কর্মী বলে জামায়াত দাবি করে। ওইদিনই রাত প্রায় ৯টার দিকে রাজধানীর পল্লবী থানাধীন কালশী এলাকার পলাশনগরের ৫৬/৩ নম্বর টিনশেড বাড়ির সামনে জবাই করে হত্যা করা হয় ব্লগার রাজীবকে। এ ব্যাপারে রাজীবের পিতা ডা. নাজিমুদ্দিন বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় কাউকে আসামি করা হয়নি। পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে।
মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, রাজীব হত্যা মামলাটি খুবই স্পর্শকাতর। মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে রাজীব হত্যা মামলায় কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তবে হত্যাকারীদের গ্রেফতারে চেষ্টা অব্যাহত আছে।
নিহত রাজীবদের বাড়িটি প্রায় ৫ কাঠা জমির ওপর নির্মিত। বাড়ির সঙ্গে বিশাল একটি একতলা বাড়িতে বসবাস করে ২২টি পরিবার। রাজীবদের বাড়ির সামনে পর পর ৩টি বহুতল বাড়ি। এরপর একটি মোড়ে কোনার দিকে মান্নান ফার্নিচার মার্ট নামে একটি দোকান আছে। বাড়িটির চারদিকে ৬ ফুট প্রাচীর। প্রাচীরের ওপর আর কিছুই নেই। অনায়াসে প্রাচীর টপকে ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব। বাড়িটি মূল রাস্তা থেকে প্রায় ৩ ফুট নিচে। মাটি ফেলে রাস্তা উঁচু করে তৈরি করায় বাড়িটি নিচের দিকে পড়েছে। বাড়ির পেছনে কোন প্রাচীর নেই। সেখানে ঝিল। ঝিলে গভীর পানি। পানির ওপর কচুরি পানা আর জঙ্গলের আস্তর। পুরো বাড়ি সেগুন গাছ। বাড়িতে দুইটি মাত্র কক্ষ। একটি কক্ষে রাজীব থাকত। আর অপর কক্ষটিতে রাজীবের ছোট ভাই নেওয়াজ মুর্তজা হায়দার নোবেল ও তার খালাত ভাই গালিব থাকত। ৩ জনেই চাকরি করত। ওই এলাকায় রাজীবের প্রচুর আত্মীয়স্বজন রয়েছে। রাজীবের দুই খালার বাসা রাজীবদের বাসা থেকে মাত্র ৫০ গজের মধ্যে। রাজীবকে বাড়ির গেট থেকে মাত্র ১৫ ফুট উত্তর দিকে একটি ল্যাম্পপোস্টের নিচে ছুরিকাঘাত ও জবাই করে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থলে চাপ চাপ রক্ত ও রক্তের দাগ রয়েছে। হত্যার সময় রাস্তার আলোগুলো জ্বলছিল না।
বাড়িটির ঠিক সামনের ৫৯/১, এ নম্বর তিনতলা জীবন নীড়ের দ্বিতীয় তলার বাসিন্দা নবম শ্রেণী ছাত্রী অমিতা জনকণ্ঠকে বলেন, ঘটনার সময় ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স ও সিলেট রয়্যালর্সের মধ্যে বিপিএলের টি টুয়েন্টির তুমুল ক্রিকেট খেলা চলছিল। আমরা সবাই ক্রিকেট খেলা নিয়ে উত্তেজনায় ছিলাম। ওই সময় টিভির শব্দও বেশি থাকায় বাইরের কোন কিছুই বোঝা যায়নি। পরে খবর পেয়ে তারা রাজীবকে রাস্তায় মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। অমিতার বাবা ওই সময় বাইরে ছিলেন। অমিতার ভাইও ক্রিকেট খেলা নিয়ে মত্ত ছিল। বাড়িটির তৃতীয় তলার বাসিন্দা বাড়ির মালিকও জানান, ঘটনার সময় তারা কিছুই বুঝতে পারেননি। বাড়িটির নিচ তলার বাসিন্দা বেসরকারী নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র হিমেল জনকণ্ঠকে বলেন, হত্যাকা-ের সময় তাঁরা বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু কিছুই দেখতে পাননি। তারা বাসার ভেতরে থাকায় মাত্র ১০ ফুট সামনেই রাজীবকে হত্যা করার পরও তারা দেখতে পাননি। পাশের রেজা কোচিং সেন্টারের মালিক কবির হোসেন জানান, রাজীব ভাল ছেলে হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। তার সম্পর্কে খারাপ কোন কিছু শোনা যায়নি। আশপাশের দোকানীরাও জানিয়েছেন, রাজীব ভাল ছেলে ছিল। বিবাহিত জীবনে সে সুখী। তার স্ত্রীকে দেখা যেত। স্ত্রীর সঙ্গে সদা হাসিখুশী দেখা যেত রাজীবকে। বাহ্যিকভাবে রাজীবের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর ছিল বলে বোঝা যেত। কোন সময় ঝগড়া বিবাদ বা কলহ শোনা যায়নি।
রাজীবের খুনের বিষয়ে তাঁর পিতা ডা. নাজিমুদ্দিন (৫৭) জনকণ্ঠকে বলেন, আমি ১৯৭০ সালে এসএসসি পাস করি। এরপর ঢাকা কলেজের প্রথম বর্ষে ভর্তি হই। তখন সবেমাত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। আমি গ্রামের বাড়ি কাপাসিয়ায় গিয়ে সেনা কর্মকর্তাদের সহায়তায় সরোজপুরে বনের মধ্যে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করি। ক্যাম্পে আমরা ২৫ জনের মতো ট্রেনিং নেই। এরপর আমরা এলাকার নিরাপত্তায় নিয়োজিত হই। কলেজ পাস করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস তৃতীয় ব্যাচের ছাত্র হিসেবে ভর্তি হই। বাবা-মা আমাকে চাচাত বোন নার্গিসের সঙ্গে বিয়ে দেন। স্বাধীনতা লাভের অনেক পরে আমি বিদেশে যাই। সেখানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর ডিগ্রী অর্জন করি। আবার দেশে ফিরে আসি।
১৯৮০ সালের খুব সম্ভবত ২ আগস্ট রাজীবের জন্ম। রাজীব বেসরকারী এশিয়ান প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে। চাকরি করছিল বুয়েটের একজন বিখ্যাত আর্কিটেক্ট শিক্ষকের ফার্মে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কত মানুষকে অকাতরে শহীদ হতে দেখেছি। বেঁচে থাকাকে আল্লাহর চরম আশীর্বাদ হিসেবে মনে করি। তাই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেও নামাজ পড়ি এবং পরিবারের সবাইকে নামাজ ও পবিত্র কোরান শিক্ষা দেই। ছোটবেলায় আমার ছেলেদের নামাজ শিক্ষা দিয়েছি। পবিত্র কোরান শিক্ষা দিয়েছি। আমার দুই ছেলে হয়ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করত না। কিন্তু সারাদিনে এক ওয়াক্ত নামাজও আদায় করেনি, এমন দিনের কথা অন্তত আমার মনে পড়ে না। আমার চোখেও পড়েনি। রাজীব প্রগতিশীল ছেলে হলেও খুবই ধর্মভীরু ছিল।
সে পারিবারিক কারণেই মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মানুষ ছিল। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কোন কিছুই সে মেনে নিতে পারত না। রাজীব প্রথমে ক্যাপ্টেন ক্লো নামে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ব্লগে লিখত। এরপর থাবা বাবা নামে ব্লগে লিখত।
কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা যাবজ্জীবন সাজা পাওয়ার পর দেশবাসীর প্রতি ভি চিহ্ন প্রদর্শন করে। এতে রীতিমতো ক্ষেপে যায় শুভ। ব্লগে কাদের মোল্লার এমন আচরণের প্রতিবাদ জানায়। রাজীবের সঙ্গে আরও কিছু ছেলে আছে যারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে ব্লগে লেখে। তাদের সঙ্গে রাজীবের যোগাযোগ ছিল। সে যোগাযোগের সূত্রধরেই রাজীবরা শাহবাগে জমায়েত হয়। আর সেই জমায়েতের মধ্যদিয়েই রচিত হতে চলেছে স্বাধীন দেশের আরেক ইতিহাস। রাজীব দীর্ঘদিন ধরেই ব্লগে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে লিখছিল। কিন্তু কোন দিন রাজীব মুরতাদ, কাফের, ইহুদী, নাস্তিক ইত্যাদি কথা শোনা যায়নি। হঠাৎ করেই রাজীব মারা যাওয়ার পর এসব প্রচার হচ্ছে। এমন প্রচারের পেছনে গভীর ষড়ষন্ত্র আছে। খুব সম্ভবত রাজীবের ইমেইল হ্যাক করে তার ব্লগের মাধ্যমে এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমি চিকিৎসক হিসেবে বলতে পারি, রাজীবের হত্যাকারীরা পেশাদার। রাজীবকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, এ ধরনের হত্যাকা- জামায়াত-শিবির করে থাকে। রাজীবকে জামায়াত-শিবিরই হত্যা করেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। হত্যার পর রাজীব সম্পর্কে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিতে হত্যাকারী জামায়াত-শিবির রাজীবের ইমেইল হ্যাক করে তাঁর ব্লগের মাধ্যমে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। রাজীবের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর সম্পর্ক খুবই ভাল। রাজীব তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে খুবই খুশি ও সুখী ছিল। রাজীবের স্ত্রীও রাজীবকে নিয়ে খুশি ও সুখী ছিল।
Related:
অনলাইনে নিত্য নতুন মিথ্যা কাহিনী বানিয়ে প্রচার করা "জামাতে ইজলামের" ব্যবসা |
সুমন - দোহা - কাতার ২০১৩.০২.১৯ ০৫:৫১
Jamaate Islami is জামাত-ই-মুনাফেক !!!
MYRvMi‡Yi wei"‡× ag© wb‡q Avevi †mB cyi‡bv †Ljv
wa°vi I MY‡ivl †_‡K evuP‡Z Rvgvqv‡Zi †KŠkj e`j|
bvbvb e¨vbv‡i cxi gvkv‡qL‡`i bvg e¨envi K‡i gv‡V bvg‡Q:
নূরানি চাপা সাইট চালু হয় রাজীব হত্যাকাণ্ডের পর : জামায়াত-শিবির মেতেছে ধর্মের নামে বজ্জাতিতে .....!!!!!It's really a shame ! How low the Shibir Propagandists can go ....."রামুর উত্তম বড়ুয়ার ফেসবুকের ওয়ালে পবিত্র কোরআনের অবমাননাকর ছবি" was discovered within two days. What tookJamaati guys so long ....!"ইসলাম ও নবী (সা.) কে অবমাননা করে ব্লগে রাজীবের কুরুচিপূর্ণ লেখা" is definitely manufactured by the Jamaat/Shibir cadres & supporters.This really proves Jamaat's ধর্মের নামে বজ্জাতি .....!!!!!জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত-জালিয়াৎ খেলছ জুয়া!'মূলত খুনের দায়কে এড়াতে জামায়াত-শিবির মেতেছে অপপ্রচারে :নূরানি চাপা সাইট চালু হয় রাজীব হত্যাকাণ্ডের পর:http://www.kalerkantho.com/?view=details&type=gold&data=news&pub_no=1157&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&index=9
__._,_.___