Banner Advertise

Saturday, February 16, 2013

[chottala.com] মেহেরুন্নেসা, ক্ষমা নয়, সাহস চাই..



মেহেরুন্নেসা, ক্ষমা নয়, সাহস চাই...
শেগুফতা শারমিন


মেয়েটার নাম মেহেরুন্নেসা। মেয়েটা কবি এবং শহীদ। এর  চেয়ে বেশি বৃত্তান্ত গত কয়েকদিন একটানা অনেকবার নেট ঘেঁটেও কিছু খুঁজে পাইনি। কত হবে মেয়েটার বয়স? অনুমান করি ২১, ২২ বা ২৩। আমি জানিনা, যাঁরা শহীদ, তাদের কিভাবে সম্বোধন করা উচিত! আপনি, তুমি না কি অন্য কোনো নতুন সম্বোধন। সাধারণ আটপৌরে আপনি তুমিতে আমার সন্তুষ্টি আসে না। কিন্তু আমি মেয়েটির সঙ্গে কথা বলতে চাই। একতরফা, খোলা চিঠি টাইপ। 'মেয়েটি' বলছি, কারণ ২৭ মার্চ ১৯৭১ এ শহীদ হওয়ার সময় তার যে বয়স ছিল, আমার বয়স এখন তার চেয়ে ঢের বেশি। ওঁর রক্তে মাটি ভেজার এক দশকের বেশি সময় পরে জন্ম নিয়েও আমার বয়স বেড়েছে, ওঁর চেয়ে বেশি। কিন্তু ওঁতো এখনও আটকে আছে সেই ২১, ২২ বা ২৩ এই। গত কয়েকদিন যাবৎই আমার চিন্তা চেতনায় ছেয়ে আছে তার ভাবনা। কি দোষ ছিল ওঁর? কবিতা লিখত! স্বপ্ন দেখত! ভালোবাসত একখণ্ড মৃত্তিকা! এর বিনিময়ে কি নৃশংস মৃত্যু! চোখ বুজলেই আমি ফ্যানে ঝুলে থাকা খণ্ডিত মাথা দেখি, কানে বাজে কসাইয়ের হায়েনা হাসি। আমার ঘুম আসে না। গত ৫ রাত আমার ঘুম আসেনি।
গত দু'কুড়ি দু' বছরে অনেক কিছু ঘটেছে, অনেক কিছু দেখেছে বাংলাদেশ। যা হওয়ার কথা ছিল, তার অনেক কিছুই হয়নি। আবার এমন কিছু হয়েছে, যা চাইনি আমরা কেউই। সব সম্ভবের দেশে আমরা দেখেছি যা, সয়েছি তার চেয়েও বেশি।  সেই আমরাই পিঠ ঠেকে গেলে দেয়ালে, ঘুরে দাঁড়িয়েছি, সব কিছু তুচ্ছ করে। তারপরও আমাদের দাম নেই। দাম নেই আমাদের নেতাদের কাছে। যারা দেশ চালান। লিজে পাওয়া সম্পত্তির মতো পাঁচ বছরের বন্দোবস্ত। লিজ হস্তান্তরের সময় আমরা মত দেই। সেদিন আমরা খুব আনন্দে থাকি। সকালে ভাত খাই আর না খাই, সাধ্যমতো সেজেগুজে সকাল সকাল লাইনে দাঁড়াই। ক্ষমতা আছে তার প্রমাণ আঙ্গুলে নীল কালির একটা লম্বা দাগ। ফুঁ দিয়ে দিয়ে ঠিক মতো শুকোই। হাত ধুতে গিয়ে সাবধান থাকি, যেন দাগ না ধুয়ে যায়। এভাবে যতদিন দাগ রাখতে পারি, নিজেরাই আনন্দ পাই। ক্ষমতার আনন্দ। ব্যাস, আমরা তাতেই খুশি। আবার আমাদের চাওয়া পাওয়ার হিসাব জলাঞ্জলি দিয়ে নেতারা হিসাব মেটান। গত পাঁচ বছরের না পাওয়ার হিসাব। আগামী পাঁচ বছরের নিশ্চয়তার হিসাব।  
এ দেশে মেহেরুন্নেসার কবি হওয়া হয়নি। আজন্ম পাপের বোঝা নিয়ে জন্মানো সত্যিকারের কবি একলা নির্বাসনে। সেদেশেই আতারুণ্য লেফট রাইট করেও মধ্যবয়সে নয় বছর কবিগিরি করেছে কেউ সদর্পে। একাত্তরের বধ্যভূমি, গণকবর দখল হয়ে যায়। নিজামী আর মুজাহিদ লাল সবুজ পতাকা উড়ানো গাড়িতে বসে মুচকি হাসে। ভণ্ড কবির কবিগিরি ছুটিয়েছে আমাদের আরেক প্রজন্ম।  গণতন্ত্র এনে দিয়ে জাতিকে বুঝিয়েছেন, রাষ্ট্র এখন আমাদের দায়িত্ব নিবে। আমরা তাই যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দায়িত্ব দিয়েছিলাম রাষ্ট্রকে।  বিচারের নামে এ প্রহসন আমাদের বিশ্বাসকে অসম্মান করেছে।  
আমাদের অসম্মানের হিসাব নিতে  নেমেছে  আমাদের নতুন প্রজন্ম। বিদ্রোহে, আবেগে নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো দেশ। হাজার হাজার মেহেরুন্নেসা পথে নেমেছে। খেয়ে না খেয়ে, রোদে পুড়ে, কুয়াশায় ভিজে দিন রাত এরা পাহারা দিচ্ছে স্বাধীনতা। গত কয়েকদিনের সেøাগানে মুখর শাহবাগে গেলে অনুভব করি ১৯৭১, মুক্তির গান, মেলাঘর, যশোর রোড আরও কত কি। কেউ কাউকে চিনিনা কিন্তু সবাই আপন। '৭১ চেনা অচেনাকে মিলিয়ে দিয়েছিল। দূরকে করেছিল নিকট। এতদিন বুঝতাম না, এ কেমনতরো কেমিস্ট্রি। শাহবাগে এখন সেই অনুভূতি। সেøাগান দিতে দিতে ক্লান্ত সবাই, হঠাৎ হাতে আসে মিষ্টি ক্যান্ডি। হাত ঘুরে ঘুরে পানির বোতল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাশাপাশি বসে সেøাগান বাঁধি, কিন্তু নাম পরিচয় বিনিময় হয় না। আসলে সবার পরিচয় এক হয়ে যায়। এক দাবি, এক প্রত্যাশা নিয়ে পথে নামলে আর কোনো পরিচয় প্রয়োজন পড়ে না।  সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখা এসব তরুণের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত হই। এরা নতুন বাংলাদেশ গড়বে, নতুন ইতিহাস লিখবে। প্রয়োজনে নতুন আইনও হবে। 
আইন কোনো অনমনীয় বিষয় নয়। মানুষই আইন তৈরি করেছে। আইনে নেই এই দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। পৃথিবীর কোনো আইনে নেই যে, ছলচাতুরি করে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের দোহাই দিয়ে একরাতে রাষ্ট্রীয়  সেনাবাহিনী কোনো নিরীহ জাতিকে নিঃশেষ করে দিবে। পাকিস্তান তাই করেছে ১৯৭১ এ। তাদের এই জঘন্য ঘৃণ্য কাজ করতে যেসব নর্দমার কীট সাহায্য করেছে, তাদের জন্য আইনের দোহাই কেন? 
বাংলাদেশের আলো বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়ার কোনো অধিকার নেই এইসব জানোয়ারের। আমাদের কারও কারও স্বার্থ সুরক্ষার বিনিময়ে তারা এতদিন এ সুযোগ পেয়ে এসেছে। আর নয়। এবার শুধু ফাঁসি নয়, ফাঁসি তো যে কোনো খুনিরই হতে পারে। '৭১ এর কসাই যেমন নৃশংস ছিল, তেমনই নৃশংস হোক তার সঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশের আচরণ। আমার খুব ইচ্ছে, সব কসাইকে জনসম্মুখে এনে শাস্তি দেয়া হোক। কাজী রোজি যেমন তার সাক্ষ্যে বলেছেন, মেহেরুন্নেসা কাটা মুরগির মতো কাতরেছেন। সব কসাই সে রকম কাতরাক। ওদের কাটা মুণ্ডু ঝুলে থাক পরিবার পরিজনের সামনে। তারপরও যদি আমরা দায়মুক্ত হতে পারি। 
শহীদ কবি  মেহেরুন্নেসা, আমাদের এত বছরের ব্যর্থতার দায় মেটাতে আমরা শুধু ক্ষমাই চাই না বরং সাহস চাই।  এবার দেখিয়ে দেয়ার সময় এসেছে এ প্রজন্ম মরে নাই।  

ছবি : কাজী তাইফুর





__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___